আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন সিমু নাসের ও '' মেরিল- প্রথমআলো '' নিয়ে প্যান পেনানি ......

জাতি হিসেবে আমরা ভয়াবহ আবেগপ্রবণ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বেলায় আমরা সবাই শাহবাগে একত্র হয়েছি, তাজরিন গার্মেন্টস পুড়ে যাবার পর বিজিএমইএ-র সামনে আন্দোলন করেছি, এবার সাভারে আহতদের ও উদ্ধারকর্মীদের জন্য বিস্কুট/পানি নিয়ে ছুটে গিয়েছি। সরকার যা করতে পারেনি, তা আমরা করে দেখিয়েছি। আমাদের আশেপাশের মানুষের জন্য আমরা নিঃস্বার্থ ভাবে এগিয়ে এসেছি। এবারের মেরিল-প্রথম আলো তারকাদের পুরস্কার অনুষ্ঠান ঠিক সেরকম একটা মানুষের পাশে দাড়ানোর জন্য স্বার্থহীন উদ্দ্যোগ ছিল।

হ্যা, অনুষ্ঠানের প্রাথমিক পরিকল্পনায় সেটা ছিল না ঠিক কিন্তু পরিবর্ত পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠানের অনেক কিছু কাটছাট করে এটাকে একটা ফান্ড রাইজিং অনুষ্ঠান হিসেবেই সাজানো হয়েছে। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই শিল্পীরা একত্রিত হয়ে এই হত্যাকান্ডের বিচার চাইতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। হ্যা, সীমীত পরিসরে নাচ-গান ঠিকই হয়েছে, কিন্তু এরই মধ্যে ৫৫ লাখ টাকা যোগাড়ও হয়েছে। এখন থেকে ২ সপ্তাহ পরে যখন আমরা সবাই রানা প্লাজার কর্মীদের কথা ভুলে যাব, যখন আমাদের দেওয়া বিস্কুট আর পানি ফুরিয়ে যাবে, তখন এই ৫৫ লাখ টাকা কি সাংঘাতিক কাজে আসবে, তা কল্পনার বাইরে। এক আসরে এত বিপুল অঙ্কের টাকা যোগাড় করা এবং তারকাদের স্বতস্ফূরত কন্ট্রিবিউশন সত্যিকার অর্থে একটি বিশাল কাজ।

এই বিশাল কাজটা খুব সহজে প্রথম আলো করতে সক্ষম হয়েছে। থ্রেডে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, তারকাদের যদি এতই দেওয়ার শখ থাকতো, আগে দেননি কেন? আগে দিয়ে কি হত, কেউ কি একটু বুঝিয়ে বলবেন? যারা উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণ করেছেন এবং দিনরাত সাভারে ছিলেন, তাদের যে কাউতে জিজ্ঞেস করলে বলবে, "টাকা দিয়ে কি করবো? এর চেয়ে বরং ২ কার্টন স্যালাইন পাঠিয়ে দেন। " এনাম হাসপাতালে যেসকল ডাক্তার কাজ করেছে, তারাও টাকার কথা শুনে চোখ-কপালে তুলে বলবেন, "তিনদিন হল বাসায় যাইনা। এক প্যাকেট গ্লুকোজ ম্যানেজ করতে পারবেন?" আহতদের বেশিরভাগই বিনামূল্যে চিকিতসা পাচ্ছেন কারণ এই সময়ে টাকার হিসেব রাখা সম্ভব না। আর টাকা গুনে চিকিতসা দেওয়া-নেওয়ার প্রশ্নই আসে না।

এর পাশাপাশি নানা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি থেকে বিপুল পরিমাণ ঔষধ সাভারে পৌছে দেওয়া হয়েছে। স্কয়ার, প্রাণ, অলিম্পিক ইত্যাদি বিপুল পরিমাণ খাবার সাপ্লাই দিচ্ছে প্রতিদিন। সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো নিরন্তর খাটছে, টর্চলাইট থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার - যেখান থেকে সম্ভব, সাভারে পৌছে দেওয়া হয়েছে। গত তিনদিন যেই অবস্থা ছিল, এর মধ্যে ক্যাশ টাকা দিয়ে আসলে কোন কিছু করা সম্ভব ছিল না। টাকা দেওয়ারও কোন স্থান ছিল না।

লাশের গন্ধে এখন আর রানা প্লাজায় কাজ করা যাচ্ছে না। উদ্ধারকাজ আস্তে আস্তে গুটিয়ে আসছে, এরপর আর কারো ধ্বংশস্তুপের নিচে বেঁচে থাকা ডিফিকাল্ট। হাসপাতালে প্রচুর ঔষধ আছে, চিকিৎসা চলছে - কিন্তু দুই-একদিনের মধ্যে বড় বড় অপারেশন করতে হবে অনেকেরই। ক্রাচ সরবরাহ, প্রসথেটিক্স সার্জারি, ফিজিওথেরাপি ইত্যাদির প্রয়োজন হবে, যা করবার জন্য টাকা লাগবে। শতাধিক আহতদের মাঝে যাদের এই অপারেশন বা সাপোর্ট লাগবে, তাদের লিস্ট এখন থেকে তৈরী করা শুরু হয়েছে।

এই লিস্ট অনুযায়ী যদি আহতদের যথাযথ টাকা দিয়ে লং টার্ম মেডিকেল ট্রিটমেন্ট করা যায়, তাহলে সত্যিই দারুণ হবে। যারা উদ্ধারকাজে আগে বা এবারে অংশগ্রহণ করেছেন, তারা হয়তো বুঝতে পেরেছেন প্রতিনিয়ত চাহিদা কিভাবে পাল্টাচ্ছে। অনেক মানুষ জড় হয়ে গেলে কাজে সমস্যা হয়। সেক্ষেত্রে এখন যদি প্রথম আলোর সাংবাদিকরা আর তারকারা মিলে সাভারে জড়ো হতেন, কাজের চেয়ে অকাজ বেশি হত। লাশের গন্ধ সহ্য করে জীবিতদের উদ্ধার করা টিভিতে যেরকম সহজ মনে হয়, বাস্তবে তা করবার জন্য প্রচুর স্ট্যামিনা প্রয়োজন।

কাজেই যারা এই কাজটা ভাল পারেন, শুধুমাত্র তারা এবং এলাকার লোকজন এগিয়ে এসেছে বলে উদ্ধারকাজ এখন পর্যন্ত ইফেক্টিভ। যেকোন সিচুয়েশনে আমরা বারবার বলি, সরকার থেকে কেউ এল না? গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এগিয়ে আসবেন না? তারকারা কি শুধুই বিনোদনের জন্য, মানুষের জন্য নয়? শুধুমাত্র ঘ্যানর ঘ্যানর না করে প্রথম আলো যে তাদের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারকাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে পেরেছেন এবং তারকাদের শুধু সমবেদনাশীল বক্তৃতা নয়, বরংচ বাস্তবে মানুষের পাশে এনে দাঁড় করিয়ে দিতে পেরেছে। যে যার জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে প্রয়োজন বুঝে এগিয়ে আসলে সত্যিকার অর্থে কিছু একটা করা সম্ভব। আমি গত তিনদিন ধরে আমাদের সাভার টিম, এনাম হাসপাতালের ডাক্তারদের সাথে কাজ করছি। মাইক্রোবাসে করে প্রতিদিন খাবার, ঔষধ, টর্চ, ইত্যাদি সাভারে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।

ফেসবুকে বসা তো দূরের কথা, ঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করা হয়নি। কোনমতে আপডেট জানিয়েছি যাতে অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সাভারে না পাঠানো হয়। রাখার জায়গা নাই। নাচ-গান করে হোক আর মাইকিং করে হোক, কাজ হওয়াটা দরকার। গ্রাউন্ড টিমের পক্ষ থেকে বলতে পারি, এখন থেকে ফান্ডের চাহিদা শুরু হয়েছে।

ক্রেডিবিলিটি চেক করে দান করুন। যেখানে সেখানে টাকা দিয়ে কোন লাভ হবে না। যাদের রিসোর্স আছে, বড় টিম আছে, হাসপাতালগুলোতে কাজ করার অনুমতি আছে - তাদেরকে ফান্ড দিয়ে সাহায্য করুন। সেই হিসেবে প্রথম আলো অলরেডি ৫৫ লাখ টাকা এগিয়ে গিয়েছে। আমরা মনে হয় ফেসবুকে তর্ক করতে করতে পিছিয়ে যাচ্ছি।

 ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.