যে কোন লড়াই শেষ পর্যন্ত লড়তে পছন্দ করি।
ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহ স্মরণে
(সংকলিত)
আজ ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহের ১৫৫তম বার্ষিকী। আদিবাসীরা ঐতিহাসিক এ দিবসটি প্রতিবছর বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করেন। অন্যরাও প্রতি বছর সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবসে বেশ কিছু সভা, সেমিনার ও আলোচনা সভা আয়োজন করে থাকেন। কিছু কিছু টিভিতে টক শো-ও হয়।
এর বেশী আর কিছু হয়না। তাদের বসত-বাড়ী ও জমিজমা রক্ষায় কার্যকর কিছু হয় না, বেআইনী ভাবে জবরদখলের মাধ্যমে তাদের বেহাত হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধার হয় না। কেমন যেন সব মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে। যেমন নির্জীবের মত পড়ে আছে আলফ্রেড সরেন হত্যা মামলাটি।
সাঁওতাল বিদ্রোহ এর সূচনা হয় ১৮৫৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও বিহারের ভাগলপুর জেলায়।
এক পর্যায়ে এই সাঁতাল বিদ্রোহ বাংলাদেশের দিনাজপুর (বর্তমান ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর)এবং রাজশাহী(বর্তমার রাজশাহী, নওগাঁ ও চাপাই নওয়াবগঞ্জ) জেলাতেও ছড়িয়ে পড়ে। ইংরেজ আমলে স্থানীয় জমিদার, মহাজন, ইংরেজ কর্মচারীদের অন্যায় অত্যাচার এর শিকার হয়ে সাঁওতালরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে। তাদের এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন সিধু, কানু, চাঁদ প্রমুখ আদিবাসী সাঁওতাল নেতা।
সাঁওতাল বিদ্রোহের মহান বীরদের কথা আমি মনে রাখবো, হয়তো আমার ছেলে রাখবে না। তার ছেলে হয়তো কোথাও শুনবে, মনে রাখবে, আবার তার ছেলে হয়তো জানবে না।
পুরো জাতি যাতে সর্বদা মনে রাখতে পারে, রাষ্ট্র এবং জাতি হিসেবে আমরা কি সেই কাজটা করতে পারি না? সাঁওতাল সহ সকল আদিবাসীদের প্রধান যে সমষস্যা, অর্থাৎ ভূমি সমস্যা, ভূমি রক্ষার সমস্যা--মহামান্য রাস্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় স্পীকার, মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রী--জাতি এবং রাষ্ট্র হিসেবে আমরা কি সেই সমস্যা সমাধান করতে পারি না?
এ ভূখণ্ডে সাঁওতালরাই সর্বপ্রথম ইংরেজদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিলেন। পরবর্তী বিভিন্ন আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধেও এ আদিবাসীদের ছিল সক্রিয় ভূমিকা। বিশেষ করে নাচোল বিদ্রোহ ও তেভাগা আন্দোলতে তাদের ছিল অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা। কিন্তু তাদের সে অবদানের কথা তুলে ধরা হয়নি ইতিহাসে। যে অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেতে সাঁওতালরা বিদ্রোহ করেছিল।
শত বছর পরও সে অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। আজও বাঙলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় আদিবাসীরা চরম অবহেলিত জীবনযাপন করছে।
সাঁওতালরা পূর্বভারত ও বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আদিবাসী গোষ্ঠীগুলির একটি। সাঁওতালরা সাঁওতালী ভাষায় কথা বলে যে ভাষাটি অষ্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষাগোষ্ঠির অন্তর্গত। ভাষা এবং নৃতাত্বিক বৈশিষ্ট্যে সাঁওতালরা বাংলাদেশের অন্য অনেক উপজাতির মত মঙ্গোলীয় গোত্রের নয়।
সাঁওতালদের মধ্যম গড়নের আকৃতি, শরীরের গাঢ় রঙ, চ্যাপ্টা নাক, পুরু ঠোঁট এবং কোঁকড়ানো চুল তাদের অস্ট্রো-এশিয়াটিক নৃতাত্বিক উৎস নির্দেশ করে যে গোষ্ঠির মানুষ ভারতীয় উপমহাদেশে এসেছিল দ্রাবিড়দেরও আগে অষ্ট্রেলিয়া এবং সন্নিহিত প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপমালা থেকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।