মানুষ আসে মানুষ যায় কিন্তু সময় যায় চিরতরে
লালবাগের মদিনা টাওয়ার, বৃহস্পতিবার বাড়িটি ঘিরে ভিড় জমে যায়। দলবেঁধে মানুষ আসতে থাকে। ১০ তলায় উঠে বসার ঘরে অপেক্ষা করে আগন্তুকরা একে একে ভেতরে ঢোকে। এ টাওয়ারের দশম তলায় পাশাপাশি দুটি কক্ষে স্বামীসহ আছেন রুনা ও আসমা।
গত বুধবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাতৃস্নেহজড়িত তত্ত্বাবধানে তাঁদের বিয়ে হয়।
ওই বিয়েতে অনেকেরই ইচ্ছা থাকলেও যাওয়া হয়নি। ফলে সশরীরে হাজির হয়ে নতুন দম্পতিদের আশীর্বাদ করতে যান অনেকেই। একই অবস্থা ছিল চানখাঁরপুল লাগোয়া নবাব বাগিচা এলাকার ৫৪/৪ নম্বর বাসাটি ঘিরে। বুধবার মধ্যরাতে গণভবন থেকে নতুন বউ নেওয়া হয়েছে এ বাড়িতে। সকাল থেকে অতিথি-শুভাকাঙ্ক্ষীদের সামলাতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন রত্না-সুমনের পাশাপাশি তাঁদের স্বজনও।
সংবাদকর্মীদের ভিড় তো ছিলই।
বিয়ের পর প্রথম দিন গতকাল দিনভর এ রকম ব্যস্ততার মধ্যে কেটেছে তাঁদের। শুভাকাঙ্ক্ষী স্বজন ছাড়াও অপরিচিত অনেকেই আশীর্বাদ করতে যান রুনা, রত্না ও আসমাকে। সবাই শোক ভুলে নতুনভাবে জীবন শুরু করার প্রেরণা দেন তাঁদের। void(1);
নিমতলীর ভয়াবহ ট্র্যাজেডিতে স্বজন হারিয়েছেন তাঁরা।
অনেক কষ্ট। অনেক শোক। এর মধ্যেই তাঁরা ভালোবাসা, সানি্নধ্য আর মাতৃস্নেহ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
রুনা ও আসমা দম্পতির নতুন জীবনের প্রথম দিন কেটেছে উকিল বাবা হাজি সেলিমের মদিনা টাওয়ারে। অন্যদিকে রত্না দম্পতি আছেন সুমনের ভগি্নপতি মোহাম্মদ আলীর বাসায়।
ভিড় ও অতিথিদের সামলেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রুনা-রত্না তাঁদের স্বামীসহ আজিমপুর কবরস্থানে গিয়ে মা ও স্বজনের কবর জিয়ারত করেন। আসমা তাঁর স্বামীকে নিয়ে যান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অগি্নদগ্ধ বাবার কাছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মদিনা টাওয়ারে বসে কথা হয় উম্মে ফারিয়া আক্তার রুনা ও তাঁর স্বামী সৈয়দ রাশেদ হোসেন জামিলের সঙ্গে। কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা দুজন জানালেন নানা অনুভূতির কথা। জামিল বললেন, 'পুরো ব্যাপারটি এখনো স্বপ্নের মতো।
এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না, প্রধানমন্ত্রী রুনাকে আমার হাতে তুলে দিয়ে বলেছেন, আমার মেয়েকে তোমার হাতে দিলাম। দেখে রেখো। '
বিয়ে শেষে প্রধানমন্ত্রী কী বলেছেন_রুনার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ভালোভাবে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন মা। বলেছেন, তোমাদের যেভাবে তুলে দিয়েছি, শেখ রেহানাকেও ঠিক এভাবে তুলে দিয়েছিলাম। আমাদের কেউ ছিল না।
আজ তো আমি তোমাদের পাশে আছি। '
পাশের কক্ষে ছিলেন আসমা ও তাঁর স্বামী আলমগীর হোসেন। আলমগীর পেশায় একজন ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি। আসমা নিমতলী ট্র্যাজেডিতে তাঁর মা-নানিসহ স্বজনদের হারিয়েছেন। ঘটনার পরের দিন ৪ জুন তাঁদের পানচিনি হওয়ার কথা ছিল।
আলমগীরের কাছে তাঁর অনুভূতির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী তাঁর মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিয়েছেন। কোথায় কিভাবে প্রধানমন্ত্রীর মেয়েকে রাখব? আমি যেন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এ দায়িত্ব পালন করতে পারি। '
প্রধানমন্ত্রী কী দিয়েছেন_আসমার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'মা যেমন তাঁর মেয়েকে দেন, তার সবকিছুই। প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে চুড়ি ও অন্য অলংকার পরিয়ে দিয়েছেন, মা যেমন দেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, একদিন সকাল বেলা উঠে দেখি, আমার বাবা-মা, ভাইসহ পরিবারের সদস্যরা নেই।
স্বজন হারানোর কষ্ট আমিও বুঝি। ' আসমা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাঁর বাবার জন্য দোয়া চেয়ে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী নিজে আমার বিয়ে দিয়েছেন, বাবা শুনলে অনেক খুশি হবেন। '
সুমন ও রত্না আছেন ৯৪/৪ নবাব বাগিচায়। তাঁদের দুজনেরও বিয়ে পাকাপাকি ছিল। রত্না ও রুনা মাসহ স্বজনদের হারিয়েছেন।
ওই দুর্ঘটনায় সুমনের একমাত্র ছোট ভাই অনিক মারা গেছে। সুমন বললেন, 'হাসি-কান্না দুটিই আছে। স্বজন হারিয়েছি। কাছে পেয়েছি প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি নিজ হাতে রত্নাকে আমার হাতে তুলে দিয়েছেন।
দোয়া করবেন, আমি যেন প্রধানমন্ত্রীর ভালোবাসার দান রক্ষা করতে পারি। '
রত্না কান্নাজড়িত কণ্ঠে আগুনে নিহত মাসহ তাঁদের স্বজনদের পাশাপাশি দোয়া চাইলেন মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্যও। বললেন, 'তাঁকে যেন দীর্ঘ আয়ু দেন আল্লাহ। '
পাশেই ছিলেন সুমনের চাচি শিখা বেগম। গণভবনের বিয়েতে ছিলেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'শুরু থেকেই ছিলাম।
' উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর একেবারে কাছে গিয়েছি, তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি। ' কী কথা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'একেবারে যেন সাধারণ একজন মানুষ। এত বড় মানুষ, তার পরেও কোনো অহংকার নেই তাঁর। আমি একবার তাঁর হাত ধরেছিলাম। অনেক ভালো লেগেছে।
'
সুমনের ভগি্নপতি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী সুমনকে বেসিক ব্যাংকে চাকরি দিয়েছেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ওই চাকরিতে যোগ দেবে সুমন। '
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।