পিংক ফ্লয়েড, বিটলসের মত ব্যান্ড গুলা অ্যাক্টিভ ক্যারিয়ারে গানের জন্য যতটা না হেডলাইন হয়েছে, তার চেয়েও বেশী বার হেডলাইন হয়েছে তাদের ভেতরকার অ’সঙ্গীত’উচিত ঘটনাবলীর জন্য। যেমন বিটলস থেকে লেনন, হ্যারিসনের বের হয়ে যাওয়া, পিংক ফ্লয়েডে ওয়াটার্সের বের হয়ে যাওয়া, ওয়াটার্সের সাথে গিলমোর আর ম্যাসনের ঝগড়া, রিক রাইটের সাথে ঝগড়া, আদালতে দৌড়াদৌড়ি ইত্যাদি।
আমাদের দেশের ক্যাবিনেটেও কয়েকজন পিংক ফ্লয়েড আর বিটলস আছেন। এনারা হচ্ছে, যাকে বলে- ইশটার, মিডিয়া ম্যাগনেট। যেমন-
কর্নেল ফারুক খান (এখন সামান্য দমেছেন)
অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম (ইদানিং একটু বেশী বাড় বেড়েছেন)
রমেশ চন্দ্র সেন (বছরে একটা করে হিট অ্যালবাম বের করেন)
সাহারা খাতুন (মমতাজ আপার মত আর্টিস্ট, প্রতি সপ্তাহে দশটা বা তারও বেশী অ্যালবাম বের করেন, তার মধ্যে থেকে দুই একটা ক্লিক খেয়ে যায়)
ড: দিপু মণি (ইনি হচ্ছেন আলিশা চিনয় কিংবা আমাদের ইভা রহমান, অ্যালবাম সব ফ্লপ কিন্তু আর্টিস্ট হিট)
তো যাই হোক, পিংক ফ্লয়েড আর বিটলস সময়কালে যে কারণেই আলোচিত হোক না কেন, বিশ তিরিশ বছর পর আজকে তাদের মানুষ গানের জন্যই মনে রাখে।
কিন্তু আমাদের ক্যাবিনেটের বিটলস, ফ্লয়েডদের সারা জীবন তাদের ‘আলোচিত’ বিষয়ের জন্যই মনে রাখবে।
রমেশ চন্দ্র সেনের গত বছরের অ্যালবামের বিষয়বস্তু ছিল টিপাইমুখ বাঁধ। টিপাইমুখ বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে, ভারত বৃহত্তর প্রতিবেশী তাই লস দিয়ে হলেও বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখা বাংলাদেশের কর্তব্য, ‘আগে বাঁধ, তারপর প্রতিবাদ’ ইত্যাদি ম্যাটেরিয়ালিস্টিক ইস্যুকে প্রতিপাদ্য করে তিনি ঐ অ্যালবামটা বের করেছিলেন।
কিন্তু এই বছরের অ্যালবামের বিষয়বস্তু পুরোই বাস্তবধর্মী। আর আশা করা যায় আওয়ামী লীগের এই শাসনামলে বের হওয়া মন্ত্রীদের অ্যালবামগুলোর মাঝে সবচেয়ে বেশী হিট করতে যাচ্ছে রমেশ চন্দ্র সেনের এই সদ্য রিলিজ হওয়া অ্যালবাম।
সময়ঃ ১২ মে, ২০১০ বিকাল
স্থানঃ শিল্পকলা অ্যাকাডেমি, ঠাকুরগাঁও
উপলক্ষঃ ঠাকুরগাঁও জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন
প্রধান অতিথিঃ পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন স্বয়ং
আওয়ামী লীগ সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন
তো চলুন, এই রিলিজের কিছু উল্লেখযোগ্য বক্তব্য আমরা শুনি।
“কিছু দিন আগে স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে যে সার্কুলার আমরা দিলাম, তার সবই আমাদের। এক-আধটা হয়তো স্লিপ হতে পারে ভুলক্রমে, ঠিক জানি না। তবে সবই আমাদের। পুলিশের চাকরিগুলোও ঠিক এভাবে দেওয়ার চেষ্টা করেছি আমাদের ছেলেদের।
আরো এই যে ২০ তারিখে পুলিশের চাকরির নিয়োগ হবে, অবশ্যই আমরা আমাদের নিজেদের ছেলেদের দেওয়ার ব্যবস্থা করব। তা ছাড়া সামনে এই ১৮ তারিখ থেকে আমাদের প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ হবে। হেড মাস্টার নিয়োগ হবে। সেগুলোর আমরা তথ্য নিচ্ছি। এই তথ্যগুলো নেওয়ার পরে আমরা অবশ্যই আমাদের ছেলেদের প্রাধান্য দিয়ে কাজ করব।
”
“আমরা এত উন্নয়নের কাজ করছি, সব কি মিডিয়ায় আসে, আসে না। দু-একটি পেপার-পত্রিকা আমাদের কাজ করে। বাকিগুলো আমাদের বিপক্ষে কাজ করে। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি, যেমন চ্যানেল ওয়ান বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। তেমনিভাবে আরো কিছু চ্যানেল আমরা বাতিল করে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি।
”
“মন্ত্রীরা কোন দূর্নীতি করে না। আমরা কখনও ১০ টাকারও করাপশান করি নাই। করবও না। তবে প্রতিমন্ত্রী কয়েকটা আছে দূর্নীতিবাজ। এটার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।
”
কালের কন্ঠের এই লিংকে বিস্তারিত দেখুন।
এই মুহুর্তটা ২০১০ সাল না হয়ে যদি হত ১৯৭৫ সাল, আর এখনকার আওয়ামী লীগ শুধু কাজে না হয়ে যদি নামে ও কাজে দুভাবেই ৭৫-এর বাকশাল হত, তাহলে রমেশ চন্দ্র সেনের এসব কথা একটা মিডিয়াতে আসত না। কিন্তু যেহেতু ‘যদির কথা নদীতে’, অতএব ঐসব কথাবার্তার সবই মানুষ দুদিনের মধ্যেই জেনে যাবে। লুকোছাপার চেষ্টা হলে আরও আগে জানবে।
তারপর কী হতে পারে?
চলুন, কয়েকটা অ্যাজাম্পশান দাঁড় করাই।
প্রথম চোটেই রমেশ চন্দ্র সেনকে মানসিক ভাবে অসুস্থ ঘোষণা করা হতে পারে, যেমনটা জলিলের ক্ষেত্রে করা হয়েছিল মঈনের সাথে হাসিনার যোগাযোগের কথা ফাঁস করে দেয়ার পর। অসুস্থতার প্রমাণ স্বরূপ মোদাসসের আলী রমেশ চন্দ্র সেনকে একটা সার্টিফিকেটও দিয়ে দিতে পারেন। মোদাসসের আলী কোন এরিয়ার স্পেশালিস্ট সেটা বড়ো কথা না, বড়ো কথা হচ্ছে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা আর ব্যাক্তি শেখ হাসিনার ব্যাক্তিগত চিকিৎসক।
কিংবা, রমেশ চন্দ্র সেনকে একটা ছোট্ট দৌড়ানি দেয়া হতে পারে। এই দৌড়ানি দেয়ার দুই রকম মানেই হতে পারে, অর্থাৎ তাকে ক্যাবিনেট থেকে দৌড় করানো হতে পারে, আবার চিকিৎসার স্বার্থে ব্যাংকক বা সিঙ্গাপুরও দৌড় করানো হতে পারে।
আর টিপাইমুখকে যেহেতু বাংলাদেশে উপকারী হিসেবে ঘোষণা করেছেন, অতএব চিকিৎসা ঘরের কাছে চেন্নাই বা মুম্বাইতেও হতে পারে। মোট কথা দৌড়ানি দেয়া হবে, সেটা যেদিক পানেই হোক।
আমরা রমেশ চন্দ্র সেনের সদ্য প্রকাশিত অ্যালবামের সাফল্য কামনা করি। আর এখনও যেহেতু অ্যালবামের নাম দেয়া হয় নাই, তাই একজন অনুরাগী হিসেবে আমি একটি নাম প্রপোজ করতে পারি। তার এই অ্যালবামের নাম দেয়া হোক ‘গুমর ফাঁক’।
অ্যালবামের ফুটনোট ‘আর্টিস্ট্স লাস্ট অ্যালবাম অফ লাইফ টাইম’ কথাটা লিখে দিলে বিক্রী আরও বেড়ে যাবে। কারণ আসলেই এটা হতে পারে আমাদের ক্যাবিনেট মিডিয়া ম্যাগনেট জগতের সোনার ডিম পাড়া হাস রমেশ চন্দ্র সেনের শেষ অ্যালবাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।