আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মতিউর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদে আসবে গ্রেনেড হামলা, উলফা তারেক-বাবর কানেকশন



মতিউর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদে আসবে গ্রেনেড হামলা, উলফা তারেক-বাবর কানেকশন নিজস্ব প্রতিবেদক বর্বরোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও তাঁর সম্পাদিত দৈনিকে কর্মরত সাংবাদিক টিপু সুলতানকে যেকোনো মুহূর্তে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বিডিআর মামলা নিয়ে ব্যস্ততা শেষ হওয়ার পর সিআইডি নতুন করে এ বিষয়ে কাজ শুরু করবে। গোয়েন্দারা তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সরকারের ওপর মহলের সবুজ সংকেত চাইবেন। চাঞ্চল্যকর এই মামলা ছাড়াও দেশে জঙ্গি তৎপরতার উত্থান, বিদেশে পলাতক হুজি নেতা তাজ উদ্দিন সম্পর্কে এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কসহ বিভিন্ন বিষয় জানতে চাওয়া হবে। পাশাপাশি সম্পাদক মতিউর রহমানের কাছে বিএনপির বর্তমান সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও কারাবন্দি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের সঙ্গে গভীর সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

২১ আগস্টের ঘটনায় জড়িত আরেক হুজি নেতা মুফতি হান্নানের (বর্তমানে কারাবন্দি) দেওয়া জবানবন্দিতে গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তারেক রহমান পরিচালিত বহুল আলোচিত হাওয়া ভবন ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরের নেপথ্য ভূমিকা পালনের অভিযোগ আসে। এ ছাড়া বাবরের বিরুদ্ধে জঙ্গি ও ২১ আগস্ট হামলাকারীদের মদদ দেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। মতিউর রহমান বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে বাবরের কাছ থেকে অনেক অন্যায় সুবিধা নিয়েছেন বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। তাঁর ছেলের ব্যবসায়িক কাজের জন্য বাবরের কাছ থেকে নানাভাবে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া বিএনপি সরকারের সময় দলের তখনকার সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানও প্রথম আলো অফিসে গিয়েছিলেন।

ওই সময় মতিউর রহমানের সঙ্গে তাঁর কী নিয়ে কথাবার্তা হয় তা জানতে চাওয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। সূত্র মতে, এর আগে চাঞ্চল্যকর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার অন্যতম আসামি আব্দুস সালাম পিন্টু জিজ্ঞাসাবাদে মতিউর রহমান ও তাঁর সহকর্মী টিপু সুলতান সম্পর্কে নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। তিনি গত ২৭ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সিআইডির কাছে রিমান্ডে ছিলেন। গত ২০০১ সালে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে রিমান্ডে আনা হয়েছিল। এরপর এসব বিষয় নিয়ে মতিউর রহমান নানাভাবে আলোচনায় আসেন।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার তদারকি কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহহার আকন্দ গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে মতিউর রহমান ও টিপু সুলতানকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি জানান, পিন্টুর জিজ্ঞাসাবাদে আসা বিষয়টি তদন্তাধীন। সূত্র জানায়, পিন্টু তাঁর সহোদর হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা এবং ২১ আগস্ট মামলার অন্যতম আসামি তাজ উদ্দিনের সঙ্গে মতিউর রহমানের গোপন সম্পর্কের বিষয়টি ফাঁস করেন। এ ব্যাপারে তিনি গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে নানান তথ্য দেন। গোয়েন্দারা তাঁর দেওয়া এই জবানবন্দিটি ১৬১ ধারায় রেকর্ড করেন।

পিন্টু স্বীকারোক্তিতে জানান, তাঁর ভাই হুজি নেতা তাজ উদ্দিনের সঙ্গে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও সাংবাদিক টিপু সুলতানের সুসম্পর্ক ছিল। একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর একাধিকবার কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর অফিসে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেন তাজ উদ্দিন। র‌্যাবের গ্রেপ্তার অভিযানের আগে মতিউর রহমান তাজ উদ্দিনকে তা অবহিত করেছিলেন। এ ছাড়া তাজ উদ্দিন মতিউর রহমানের সঙ্গে নতুন একটি ইসলামী রাজনৈতিক দল গঠনের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করেছিলেন। এসবের পুরো বিষয় মধ্যস্থতা করেন টিপু সুলতান।

সূত্র জানায়, হুজি নেতা তাজ উদ্দিনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি প্রকাশ হলে তা ধামাচাপা দিতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দৌড়-ঝাঁপ করে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন মতিউর রহমান। ফলে তাঁর জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি পিছিয়ে যায়। পরে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সরকারের ওপর মহলে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। জঙ্গি ইস্যু ছাড়াও প্রথম আলো সম্পাদককে জিজ্ঞাসাবাদে উলফাকে মদদ দেওয়ার বিষয়টি উঠে আসবে। মতিউর রহমান ছাড়াও প্রথম আলোর স্বত্বাধিকারী লতিফুর রহমানের উলফা কানেকশনের বিষয়টি জানতে চাওয়া হতে পারে।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে উলফার উত্থান শুরু হয় লতিফুর রহমানের মাধ্যমে। পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) সঙ্গে লতিফুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। ওই গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমেই লতিফুর রহমানের সঙ্গে উলফার ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে ব্যবসার টাকার ভাগ না দেওয়ার কারণে উলফার একটি অংশ লতিফুরের ওপর ক্ষুব্ধ হয় এবং এর জের ধরেই তাঁর মেয়ে শাজনীন খুন হয় বলে অনেকে ধারণা করে থাকে। সূত্র জানায়, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বিশেষভাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপর নাখোশ।

দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর মতিউর রহমান ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী সরকারকে সমর্থন করেন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। পরে মতিউর রহমান পত্রিকার বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরানোর চেষ্টা করেন। এ সময় প্রভাবশালী একটি মহলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে নেতিবাচক নানা খবর প্রকাশ করে প্রথম আলো। সিআইডির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গতকাল কালের কণ্ঠকে জানান, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সিআইডি বিডিআর মামলা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এই কাজ অনেকটা ফাইলবন্দি অবস্থাতেই ছিল।

গত সোমবার সিআইডি বিডিআর মামলার চার্জশিট দিয়েছে। এখন দু-চার দিনের মধ্যেই নতুন করে আবার কাজ শুরু হবে বলে তিনি জানান। দৈনিক কালের কন্ঠ / ১৩ জুলাই ২০১০

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.