আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিনয় মজুমদারের কয়েকটি কবিতা



'' ফিরে এসো চাকা '' - থেকে কয়েকটি ৮ মার্চ ১৯৬০ একটি উজ্জ্বল মাছ একবার উড়ে দৃশ্যত সুনীল কিন্তু প্রকৃত পস্তাবে স্বচ্ছ জলে পুনরায় ডুবে গেলো --- এই স্মিত দৃশ্য দেখে নিয়ে বেগনার গাঢ় রসে আপক্ক রক্তিম হ'লো ফল | বিপন্ন মরাল ওড়ে, অবিরাম পলায়ন করে, যেহেতু সকলে জানে তার শাদা পালকের নিচে রয়েছে উদগ্র উষ্ণ মাংস আর মেদ ; স্বল্পায়ু বিশ্রাম নেয় পরিশ্রান্ত পাহাড়ে পাহাড়ে ; সমস্ত জলীয় গান বাষ্পিভূত হ'য়ে যায়, তবু এমন সময়ে তুমি, হে সমুদ্রমত্স্য, তুমি...তুমি... কিংবা, দ্যাখো, ইতস্তত অসুস্থ বৃক্ষেরা পৃথিবীর পল্লবিত ব্যাপ্ত বনস্থলী দীর্ঘ-দীর্ঘ ক্লান্তশ্বাসে আলোড়িত করে ; তবু সব বৃক্ষ আর পুষ্পকুঞ্জ যে যার ভূমিতে দূরে দূরে চিরকাল থেকে ভাবে মিলনের শ্বাসরোধী কথা | ২৬ অগাষ্ট ১৯৬০ মুকুরে প্রতিফলিত সূর্যালোক স্বল্পকাল হাসে | শিক্ষায়তনের কাছে হে নিশ্চল, স্নিগ্ধ দেবদারু জিহ্বার উপরে দ্রব লবণের মত কণা-কণা কী ছড়ায়, কে ছড়ায় ; শোনো, কী অস্ফুট স্বর, শোনো 'কোথায়, কোথায় তুমি, কোথায় তোমার ডানা, শ্বেত পক্ষীমাতা, এই যে এখানে জন্ম, একি সেই জনশ্রুত নীড় না মৃত্তিকা? নীড় না মৃত্তিকা পূর্ণ এ অস্বচ্ছ মৃত্যুময় হিমে...' তুমি বৃক্ষ, জ্ঞানহীন, মরণের ক্লিষ্ট সমাচার জানো না, এখন তবে স্বর শোনো,অবহিত হও | সুস্থ মৃত্তিকার চেয়ে সমুদ্রেরা কত বেশি বিপদসংকুল তারো বেশি বিপদের নীলিমায় প্রক্ষালিত বিভিন্ন আকাশ, এ-সত্য জেনেও তবু আমরা তো সাগরে আকাশে সঞ্চারিত হ'তে চাই, চিরকাল হ'তে অভিলাষী, সকল প্রকার জ্বরে মাথা ধোয়া আমাদের ভালো লাগে ব'লে | তবুও কেন যে আজো, হায় হাসি, হায় দেবদারু, মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়! ২৭ জুন ১৯৬২ করবী তরুতে সেই আকাঙ্খিত গোলাপ ফোটে নি | এই শোকে ক্ষিপ্ত আমি ; নাকি ভ্রান্তি হয়েছে কোথাও? অবশ্য অপর কেউ, মনে হয়, মুগ্ধ হয়েছিল, সন্ধানপর্বেও দীর্ঘ, নির্নিমেষ জ্যোত্স্না দিয়ে গেছে | আমার নিদ্রার মাঝে, স্তন্যপান করার মতন ব্যবহার ক'রে বলেশিহরিত হৃদয়ে জেগেছি | হায় রে বাসি না ভালো, তবু এও ধন্য সার্থকতা, এই অভাবিত শান্তি, মূল্যায়ন, ক্ষিপ্ত শোকে ছায়া | তা না হ'লে আস্বাদিত না হবার বেদনায় মদ, হৃদয় উন্মাদ হয়, মাংসে করে আশ্রয়-সন্ধান | অখচ সুদূর এক নারী শুধু মাংস ভোজনের লোভে কারো কাছে তার চিরন্তন দ্বার খুলেছিলো, যথাকালে লবণের বিস্বাদ অভাবে ক্লিষ্ট সেও | এই পরিনাম কেউ চাই না, হে মুগ্ধ প্রীতিধারা, গলিত আগ্রহে তাই লবণ অর্থাত্ জ্যোত্স্নাকামী | ২৯ জুন ১৯৬২ কবিতা বুঝিনি আমি ; অন্ধকারে একটি জোনাকি যত্সামান্য আলো দেয়, নিরুত্তাপ, কোমল আলোক | এই অন্ধকারে এই দৃষ্টিগম্য আকাশের পারে অধিক নীলাভ সেই প্রকৃত আকাশ প'ড়ে আছে--- এই বোধ সুগভীরে কখন আকৃষ্ট ক'রে নিয়ে যুগ যুগ আমাদের অগ্রসর হয়ে যেতে বলে, তারকা, জোনাকি---সব ; লম্বিত গভীর হয়ে গেলে না-দেখা গহ্বর যেন অন্ধকার হৃদয় অবধি পথ ক'রে দিতে পারে ; প্রচেষ্টায় প্রচেষ্টায় ; যেন অমল আয়ত্তাধীন অবশেষে ক'রে দিতে পারে অধরা জ্যোত্স্নাকে ; তাকে উদগ্রীব মুষ্টিতে ধ'রে নিয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে আকাশের, অন্তরের সার পেতে পারি | এই অজ্ঞানতা এই কবিতায়, রক্তে মিশে আছে মৃদু লবণের মতো, প্রশান্তির আহ্বানের মতো | ২৯ জুন ১৯৬২ তুমি যেন ফিরে এসে পুনরায় কুণ্ঠিত শিশুকে করাঘাত ক'রে ক'রে ঘুম পাড়াবার সাধ ক'রে আড়ালে যেও না ; আমি এত দিনে চিনেছি কেবল অপার ক্ষমতাময়ী হাত দুটি, ক্ষিপ্র হাত দুটি--- ক্ষণিক নিস্তারলাভে একা একা ব্যর্থ বারিপাত | কবিতা সমাপ্ত হতে দেবে নাকি? সার্থক চক্রের আশায় শেষের পংক্তি ভেবে ভেবে নিদ্রা চ'লে গেছে | কেবলি কবোষ্ণ চিন্তা, রস এসে চাপ দিতে থাকে | তারা যেন কুসুমের অভ্যন্তরে মধুর ঈর্ষিত স্থান চায়, মালিকায় গাঁথা হয়ে ঘ্রাণ দিতে চায় | কবিতা সমাপ্ত হতে দাও, নারী, ক্রমে---ক্রমাগত ছন্দিত ঘর্ষণে, দ্যাখ, উত্তেজনা শির্ষ লাভ করে, আমাদের চিন্তাপাত, কসপাত ঘটে, শান্তি নামে | আড়ালে যেও না যেন, ঘুম পাড়াবার সাধ ক'রে | &&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&& আমার বাড়ির থেকে ============== আমার বাড়ির থেকে বাইরে বেরিয়ে দেখি অগণিত যুবতী চলেছে। এইসব বিবাহিতা এবং অবিবাহিতা যুবতীদিগের প্রত্যেকের অন্তরে জয়পতাকা কিভাবে থাকে আমি সু ন্দর নিখুঁতভাবে দেখি তাকিয়ে তাকিয়ে ওরা যখন হাঁটেঁ বা বসে থাকে। প্রত্যেকটি যুবতীর অন্তরে জয়পতাকা প্রবেশ করেছে বহুবার, নিজের অন্তরে ঢোকা জয়পতাকাকে খুব ভালবাসে যে কোনো যুবতী। অনেক জয়পতাকা অন্তরে প্রবেশ করে তার মধ্যে যে জয়পতাকা অন্তরে আনন্দ দেয় সবচেয়ে বেশি পরিমাণ তাকেই বিবাহ করে অনূড়া যুবতীগণ। আমার বাড়ির থেকে বাইরে বেরিয়ে প্রতিদিন আমি দেখি অগণিত যুবতী চলেছে।

আমার শোবার ঘর ছেড়ে ================= আমার শোবার ঘর ছেড়ে আমি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। বারান্দার পাশ দিয়ে একটি মুকুট হেঁটে চলে গেল অতিশয় ধীরে, আমি মনোযোগ দিয়ে তার বস্তাবৃত অঙ্গ দেখলাম। এ মুকুট প্রৌঢ়া ফলে মুকুটের ফুল দুটি বেশ ঝুলে পড়েছে নিশ্চয়, আরো এ বয়সে ফুলে অনেক নখের দাগ নিশ্চয় লেগেছে মুকুট পরার কালে ফুল টেপবার ফলে, তবুও মুকুট তার ফুল কৌশলে কাঁচুলি দিয়ে বেঁধেছে এমনভাবে যাতে মনে হয় তার ফুল মোটেই ঝোলে নি আর বারংবার নিয়মিত মুকুট পরার ফলে নিশ্চয় মুকুট বেশ বড় হয়ে গেছে এই প্রৌঢ় বয়সে ও যদিও অবিবাহিতা আছে। মুকুট ===== এখন পাকুড়গাছে সম্পূর্ণ নূতন পাতা, তার সঙ্গে বিবাহিত এই বটগাছে লাল লাল ফল ফলে আছে। চারিদিকে চিরকাল আকাশ থাকার কথা, আছে কিনা আমি দেখে নিই।

অনেক শালিক পাখি আসে রোজ এই গাছে, বট ফলগুলি তারা খুটেঁ খুটেঁ খায় বসন্তের হাওয়া বয়, শালিকের ডাক এবং পাতার শব্দ মিশে একাকার হয়ে চারদিকে ভাসে। এখন অনেক মেঘ সোনালি রূপালি কালো আকাশে আকাশে। একটি মুকুট সেই পাকুড় গাছের নিচে শাড়ি পরে দাড়িয়েঁ রয়েছে। মদের ফেনার মতো সাদা সাদা দাঁত আমি অনেক দেখেছি। জেনেছি আগুন যত্ দুরেই হোক না কেন তাকে দেখা যায়।

মুকুরের বুকে ঠাঁই পেতে হলে সরাসরি সম্মুখেই চলে যেতে হয় পিছনে বা পাশে নয়; গ্রন্থ ছন্দোবদ্ধ হলে তবে আপনিই মনে থাকে মৃত্যু অবধিই থাকে; মানুষ সমুদ্রকেই সবচেয়ে বেশি ভালবাসে। কী উৎফুল্ল আশা নিয়ে ================ কী উৎফুল্ল আশা নিয়ে সকালে জেগেছি সবিনয়ে। কৌটার মাংসের মতো সুরক্ষিত তোমার প্রতিভা উদ্ভাসিত করেছিল ভবিষ্যৎ, দিকচক্রবাল। সময়ে ভেবেছিলাম সম্মিলিত চায়ের ভাবনা, বায়ুসেবনের কথা, চিরন্তন শিখরের বায়ু। দৃষ্টিবিভ্রমের মতো কাল্পনিক বলে মনে হয় তোমাকে অস্তিত্বহীনা, অথবা হয়তো লুপ্ত, মৃত।

অথবা করেছে ত্যাগ, অবৈধ পুত্রের মতো, পথে। জীবনের কথা ভাবি, ক্ষত সেরে গেলে পরে ত্বকে পুনরায় কেশোদ্গম হবে না; বিমর্ষ ভাবনায় রাত্রির মাছির মতো শান্ত হয়ে রয়েছে বেদনা- হাসপাতালের থেকে ফেরার সময়কার মনে। মাঝে মাঝে অগোচরে বালকের ঘুমের ভিতরে প্রস্রাব করার মতো অস্থানে বেদনা ঝরে যাবে। চাঁদের গুহার দিকে ============== চাঁদের গুহার দিকে নির্নিমেষে চেয়ে থাকি, মেঝের উপরে দাড়িয়েঁ রয়েছে চাঁদ, প্রকাশ্য দিনের বেলা, স্পষ্ট দেখা যায় চাদেঁর গুহার দিকে নির্নিমেষে চেয়ে থাকি, ঘাসগুল ছোট করে ছাঁটা। ঘাসের ভিতর দিয়ে দেখা যায় গুহার উপরকার ভাঁজ।

গুহার লুকোনো মুখ থেকে শুরু হয়ে সেই ভাঁজটি এসেছে বাহিরে পেটের দিকে। চাঁদ হেঁটে এসে যেই বিছানার উপরে দাঁড়াল অমনি চাঁদকে বলি,' তেল লাগাবে না আজ' শুনে চাঁদ বলে 'মাখব নিশ্চয়, তবে একটু অপেক্ষা কর' বলে সে অয়েল ক্লথ নিয়ে পেতে দিল বিছানায়, বালিশের কিছু নিচে, তারপর হেঁটে এসে চলে গেল নিকটে তাকের দিকে,একটি বোতল থেকে বাম হাতে তেল নিয়ে এল এসে তেল মাখা হাতে ভুট্টাটি চেপে ধরে। যখন ধরল তার আগেই ভুট্টাটি খাড়া হয়ে গিয়েছিল। চাঁদ আমি দুজনেই মেঝেতে দাঁড়ানো মুখোমুখি এক হাতে ঘসে ঘসে ভুট্টার উপরে চাঁদ তেল মেখে দিল।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।