যে মুখ নিয়ত পালায়......। ।
১
হিমুর খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে। বলা যায় সে খানিকটা উদ্বিগ্ন। কারন রূপা রিমান্ডে।
হিমুর বাবা তার। । ডায়রীতে লিখে গিয়েছিলেন,
"বাবা হিমু,জগতে চলার পথে তুমি নানা মায়ার বন্ধন দেখিতে পাইবে। কিন্তু সাবধান, মায়াতে জড়াইবে না। মনে রাখিবে মহাপুরুষেরা মায়ামুক্ত।
তোমাকেও মায়ামুক্ত হইতে হবে। প্রকৃতি চলিবে তার নিজস্ব নিয়মে। সেই নিয়ম নিয়া কখনও উদ্বিগ্ন হইবে না। তুমি হইবে সর্বপ্রকার দুশ্চিন্তামুক্ত,মায়ামুক্ত। অন্যথায় একটা পশুর সহিত তোমার কোন প্রভেদ থাকিবে না।
"
কিন্তু হিমু আজ কিছুতেই দুশ্চিন্তা দূর করতে পারছে না। রূপার কাজল দুটি আখি তার চোখের সামনে যেন ভেসে উঠছে। হিমু বুঝতে পারল সে মায়ামুক্ত হতে পারে নি। তার ভিতরে মায়া কাজ করছে। মিছির আলি সাহেব থাকলে বলতেন,"তোমার অবচেতন মন রূপাকে ভালবাসে"।
হিমু জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখল হলুদ রঙের জোছনা যেন থইথই করছে। কিছুদিন আগে নীল জোছনায় সে হাঠাহাঠি করেছিল কিন্তু হলুদ জোছনা এর আগে কখনও দেখে নি। হিমু খানিক্টা অবাক হল। তারপরই আবার মনে মনে বলল,কোন কিছুতে অবাক হতে নেই-প্রকৃতি চলবে তার নিজস্ব নিয়মে।
তার খাটের উপর একটা বই।
রুপবান-লখিন্দরের প্রেম কাহিনী। লেখক ইলিয়াস মিয়া বংশীবাদক। কাল কয়েক পাতা পড়েছিল। পড়ে মনে হয়েছে লেখক যথেস্ট ভাল। তিনি সুন্দর করে বুঝিয়ে দিয়েছেন বেহুলার স্বামী লখিন্দরের সাথে কীভাবে রহিম বাদশার বউ রুপবানের প্রেম হল।
কাল বেহুলা আর রহিম বাদশার কথা মনে করে হিমুর অনেক খারাপ লাগছিল। তাই আর পড়ে নি। আজ ঠিক করল শুয়ে শুয়ে এই বইটা পড়বে। অজানা প্রেমকাহিনী কিছুটা জানা যাক।
২
রিমান্ডে রূপা বসে আছে।
তার সামনে ইন্সপেক্টর হাফিজ সহ আরো দুইজন। তারা সিভিল ড্রেসে আছেন। তাই নাম বুঝা যাচ্ছে না। রূপা ভাবল ইদানীং বাংলাদেশের পুলিশ বোধহয় হিমু সম্পর্কে বেশী কৌতুহলী হয়ে পড়েছে। তাই তাকে এখানে আনা হয়েছে।
সিভিল ড্রেস পরা এক ভদ্রলোক প্রশ্ন শুরু করলেন............
আপনার নাম কি?
-ডাকনাম রূপা ভাল নাম রূপবান।
ভদ্রলোক উত্তর শুনে একটু শরু চোখে তাকিয়ে বললেন, আপনি কি করেন?
--কিছু করি না। বাসায় বসে থাকি।
আপনি কি হিমু নামের কাউকে চিনেন?
--চিনি। কেন বলুন তো?
ভদ্রলোক বলতে লাগ্লেন,আমরা আসলে হিমু লোকটা সম্পর্কে ইনফরমেশন চাচ্ছি।
--কি ধরনের ইনফরমেশন?
হিমু লোকটা কি করেন? উনি কি পাগল বা ওইজাতীয় কিছু?
--রূপা একটু ঝুকে এসে বলল,হিমু রাস্তায় রাস্তায় হাঠে। জোছনা খায়। সে পাগল না তবে যারা তার আশেপাশে থাকে তারা ওইজাতীয় হয়ে যায়।
আপনি কি হিমু সাহেবকে ভালবাসেন?
---রূপা একটু কঠিন গলায় বলল,আপনার কিই মনে হয় আমার পাগল বা ওইজাতীয় কিছু হয়ার শখ আছে?
তিনজন পুলিশের কর্মকর্তা কাতর চোখে রূপার দিকে তাকিয়ে রইল। ঠিক এমন সময় ইন্সপেক্টর মফিজের মোবাইলে কল আসল।
একটা হলুদ নাম্বার থেকে।
--হ্যালো। মনে হল এটা হিমুর কন্ঠ।
---ইন্সপেক্টর হাফিজ কাদোঁকাদোঁ গলায় বলল, না বস। উনি আপনাকে ভালবাসেন না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।