দার্জিলিং যাওয়া যায় ২ ভাবে। আছে বিখ্যাত “টয়” ট্রেন। তবে টয় ট্রেনে শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যেতে নাকি প্রায় ৮ ঘন্টা লেগে যেত! এজন্যে সময় বাচাঁতে আমরা ট্য় ট্রেনে না গিয়ে বাসেই গেলাম। তবে কেন যেন ট্য় ট্রেনে মাঝে মাঝে খুব চড়তে ইচ্ছে করে। পরের বার সূ্যোগ হলে অবশ্য টয় ট্রেনেই যাবো।
কোন এক লিখায় যেনো পড়েছিলাম সবুজ পাহাড়ের গা বেয়ে এমন ভাবে এঁকেবেঁকে ট্রেনটি চলে - বেশির ভাগ সময় নাকি মনে হয় ট্রেন থেকে নেমে হাঁটলেও এটিকে হারিয়ে দেওয়া যাবে খুব সহজে !
রাত সাড়ে আট কিংবা ন’টার দিকে আমরা পৌছেঁ গেলাম দার্জিলিং শহরে। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় আট হাজার ফুট উপর। বিজ্ঞানে ল্যাপ্স রেটস বলে একটা ব্যাপার আছে। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে আপনি যত উপর উঠবেন তাপমাত্রা ততোই কমতে শুরু করবে। সেই ল্যাপ্স রেটস সূত্রের প্রমান পেলাম, দার্জিলিং শহরে পৌছাঁর পর ! বাস থেকে নেমেই আরেক টা সোয়েটার গায়ে চাপিয়ে নিতে হল।
প্যাকেজ ট্যুরের কল্যানে হোটেল আগে থেকেই রেডি করা ছিল। রুমের পানি এতই ঠান্ডা ছিল যে গোসল করার সাহস আর হলোনা। সেদিন রাতে কি খেয়েছি মনে নেই তবে এত টুকু মনে আছে ভাত দিয়েছিল ছোট্ট একটা বাটি মেপে। হয়ত কেও যাতে প্রয়োজনের বেশী নিয়ে ভাত নষ্ট না করে সে জন্যে এ ব্যবস্থা। সেদিনের মতন রাতের খাবার খেয়ে আর অন্য কিছু করবার মতন শক্তি ছিলনা।
সোজা চলে গেলাম ঘুমের রাজ্যে।
ভোর সাড়ে তিন টার দিকে সবাইকে জাগিয়ে দেয়া হল। টাইগার হিলে সূর্যোদয় দেখাতে নাকি নিয়ে যাওয়া হবে। অনেক গুলো জীপ অন্ধকারে হাজির হয়েছে আমাদের নিয়ে যাবার জন্যে। মজার ব্যাপার হল জীপে উঠতে আমাদের কে হোটেলের নীচে নামার পরিবর্তে উপরে উঠতে হল।
দার্জিলিং এর মজাটাই সেখানে। পাহাড় গুলো কেটে বাড়ী আর রাস্তা গুলো একের পর এক বসিয়ে দেয়া হয়েছে। একটি বাড়ীর ছাদের পাশেই আরেকটি রাস্তা ! সে যাই হোক, রাতের অন্ধকার ভেদ করে আমাদের জীপগুলো ছুটতে শুরু করল টাইগার হিলের দিকে। একটা মেয়েও দেখলাম চা আর কফির ফ্লাক্স হাতে আমাদের জ়ীপে উঠে পড়ল। অন্ধকার থাকতেই আমরা পৌছেঁ গেলাম 'টাইগার হিল'।
সেখানে অবশ্য ওই মেয়েটির মতন আরো অনেকেই চা-কফি'র ফ্লাক্স নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। টাইগার হিলের উপর চা পানের অভিজ্ঞতা অবশ্য আর নেয়া হয়নি। টাইগার হিলের সূর্যোদয় দেখার জন্য একটা বাড়ি আছে। আমরা সে বাড়ীতে উঠলাম না (হয়ত এর জন্যে টিকেট কাটতে হত; কিভাবে ঘুরবো-কিভাবে দেখবো- সব কিছু নির্ভর করছিল প্যাকেজ ট্যুরের গাইডের উপর)। এত ভোরে শীত উপেক্ষা করে অসংখ্য পর্যটক হাজির হয়েছিলেন টাইগার হিলে।
এই ভীড়ের মধ্যে সামনে দাড়াঁনোর সূ্যোগ পেলাম না। কোন রকমে পেছনে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে ছিলাম পাহাড়ের চূড়ার দিকে। হঠাৎ করে শুরু হল পর্যটকদের মধ্যে হৈ চৈ । তার মানে ডিমের লাল কুসুমের মতন সূয্যিমামা ধীরে ধীরে উপরে উঠতে শুরু করেছে - এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য ! দু হাত উচুঁ করে (ক্যামেরার লেন্সের দিকে না তাকিয়েই) একের পর এক ছবি তুলতে শুরু করলাম।
(চলবে)
পরিশিষ্টঃ বেলায়েত ভাই লেখাটি পড়ে টাইগার হিলের উপর একটি গান পাঠিয়েছেন।
ঊনার কোন একাউন্ট না থাকাতে পোস্ট করতে পারেন নি। উনার হয়ে আমি ই দিয়ে দিলাম ঃ
http://www.youtube.com/watch?v=k36k1fZwKxM
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।