অবশেষে ১৮৩১ সালের ১৩ নভেম্বর বৃটিশ সৈন্যর তাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে । তিতুমীর স্বধীনতা ঘোষণা দিলেন "ভাই সব , একটু পরেই ইংরেজ বাহিনি আমাদের কেল্লা আক্রমণ করবে । লড়াইতে হার-জিত আছেই । এতে আমাদের ভয় পেলে চলবে না । দেশের জন্য শহিদ হওয়ার মর্যদা অনেক ।
তবে এই লড়াই আমাদের শেষ লড়াই নয় । আমাদের কাছথেক প্রেরণা পেয়েই এ দেশের মানুষ একদিন দেশ উদ্ধার করবে । আমরা যে লড়াই শুরু করলাম , এই পথ ধরেই একদন দেশ স্বাধীন হবে । ১৮৩১ সালের ১৯ নভেম্বর এই শেষ এবং রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে বিপুলসংখ্যক মুজাহিদের পাশাপাশি তিতুমীরও শহীদ হন।
খুব সম্ভবত ১৮০৮-১৮১০ সালের কোনো এক সময়ে তিনি ভাগ্যন্বেষণে কলকাতা শহরে যান।
এখানেও তিনি কুস্তি লড়াইয়ের প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশ নিতেন। তিনি একবার কলকাতায় কুস্তি লড়াইয়ে প্রথম হয়েছিলেন। এরপর থেকে তিতুমীরের নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এই কারণে তিনি জমিদার মির্জা গোলাম আম্বিয়ার সুনজরে পড়েন এবং তাঁর সান্নিধ্য লাভ করেন। তিতুমীর এখানে বসে যুদ্ধ জয়ের সামরিক কৌশল আয়ত্ব করেন।
মির্জা গোলাম আম্বিয়া ছিলেন কলকাতার মির্জাপুর এলাকার জমিদার। তিতুমীর যেখানে যেতেন সেখানেই নানা বিষয় শেখার চেষ্টা করতেন ফলে কর্মজীবনে তিনি কোথাও স্থায়ী হতে পারেনি।
১৮২২ সালের কথা। তিতুমীরের বয়স তখন ঊনচল্লিশের কোঠায়। এ বছর হজব্রত পালনের জন্য তিনি মক্কায় গমন করেন।
সেখানে তার সাথে আরেক বিপ্লবী নেতার সাক্ষাৎ ঘটল। নাম সৈয়দ আহমদ। বেরেলির এই বীর ভারতের মাটি থেকে ব্রিটিশ বেনিয়াদের তাড়াতে সংগ্রাম করছিলেন। তিতুমীর সৈয়দ আহমদের সংস্পর্শে এসে বিপ্লবী চিন্তাধারায় উজ্জীবিত হন। স্থানীয় জমিদারদের সঙ্গে তাঁর সংঘর্ষের অন্যতম কারণ ছিল ‘পুণ্যাহ’ নামের এক অনুষ্ঠানের বিরোধিতা।
তিতুমীর জমিদারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে শুরু করলে জমিদারেরাও খেপে গেলেন। তাঁরাও আন্দোলন দমন করার জন্য শুরু করলেন অত্যাচার। এ কারণ্রেতিতুমীরের আন্দোলন ধীরে ধীরে গণ-আন্দোলনে রূপ নিতে শুরু করে।
তিতুমীর ছিলেন আপসহীন নেতা। ইসলামের একনিষ্ঠ এই সাধক দ্বীন কায়েমের সংগ্রামে ছিলেন অটল-অবিচল।
চবি্বশ পরগনা জেলার হায়দরপুর গ্রামে ১৭৮২ সালে মীর নিসার আলি ওরফে তিতুমীরের জন্ম৷ ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে বা ১১৭৬ বঙ্গাব্দে বাংলায় এক ভয়াবহ দুর্ভিৰ হয়, তা ছিয়াত্তরের মন্বনত্মর নামে খ্যাত৷ সে দুর্ভিৰে এ দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জনসংখ্যা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়৷ সে সময়ে দেশে ছিল চরম অরাজক অবস্থা৷ সে সঙ্গে চলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজস্ব আদায়ের অত্যাচার ও জবরদসত্মি৷
১৮০১ সালে ১৮ বছর বয়সে তিতুমীর কোরানে হাফেজ হন এবং হাদিস বিষয়ে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। সেইসাথে তিনি বাংলা, আরবি ও ফারসি ভাষা, দর্শন ও কাব্যশাস্ত্রে সমান দক্ষতা অর্জন করেন। তিনি জ্ঞান অর্জনের জন্য সময় পেলেই ঘুরে বেড়াতেন দূর-দূরান্তে, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে। এভাবে চলতে থাকে বেশ কিছু দিন। তিতুমীর তাঁর গ্রামের দরিদ্র কৃষকদেরকে সাথে নিয়ে জমিদার এবং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়ে আন্দোলন শুরু করেন।
তিনি এবং তাঁর অনুসারীরা তৎকালীন হিন্দু জমিদারদের অত্যাচারের প্রতিবাদে ধুতির বদলে 'তাহ্বান্দ' নামে এক ধরনের বস্ত্র পরিধান শুরু করেন। ১৮২৮ সাল পর্যন্ত তিতুমীরের মুসলিম সমাজ গঠনের দাওয়াত শান্তিপূর্ণভাবে চলে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।