এখন যেখানে লিখি : http://shorob.com/author/yaad/
নানা দেশের ফুটবল কৌশল: জার্মানি
নানা দেশের ফুটবল কৌশল: ইংল্যান্ড
নানা দেশের ফুটবল কৌশল : আর্জেন্টিনা
নানা দেশের ফুটবল কৌশল : ব্রাজিল
নানা দেশের ফুটবল কৌশল : ইতালি
বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পর থেকে নানা পত্রিকায় নানা ভাবে টোটাল ফুটবল নিয়ে লেখা হয়েছে।
তারপরেও সিরিজের ধারাবাহিকতায় আমিও লিখলাম ।
জ্যাক রেনল্ড নামে এক ভদ্রলোক ছিলেন আয়াক্স ক্লাবের ম্যানেজার।
টোটাল ফুটবলের ধারনা প্রথমে তাঁর মাথায় উঁকিঝুঁকি দেয়। এ ঘটনা জানতে পারেন তাঁর শিষ্য রাইনাস মিশেল।
রাইনাস মিশেলের মাথায় সে ধারনার ডালপালা গজায়। অত:পর তারই শিষ্য ইয়োহান ক্রুইফ সে ধারনার বৈপ্লবিক পরিণতি দান করেন।
টোটাল ফুটবল কী?
কারো জন্য কোন নির্দিষ্ট পজিশন নয়। ফরমেশন ঠিক রেখে যে কেউ যে কোন পজিশনে খেলতে পারবে।
একটু পরিষ্কার করি ব্যাপারটা।
ধরুন, একজন ডিফেন্ডার বল নিয়ে মিডফিল্ডে চলে আসলো, তখন তার রেখে আসা পজিশনে একজন মিডফিল্ডার নেমে ফরমেশন ঠিক রাখবে।
ফলে যদি বলের পজেশন হারিয়েও ফেলে, তবুও কোন পজিশন খালি থাকবে না।
আপনার কি মনে হচ্ছে মাঠে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হবে?
না। মিশেল, ইয়োহান ক্রুইফ সেটি হতে দেননি।
কে কখন দৌড়াবে, কে স্থির থাকবে, সাপোর্টিং রান এ কে সব সময় এগিয়ে থাকবে এ সব কিছু আবর্তিত হতো ক্রুইফকে ঘিরে।
তৎকালীন সময়ের জনপ্রিয় ৪-২-৪ ফরমেশন কে ৪-৩-৩ বানিয়ে টোটাল ফুটবল শুরু হয়।
টোটাল ফুটবলে দুইটি জিনিস প্রাথমিক ভাবে বিবেচনা করা হত।
প্রথমত, আক্রমন আর রক্ষন জিনিসটা সবার আয়ত্বে থাকা, দ্বিতীয়ত, নিজের পজিশন সম্পর্কে প্রতিমুহূর্তে সজাগ থেকে কখন পজিশন বদল করতে হবে তা বুঝার ক্ষমতা।
৪-৩-৩ ফরমেশনে অনেক সময় লেফট/রাইট ব্যাক আক্রমনে উঠে আসতো, ফলে ফরমেশন দাঁড়াতো ৩-৪-৩।
সেন্টারব্যাক কিছু সময়ের জন্য তখন বামে/ডানে সরে লেফট/রাইট ব্যাক হিসেবে থাকতো।
তৎক্ষনাৎ ডিফেন্সের দরকার হলে মিডফিল্ড থেকে একজন নেমে এসে সেন্টার ব্যাকের দায়িত্ব নিতো।
ফলে ফরমেশন আবার ৪-৩-৩ হয়ে যেত।
উঠে যাওয়া লেফট/রাইট ব্যাক পেছনে এসে পড়লে, নেমে যাওয়া
মিডফিল্ডার আবার সামনে যেত। ফরমেশন তখনো অপরিবর্তিত!
পুরো খেলাটাই ছিলো অতি আক্রমণাত্বক মনোভাবের।
১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ড টোটাল ফুটবলের চমকপ্রদ প্রদর্শনীতে সবার মন জয় করে নেয়।
আফসোস! তারা বিশ্বকাপ জয় করতে পারেনি। ব্যাপারটা অনেক বেশি বেদনাদায়ক। কেন? সেটা একটু পরেই জানতে পারবেন।
আবার কৌশলে ফিরে আসি।
দলের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া টোটাল ফুটবলের পূর্বশর্ত।
এছাড়াও রয়েছে গতি আর বুদ্ধিমত্তার এক চমৎকার সমন্বয়।
ইয়োহান ক্রুইফ ছিলেন এমন ফুটবলার যিনি মাঠের যে কোন পজিশনে খেলতে পারতেন। পুরোদলে তিনি এ প্রভাব ছড়িয়ে দেন। ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ড যে ১৫টি গোল করে তার সব কটিতে ক্রুইফের অবদান ছিলো।
[ ক্রুইফের বিদায়ের পর নেদারল্যান্ড পর পর দুই আসরে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণই করতে পারেনি।
এবার বুঝুন তার অবদান! ]
বিশ্বকাপ না জেতা এ দল নিয়ে কেন এত মাতামাতি?
পেলে, ম্যারাডোনা, জিদান ফুটবলকে কি দিয়েছেন?
কেমন বেখাপ্পা প্রশ্ন করে বসলাম!
জনপ্রিয়তা? ব্যাক্তিগত নৈপুণ্য? সৌন্দর্য্য?
আর?????
ক্রুইফ ও তার দল ফুটবলকে কি দিয়েছেন?
একটি দর্শন। যে দর্শন আধুনিক ফুটবলকে করেছে সমৃদ্ধ।
৮০'র দশকের পর ফুটবলের ফরমেশন, স্ট্র্যাটেজিতে যে সব বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে তাতে টোটাল ফুটবলের বেশ প্রভাব রয়েছে।
ফুলব্যাক পজিশনের সামনে গিয়ে আক্রমণ করা, উইঙ্গারের পজিশন বদল, ১-২-১ পাসে একজন মিডফিল্ডারের স্ট্রাইকারে পরিণত হওয়া এই ধরনের পরিবর্তন গুলোর পেছনে টোটাল ফুটবলের দর্শন বেশ ভালো ভাবে জড়িত।
ক্রুইফের সময়ের টোটাল ফুটবলের এখন আর অস্তিত্ব নেই।
কিন্তু পরিবর্তিত আর পরিমার্জিত হয়ে সেটা এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে!
বিশ্বকাপের দুর্ভাগ্য। সে ক্রুইফ আর তার দলের হাতে উঠতে পারেনি!
বর্তমান সময়ের বার্সেলোনা আর আর্সেনাল তাদের খেলায় আধুনিক টোটাল ফুটবলের স্বাদ দিয়ে যাচ্ছে আমাদের।
এছাড়াও আরো অনেক ক্লাবে টোটাল ফুটবলের পরোক্ষ স্পর্শ দেখতে পাবেন।
ফুটবল একাডেমিতে নিবিড় ভাবে বেড়ে উঠা একদল কিশোরই পারে পরিপূর্ন একটি টোটাল ফুটবলের দল গঠন করতে। কেননা পরিপূর্ন দলীয় বোঝাপড়া ছাড়া টোটাল ফুটবল কখনোই সফলতা লাভ করতে পারেনা।
ডাইনামিক পজিশনে খেলার মানসিকতা ক্লাব একাডেমি ছাড়া গড়ে উঠা মোটামুটি অসম্ভব।
কিন্তু টাকার হাতছানি উপেক্ষা করে কয়টি ক্লাব পারে তাদের মূল্যবান খেলোয়াড়কে বিক্রি না করে থাকতে??
বিশ্বকাপ না জিতেও টোটাল ফুটবলের বার্তাবহন করে নেদারল্যান্ড ঠাঁই করে নিয়েছে ইতিহাসে পাতায়, মানুষের মনে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।