ঢাকা, জুলাই ০১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- হরতালের আগের রাতে রাজধানীর মগবাজারে ট্যাক্সিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় দগ্ধ মো. ফারুক হোসেন (২৮) মারা গেছেন।
বুধবার রাত দেড়টার দিকে ফারুক শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে বৃহস্পতিবার সকালে তার ছোট ভাই মো. সেলিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
গত রোববার বিএনপির ডাকা হরতালের আগের রাতে মগবাজার রেল ক্রসিংয়ের কাছে একটি ট্যাক্সিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এতে ফারুক এবং সুমন নামের আরেকজন মারাত্মকভাবে অগ্নিদগ্ধ হন। আগুনে ফারুকের শরীরের প্রায় ৬০ ভাগ পুড়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের দেখতে বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে যান।
ওদিকে রমনা থানার ওসি শিবলী নোমান বৃহস্পতিবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, মগবাজার রেল ক্রসিংয়ের কাছে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জামায়াতে ইসলামী নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে বুধবার আদালত চারদিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে।
তিনি আরো জানান, ফারুক মারা যাওয়ায় ওই মামলাটি এখন হত্যা মামলায় পরিণত হবে।
ফারুকের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে একথা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, "হরতালের নামে এভাবে মানুষ হত্যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। "
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু ফারুকের লাশ দেখতে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে আসেন। এ সময় তিনি ফারুকের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান।
পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ফারুক হত্যার ঘটনায় তদন্তে যারা দোষী প্রমাণিত হবে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
প্রতিমন্ত্রীর কাছে ফারুকের ছোট ভাই সেলিম হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান।
একইসঙ্গে টিঅ্যান্ডটিতে লাইনম্যানের সহকারী হিসাবে তার চাকুরি স্থায়ী করার অনুরোধ জানান।
প্রতিমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর ফারুকের লাশ জুরাইন কবরস্থানে দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
নিহত ফারুকের বাবা মকবুল হোসেন অনেক আগেই মারা গেছেন। ছোট ভাই, দুই বোন আর মা শিরিন বেগমকে নিয়ে তিনি থাকতেন সূত্রাপুর থানা এলাকার গেন্ডারিয়ার ডিস্টিলারি রোডে।
ফারুক একটি ফ্যানের কারখানায় কাজ করে যে মজুরি পেতেন তা দিয়েই মূলত চলছিলো তাদের সংসার।
বড় ভাই ফারুকই পরিবারপ্রধানের ভূমিকায় ছিলেন জানিয়ে সকালে সেলিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ভাইয়া চলে গেলো। এখন আমি কীভাবে সংসার চলাবো? ও-ই তো সব দেখাশোনা করতো। "
সেলিম জানান, তিনি টিঅ্যান্ডটিতে লাইনম্যানের সহকারী হিসেবে কাজ করছেন। কিন্তু এ কাজ করে সংসারে তিনি কোনো সাহায্য করতে পারেন না।
প্রধানমন্ত্রী অগ্নিদগ্ধ ফারুক ও সুমনকে দেখতে ঢাকা মেডিকেলে যাওয়ার পর বিরোধী দলকে সংসদে এসে কথা বলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, "ইস্যুবিহীন হরতালের নামে নিরীহ মানুষের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিয়ে তাদের জীবন ধ্বংস করা কোনো রাজনীতি হতে পারে না।
"
এ সময় তিনি আহত ফারুক ও সুমনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। কীভাবে তাদের শরীরে আগুন লাগানো হয়েছে তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার বর্ণনা দেন।
এ সময় ফারুকের মা প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠেন। প্রধানমন্ত্রীও তখন অশ্র"সিক্ত হয়ে পড়েন।
ফারুকের মা প্রধানমন্ত্রীকে বলেন,"আমার ছেলে কারো কোনো ক্ষতি করেনি।
তাহলে দুর্বৃত্তরা তার শরীর কেন পুড়িয়ে দিল?"
তাকে সান্ত্বনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "সরকার আহতদের উন্নত চিকিৎসার সব ব্যয়ভার বহন করবে। "
কর্তব্যরত চিকিৎকদের কাছে তিনি আহতদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন এবং তাদের সুস্থতা কামনা করেন। অগ্নিদগ্ধ দুজনকে আর্থিকভাবেও সহায়তা দেন প্রধানমন্ত্রী।
এরপর প্রধানমন্ত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডে আহত কয়েকজনকে দেখতে যান। তিনি তাদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন এবং সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।