হট নিউজ
সরকার শুধু যে নির্বাচনী ইশতেহারের কথাই ভুলে গেছে তা নয়, নাগরিকদের অপহরণ ও গুম হওয়ার বিষয়টিকেও তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। সম্প্রতি বিবিসি'র এক খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বলছে-সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে নাগরিকদের নিখোঁজ হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। তারা বলছে, গত ছয় মাসে ১৪ জনের মত নিখোঁজ হয়েছে এবং এসব নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় আইন-শৃক্মখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত রয়েছে। তবে সরকার বলছে, আইন-শৃক্মখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের কোনো প্রমাণ এখনো মেলেনি, যদিও তারা বলছে, বিষয়টি গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিস কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ছয় মাসে ১৪ জনের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এই নিখোঁজ ব্যক্তিদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে মৃতদেহ পাওয়া যায় নির্যাতনের চিহ্নসহ অথবা গুলীবিদ্ধ অবস্থায়। সর্বশেষ নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি ঘটে ঢাকায়। বিরোধী দল বিএনপির নেতা ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের একজন কাউন্সিলর চৌধুরী আলম নিখোঁজ হন গত ২৫ জুন। তার পরিবার ও বিএনপি অভিযোগ করেছে, আইন-শৃক্মখলা রক্ষাকারী বাহিনী চৌধুরী আলমকে তুলে নিয়ে গেছে এবং এরপর তার সম্পর্কে আর কিছু জানা যাচ্ছে না।
আইন ও সালিস কেন্দ্রের গবেষক নূর খান লিটন বলেছেন, নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাপ্রবাহ এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশ বিশ্লেষণ করে তাদের মনে হয়েছে এমন ঘটনার ক্ষেত্রে আইন-শৃক্মখলা রক্ষাকারী বাহিনীরই হাত থাকতে পারে।
সরকার মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করছে, বিরোধী দলের ওপর চালাচ্ছে দমন-নিপীড়ন। আইন-শৃক্মখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। দেশে খুন, গুম ও অপহরণের সংখ্যাও বেড়েই চলেছে। এসবই একটি ফ্যাসিবাদী সরকারের লক্ষণ।
এই লক্ষণকে যেন পূর্ণতা দেয়ার জন্যই সারাদেশে চলছে সরকারের যুবশক্তি ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি। সরকারের পুলিশ বাহিনী বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলে পড়লেও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসের মোকাবিলায় নীরব। বরং অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের প্রশ্রয়েই ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডাররা চালিয়ে যায় তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। ফলে ছাত্রলীগ এখন বেপরোয়া। যার অতি সাম্প্রতিক উদাহরণ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেট এমসি কলেজের ঘটনা।
এদের হাতে মানুষ নিহত হলেও সরকারের তেমন কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায় না। ফলে সরকারের সুশাসন ও দিনবদলের বুলি এখন মানুষের কাছে প্রহসন বলে মনে হয়।
আসলে সুশাসনে নয়, দীর্ঘ শাসনের স্বপ্নে এখন সরকার বিভোর। এ জন্য তাদের বিবেচনায় যা যা করা দরকার, সরকার এখন তাই করছে। ফলে পথের কাঁটা বিরোধী দলকে দমন-পীড়ন ও নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে যে কোন কৌশল গ্রহণে তারা বেপরোয়া।
এমন প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রেও। যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য সরকার আলাদা তদন্ত কমিটি করেছে। কৌঁশলী ও বিচারক নিযুক্ত করেছে- তারাইতো যুদ্ধাপরাধ বিচারের ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু সরকারের মন্ত্রী বাহাদুরদের যেন তর সইছে না। বিভিন্ন মন্ত্রী বিভিন্ন কথা বলছেন, আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী তো বলেই বসলেন- যুদ্ধাপরাধীরা যাতে পালাতে না পারে সে জন্য বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশী দূতাবাসগুলোতে এবং ইমিগ্রেশনে যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা পাঠানো হচ্ছে।
গত ১১ জুলাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমনি এ কথা বলেন। এখন প্রশ্ন হলো, কারা যুদ্ধাপরাধী সেই রায় কি হয়ে গেছে? আমরা জানি, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয়নি, চার্জশীট হয়নি, রায়ও হয়নি। তাহলে সরকারের কোন মন্ত্রী কিংবা সরকারের কোন মহল কী করে যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা তৈরি করেন? সরকারের এমন আচরণ থেকে এখন অনেকেই মনে করছেন, আসল বিষয় যুদ্ধাপরাধের বিচার নয় বরং যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে পছন্দ মতো তালিকা করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে জব্দ করা এবং ময়দান থেকে হটিয়ে দেওয়া।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।