দার্জিলিং এ আসলেই গাইড আপনাকে যেসব যায়গায় নিয়ে যাবে তার একটি রক গার্ডেন। পাথর আর ঝর্নার পানির ধারা রক গার্ডেনকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয় করে তুলেছে। সাহস করে পাহাড় চূড়াতে উঠলাম। উদ্দেশ্য উপর থেকে সৌন্দর্য উপভোগ করা আর সেই সাথে পুরো বাগানের সাথে ছবি তোলার মাধ্যমে নিজেকে সাক্ষী করে রাখা। আমার এক বন্ধু সিগারেট মুখে নিয়ে একটা ছবি তুলতে গেয়েছিল।
কোত্থেকে যেন এক মহিলা আমাদের দিকে ছুটে আসলেন। “তোমারা কি বাংলাদেশ থেকে এসেছ?” আমরা সবাই অবাক হয়ে বললাম “হ্যা। ” ভদ্র মহিলা বললেন “আমিও বাংলাদেশ থেকে এসেছি। আমি তোমাকে অনুরোধ করব সিগারেট মুখে ছবি না তোলার জন্যে। কারন ভবিষ্যতে তোমার সন্তান যখন দেখবে তার বাবা এই বয়সে সিগারেট খাচ্ছে তখন কি তোমার সন্তান কে সিগারেট খেতে মানা করতে পারবে?” আমার বন্ধুটি বাধ্য ছেলের মতন হাত থেকে সিগারেট সরিয়ে ছবিটি তুলেছিল।
ক’দিন আগে আমার সেই বন্ধুটিকে জিজ্ঞাস করেছিলাম ওই মহিলার কথা মনে আছে কিনা। ওর ও মনে আছে…। আমার সেই বন্ধুটি কিন্তু এখন খুব ফুটফুটে এক সন্তানের বাবা! সে যাই হোক, নানান রকম ঝর্না, বাধাঁন রাস্তা আর ফুলের বাগান দেখতে দেখতে বিদায় জানালাম রক গার্ডেন কে।
দার্জিলিং এ যে ক’দিন ছিলাম প্রায় প্রতিদিন ই কিছু মহিলা শাল বিক্রীর জন্যে চলে আসত। যতদূর মনে পড়ছে প্রতিটির দাম ছিল ১০০ রূপীর কাছাকাছি।
শাল গুলোর কোয়ালিটি আমার কাছে ভালোই মনে হয়েছিল। সেজন্যে ১/২ টা শাল মা’র জন্যে কিনেছিলাম। বেশ কিছু মার্কেট আছে দার্জিলিং এ। আমরা গিয়েছিলাম মহাকাল মার্কেটে। বিখ্যাত কাশ্মিরী শাল কিংবা ভাল সোয়েটার আমাদের দেশের চাইতে অনেক সস্তায় পাওয়া যায়।
দার্জিলিং এর বিখ্যাত সবুজ চা (“গ্রীন টি”) পাতা কিনেছিলাম। খুব সম্ভবত ২৫০ গ্রাম ২০০ টাকা দিয়ে।
জীবনে প্রথম বারের মতন রোপ ওয়েতে ওঠার অভিজ্ঞতা হয়েছিল দার্জিলিং এ -"Darjeeling Rangeet Valley Passenger Ropeway" এটা ইন্ডিয়ার প্রথম প্যাসেন্জার রোপ ওয়ে। যতদূর মনে পড়ছে গাইড বলেছিল এখানে নিজের পয়সাতে চড়তে হবে। পরে কিভাবে যেন সবকিছু ম্যানেজ হল।
গাইড নিজের পয়সাতেই ব্যবস্থা করে দিলেন। রোপওয়েতে করে আমরা পাহাড় থেকে নীচের একটা ছোট গ্রামে চলে আসলাম। আসার সময় এত উপর থেকে চা বাগান গুলোকে খুব সুন্দর লাগছিল। “রোপ ওয়ে”র জানালা দিয়ে মাথা বের করে নিচে তাকাতেই আমার এক বন্ধুর দামী সান গ্লাস খুলে পড়ে গেয়েছিল কয়েক শ’ ফুট নীচে। কিছুক্ষণ ঘুরে আবার রোপওয়েতে করে উপরে ফেরত আসলাম।
কোন এক লেখায় পড়লাম এটি নাকি গত কয়েক বছর ধরে বন্ধ। একবার কারেন্ট চলে গিয়েছিল, তারপর হঠাৎ কারেন্ট আসার পর অপেরাটরের ভুলে ২টা বক্স বাড়ি খেয়ে একটা নিচে পরে গিয়েছিল। একজন মারাও গেছে। এখনো মামলা চলছে বলে শুনেছি। এই কথাটা মনে পরলেই কেমন যেন শিওরে উঠি!
আরেকটা সুন্দর যায়গার কথা মনে পড়ছে- " মিরিক "।
বেশ সুন্দর আর খোলামেলা। তবে যায়গাটার মূল আকর্ষন সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৭৬৭ মিটার উঁচুতে একটি “ লেক”। লেকের উপর একটা ছোট ব্রিজ…। চারপাশে পাইন গাছের সারি। আমার কাছে মনে হয়েছিল “পিকনিক” করার জন্যে একদম আদর্শ যায়গা!
দার্জিলিং জু তে নিয়ে গিয়েছিল আমাদের গাইড।
পুরো নাম ‘পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুওলোজিক্যাল পার্ক’, ভারতের অন্যতম এই বন্যপ্রাণী আশ্রম ১৯৫৮ সালে তৈরী। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে খাঁজ কেটে তৈরী এই চিড়িয়াখানা। এখানকার প্রায় সব প্রানীগুলোই খাঁচা ছাড়া বাউন্ডারী দিয়ে ঘেরা। সাহস করে এক ভাল্লুক কে পেছনে ব্যাকগ্রাউন্ড বানিয়ে ছবি তুলেছিলাম। মনে মনে একটা ভয় কাজ করছিল! ভাল্লুক্ টা না আবার ওর সাথে রসিকতার মজা দেখাতে লাফ দিয়ে ঘাড়ে চড়ে বসে! না, আমার ধারনার চাইতে অনেক বেশী ভদ্র ছিল ভাল্লুক টি।
তবে আমাদের রয়েল বেঙ্গল টাইগার কে এভাবে খোলা রাখতে বোধহয় অতটা সাহস দেখায়নি কতৃপক্ষ। সেটিকে খাচায় ভরে রেখেছিল! সাথে সাথে এইচ, এম, আইতেও ঘোরা হলো। তেংজিং এর কবর এখানে, কবরের পাশে তেংজিং এর বিশাল মূর্তী। মূর্তীর পাশে দাড়িঁয়ে কয়েকটা ছবি তুললাম।
দার্জিলিং স্টেশনে যখন গেলাম তখন গাইড বলল দার্জিলিং এর আরেকটি স্টেশন “ঘুম” (৭,৪০৭ ফুট) নাকি পৃথিবীর সব চাইতে উঁচু রেল স্টেশন! খুব ভাল লাগল পর্থিবীর সব চাইতে উচূঁ স্টেশন দেখার সৌভাগ্যে লাভের! কিন্তু পরে জানতে পারলাম আরো অনেক স্টেশনই আছে যেগুলো “ঘুম” থেকেও উচুঁতে।
এর একটি চায়নার “Tanggula (Dangla) railway station” (১৬,৬২৭ ফুট), পেরুর “Ticlio” (১৫,৮৪৩ ফুট), বলিভিয়ার “Cóndor” (১৫,৭০২ ফুট)। প্রথম দশটির মধ্যেও নেই “ঘুম”!
দেখতে দেখতে কিভাবে যেন দার্জিলিং এর সময় গুলো কেটে গেল। দার্জিলিং ছেড়ে যেতে খুব খারাপ লাগছিল। অনেক যায়গাতেই ঘুরা হয়নি। গাংগামাইয়া" পার্ক, বাতাসিয়া লুপ ওয়ার মেমোরিয়াল…।
একটা অতৃপ্তি নিয়ে দার্জিলিং থেকে শিলিগুড়ি ফিরে আসলাম। শিলিগুড়ি থেকে আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ভূটান। সেটি নিয়ে আরেকদিন লিখব।
ইচ্ছে আছে আবার দার্জিলিং যাওয়ার। সেবার আর কোন যায়গাই মিস করব না!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।