২০০৮ এ যখন ঢাকা গেলাম তখন রোজা শুরু হলো। আমি সেবার দেশে ৫ বছর পরে গেলাম। আত্বীয় স্বজনহীন ভাবে সিংগাপুরে বছরের পর বছর একা থাকতে থাকতে রোজা রাখবার অভ্যাস চলে গেছিল।
যখন ছোট ছিলাম তখন পারলে সব গুলো রোজাই রাখতাম। বড়রা অনেক মানা করেও রোজা রাখা বন্ধ করতে পারতনা আমার।
একবার সেহেরি খাবার সময় আমাদের সবার ঘুম ভাংলো যখন আযান শুরু হয়েছে তখন। শুনেছি আযানের শেষ শব্দ শোনা পর্যন্ত খাওয়া যায়। সেদিন আমার প্রিয় বোয়াল মাছ দিয়ে সেহেরি। আমি গত রাত থেকে তাক করে আছি ঐ দিয়ে খাব বলে । আমার বাবা বললেন ভাত খাবার দরকার নেই শুধু পানি খাও।
পানি খেয়েও রোজা রাখা যায় যদি সময় না থাকে। কে কার কথা শুনে আমার বোয়াল মাছ বলে কথা। বাবা বললেন "আযানের শেষ সময় পর্যন্ত খেতে পারবে, ভাল করে পানি খেয়ে নাও"। আমি ঘুম চোখে প্লেট টেনে নিয়ে ভাত আর বোয়াল মাছ নিমাল। আমার কারবার দেখে আমার বাবার তো চোখ গরম।
রাগলে উনি আগে চোখ গরম করেন । চোখ দিয়ে রাগ বোঝাতে চান। আমি পাত্তাই দিলাম না ঐ চোখের। গপাগপ বোয়াল মাছ ভাত মুখে পুরছি । বাবাতো আরো রেগে গেলেন।
উনি ঢক ঢক করে পানি ঢেলে যাচ্ছেন মুখে। আমার খাওয়া দেখে বোধহয় উনার খুব খেতে ইচ্ছে করছিল। কারন বোয়াল মাছ উনারও খুবই প্রিয়। উনি পানির ফাঁকে একটুকরো বোয়াল মাছ মুখে পুরে আবার পানি খেলেন। তাই দেখে আমি হাসি চাপতে চাপতে মুখে ভাত তুলছি ।
খুবই পটকা টাইপরে মেয়ে ছিলাম। সব কিছু নিয়েই হাসা হাসি আমার স্বভাব ছিল, যেখানে হাসা যেবে না যেখানেই হাসি পেতো । বাবার মাছ খাওয়া নিয়ে হাসছি দেখলে বাবা আমাকে টিপেই মেরে ফেলবেন । যাই হোক আমার খাওয়া শেষ হলো আযান শেষ হবার ৩০ সেকেন্ড আগে। পানি খেয়ে যখন দম নিলাম কয়েক বার, আযান থেমে গেল।
আমার বাবা আমার দিকে কটমট করে তাকাচ্ছেন। উনি ভেবেছিলেন যেরকম সাজিয়ে আমি খেতে বসলাম তাতে খাওয়া শেষ করতে পারব না আযান শেষ হবার আগে। কিছুটা অবাক ও ঈর্ষার স্বরে বললেন "অত গুলো ভাত আর মাছ সব শেষ করলে আযান শেষের আগেই ( )?"
আমি কিছু না বলে মুখ হাত ধুতে চলে গেলাম মিচকি হেসে । বাবার টেনশনে না খওয়াটা তখনও আমার পেটে হাসির খই ফোটাচ্ছে। ......... এটা অনেক বছর আগের কথা।
২০০৮ এ যখন গেলাম তখন রোজা রাখার অভ্যাস চলে গেছে। অনেক চেষ্টা করে কয়েকটা রাখলাম তবে পুরো রোজার মাসটাই ভাই আর কাজিনের সাথে আড্ডা মেরে কাটাতাম আর মাঝে মধ্যে রোজা রাখতাম।
আমার ভাই কখনই রোজা রাখত না। আর গ্রাম থেকে বেড়াতে আসা কাজিন তারেক - যিনি কোনদিন ও ধুমপান ছাড়তে পারেন নি তবে সব সময় বলতে শুনেছি আমি দুই আড়াই মাস হলো স্মোকিং ছেড়ে দিয়েছি । উনার আবার গত কয়েক বছর হলো ডাবেটিস ও হয়েছে।
মিস্টি খাওয়া বারন। উনি আমার বাবার ভয়ে রোজা রাখার ভান করতে বা রাখতেন ।
তো তারেক ভাই রোজই সেহেরিতে উঠতেন এবং খেতেন আমার বাবার ভয়ে। সারাদিন উনি বাইরে গিয়ে কি করতেন তা বলা মুস্কিল। তবে আমাদের দু ভাইবোন সব সময় উনাকে এ্যটাক করতাম আড্ডায় বসলে।
রোজার মাসে আমাদের কাজই ছিল রোজ দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা এবং উঠেই আড্ডা শুরু করা। তারেক ভাই খুব মাজার মজার কথা বলতেন সব আড্ডাতেই।
Click This Link
http://www.youtube.com/watch?v=0LNTpH-Edvg
এমনই এক আড্ডা দিন আমি ভিডিও করি। আমাদের আড্ডাটি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম এখানে।
Click This Link
http://www.youtube.com/watch?v=XSjYt6zd13k
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।