আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টিআইবির ইয়েস গ্রুপের সঙ্গে কয়েক ঘন্টা

অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া!

তরুনদের সঙ্গে কথা বলার, সময় কাটানোর সুযোগ পেলে আমি সচরাচর মিস করি না। কাজে, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক যখন বললেন তাদের ১৩টি ইয়েস গ্রুপ জড়ো হয়েছে মানিকগঞ্জে এবং আমি যদি যেতে চাই তারা খুশী হবেন, আমি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়েছি। যদিও জানতাম দুইঘন্টার একটি সেশন চালানোর জন্য প্রেজেন্টেশন, কাগজপত্র বানানো সম্ভব হবে না। শুক্রবার দুপুর বেলায় টিআইবির তানহা আমাকে বাসা থেকে তুলে নিয়েছে।

গাড়িতে আরো ছিলেন মৈত্রী হলের হাউস টিউটর লিপিকা। যাত্রা পথে আমি জেনে গেলাম ইয়েস গ্রুপের কার্যক্রম। বছর দেড়েক আগে থেকে টিআইবি এই গ্রুপ তৈরি করতে শুরু করে। এখন ৪৯টি গ্রুপ আছে যার মধ্যে ১৬টি ঢাকায় আর বাকীগুলো ঢাকার বাইরে। দুর্নীতির ব্যাপারটাতো থাকছে, থাকছে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির কার্যক্রম।

এক বছর কতোটা কাজ হলো আর কী কী ভাবে এগোনো যায় সেটা নিয়ে কয়কেদিন ধরে ঢাকার বন্ধুরা জড়ো হয়েছে মানিকগঞ্জে। পরের দিন শনিবার ওদের ক্যাম্প শেষ হবে। আমি শুক্রবার দুপুরের খাবারের পর দুইঘন্টা ওদের সঙ্গে কাটানোর সুযোগ পেয়েছি। আমি অবশ্য যাত্রাপথটা ভালই ব্যবহার করেছি। তানহা, লিপিকা আর শহিদ ভাই (আমাদের গাড়ি চালক) সহ আমরা নানান বিষয়ে আলাপ করেছি।

লিপিকা যেহেতু একটি মেয়েদের হলের সঙ্গে যুক্ত ফলে তিনি ৬০০ প্রায় একই বয়সের মেয়েদের কাছে থেকে দেখার সুযোগ পান। কাজে আমাদের বেশিরভাগ প্রশ্ন ছিল তার কাছে। কয়কেটি পীড়াদায়ক গল্পও শুনতে হয়েছে। সবচেয়ে কষ্ট পেয়েছি সেই মেয়েটির কথা শুনে যে বন্ধুদের কাছে নিজের বাবাকে কাকা বলে পরিচয় করিয়ে দিত! কারণ, তার এখনকার যে বন্ধু-বান্ধব তাদের স্ট্যাটাসের সঙ্গে নিজেদেরকে ছোট মনে হতো তার। সে জন্য সে তার বন্ধুদের ভুল ধারণা দিত।

আর এক মেয়ের কথা শুনেছি, যে কীনা কোন কথা এমনকী তার রুমমেটদেরও শেয়ার করে না! আমাদের বকবকানির উদ্দেশ্য ছিল সাম্প্রতিক সময়ে মেয়েদের আত্মহনন নিয়ে। এ আলোচনায় স্বভাবত এসেছে আমরা বিকেলে কী করতাম। আমাকে বলতে হলো যে, আশির দশকে আমাদের বিকেলগুলো বেশিরভাগ আমরা টিএসসি চত্ত্বরে কিংবা এদিক ওদিক কাটাতাম। আমাদের সময়ে ইচ্ছে করলেই আমরা কোন মেয়েকে আমাদের ভাললাগার কথা বলে ফেলতে পারতাম না। আমাদের প্রচুর প্রস্তুতি নিতে হতো।

নিজেদের জাহির করার জন্য আমরা কবিতা আবৃত্তি করতাম, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় নাম লেখাতাম। পারি না পারি সাংস্কৃতিক সপ্তাহে নাম লেখাতাম। এসবই আমাদেরকে এমনভাবে আকৃষ্ট করতো আর আমরা ভাবতাম এসব করে আমরা কারো না কারো প্রিয় হতে পারবো! এসবের ফলে আমাদের অনেকের মূল উদ্দেশ্য পূরণ না হলেও কেহ ভাল আবৃত্তিকার হতো, কারো লেখার হাত ভাল হতো, কারো বা হতো তর্কে বুতপত্তি! মোবাইল আর ইন্টারনেট আর সময়ের অগ্রসরমানতা এখনকার তরুন-তরুনীদের দূরত্ব অনেক কমিয়ে দিয়েছে। সামনে থেকে বলা যাচ্ছে না (বুক কাঁপে) মোবাইল আছে, মুখে বলতে পারছি না এসএমএস করো। না পারলে ই-মেইল।

নিদেন পক্ষে ফেসবুক। কাজে, নিজেকে প্রকাশের পথটা সহজ এবং হাতের নাগালে। শুধু ছেলেদের বেলায় নয়, এ কথাগুলো সমানভাবে প্রযোজ্য মেয়েদের বেলায়ও। নিজেকে সহজে প্রকাশ করছি বলে কি আমরা নিজেদের ছাপিয়ে যাওয়ার কাজটা বাদ দিয়েছি??? নইলে, লিপিকা কেন বলবেন যে হলের কালচারাল উইকে পার্টিসিপেন্ট পাওয়া যায় না!!! আমি ঠিক জানি না। আমি সমাজ বিজ্ঞানী নই, কাজে প্রশ্নের জবাব আমার কাছে নেই।

কিন্তু প্রশ্রগুলো আমাকে ভাবায়। কারণ আমি মনে করি, প্রত্যেক মানুষের তার জীবনকে রঙ্গিন করার দায়িত্ব তার নিজের। রঙ্গিন করার জন্য কতো আয়োজন এখন। সেগুলোর ছোয়া কেন সবাই নিতে চায় না!!! গল্প করতে করতে আমরা পৌছে গেছি প্রশিকার কেন্দ্রে। আমি কোন উপস্থাপনা নিয়ে যাই নি, কাজে আমার ভরসা ছিল গল্প বলা।

আমি শুরু করেছিও ঐ গল্প বলে। তবে, চেষ্টা করেছি গল্প যেন আমি একা না বলি, সবাই যেন সেখানে অংশ নিতে পারে। আমার জন্য একটা থিম ছিল - দুর্নীতি নিয়ন্ত্রনে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার। গল্পগুলো সে আদলে হয়তো হতে পারতো। কিন্তু সব গল্প সেরকম হয়নি।

শুরুতে আমরা একটি বিতর্ক করেছি ফেসবুক নিয়ে। একজন মাত্র তরুন সবার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ফেসবুকের বিরুদ্ধে বললো। তবে, দেখা গেল তার যুক্তিগুলো ততোটা জোরালো নয়। আমরা দেখেছি বাংলাদেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি আছে যে ডিজিটাল যন্ত্রটি সেটির নাম মোবাইল। কাজে সবাই ভাবলো মোবাইলের গল্প হোক।

আমি তখন মোবারকগঞ্জ আর ফরিদপুর চিনি কলের পুর্জির গল্পটা বলেছি। ওদের বললাম যে, ১৯৩৫ সাল থেকে সুগারকলগুলো আখচাষীদের একটি পারচেজ অর্ডার দেয় যা ফার্সি ভাষায় পুর্জি নামে পরিচিত। এটি একটি কাগজ যেখানে লেখা থাকে কোন দিন মিলের গেটে আখ নিয়ে চাষীকে যেতে হবে। ওদের বললাম চাষীদের কী কী ভোগান্তি হয় আর বর্ণনা করলাম কীভাবে সমগ্র প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়। তারপর ওদের কাছে জানতে চাইলাম সমাধান।

ওরা নানান ভাবে আলোচনা করলো, প্রথমে চাষীদের একটা ডেটাবেস আর স্মার্ট কার্ড দিতে চাইলো। বললাম দুইমাসের জন্য দরকার কী, কার্ডটার জন্যতো কারো কাছে যেতে হবে! ওরাই বললো তাহলে প্রত্যেক চাষীর মোবাইল নম্বর নেওয়া হোক। সই। তারপর কাগজের বদলে কী হবে? এসএমএস! সহজ। তারপর আমি জানালাম ঠিক এই কাজটি করা হয়েছে ঐ দুই চিনি কলে ২০১০ সালের শুরুতে।

দুই মিলের ২০ হাজার চাষী এবার উপকৃত হয়েছে, কোন ভোগান্তি ছাড়াই তারা তাদের পুর্জি পেয়েছে। গল্পের মটো কী -- ওরাই বের করে ফেললো: হাতের কাছে যা আছে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার। প্রশাসনকে চোখে আঙ্গুর দিয়ে কিছু দেখিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে মোবাইল আর ইন্টারনেট কী করতে পারে তারও দুই একটা গল্প হলো। তবে, সবচেয়ে বেশি হলো নিজেদের গল্প। কেমন করে সবার পক্ষে পরিবর্তনের দিশারী হয়ে ওঠা সম্ভব।

কেমন করে, নিজেকে বদলানো যায়। নিজে বদলালে তবেই না অন্যকে বদলের কথা বলা যায়। কে কী কাজ করতে চায় সেটিও আলাপ হলো। কেবল আর্থিক দুর্নীতি নয়, অন্যান্য দুর্নীতিগুলোর আলাপও হয়েছে। শুরুতে একটি ভিডিও দেখলাম।

ঢাকার একটি দল ধানমন্ডির রাস্তায় নিয়ম না মানা গাড়িগুলোকে ঘুরিয়ে দিচ্ছিল। বলছিল, নিজের পথে থাকতে। আমাদের সমাজে এক ধরণের অস্থিরতা আছে। সে হুজুগে না মাতলেই ভাল। আলাপ হলো কর্মসংস্থান নিয়ে।

বলেছি খালি চাকরী খুজলে হবে না, চাকরী দেওয়ার জন্য তৈরি হতে হবে। ব্যবসার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি যোগ উদ্ভাবনের আর সম্মুখে দেখার। বিল গেটসের গল্প বলেছি। বলেছি এক লক্ষ ডলারের পরিবর্তে মাত্র ১ ডলার নিয়েছিলেন বলে আজ তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী লোকের একজন। সবাই বলেছে, এই সময়টাতে ওরা নানান কিছুতে যুক্ত হতে চায়, আনন্দে মাততে চায়।

বলেছি সেটাই করতে হবে। গভীর রাতে হলে মনে হবে গ্রামে যাই- উঠে তাতক্ষণাত রওনা দিতে হবে। দলবেধে পেয়াজু খেতে ইচ্ছে হলে সেটা খেতে হবে, তখন তেল না মোবিল তা নিয়ে বিতর্ক করা যাবে না!!! আর বলেছি মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর গল্প। উনসত্তরে তিনি গ্রামে গ্রামে গরুচোরদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছিলেন। ( আমার প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদের মাতাল হাওয়ায় সামান্য করে বিষয়টি এসেছে)।

সবাই তার কাছে জানতে চাইল - হুজুর। আমাদেরতো আয়ুব খানের বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা। গরুচোরদের বিরুদ্ধে কেন? হেসে মাওলানা বলেছিলেন - আমি চর্চ্চাটা চালু রাখছি। সময় হলে লক্ষ্যটা পরিবর্তন করে দেবো!!! আমাদের তরুনদের অফুরন্ত সম্ভাবনা, অফুরান ভালবাসা। আমাদের মতো মুখর্রা যাতে তাদের সেই আনন্দ থেকে বিচ্যুত করতে না পারে সেটাই কামনা।

সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.