আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মরার বৃষ্টি- শিশুগুলো যখন আগুনমুখো মায়ের বুকে শেষবারের মতো মাথা গুঁজছিলো, কোথায় ছিলি তুই?

http://www.myspace.com/423882880/music/songs/31785002

আগুনলাগা নিয়ে আমার একটা ভয়ংকর অভিজ্ঞতা আছে। বছর ছয় আগে মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার ঘটনা। আমরা কয়েকজন বন্ধু বান্ধব এলাকার চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছি। হঠাৎ আমার মোবাইলে বাসা থেকে ফোন এলো। আমাকে বলা হলো, আগুন লেগেছে, তুই কোথায়? আগুনের কথা শুনে ভয়ে আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছিল।

অস্থিরতা আর ভয়ে আমি কথা বলতে পারছিলাম না। আমি শুধু কাঁপতে কাঁপতে জানতে চেয়েছিলাম, কোথায়? তখন জানলাম, ৮ নম্বর রোডে- আমজাদ চাচার বাড়ীতে। নিজের বাড়িতে নয়- খানিক আশ্বস্ত হলেও বন্ধু বান্ধব নিয়ে ছুটলাম চাচার বাড়ীর দিকে। সে এক ভয়াবহ আগুন! ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি তখনও আসেনি। বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে! আমি ভীড় ঠেলে চাচার একতলা বাড়ির ভিতর ঠুকে পড়ি।

চাচা বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাড়ির দিকে ধেয়ে আসা আগুনের দিকে তাকিয়ে আল্লাহকে ডাকছেন আর চাচার ছোট্ট মেয়েটি ঘরের টুকটাক জিনিসপত্র ঘরের বাইরে এনে রাখছে। ঘরে আর কেউ নেই যে তাকে হেল্প করবে! এদিকে চাচা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে মাটিতে বসে পড়েছেন আর আল্লাহর নাম জপছেন। আমি ছোট্টমেয়েটার সাথে ঘর বাঁচানোর কাজে নেমে পড়ি। আগুন তেড়ে আসছে, আমরাও গৃহস্থ জিনিসপত্র সরিয়ে যাচ্ছি। বীভৎস আর্তনাদ এবং চিৎকারে বাতাস ভারী হয়ে আসছিল।

আমার মনে তখন চট করে একটা চিন্তা ঢুকলো! আগুন তখন বাড়ি ছূঁই ছূঁই! ভাবলাম, জিনিসপত্রতো এভাবে আর বাঁচানো যাবেনা, চাচা আর ছোট্টমেয়েটিকে নিয়ে বরং সরে পড়াই ভালো! কিন্তু চাচা যাবেননা। আমাকে হাত উঁচিয়ে থামতে বললেন। বাড়ির কাছে এসে আগুন থেমে গেলো আচমকা। অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে গেলাম আমরা! আমি পুরান ঢাকার ছেলে। ঘিঞ্জি এই শহরে কোনো দূর্যোগ ঘটলে ব্যাপারটা কি ভয়াবহ হবে সবসময়ই সেটা নিয়ে আতংকে থাকতাম।

গতকালের নিমতলীর ঘটনাটায় বুঝতে পারলাম, ভয়াবহতার সেই স্বরূপটি! মূহুর্তে পোকামাকড়ের মতো মানুষ মরে গেলো, আগুন থেকে রক্ষা পেতে একটি পরিবার বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছিলো- ১১ জন মূহুর্তে পুড়ে ছাই! ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও ঢুকতে পারছিলো ঐ সংকীর্ণ গলিতে। আমি পুরো ঘটনার মর্মান্তিকতায় বাকরুদ্ধ! পুরান ঢাকার কয়েকশত বাড়ি আছে অপরিকল্পতি নগরায়নের শিকার। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ! বাড়ির সাথেই লাগোয়া বৈদ্যুতিক তার, ট্রান্সফর্মার। এর মধ্যেই মানুষ থাকছে, অস্বাস্থ্যকর-আলো-বাতাসহীন পরিবেশে। কোনো সরকারই একটা যথার্থ উদ্যোগ নিয়ে এই সমস্যার সুরাহা করতে পারেনি বা করেনি।

এই সব দুর্ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবেই দুর্নীতি সম্পর্কযুক্ত! ডেসা, ওয়াসা, হাউজিং, সিটি কর্পোরেশন, রাজউক সবাই এ ব্যাপারে উদাসীন। এদের আকাশচুম্বি দুর্নীতির কারণে এ ধরনের দুর্যোগ-বিপর্যয়-দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেছে। গতকাল বেগুনবাড়ি, আজ নিমতলী এবং ভবিষ্যতে আপনি ও আমি - আমাদের পরিবার যে কেউ এ ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে। পোকামাকড়ের মতো নিমিষেই মিশে যেত পারি ধূলিতে! এই কিছুক্ষণ আগেই এক পষলা বৃষ্টি ধুয়ে দিলো নগরীকে। গতকাল রাতেও আকাশ মেঘলা ছিল কিন্তু বৃষ্টি ছিলো না।

জানালার বাইরে ঝাপসা শহরের দিকে তাকিয়ে মন শুধু বলছিলো, মরার বৃষ্টি- গতকাল রাতে নিমতলীর আগুন যখন বাড়ছিল, শিশুগুলো যখন আগুনমুখো মায়ের বুকে শেষবারের মতো মাথা গুঁজছিলো, তুই কোথায় ছিলি?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।