মাথায় অনেক গল্প আসে; কিন্তু লেখার মত পর্যাপ্ত ধৈর্য-শ্রম-অধ্যবসায় নেই। গল্পগুলোকে তাই ছোট করে কবিতা বানাই...
(এলোপাথারি মাটির গন্ধ মেশানো এর প্রতিটি ছত্রে)
জ্যৈষ্ঠ মাসের খরতাপ শেষে পড়ন্ত রবি - সন্ধে বেলা,
হঠাৎ যেন ঈশান কোণেতে দেখা যায় এলোকেশীর খেলা
রাত পোহাতেই রিম-ঝিম-ঝিম, খাল-বিল সব টইটম্বুর
ঝরে পড়ে বারি অবিরত - রাত-সকাল-বিকেল-সন্ধ্যা-দুপুর...
শাপলা-শালুক কুড়াতে কিশোরী বিলের জলে ভাসায় ভেলা
কৃষাণেরা ছুটে লাঙল কাঁধে - শুরু হল ফের কাজের বেলা।
রইসউদ্দিন পদ্মার বুকে; অক্লান্ত দিন-রাত, নির্ঘুম
দু'চোখেতে তার রুপালী স্বপ্ন - এল বলে ইলিশের মরশুম
বাড়িতে তার দুরন্ত বালক, বেপরোয়া তার মনোবল
কদমের শাখে উঠতে গিয়ে সে হঠাৎ পপাতধরণীতল !
পরদিন প্রাতে সব ব্যথা ভুলি, ফের সে বালক ধেয়ে যায়
হলদে খুকিকে ছিনিয়ে আনে সে - কাদা মাখা তার সারা গায়..
সাঁঝের শেষে ঘরে ফিরে আসে কৃষাণেরা যত; আর
জেলে বের হয় নদীর বুকে - কাজ সবে শুরু তার।
রাহেলার মন প্রশান্ত শরীর অশান্ত প্রসব-বেদনায় আজ
মতিবুড়ি তাই, বসে আছে ঠায় - কপালেতে তার ভাঁজ।।
জলে ছলছল উচ্ছ্বাস জাগে, এল আচানক ঝড় !
কারে নদী 'নিল', কেবা ফিরে এল, কে জানে সেই খবর?
পরদিন ভোরে ফিরে এল যবে কতক জেলের দল
'প্রিয়-হারা' বধু জিজ্ঞাসে সবে, "দেখেছিস তাঁরে, বল?"
চারিদিকে এত হাহাকার দেখে নবশিশুও কেঁদে চলে
কাঁদছে সখিনা, তার খোকনের বাপ ফিরলনা বলে...
*******
মজিদ মাঠেতে খেটে চলে দিন-রাত; তার নেই বিরাম
পায়ের নিচে তার থিকথিকে কাদা, উপরে বৃষ্টি অবিরাম।
এত শ্রম, এত কষ্টের পর, দেখা দিল এত সাধের ফসল
নদীর বুকও টইটম্বুর - উপচে উঠতে চায় যেন জল;
এমন সাধের ফসল সকলই ডুবল সর্বনাশী বন্যায়
স্বৈরাচারী বিধাতার একি ভীষণ ঘোরতর অন্যায় !
মজিদ মিয়া মাঠের কিনারে ঠাঁই বসে একা অপলক আজ -
যা কিছু ছিল সকলই গেল - মাথায় যে তার পড়ল বাজ...
*******
জেলেদের হল, কৃষাণের হল, মাঝিদের কথা বলি এবার
মাঝি পাড়াখানি গড়ে উঠেছে ধার ঘেঁষে ঐ নদীর পাড়
ঝড়ের রাতে নাও হারিয়ে কাশেম মাঝি পাগল-প্রায়
সর্বনাশ যে সবে শুরু হল, তাই কি সে আর জানত ছাই!
বর্ষার এক গভীর রাতে ভাঙন ধরল নদীর কূলে,
ঘুম থেকে উঠে তা দেখে কাশেম চেঁচিয়ে পাড়া মাথায় তুলে !
ছুটলো সকলে ভিটা ছেড়ে - তার বড় ছেলে ছুটে সবার আগে
ছোট মেয়ে আছে মায়ের বুকে আর সেজোটা পড়ল বাপের ভাগে;
ভাঙল নদী, ধ্বসল বাড়ি, ছুটল সবাই তাড়াতাড়ি
শোনেনি কাশেম, চিৎকার তার আটকা পড়া মেজো ছেলেটারই !
মাঠ পেরিয়ে থামল তারা জঙ্গলেরই কিনারায়
সর্বহারা দীর্ঘশ্বাসে একটুখানি যেন জিরায়....
হঠাৎ ডুকরে ওঠে কাশেম, আসে নাই তার মেজো ছেলেখানি
আমেনাবিবির নজর এড়ায়না, কাশেমের চোখে এ কিসের পানি!
"বা'জান আমার!!!", গগণবিদারী চিৎকারে ওঠে আমেনাবিবি,
"সর্বনাশী তুই সয়-সম্পদ-মানিকটারেও কাইড়া নিবি?"
ঈশ্বর বলো, সখিনা-মজিদ-কাশেম'রা রবে কার ভরসায়?
ঈশ্বর শুধু হাসে, আর পল্লী ভাসে আরেক বর্ষায়....
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।