..............
আমাদের মধ্যে এমন একজন জন লোক খুজতে হাজার জন লোক ব্যাবহার করতে হবে যে কিনা ছোট্ট বাচ্চাদের পছন্দ করে না। আদর, মায়া মাখানো মুখে চুমু খেয়ে বুকে জরিয়ে নিতে ইচ্ছে করবে না এমন লোক ও হয়ত খুব বেশি নেই।
কেও ক্রা ডং ( বাংলাদেশের সবচেয়ে উচু পাহার ) ট্রেকিং করে চট্রগ্রাম হয়ে ঢাকা ফিরছিলাম আমাদের ছোট্র টিম (ওয়ালিদ, ইউসুফ, লোপা, ইসমাত, রিয়াসাত, অয়ন দা এবং আমি )। সবাই খুব ক্লান্ত হলেও ঠিক করলাম চ্ট্রগ্রাম হয়ে যাওয়ার সময় ওখানকার নতুন কে এফ সিতে ডুকবো এবং জিংগার বার্গার খাবোই খাবো। আমার অবার নতুন নতুন খাবারের দোকানে ডোকার শখ টা অনেক পুরনো।
কে এফ সি পৈাছতে রাত এগারটার কিছু বেশি বেজে যাওয়ায় অতি আদিম শখ টা পুরন হলো না আমার। বান্দর বন থেকে চট্রগ্রাম পযন্ত যে মাইক্রো টি আমাদের নিয়ে আসছিল ওটা আমাদের কে এফ সি থেকে বাস কাউন্টারে নিয়ে যাওয়ার জন্য যখন চলা শুরু করল তার কিছুক্ষন আগে অল্প মোটা সোটা ৯/১০ বছরেরে একটি বাচ্চা ছেলে আমাদের গাড়ী লক্ষ করে আসছিল, মনে হচ্ছিল ছেলেটি খুরিয়ে খুরিয়ে আসছে । একটু অন্ধকার হওয়াতে পুরো ব্যাপার টা অস্পস্ট হলেও ওর আসতে খুব কষ্ট হচ্ছিল সেটা স্পস্টই ছিল। স্ক্রেচ এ ভর দিয়ে আসতে আসতে যখন ও একদম আমাদের গাড়ীর কাছে তখন দেখলাম ওর একটি পায়ের হাটুর উপোর পর্যন্ত কাটা। এক পায়ের প্রায় অর্ধেকের বেশি না থাকলেও হাত দুটি ওর ঠিকই আছে।
এক হাতে স্ক্রেচ এ ভর দিয়ে যখন অন্য হাতটি আমাদের দিকে পেতে দিল তখন ওর অদ্ভুত মায়া মাখা মুখটিতে ছিল আকুলতা আর হতাশা। ওর ঠোট দিয়ে কথা বের হচ্ছিল না, মাথা নেরে ও যা বোঝাতে চেষ্টা করছিল তা বুঝতে না পারলেও এটা বুঝেছি যে ফুটফুটে, অসম্ভব রকম মায়া মাখা অত অল্প বয়য়ে এক পা হারানো এই বাচ্চাটা খুব ই অসহায়। আমাদের মধ্যে থেকে সবাই মোটা মুটি কিছু কিছু করে টাকা দিলাম।
আমাদের গাড়ী ততক্ষন এ চলতে শুরু করেছে আগে থেকে ঠিক করে রাখা শ্যামলি বাস এর কাউন্টারের দিকে। লক্ষ করলাম কোন কারন ছারাই আমার পৃথিবী টা শুন্য হয়ে যাচ্ছিল।
যতই কে এফ সি থেকে দূরে যাচ্ছিলাম খারাপ লাগা ততই বরছিল। ওর হাত পাতার সময়ের মায়া মাখা মুখটা ভাসছিল, এক সময় কেদেই ফেললাম । গাড়ীর গতি বারার সাথে সাথে আমার অপরাধ বোধ ও বারছিল। কেন যেন শান্তি পাচ্ছিলাম না।
আমরা ১১.৩০ এর মাঝেই বাস কাউন্টারে চলে আসলাম ।
বাস ছাড়বে ১২.৩০ এ । ওকে আবার ও দেখতে খুব হচ্ছে করছিল আর হাতে সময় টাও একদম কম না । আমি একটা রিকশা নিয়ে চলে গেলাম কে এফ সির ওখানে। ওকে না পেয়ে মনটা ভিষন খারাপ থেকে আরো খারাপ হয়ে গেলো। ওর খোজ নেয়ার চেষ্টা করে যা জানতে পারলাম তা শুনে আমি শুধু অবাক ই হইনি নিজেকে অনেক ছোট লাগছিল, শুধু নিজের জন্য বেচে থাকার জীবন টাকে অর্থহীন মনে হচ্ছিল ।
সুমন ওখানে ভিক্ষা করে ওর টাকার অনেক দরকার নেই তাই সে সপ্তাহে দুই দিন ভিক্ষা করে। ওর পরিবার এক সময় সচ্ছল ছিল । ওর বাবার কি একটা ব্যাবসা ছিল । সুমন আরোও ছোট থাকতে ওর বাবা মারা গেছেণ। তখন ই ওর মা কিছুটা মানুষিক ভারসম্যহীন হয়ে পরে।
সুমনের দেখাশোনা করার তেমন কেউ বাকি থাকে না আর। ওভাবেই বড় হয়ে উঠতে থাকে সুমন। একদিন খেলতে খেলতে রেল লাইনে পা আটকে যায় সুমনের। বাচার জন্য ওর চিংকার কারও কানে পৈাছেনি, ওর যে জন্ম থেকেই কথা বলার ক্ষমতা দেয়নি গড। কোন রকমে বেচে গেলেও ওর পাটির আর শেষ রক্ষা হয়নি।
সুমনের কথা বলাতে পারে না, তাই ও কখনোই পারেনা ওর ইচ্ছের কথা কাউকে বলতে। ওর পা নেই অনেক ইচ্ছে থাকলেও ও পাড়ে না মাঠে গিয়ে ওর বয়সি বাচ্চাদের সাথে একটু খেলতে। ভাবা যায় এই বয়সে এত কিছু হারিয়ে ছেলেটা পরাশোনা করে অনক দূর যেতে চায়। ও যে স্কুলে পরে সেই স্কুল টা ওর থাকার যায়গা থেকে একটু দূরে আর ও হেটে যাবে সেই সামর্থ ও সুমনের নেই । তাই ওর স্কুলে যেতে হলে ওর রিকশা নিতে হয় রিকশার ভাড়া দেওয়ার ক্ষমতা ওর পরিবারের এখন নেই ।
সব শক্তি সামর্থ শেষ এই পরিবারটির কিন্তু যেটা আছে সেটা হল সুমনের বর হওয়ার তিব্র আকাঙ্খা আর তাই সুমন সপ্তাহে দুই দিন ভিক্ষা করে ভাড়ার টাকা আর পরার টাকা জোগার করতে। আর আমাদের মত কিছু বিলাসী ভিক্ষুক যাদের ভিক্ষার কোন সেষ নেই, যারা আমরা জিংগার বার্গার খাই আর বের হয়ে সুমনদের দু এক টাকা ভিক্ষা দিয়ে নিজেদের দায় মুক্ত ভাবী, তারা শুধু দেথেই যাই , এই আমাদের কি কোন কিছুই কারার নেই ?? আমারা কি কখনই মানুষ ভাববো না নিজেদের ? আমারা কি পারিনা এই সুমনদের পাশে একটু দারাতে ? আমরা কি শুধু নিজেদের জন্য বাচতে বাচতে অর্থহীন করে দেব আমাদের বেচে থকা?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।