স্বপ্নগুলো সত্যির প্রত্যয়ে পথচলা ............
কোন একটা পিচ্ছিল বস্তুর ভিতর থেকে বের হয়ে আসলাম, কত টুকু কষ্ট হচ্ছিল সেটা বুজে ওটার আগেই চোখের মধ্যে একটা উজ্জ্বল কিছু এসে পড়লো। একটু পর চোখ খুলে দেখি সবাই হাসছে, দাঁত বের করে। সবাই খুব খুশি! একটু পর বুজতে পারলাম একটা মানুষের পাশে আমি আছি। যে আমাকে আগলে রেখেছে, একটা পরিচিত ঘ্রান, ওই হাসী মুখের মানুষ গুলো থেকে আমি যার পাশে আছি তার পাশ টা তেই আমি বেশি নিরাপত্তা বোধ করছি। একটু করে বেড়ে উঠছি!! কেউ বকা দিলে বুজতে পারছি বকা দিচ্ছে, কেউ আদর করলে বুজতে পারছি আদর করছে।
প্রতিদিন একটু একটু করে যত্ন করছে। ভালোই কেটে যাচ্ছে।
বাবা কে ছোট সময় খুব একটা কাছে পাই নি। আমি ঢাকায় থাকি তখন। মা কে একদিন বললাম বাবা কোথায়, মা বলল আছে কেন?আবার বললাম বাবা আসে না কেন? মা বলল তোর বাবা বিদেশে গেছে।
মা সব সময় তুই করেই ডাকতো আমাকে! এভাবে প্রতিদিন মা একই কথা বলতে লাগল, একদিন বাবা কে ভুলে গেলাম। মা কেও জিজ্ঞাস করি নি বাবা কোথায়! বন্ধু-বান্ধব পড়াশুনা করেই দিন পার হচ্ছিল।
হঠ্যাত করে আমার মায়ের ব্যবহার বদলে গেল, আমাকে সব সময় ধমকের উপর রাখতো। আমাদের বাসায় তেমন কেউ আসতো না শুধু একটা মামা ছাড়া। মামার সাথে খুব ভাব ছিল।
একদিন মামা কে বললাম আম্মু কয়েকদিন ধরে আমাকে ধমক দেয় শুধু শুধু, এই কথা বলে ভ্যা করে কান্না করে দিলাম। মামা বলল তো আম্মু তো কাজ টা ঠিক করে নি তা তুমি তোমার বাবার কাছে যাবে? বাবা! কথা টা শুনে বুকের ভিতর ধাক্কা লাগলো। আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম যাবো। একটু পর মামা আম্মু কে ডাকলো। আম্মু আসলেই মামা বললো ওকে দিয়ে দেও বড় হয়ে গেছে, বুজতে শিখেছে! আমি কোন কিছুই বুজতে পারলাম না, কি বলছে! আম্মুর দিকে তাকালাম দেখলাম আম্মু কান্না করছে, আর মামা কে বলল দিবো!
জীবনের কোন কিছু বুজে ওটার আগেই, অনেক কিছু বুজে নিতে হলো।
এত দিন যাকে মামা ভাবতাম সে আসলে কে ছিলো বুজে গেলাম। 'পারিবারিক সম্মতিতে বাবা মার বিয়ে হয়, কিন্তু মা কোন দিন বাবা কে মেনে নিতে পারে নি, কারন মা অন্য ছেলে কে ভালোবাসত!মা পারিবারিক কারনেই রাজী হয় বাবাকে বিয়ে করতে। বাবা কে মা সব জানায়, এবং আরো বলে মা কোন দিন এই সংসারে থাকবে না, সে তার আগের মানুষের কাছে চলে যাবে এবং সেও ততো দিন তার জন্য অপেক্ষা করবে। বাবা সব কিছু শুনে মেনে নিল। কিন্তু সমস্যা হয়েছিল দাদা-দাদী, পরিবারের কেউ এই সব কথা জানতো না।
এভাবে তাদের মাঝে দু বছর পার হয়ে যায়। দাদা-দাদী মফঃস্বল এ থাকে মা ও তাদের সাথে থাকতো শুধু বাবা ঢাকায় থাকতো, কারন উনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলো, বাবা খুব একটা আসতো না বাড়িতে, ঢাকাই থাকতো। এভাবে চলতে থাকে একদিন দাদা-দাদী বাবা আর মা কে কাছে ডেকে বলতে থাকে তারা যাতে মৃত্যুর আগে নাতী-নাতনীর মুখ দেখে মরতে পারে। দাদা-দাদী আর সামাজিকতার কারনেই এক সময় আমার আগমন হয়! একটা সময় দাদা-দাদী ও চলে যায়। বাবা মা কে ঢাকায় নিয়ে আসে, মা কে আলাদা বাসা ঠিক করে দেয়।
বাবা মা কে ডিভোর্স লেটারে সই করতে বলে, মা সই করে!কিন্তু তার আগে মা বাবা কে আরেক টি শর্তে বন্ধি করে, আমাকে মা তার সাথে রাখবে, কোন দিন বাবার কাছে যেতে চাইলে পাঠিয়ে দিবে এবং সব খরচ তাকেই বহন করতে হবে। বাবা প্রথমে শর্ত মেনে নিতে রাজী হয় নি। কিন্তু আমাকে দেখবে কে তা ভেবে রাজি হয়। সব শর্ত মেনে নিলো!' তারপর...................!!
ঘটনা গুলো শুনার পর কোন কিছুই বিশ্বাস হচ্ছিল না। বাবাকে মিথ্যুক বলতে লাগলাম।
সাথে সাথে বাবার মোবাইল দিয়ে মা কে ফোন করি, বাবা যা বলেছে তা সত্য কি না যাচাই করার জন্য! ফোন করার সাথে সাথে ধরলো সেই মামা টি, মায়ের প্রতি কেন জানি একটা ঘৃণা চলে আসলো। মা কে বললাম বাবা যা বলেছে সব সত্যি কি না, মা কান্না করছে বুজতে পারলাম! মা বলতে লাগলো, আমার জীবনেও এমন মানুষ দেখি নি, তুই যার কাছে আছিস সে অনেক মহৎ ব্যক্তি। তোকে দেখে শুনে রাখবে, কোন দিন তাকে কষ্ট দিস না! আমাকে ভুলে যাইস। মায়ের কথা শুনেই মনে হল মা কে গালি দেই!মায়ের কথা শুনে তার প্রতি প্রবল ঘৃণা কাজ করে সাথে সাথে ফোন টা রেখে দেই। আমার বাবা, তখন মাথা নিচু করে বসে আছে।
বাবা পাশে যেতেই বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরলো! আমি আর বাবা চিৎকার করে কান্না করছি! বাবা কে বললাম আমার কি অপরাধ ছিল, কেন তোমরা আমাকে এই পৃথিবীতে আনলে, বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, সব অপরাধ আমার,আমাদের ভালোবাসায়! তোমার কোন অপরাধ নেই...............!!!!
বাহিরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিল আমি আর বাবা কান্না করছি! একটা সময় সব কিছু কেমন জেনো বদলে যায়। আমি চুপ হয়ে যাই। মা কে সেই দিন থেকেই ঘৃণা করি! একদিন বাবার কাছ থেকে মার মোবাইল নম্বর নিয়ে ফোন করি। শুধু একটা জিনিষ আবার জানার জন্য আমার অপরাধ কোথায়??আমার বাবার অপরাধ কি ছিল?? ভালোবাসাই কি সব কিছু?? অনেক ঘৃণা জেগে উঠলো। প্রশ্ন গুলো করার পরই আমি আর কথা বলতে পারিনি! কিছু দিন আমি মানসিক ও শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি.............! আমার বাবা টা দেখলে আমার অনেক মায়া হয়, কেমন করে একটা মানুষ এমন কষ্ট বুকে জমিয়ে বেচে আছে? এত দিন একা কি করে ছিল।
মা টা কেন এমন পাষান হলো। নিজের ভালোবাসা আর স্বার্থের জন্য ২ টা মানুষ কে কেন এমন কষ্ট দিল!
আমার বাবা তার ক্লাস, ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে সব সময় ব্যস্ত। আর অবসর টা তে আমি আর বাবা গেমস খেলি! বাবা কে একদিন দুষ্টামী করে বলেছিলাম একটা বিয়ে করতে, বাবা হেসে বলল এত দিন বিয়ে করিনি এখন করে কি হবে? কথা টা শুনে মনের মধ্যে কেমন জানি বেজে উঠলো!সকালে ঘুম থেকে উঠে বাপ-বেটা বের হয়ে যাই, বাবা তার কাজে আর আমি আমার ক্লাসে। আমার জন্য আমার বাবা অনেক কষ্ট করেছে,এত বছর একটা মানুষ একা কাটিয়েছে কি করে ভাবতেই কেমন লাগত। বাবা আমার জীবনের সব কিছু!
মাঝে মাঝে নিজেকে অনেক ছোট মনে হয়, সবার মা আছে।
কিন্তু আমার, আমার যে থেকেও নেই। অনেক জায়গায় গেলে মানুষ জানতে চায় তোমার বাবা কি করেন মা কি করেন? বাবা কি করে বললেও মা কি করে বলতে পারি না, মা জেনো এখন আমার কাছে জীবিত থেকেও মৃত কেউ!এখনো আমি স্রষ্টার কাছে জানতে চাই আমার বাবার অপরাধ কি ছিলো আমার কি অপরাধ ছিলো, আমাদের জীবন টা কেন এমন হলো??? এখন নিজের ভাগ্য টা কে মেনে নিয়েছি, কিছু করার নেই। বাবা কে নিয়ে সুখে আছি, আমি আমার বাবা কে অনেক অনেক বেশি ভালোবাসী!
বিঃদ্রঃ- এই ঘটনাটি খুব চেনা-অচেনা একটা মানুষের জীবনের! নাঈমের ঘটনাটি জানতে পারি তার কাছের মানুষের কাছ থেকে! কার জীবনে কি ঘটে যাচ্ছে কেউ জানি না। মানুষের জীবন খুব বিচিত্র! আমি জানি না ঘটনাটির কত টুকু গুছিয়ে বলতে পেরেছি, কিন্তু চেস্টা করলাম। ভূল ত্রুটি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
আর অনেকেই আছে, যারা নিজের জন্য ভাবে কিন্তু একবারও ভাবে না তার সন্তানের কথা। আমাদের দেশে আজকাল একটা জিনিষ শোনা যায়, এর ডিভোর্স হয়ে গেছে,ও অন্য ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে সন্তান রেখে, তার স্বামী আরেক টা বিয়ে করেছে, কোন মেয়ে তার নিজের ক্যারিয়ারের জন্য স্বামী সন্তান রেখে চলে গেছে, কি সব আজব ঘটনা! কিন্তু কেউ কেন যে তার সন্তানদের নিয়ে ভাবে না বুজি না, সবাই সবার ভালোবাসা আর ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত। অথচ তার সন্তান যখন বড় হবে, জানতে চাবে বাবা কে মা কে? তখন কোন জবাব দিতে পারবে কি কেউ? বাবা-মার ভুল সিদ্ধান্ত গুলো সন্তানের উপর কত টুকু প্রভাব পড়বে কেউ কি চিন্তা করেছে?? বা করবে?? না কি সন্তানকে সারাজীবন একটি প্রশ্ন বয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে? ' আমার অপরাধ কোথায়'!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।