সব কথা বলা যাবে, সত্যটা বলা যাবে না।
আলতাফ সাহেব অফিসের বস। তার অফিসে ভালো বেতন দেন। কর্মচারীদের সাথেও ভালো আচরণ করেন। তবুও তার অফিসে কেউ বেশি দিন চাকরি করে না।
কিছুদিন চাকরি করে চলে যান। কারণ তার রুম। তার রুমকে আড়ালে ডাকা হয় রিমান্ড কক্ষ। এই রিমান্ড কক্ষে ডেকে তিনি কাউকে শাস্তি দেন না। শুধু গল্প করেন।
আর এই গল্প শেষ হওয়ার আগেই সবাই পালায়। দু'একজন টিকে যায়। একটা গুন থাকলেই টিকে থাকা যায়। গুনটা হল চামচামি। তার পাশে দাড়িয়ে হাত কচলে প্রশংসা করতে হবে।
নতুন এক তরুণ এসেছে। নাম হাসান। তাকে ডাকা হয়েছে রিমান্ড কক্ষে। অফিসের সবাই আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে দরজার দিকে। কখন বের হয়।
সে কি পারবে এই অফিসে থাকতে? না চলে যাবে আজই। আলতাফ সাহেব নড়ে চড়ে বসলেন। মিষ্টি করে বললেন, বস হাসান।
:ধন্যবাদ স্যার। স্যার আমাকে ডেকেছেন?
:বস, তোমার সাথে একটু গল্প করি।
আমার বাবার গল্প।
:আপনাকে ধন্যবাদ স্যার।
:শোন এই যে এই প্রতিষ্ঠানটা দেখছ। এটা আমার বাবার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান। আমার বাবা এই প্রতিষ্ঠান দিয়েছেন।
:উনি কোথায়?
:সে এক কষ্টের ইতিহাস। এই অফিসের একদল বিপদগামী কর্মির হাতে আমার বাবা শহীদ হন। সেটা অনেক আগের কথা। সবাই প্রায় ভুলে যেতেই বসেছে।
:আপনার মনে রাখাই বড় কথা।
আমি মনে রাখব মানে! এই অফিসের সবাইকে মনে রাখতে হবে। দেখ না তার কত ছবি টাঙিয়েছে। তোমার মাথার উপর দেখনা তার ছবি টানান। তার ছবি আমি আমার প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে প্রতিটি রুমে বাধ্যতামূলক করেছি। দেখ আমাদের অফিসে প্যাড কার্ডসহ সকল কাগজ পত্রে থাকবে আমার বাবার ছবি।
:আপনি তাকে যোগ্য সম্মান দিচ্ছেন।
শুধু আমি দিলে চলবে না। তোমাকেও দিতে হবে। আমার অফিসের সকলকে আমার বাবার জীবনী জানা বাধ্যতামূলক। সেদিন আমার অফিসের মিটিং-এ কি ঘটেছে জান! আমারদের একাউন্সের রহিম সাহেব বক্তৃতা দিলেন।
অফিসিয়াল বক্তিৃতা। লোকটায় কত বড় জগন্য কাজ করেছ জান! আমিতো খেয়াল করিনি। তবে অন্য সব কর্মচারীরা খেয়াল করেছে। তারা প্রতিবাদ করেছে। রহিম শালার কত বড় সাহস।
বক্তৃতায় আমার বাপের নাম সন্মরণ করে নাই। লাথি মেরে শয়তানটাকে অফিস থেকে বিদায় করে দিব। আর যারা প্রতিবাদ করেছে তাদের প্রমশন দিয়ে দিয়েছি। বল উচিত কাজ করেছি না?
:জ্বি স্যার। আমি বুঝতে পারছি না।
তোমাকেও আমার বাবার নাম স্মরণ করে বক্তৃতা শুরু করতে হবে। নয়ত রহিম সাহেবের মত তোমার চাকরি নট হবে।
:স্যার আমি একটু বাথরুমে যাব।
:ও ভালো কথা মনে করেছ। এখনও আমাদের বাথরুমের নামকরণ হয়নি।
এটা আমার মাথায় আসেনি। এখনি নামকরণ করব। কি নাম দেওয়া যায় তুমি বল?
:স্যার আমার পেটে সমস্যা। এখনি যাওয়া লাগবে।
:পেটে সমস্যা।
ডায়রিয়া নাতো। তাহলে হাসপাতালে যাও। শোন একদিন আমার বাবা গেলেন হাসপাতালে। ডায়রিয়ার রুগির কষ্ট দেখে তার মন খারাপ হয়ে গেল। তার আবার দিল ছিল বহুত নরম।
মনে কষ্টে বাবা সেই হাতে ভালোভাবে ঘুমাতে পাররেন না। পরে তার কথা ভেবে ঐ হাসপাতালের নাম করেছি আমি আমার বাবার নামে।
:স্যার প্রকৃতি আমাকে ব্যাপক প্রেসার দিচ্ছে। আমাকে এখান থেকে উঠত হবে। নয়ত মারাত্মক দূর্ঘটনা ঘটে যাবে।
সব নষ্ট হয়ে যাবে।
:আরে বিপদের সময় আমার বাবা কি করেছে জান। একবার আমাদের অফিসে চুরি হল। আমার বাবা তখন অফিসের বস। চোরর তার রুমের সব নিয়ে গেল।
এমন কি তার পানি খাওয়ার গ্লাসটা। এই কাজ কারা করেছে জান। তারই কর্মচারীরা। বাবা অফিসে এসে দেখে তার রুম খালি। বাবা তখন আক্ষেপ করে বলে ছিল...।
:স্যার আমার অবস্থা আশংকাজন। কিছু হলে আমি দায়ি না। আমি সরি স্যার।
আরে ইয়াংম্যান সামান্য পেটে অসুখে ভয় পাচ্ছ। তোমাদের বয়সে আমার বাবা এই সব পেটে অসুখকে পাত্তা দিতেন না।
তিনি...
:আর বলতে পারলেন না। একটা শব্দ তাকে থামিয়ে দিল। সিরিয়াল শব্দ। থেমে থেমে হচ্ছে। একশভাগ প্রকৃতিক শব্দ।
সাথে প্রকৃতিক সেন্ট। নির্বাক তাকিয়ে আছেন অফিসের বস আলতাফ সাহেব। এইটা কি ঘটল!
:হাসান বলল, আমি দায়ি না স্যার। আপনিই আমাকে বের হতে দেন নি। আপনি দায়ি।
আপনিই দায়ি......
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।