মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা অন্যরকম হবার কথা ছিল!
-স্বর্গ আর নরকের মাঝের দেয়ালে একটা বড়সড় ফুটো হয়ে গেছে। যদিও ব্যাপারটা নরকবাসীদের জন্য বেশ আনন্দের কিন্তু স্বর্গ বাসীদের জন্য ভীষন বিরক্ত ও বিব্রতকর!
অঘটনটা স্বর্গ বাসীদের জন্য হয়নি-সব কিছুর জন্য দায়ী ওই হাড় বজ্জাত বিটকেলে নরকবাসীরা।
স্বর্গ প্রধান তাই খবর দিলেন নরক প্রধান স্যাটান শ্যাতান বা শয়তানকে। স্যাটান এসে সালাম ঠুকলে,স্বর্গ প্রধান বেশ উস্মার সাথে বললেন,তাদের কীর্তির কথা- তোদের কারনেই দেয়াল ফুটো হয়েছে। আজকের মধ্যেই যেমন করে পারবি দেয়াল ঠিক করবি।
শয়তান মাথা চুলকে বলল, হুজুর আমরা নরকের লোক, পয়সা কড়ি পাব কই-সব গরিব গুড়ো। এবার কার মত আপনি ঠিক করেন-আমি কথা দিচ্ছি এর পরের বার নস্ট হলে আমরা ঠিক করে দিব।
'ঠিকাছে- স্বর্গ প্রধান রাজী হলেন, এর পরেরবার কিন্তু কোন ধানাই পানাই চলবে না!'
এক বছর যেতেত না যেতেই ফের দেয়ালে ফুটো।
যথারীতি আবার ডাক পড়ল শয়তানের। শয়তান উধাও! তাকে কেউ খুজে পাচ্ছে না।
বার কয়েক এত্তেলা করার পরও শয়তান পাত্তা না দেয়ায় স্বর্গ প্রধান নিজেই ওর খোজে বের হলেন। আচমকা রাস্তায় পাকড়াও করলেন তাকে।
কিরে তুই এমন পালিয়ে বেড়াচ্ছিন কেন? তোকে এতবার খবর দেয়ার পরও তুই বেয়াদবের মত অগ্রাহ্য করলি আমাকে?
শয়তান মাথা চুলকে বলল, কেন হুজুর কি হয়েছে আমাকে খুজছেন কেন?
খুজছি এই জন্য যে, আগের বার না- কথা দিয়েছিলি-এইবার দেয়াল ফুটো হলে তুই সারাবি?
'ও এই ব্যাপার! শয়তাল ফিচেল হেসে বলল, আমি এই ব্যাপারটা নিয়ে আইনজীবির সাথে কথা বলে তার পরে জানাব। '
শয়তানের এমন উত্তর প্রত্যাশা করেননি স্বর্গে প্রধান। তিনি এবার ভীষন চুপসে গিয়ে বললেন, সমস্যাতো ওইখানেই রে! সবগুলোতো তোর ওখানেই-আমার এখানেতো একটাও আইনজীবি নেই।
অর্ধ শতাব্দী আগে মুজতবা আলীর লেখায় উদ্ধৃতি দেয়া এই কৌতুকখানাই প্রথমবার শুনেছিলাম কয়েকবছর আগে সদ্য পাশ করা আমার এক বন্ধু আইনজীবির কাছে। সে তার মত করে বলেছিল।
সব কৌতুকই আরো বেশী রসালো করার জন্য লেখক বা বক্তা তার মত করে একটু এদিক ওদিক করে বলে। কোনটা উৎরে যায় কোনটাবা বিরক্তি ধরায়। তারটা ছিল মাঝারী মানের।
মোটামুটি অর্থবান ও অভিজাত ঘরের ছেলে হওয়ায় চেহারায় বরাবরই একটু আভিজাত্য ছিল। তাছাড়া অল্প বয়সেই চোখে চশমা সাটায় চেহারায় আলগা গাম্ভীর্য আর আতেল ভাব এসেছিল। আইনজীবি পেশায় যেটা বেশ কাজে দেয়!
লন্ডন থেকে যখন সে ব্যারিস্টারী করে ফেরৎ এল তখন তাকে দেখে একটু ইর্ষন্বিত হয়েছিলাম বৈকি! নিজেকে শান্তনা দিতাম এই বলে, বাপের এমন অঢেল টাকা থাকলে ব্যারিস্টারি পড়া আর এমনকি বাড়হিয়া বাৎ!
আড্ডায় সে বরাবরই প্রানবন্ত কিন্তু একটু গোঁয়ার আর একগুয়ে! হামবড়া ভাব ছিলনা তবে নিজের মতামতকই মুল্য দিত সবচে বেশী। (তবে নিজে আইনজীবি হলেও বরাবরই আইনজীবিদের কর্মকান্ড নিয়ে রুঢ় মন্তব্য আর মজা করে এখনো। উপরোক্ত কৌতুক তারই একটা অংশ)
তারপর … একটু প্রভাব আর সামান্য আত্মীয়তার সুবাদে সে প্রাকটিস শুরু করল বাংলাদেশের সবচেয়ে নামীদামী এক ব্যরিস্টারের সহকারী হিসেবে।
তখুনি ভেবেছিলাম ও লাইনে চলে গেল! কয়েকবছর সহকারি হিসেবে বেশ সুনামের সাথে কাজ করে এখন সে নিজস্ব চেম্বার খুলেছে-তার দফতর সামলাতেই কয়েকজন ব্যরিস্টার কাজ করে এখন। ব্যারিস্টার হিসেবে একজন মানুষ যতটুকু সৎ হতে পারে আমি তাকে ততটুকুই সৎ মনে করি। নিজেকে অনেক সামলে সুমলে রেখেও তার সিনিয়রের সমালোচনা মুখ ফসকে বেরিয়ে পরে মাঝে মধ্যে।
সপ্তাহে দু একদিন সে আসে আমাদের আড্ডায়। এখানে এসে বসলেই খসে পড়ে তার প্রফেসনাল মুখোশ ! মাঝে মধ্যে একদম ছেলেমানুষ হয়ে যায়।
ওকে দেখে আমরা গর্ব অনুভব করি –ভাবি,একদিন বুক ফুলিয়ে বলব অমুক ব্যারিস্টার আমার বন্ধু!
সেদিন তাকে খুব বিষন্ন আর ক্লান্ত মনে হচ্ছিল। আজ সে বেশ সিরিয়াস- কারনটা ধরতে সময় লাগেনি। সেদিনই পত্রিকায় একটা খবর দেখে তখুনি আমার মন খারাপ হয়েছিল! একজন ল’য়ার হিসেবে সম্পুর্ন ফেভারে থাকা একটা কেস হেরে যাওয়ার দুঃখ যে কত ব্যাপক সেটা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হতে হয়না।
আজ তার মুখ থেকে শুনলাম ভিন্ন ধরনের তিক্ত কিছু কথা-যে ল প্রফেশন নিয়ে সে এতদিন গর্ব করত সেইটে আজ তার কাছে বোঝা মনে হচ্ছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যত-বিশেষ করে বিচার বিভাগের ভবিষ্যত নিয়ে সে ভীত সন্ত্রস্ত!
এতদিন তিক্ততা ছিল আর এখন নাকি ঘেন্না ধরে গেছে! কথাগুলোতে মিশে আছে তার হারার কষ্ট না আমাদের আইন ব্যাবস্থার অধঃপতনে তার বেদনার দীর্ঘশ্বাস!
আমি বললাম, এসব কর্পোরেট কেস নাইবা নিলে-কারন এসব কেস রাজনীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
'
সে ভীষন বিষন্ন কন্ঠে বলল, ধর আমি না হয় এই প্রফেশনই ছেড়ে দিলাম। আমার বাপের যা আছে তাই দিয়ে কেটে যাবে কোন মতে! কিন্তু এদেশের কি হবে?
'তুমি যদি বিচারপতি হতে তুমি কি রায় দিতে?'
সে বরাবরের মত বেশ দৃঢ় কন্ঠে বলল, অবশ্যই যেটা লিগ্যাল সেটার পক্ষে- কোন ধরনের প্রভাব-ই আমাকে টলাতে পারতনা।
'উচ্চ আদালতে যাবেনা?'
এবার যেন ভীষন হতাশ হয়ে ভেঙ্গে পড়া কন্ঠে বলল, কি হবে গিয়ে আমি জানি সেটার রায় কি হবে! আগে থেকেই সব সেটেল।
পিএসটিএল এর মালিকদের কি অভিমত?
-তারা হয়তো শেষ দেখে ছাড়বে। আমি কইছি, ভাই আমারে মাফ করে দেন।
এর পরে আর আমারে ডাইকেন না। উল্টা দেখি ওরা আমারে সান্তনা দেয়! চিন্তা কর তুমি, শালারা একবার তোরা চিন্তা করবি না- দেশের লোকগুলা ব্যাবসা করছে। কত হাজার কোটি টাকা ইন্ভেস্ট। কতগুলো চাকুরিজীবি ছেলে মেয়ের ভবিষ্যৎ এক মুহুর্তে ধ্বংস হয়ে গেল!
এবার আসি আমার কথায়;
আমরা ব্যাবসায়ীদের কথায় শুধু ব্যাবসার গন্ধ পাই!
আমি কি বলব-দেশের অন্য পাচটা বিদেশী বিনিয়োগের মোবাইল কোম্পানীর কথা? তারা কিভাবে আমাদের রক্ত শুষে নিচ্ছে? কিভাবে টেলিনর হাজার হাজার কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছে? কিভাবে সেবা হয়ে যায় বাংলা লিঙ্ক? সিটিসেল কিনে নেয় সিংটেল কিংবা একটেল হয়ে যায় রবি। আর ওয়ারিদের সিংহভাগ শেয়ার কিনে আরেক বিদেশী জায়ান্ট মোবাইল অপারেটর রিলায়েন্স।
৫ মিনিট কথা বললে পচিশ মিনিট ফ্রি। হাজার হাজার ম্যাসেজ ফ্রি- এই টে ফ্রি ওইটে ফ্রি কত কি ফ্রি!!
একশ টাকায় একটা সিম বিক্রি করলে নাকি ট্যাক্সের টাকা ওঠাতেই একটা অপারেটরের ছ’মাস লাগে(যদি সে সিমের ক্রেতা ফোনটা ব্যাবহার করে)। নাইলে পুরাটা লস। তাহলেও কেন এত বিদেশী কোম্পানী আমাদের দেশে অপারেশনের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে?
কিভাবে ওরা কিনে নিচ্ছে দেশী মিডিয়াগুলো- যাদের বিরুদ্ধে একটা টু শব্দ করতে বুক কাপে ওদের।
ভিওআই পি বৈধ হয় না কেন? কার স্বার্থে?
বিটিআরসি নামে বাংলাদেশ সরকারের সবচেয়ে লাভজনক আর ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠানটি একগাদা মেরুদন্ডহীন অপদার্থ লোভী আর দুর্নীতিবাজ কিছু কর্মকর্তা দ্বারা পরিচালিত হয়! ভাল লোক যে একেবারেই নেই তা বলব না-তবে তারা থাকে কোন ঠাসা হয়ে।
গু টিকতক কর্মকর্তা দখল করে আছে বিশাল এক ভবন সেরকম আরামদায়ক সাজে সজ্জিত করে। দুহাতে টাকা উড়াচ্ছে ওরা-আর বলছে এত লাভ অথচ খরচ করার জায়গা নেই!
দোষ স্বীকার করার পরেও কেন ওরা একদিনের কিংবা একঘন্টার জন্য ওই পাচটি কোম্পানীর সুইচরুম বন্ধ করেনি! কেন শুধু মোটা অংকের জরিমানা ওদের ছেড়ে দেয়া হল?
আর তারা তাদের দু একজনক ব্লু বাডকে ওএসডি বা পদচ্যুত করে কয়কশত হাই-মিডিয়াম প্রোফাইলের বাঙ্গালী কর্মকর্তাদের ঝেটিয়ে বিদায় করল!
-ধরে নেই বন্ধ হয়ে যাওয়া এই পাচটা পিএসটিন কোম্পানী চুরি করেছে ওদের মত। তবে কেন বড় চোরগুলো অর্থদন্ড দিয়ে পার পেয়ে গেল আর এদের হল ফাসি! কেন ফের এই প্রশ্ন?
তবে কিসের স্বার্থে কার স্বার্থে এসব হল? আমি যদি বলি বিশেষ স্বার্থে-যদি বলি তথাকতিথ বন্ধুপ্রতীম দেশের কোন কোম্পানীর স্বার্থে কিংবা বর্তমান সরকারের কোন প্রিয়ভাজন ব্যক্তির স্বার্থে তাহলে কি ভুল হবে বলা?
বন্ধুটি আমার খেদের সাথে যাবার আগে বলে গেল চল আমরা সবাই মিলে মাইগ্রেট করি কানাডা বা অস্ট্রলিয়ায়। আজ যেমন বিশ বছর আগে এদেশ ছেড়ে যাওয়া বাঙ্গালীরা দুর প্রবাসে বসে বলে, 'আগে কি ভাল ছিল-শালার দেশটাই এখন পুরা পচে গেছে!
আমরাও তেমন যদি বাঁচি -বছর বিশেক পরে আড্ডা দিতে দিতে বলব,’দেশটার তখন পচন ধরেছিল শুধু এখনতো পচে গন্ধ বেরুচ্ছে’!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।