আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যে কারণে আমি পুলিশকে জারজ মনে করি...

ভালো আছি হতে পারে এটা আমার বংশগত রোগ । আমার আত্মীয়-স্বজন তিনকূলের মধ্যে পুলিশ বলতে ছিলেন আমার এক সৎচাচার শশুর । তিনি এখন অবসরে । কাকার বিয়েটা লাভ ম্যারেজ । তারপরও আমার দাদার একমাত্র আপত্তির বিষয়টি ছিলো মেয়ের বাবা পুলিশ ।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দাদা শুধু সে কারণেই বিয়েটা মেনে নেন নি । আর আমার একসময়ের ক্লাস ফ্রেন্ড মিঠু এখন পুলিশে চাকরি করে । চাকরিতে জয়েন করার পরে ও যখন আমার সাথে দেখা করতে এলো, আমি ওর চোখের দিকে তাকাতে পারি নি । ওর বাবাও পুলিশ । নিষিদ্ধ রক্ত তো ওর ধমনীতে বহমান ।

আমি নিশ্চিত- এতদিনে ওর শরীর কোনো নিরাপরাধীর রক্তে স্নাত হয়ে গেছে । স্ববিরোধিতাই যে একটা পুলিশের একমাত্র পরিচয়, তা-ই নয় । এরা একই সঙ্গে শ্বাপদ, শকুন ও রেপিস্টের ভূমিকায় নামে হরহামেশাই । যেই পুলিশ একসময় রাশেদখান মেনন ও মতিয়া চৌধুরীর মতো মানুষকে কুকুরের মতো রাজপথে পিটিয়েছে । মতিয়াকে তো বিবস্ত্র করে ছেড়েছে ।

সেই পুলিশই জয়নাল আবেদীন ফারুক ও পাপিয়াকে হিংস্র হায়েনা হয়ে লাথিয়েছে । বিবস্ত্র করেছে মাহমুদুর রহমানকে । আকবরের মতো বৃদ্ধ সাংবাদিকের বুকে বুটের আঘাতে চিরদিনের জন্য স্তব্ধ করে দিয়েছে । ওদের কর্মকাণ্ড এত অমানবিক ও এতটা নিষ্ঠুর, একপৃষ্ঠা কোট করে রাখার পরও এখন লিখতে আমার ঘেন্না লাগছে । গতবছর এইডস রোগীদের উপর একটা জরিপ চালিয়েছিলো একটা বিদেশি সার্ভেয়ার গ্রুপ ।

সেখানে এইডস আক্রান্ত একটি মেয়ে তার উপর পুলিশের পাশবিক নির্যাতনের যে বর্ণনা দিয়েছে, তার পরে আমার আর পুলিশকে মানুষ মানা সম্ভব হয় নি । সেই মেয়েটিকে থানায় আটকে রেখে পুলিশের অফিসার থেকে শুরু করে দারোয়ান পর্যন্ত ভোগ করেছে । রেপ করেছে । এইডসের ভাইরাস পুশ করে তবে ছেড়েছে । মোহাম্মাদপুরের গাঁজার আসরের প্রধান গ্রহিতা ও বিক্রেতা যে পুলিশের হাজারও সদস্য, এ ব্যাপারে কারো সন্দেহ আছে বলে মনে হয় না ।

এ দেশে একদল বদমাশ গুন্ডাকে প্রশ্রয় দেয় সরকার । আরেকদল গুন্ডা পালে বিরোধী দল । এবং এই দুইটি দলকেই মদদ দেয় পুলিশ । কালাজাহাঙ্গির থেকে শুরু করে যত বড় বড় সন্ত্রাস-গডফাদার এদেশে সৃষ্টি হয়েছে, তার পেছেনের মূল কারিগর পুলিশ ছাড়া আর কেউ নয় । জগলু গ্রুপের প্রধান কানা ছালেক যদি থানায় যায়, ওসি সাহেব জামাই স্বরে বলবেন, আরে ছালেক ভাই, আপনি তো আমাদের ভুইলাই গেছেন ।

এই ছালেক সাহেবকে চা দাও । আর যদি স্বয়ং জগলু নিজেই উপস্থিত হয়, তাইলে তো কথাই নাই । হাঁকডাক দিয়া পুরা থানা তোলপাড় । ওসি-দারোগা সব কদমবুচি করতে করতে একাকার । ওসি হয়তো মুখ ঝামটে বলবেন, যান, আপনের লগে কথা কমু না ।

হেই বিষ্যুদবার আপনেরে দেখছি, আর কোনো দেখা-সাক্ষাৎ নাই । আমাগো ভুইলা গেলে কই যামু কন !... রিমান্ডে পুলিশ যে নিপীড়ন চালায়, তার ভাষা কি আপনাদের জানা আছে ? আপনারা অনেকেই হয়তো এই আধুনিক যুগে মৃত্যুদণ্ডের বিপেক্ষে কথা বলেন, তাদের কাছে মৃত্যু কি রিমান্ডের অত্যাচার থেকে বেশি মানবিক ? আপনি কি জানেন ৫৪ ধারার মতো একটি জারজ আইনের মাধ্যমে কিভাবে কোনো কারণ ছাড়াই সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ? জানেন কি পুলিশে গ্রেপ্তার হওয়া ৮০% লোক জানে না, তারা কী অন্যায়ে থানা বা কোর্টে যাচ্ছে ? এসব কথার স্বীকৃতি আজকাল খোদ পুলিশ নিজেও দেয় । এর পরে একটা খোঁড়া অজুহাত দাঁড় করিয়ে তাদেরকে আনা হয় ইন্টারগেশন সেলে । সেখানে পুরুষের পেনিসে কারেন্টের শক এবং মহিলাদের নিতম্বে দেয়া হয় ইস্ত্রি মেশিনের ছ্যাঁকা । পুলিশ এটাকে হাসতে হাসতে বলে ‘ডলা’ ।

আদালতে হয়তো এই ডলা খাওয়া লোকটির কোনো সাজাই হয় নি । বিশ্বাস হয় না ? ‘জর্দ্দা জামাল’- এর সিনটায় একবার চোখ বুলাইয়েন । দেশের অস্থির সময়ে তো পুলিশের পোয়াবারো । যত মানুষ ধরবে, তত পকেট ভরবে । পিটিয়ে পিটিয়ে কিংবা চাপতি দিয়ে কুপিয়ে হাতের ঝাল মেটাবে ।

কোম্পানীর সেলসম্যানদের মতো এদের তখন টার্গেট নির্ধারণ করে দেয় হয়, দৈনিক সপ্তাহে ও মাসে এত ‘ক্রিমিনাল’ ধরে আনেতে হবে । আরে ভাই, ক্রিমিনাল যদি ধরতে না পারে তাহলে পুলিশে চাকরি থাকবে কী করে ? প্রমোশন তো দূরের কথা । তাই ক্রিমিনাল পয়দা করতে হয় প্রথমে । সায়েন্টিসদের মতে বড় বড় ক্রিমিনালরাও তাদের ক্রাইমে কোনো না কোনো খুঁত রেখে যায় । এই খুঁত চিহ্নিত করে পুলিশ ।

একমাত্র পুলিশই পারে নিখুঁত ক্রাইম করতে । কারণ খুঁতগুলো তারা জানে । বলেন তো কথাটা কোন বিখ্যাত পুলিশ অফিসার বলেছিলেন ? আমাদের দেশের দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনে সবচে’ বেশি অবদান কার, জানেন তো ? এবং দেশের সবচে’ দুর্বিনীত সংস্থা কোনটি সেটা জানেন ? এরপরও এই পুলিশদের সবচে’ কুখ্যাত সদস্যরা তাদের ‘অবদান’- এর স্বীকৃতিতে এওয়ার্ড পায় ! যেমন, এডিসি মেহেদি হাসান । মানুষের রক্তে গোসল করার তৃষ্ণায় রাতে ঘুমাতে পারে না এরা । রাতের আঁধারে জারজ হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের উপর ।

লাখো লাখো গুলি বর্ষণ করে মানুষ হত্যার মহাউৎসবে উল্লাস করে । দেখেছেন তো, কত বিকৃত আনন্দ নিয়ে এরা মানুষকে মারে । একজন পুলিশ কাউকে ধরে রাইফেল দিয়ে পেটাচ্ছে । পাগলা কুত্তার মতো আরো কয়েক জন সেই আধমরা মানুষটার উপর বেধড়ক লাঠি চালাবে । যখন লোকটা রাস্তায় পড়ে তড়পাচ্ছে ।

ঠিক তখন এসে এক হায়েনা তার উপর কয়েক রাউন্ড গুলি চালিয়ে দেবে । তারপর সাংবাদিকদের সামনে এসে গলা উঁচিয়ে বলবে- আন্দোলন মারাইতে আসছে । আন্দোলন একদম…..দিয়া ঢুকায়া দিমু । কোনো সাংবাদিক প্রতিবাদ করলো তো, তাকেও একলাছা লাঠির বাড়ি লাগাবে আর বলবে, পিটা অরে । ধুর, সাংবাদিক পেটালে কিছু হয় না ।

বেশ । বেশ । হয়তো এই কারণেই মানবতাবাদী কম্যুনিষ্টদের (জনযুদ্ধ) টার্গেটে পড়েছে পুলিশ । খুলনায় তারা ছ’মাসে ২২ পুলিশকে জবাই করে দিয়েছে । সাঈদীর ফাঁসীর রায়ের পরে অন্তত দেড়শ’ মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ ।

বিনিময়ে গেছে ওদের চারটে তরতাজা প্রাণ ! ওই দেড়শ’ তো কোনো প্রাণ না, ময়লা । আর শাপলা চত্বরে মেরেছে কত কে জানে ? ওখানে তো ব্যাপক উৎসবের আমেজ । পরদিন চিটাগং রোডে মরেছে দুই পুলিশ আর বিশজন সাধারণ মানুষ । অর্থাৎ পুলিশ মানুষের কাতারে ছিলো না । তাই তো বলি- ওরা মানুষ না পুলিশ ।

আমাকে এ যুক্তি শুনিয়ে লাভ নেই যে, ওদের মধ্যেও তো ‘সৎপুলিশঅফিসার’ আছে । হ্যাঁ আছে । এজন্যই গোবরে পদ্মফুলের মতো তাদের নামের সাথে ‘সৎ’ শব্দটি যোগ করতে হয় । নইলে বাকি তো সব হায়েনা । কই কোনো ব্যাংকার, কিংবা কোনো ডাক্তারকে তো বলতে হয় না সৎব্যাংকার বা সৎডাক্তার ? হুমায়ূন আহমেদ দিয়ে শেষ করি ।

একজন হিমু ও কয়েকটি ঝিঁঝিঁ পোকা বইতে তিনি লিখেছেন- “এই যে ঘটনাগুলি ঘটে, আপনাদের হাতে লোকজন মারা যায়, আপনাদের খারাপ লাগে না ? ওসি সাহেব সিগারেটে লম্বা টান দিতে দিতে বললেন, সত্যি কথা জানতে চান ? ‘হ্যাঁ জানতে চাই ?’ ‘পরনে যখন খাকি পোশাক থাকে তখন খারাপ লাগে না । বাসায় গিয়ে যখন লুঙ্গি গেঞ্জি পরি তখন খারাপ লাগে । ‘তাইলে লুঙ্গি গেঞ্জি পরে অফিসে এলেই হয় । …..চোরের পেছনে লুঙ্গিতে মালকোচা দিয়ে দৌড়াবেন । …..” ভাই, যারা আমার এই দীর্ঘ লেখাটা পড়বেন, একবার বলে যাবেন, মনুষ্যত্বের এই দুর্দিনে পুলিশ নামের জানোয়ারগুলোকে রাষ্ট্রের কেন পেলে পুষে রাখতে হয়, জানেন ? হয়তো এ লেখার কারণে আমি এ্যারেস্ট হয়ে যেতে পারি ।

বাকস্বাধীনতার যথেচ্ছাচার করেছি হয়তো আমি । আর আশ্চর্যর বিষয়, এ্যরেস্ট করতে আসবে সেই স্বাধীনতা আর মানবতার সবচে’ ক্ষতিকারক কীট ওই পুলিশ । অনুরোধ- আমাকে ধরতে যেন অন্য কোনো বাহিনী পাঠায় । ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.