সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায়......
দেশে খুন ও অপহরণ ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় জনসাধারণের ভেতর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে গত এপ্রিল মাসের চিত্র খুবই ভয়াবহ ছিল বলে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে। সরকারের লোকেরা আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার দাবি করলেও বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে তার কোন মিল খুঁজে পাচ্ছেন না পর্যবেক্ষক মহল।
সাম্প্রতিক সময়ে সন্ত্রাসের স্টাইল বদলেছে বলে জানা গেছে। কখনো সাদা পোশাকের ডিবি'র লোক সেজে আবার কখনো র্যা বের পোশাক পরে টার্গেটেড ব্যক্তিকে অপহরণ করা হচ্ছে।
দাবি পূরণ না হলে হত্যা করা হচ্ছে। আবার লাশও গুম করে ফেলা হচ্ছে। ফলে অপহৃত ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া কোন কোন সময় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। গত এক মাসে ডজনখানেক গুপ্ত হত্যা আইন প্রয়োগকারীদের ভাবিয়ে তুলেছে।
গত মাসের এ ধরনের ঘটনাবলীর মধ্যে সর্বাধিক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে খোদ পুলিশের এসআই গৌতম রায় (৪৩) রাজধানীর বুকে খুন হওয়া, মোহাম্মদপুরে তিন যুবকের বালি চাপা দেয়া লাশ উদ্ধার হওয়া, রাজশাহীর মোহনপুরে তৃতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রকে ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে অপহরণ ও পরে হত্যা করা, সাভারে একজন চিত্র নায়িকার মাকে খুন করাসহ বিভিন্ন ঘটনা।
বলা বাহুল্য, কিছু ঘটনা পুলিশের খাতায় রেকর্ড হয় না। ফলে এই তথ্যও পূর্ণাঙ্গ নয়। এখানে সারাদেশে গুম-খুনের একটি আংশিক বিবরণ উল্লেখ করা হল।
তুরাগ তীরে বালি চাপা ৩ লাশ
রাজধানীর তুরাগ নদের পাড়ে একটি হাউজিংয়ের জমির বালু খুঁড়ে গত ২৭ এপ্রিল উদ্ধার করা হয় তিনটি লাশ। পরে এদের পরিচয় পাওয়া যায়।
নিহতদের মধ্যে ঝালকাঠির রাজাপুরের যুবদল নেতা মিজানুর রহমানও (৩৭) রয়েছেন। মিজানের স্ত্রী নাসিমা খানম অভিযোগ করেন, গত ১৭ এপ্রিল রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা থেকে তার স্বামীসহ তিনজনকে প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে। এরপর তাদের হত্যা করে লাশ তুরাগ নদের বালিতে পুঁতে রাখে। পুলিশ জানিয়েছে, অপর দুইজন হচ্ছে মিজানের বন্ধু পিরোজপুরের কাউখালীর নাজমুল হক মুরাদ (৩০) ও রাজাপুরের ফোরকান (৩১)। জানা যায়, ১০ দিন আগে তাদের অপহরণ করা হয়েছিল।
আত্মীয়-স্বজনরা তাদের খোঁজাখুঁজি করেও কোন হদিস করতে পারেনি। মোহাম্মদপুর থানার অধীন তুরাগ তীরে কুকুর ও কাকে লাশগুলো টানাটানি করা এবং লাশের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেয়। সনাক্ত করা যায় যে সেগুলো অপহৃত তিন ব্যক্তির লাশ।
এসআই গৌতম খুন
রাজধানীর বংশাল থানার সেকেন্ড অফিসার গৌতম রায়কে (৪৩) এলোপাতাড়ি গুলী করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। গত ২০ এপ্রিল রাত আড়াইটার দিকে তিনি থানা থেকে বাসায় ফেরার সময় ধোলাইখাল এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন।
সন্ত্রাসীরা খুব কাছ থেকে তার বুকে গুলী করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ সময় সন্ত্রাসীদের গুলীতে আহত হন তার ব্যবসায়ী বন্ধু শামীম আহমেদ (৪০)। নিহত গৌতম রায় পুরনো ঢাকার বংশাল থানার অপারেশন অফিসার (সেকেন্ড অফিসার) ছিলেন। কি কারণে এবং কারা তাকে হত্যা করেছে প্রাথমিকভাবে পুলিশ সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে এনিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া যায়।
সঙ্গে থাকা বন্ধু শামীম এর সঙ্গে জড়িত কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
রাজশাহীতে শিশু খুন
অপহরণের তিন দিন পর রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের শিশু তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান অলির লাশ ২৮ এপ্রিল গভীর রাতে র্যা ব সদস্যরা উপজেলার বেড়াবাড়ি গ্রামের একটি ভুট্টা ক্ষেত থেকে উদ্ধার করে। অলিকে হত্যা করে তার লাশ মাটিতে পুঁতে রাখা হয়েছিল। এ ঘটনায় অপহরণকারী অলির দুলাভাই সাহেব আলী ও খালাতো দুলাভাই মুকুল হোসেনকে গ্রেফতার করে র্যা ব। র্যা বের কাছে তারা হত্যার কথা স্বীকার করে।
শ্বশুরের পেনশনের টাকার লোভে পাষন্ড জামাই সাহেব আলী তার নিজ শ্যালক অলিকে তার খালাতো ভায়রা মুকুল হোসেনের সহায়তায় স্কুল থেকে অপহরণ করে কৌশলে শশুরের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে অপহরণকারীরা ওই দিন শিশু অলিকে নির্মমভাবে হত্যা করে তার লাশ পুঁতে রাখে।
চিত্রনায়িকার ওপর হামলা\ মা নিহত
গত ৯ এপ্রিল গভীর রাতে ঢাকার সাভারের সামাইর গ্রামে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করে চিত্রনায়িকা সানজিয়া ইসলাম লতার মা ফেরদৌসী আক্তারকে। এ ঘটনায় লতাসহ গুরুতর আহত হয় পরিবারের অপর ৩ সদস্য।
রাত ১টার দিকে ১০/ ১২ জনের একদল সন্ত্রাসী দরজা ভেঙ্গে লতার বাড়িতে প্রবেশ করে লতাকে উপর্যুপরি কোপাতে থাকে।
এতে লতার ডান পা ভেঙ্গে যায় এবং মাথায় একাধিক কোপে জখম হওয়ায় সারা শরীর রক্তাক্ত হয়ে যায়। পার্শ্ববর্তী কক্ষ থেকে লতার মা ফেরদৌসী আক্তার ও অপর ৩ জন সদস্য লতাকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা তাদেরকেও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে। তাদের চিৎকারে গ্রামবাসী এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। ওই রাতেই গ্রামবাসী তাদের স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে লতার মা ফেরদৌসী আক্তার সেখানে মারা যান।
রাজধানীতে আরো যতো খুন
১ এপ্রিল রাজধানীর পল্লবীর বকুলতলা এলাকার একটি ডোবা থেকে বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
রাজধানীর পল্লবীতে এক তরমুজ ব্যবসায়ীকে জবাই করে হত্যা করা হয় গত ১১ এপ্রিল রাতে। পল্লবীর ১১ নম্বর সেকশনের ভাসানী হোটেলের কাছে শত শত মানুষের সামনে এ নৃশংস ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, পাওনা টাকার জের ধরে একজন দেনাদার তরমুজ ব্যবসায়ী আলী হোসেনকে জবাই করে।
গত ১৪ এপ্রিল সাভারের হেমায়েতপুরে শহীদুল্লাহ সুমন নামে এক ব্যবসায়ী ও তার স্ত্রী রানীকে র্যা ব পরিচয়ে ১০/১২ ব্যক্তি অপহরণ করে। অপহরণকারীরা তাদের হেমায়েতপুরের একটি বাড়িতে আটকে রাখে।
পর দিন অপহরণকারীরা রানীকে মোহাম্মদপুর বাসষ্ট্যান্ডে নামিয়ে দেয়। এরপরে ২৬ এপ্রিল পল্লবীর প্রিয়াঙ্কা স্যুটিং স্পট থেকে সুমনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
রাজধানীর আদাবর থানার শেখেরটেক এলাকায় গত ১৫ এপ্রিল দিনদুপুরে ছাত্রলীগের এক নেতাকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। নিহতের নাম ওয়াহিদুজ্জামান ওয়াহিদ (২৫)। তিনি ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
সন্ত্রাসীরা শত-শত মানুষের সামনে ওয়াহিদের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করার পর মৃত্যু নিশ্চিত জেনে পালিয়ে যায়।
গত ১৭ এপ্রিল রাজধানীর এয়ারপোর্ট রোডে মাকসুদ নামে এক ব্যক্তিকে মাইক্রোবাসযোগে অপহরণ করা হয়। পরদিন পূবাইলের নাগদা ব্রীজের কাছে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এর রহস্য জানা যায়নি।
১৯ এপ্রিল রাজধানীর ধলপুরে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হয় ইমতিয়াজ হোসেন জিতু (২২) নামে এক যুবক।
পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে।
২৩ এপ্রিল মালিবাগে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয় সোহানুর রহমান সোহেল নামে এক কলেজ ছাত্রকে। ২৬ এপ্রিল চাচাতো বোনকে উত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় বখাটেদের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে মামুন হাসান (২২) নামে এক যুবককে। ঘটনাটি ঘটে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানার দক্ষিণ কুতুবখালীতে। মুমূর্ষু অবস্থায় ৫ দিন হাসপাতালে চিকিৎসার পর তার মৃত্যু হয়।
পুলিশ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাইফুল নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে। অন্যদিকে সংসদ ভবন সংলগ্ন লেক থেকে ৩০ এপ্রিল রাতে অজ্ঞাতনামা এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পারিবারিক কলহের জের ধরে তুরাগে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে নার্গিস আক্তার রিমা (৩৭) নামের এক গৃহবধূ। ২৭ এপ্রিল রাজধানীর মালিবাগে ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান বাবুকে গুলী করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ঐ দিন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থেকে এক তরুণীসহ দুই অজ্ঞাত পরিচয় লাশ উদ্ধার করা হয়।
২৮ এপ্রিল ঢাকার গাজীপুরে যাত্রীবেশী দুর্বৃত্তদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন সিলেটের দুই গাড়িচালক মঞ্জু ও মোমিন। অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তদের ফাঁদে পড়ে জীবন দিতে হয়েছে তাদের। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দু'জন বয়স্ক পুরুষ ও মহিলা একজন মেয়েশিশু ও ৪ তরুণ ধোপাদীঘির পাড়ের মাইক্রোবাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকার মিরপুরে যাওয়ার জন্য চালক মঞ্জু মিয়ার (৩০) নোহা মাইক্রোবাস (চট্ট মেট্রো-চ-১১-১৮৮৬) ভাড়া নেয়। এ সময় মঞ্জু মিয়া তার সহকর্মী আবদুল মুমিনকে (২৮) তার সঙ্গে যাওয়ার অনুরোধ করলে তিনি গাড়িতে ওঠেন। যাত্রীবেশী দুর্বৃত্তরা প্রথমে ঢাকার মিরপুর এলাকায় গাড়ি নিয়ে যায়।
বিভিন্ন স্থান ঘুরে রাত ১০টার দিকে যাত্রীবেশী দুর্বৃত্তরা গাড়ি নিয়ে গাজীপুরের দিকে যায়। এরপর থেকে মঞ্জু ও মোমিনের মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে উভয়ের মোবাইল বন্ধ থাকায় সন্দেহের সৃষ্টি হয়। মঙ্গলবার গাড়ির মালিক নগরীর হাউজিং এস্টেটের আমিনুর রহমানের পক্ষে এ ব্যাপারে সিলেট কোতোয়ালি থানায় জিডি করা হয়। মঙ্গলবার রাত দেড়টায় একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানা পুলিশ গজারিয়া বন থেকে অজ্ঞাত দুই ব্যক্তির লাশ উদ্ধারের খবর প্রচারিত হয়।
এ খবর পেয়ে ধোপাদীঘিরপাড়ের মাইক্রোবাসস্ট্যান্ড সমিতির কর্মকর্তারা ছুটে যান গাজীপুরে। তারা শ্রীপুর থানায় যোগাযোগ করে গাজীপুর সদর হাসপাতালে যান। সেখানে গিয়ে তারা মঞ্জু ও মোমিনের লাশ শনাক্ত করেন।
মাস শেষে ৩০ এপ্রিল রাজধানীতে ঘটে বেশ ক'টি হত্যাকান্ড। রাজধানীর কলাবাগানের পান্থপথে প্রকাশ্যে গুলী করে এক ব্যবসায়ীকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
নিহত ব্যবসায়ীর নাম রোকন উদ্দিন বাবু (৫০)। তিনি এলাকায় ঝুট ব্যবসা করতেন। দুপুর পৌনে ২টায় পান্থপথের গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের গলিতে সন্ত্রাসীরা এ হত্যাকান্ড ঘটায়। পুলিশ বলছে, ঝুট ব্যবসার বিরোধে এ হত্যাকান্ড ঘটেছে। অপর একটি সূত্র বলছে, স্থানীয় বিরোধে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে হত্যা করেছে।
শাহআলীতে সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা নেশা খাইয়ে কাজী নজরুল ইসলাম (৫২) নামে গাজীপুরের বিআরডিবি'র এক কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। মোহাম্মদপুরে জুম্মন (১৭) নামে এক যুবক সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে খুন হয়। কাফরুলে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত হন আব্দুল জলিল (৫৫) নামে এক নৈশ প্রহরী।
অন্যদিকে ৩০ এপ্রিল গভীর রাতে শেরে বাংলা নগর থানা পুলিশ সংসদ ভবন সংলগ্ন এমপি হোষ্টেলের ৭ নম্বর গেটের পাশে লেক থেকে এক যুবকের ভাসমান লাশ উদ্ধার করে। পরে পুলিশ ময়না তদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
পুলিশ বলেছে, নিহত যুবকের গলায় কালো দাগ রয়েছে। শ্বাসরোধে হত্যার পর তার লাশ লেকে ফেলে দেয়া হয়েছে বলে ধারণা।
রাজধানীর বাইরে
রাজধানীর বাইরের অবস্থাও এর বাইরে ছিল না গত এপ্রিল মাসে। ১ এপ্রিল সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহরে মঙ্গলবার রাতে নিজ বাসায় খুন হন পরিবহন ব্যবসায়ী ইমতিয়াজ হোসেন মন্টু (৪৫)। ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা ইমতিয়াজ হোসেন মন্টু সিলেট নগরীর ছালিম ম্যানশনের মায়া ট্রান্সপোর্টের স্বত্বাধিকারী।
মন্টু শাহজালাল উপশহরের এইচ ব্লকের ১নং সড়কের ৫নং বাসায় দ্বিতীয় স্ত্রী লিপিকে (২৮) নিয়ে ভাড়ায় থাকতেন। পুলিশ বাথরুম থেকে মন্টুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে। লাশের মাথাসহ বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন ছিল। খুন হওয়ার ঘটনায় মন্টুর দ্বিতীয় স্ত্রী লিপি আক্তার, দারোয়ান কয়েস ও স্বামীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী রুমনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
৬ এপ্রিল ময়মনসিংহ শহরের রেলওয়ে স্টেশনের কাছে রাত সাড়ে বারোটায় এক যুবক খুন হয়।
পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে মামলা দায়ের করে। খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ হারুন নামে একজনকে আটক করে।
৭ এপ্রিল রংপুর শহরের মাহিগঞ্জে স্ত্রী ও পুত্রের হাতে খুন হন আহসানুল হক বেলাল নামে বিদেশ ফেরত এক ব্যবসায়ী। কোতোয়ালী থানা পুলিশ রাতে শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে ময়নাকুঠি এলাকার একটি কবরস্থানের পাশ থেকে বেলালের তিন টুকরা লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বেলালের স্ত্রী সুফিয়া বেগম, একমাত্র সস্তান কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আশিক ইকবাল শিশিরকে গ্রেফতার করে।
গত ১১ এপ্রিল দুপুরে পুলিশ ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার বগুড়া গ্রাম থেকে অপহৃত সার ব্যবসায়ী হাজী আব্দুল লতিফের লাশ উদ্ধার কর। মঙ্গলবার তিনি অপহৃত হন। পুলিশ জানায়, ভাটই বাজারের সার ব্যবসায়ী নিহত আব্দুল লতিফ শৈলকুপা উপজেলার অপর এক সার ডিলার ব্যানেটের কাছে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পেতেন। মঙ্গলবার টাকা দেয়ার কথা বলে মোবাইল ফোনে আব্দুল লতিফকে ডেকে নেয়। দেড়টার দিকে তিনি মোটর সাইকেলযোগে ব্যানেটের দোকানে পৌঁছেন।
সেখানে আগে থেকে কয়েকজন সন্ত্রাসীকে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। দোকানের ভিতরেই গলায় ফাঁস দিয়ে আব্দুল লতিফকে হত্যা করা হয়। এরপর লাশ বস্তায় ভরে সুখনালের বাড়ির পিছনে পুঁতে রাখে সন্ত্রাসীরা। নিহতের ছেলে মামুনুর রশিদ শৈলকুপা থানায় এ ব্যাপারে অপহরণ মামলা দায়ের করেন। পুলিশ বস্তাবন্দি অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করে।
১৫ এপ্রিল রাজশাহীর পবা উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে বিএনপি কর্মী একরামকে (৪৫) কে হত্যা করা হয়।
১৬ এপ্রিল সাতক্ষীরায় দুটি পৃথক ঘটনায় রাবেয়া খাতুন ও আশিক মল্লিক নামের দুই ব্যক্তি খুন হয়। মৃতদের একজন তালা উপজেলার ঘোনা গ্রামের রোকন শেখের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন। স্থানীয় পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জমি নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে লাভলু ও ডাবলুর নেতৃত্বে কিছু দুষ্কৃতিকারী ভোর রাত ৪টার সময় রোকন শেখ ও তার গর্ভবতী স্ত্রী রাবেয়াকে আক্রমণ করে। এসময় রাবেয়া সেখানেই মারা যায় এবং রোকন শেখ আহত হয়।
স্থানীয় লোকজন জানায়, রোকনের সঙ্গে তার চাচাত ভাই লাভলু ও ডাবলুর ১৫ বিঘা জমি নিয়ে পূর্ববিরোধ ছিল। অন্য এক ঘটনায় আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা হাইস্কুল প্রাঙ্গণে নির্মাণকর্মী আশিক মলিকের ঝুলন্ত মৃতদেহ পাওয়া যায়।
গত ১৯ এপ্রিল যশোর শহরের কেন্দ্রস্থল লালদিঘির পাড়ে একই দলের সন্ত্রাসীদের বোমা ও গুলীতে তরুণ লীগ নেতা রিপন ওরফে বাঁশি রিপন নিহত হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বন্ধু পর্বতসহ মোটর সাইকেলে যাবার সময় এই হামলা হয়। এতে রিপন পেটে বোমার আঘাতে ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
২০ এপ্রিল কেরানীগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কর্মীরা খিরমোহন (৫৫) নামে এক সংখ্যালঘুকে পিটিয়ে হত্যা করে। বাড়ির সম্পত্তি দখল নিয়ে এই হত্যাকান্ড ঘটে বলে জানা যায়। এই হামলায় ৭০/৮০ সন্ত্রাসী অংশ নেয়।
২১ এপ্রিল কুমিল্লা শহরের ধর্মপুর এলাকায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে বিপ্লব নামে এক যুবক খুন হয়। তার কাছে থাকা ১৮ হাজার টাকা ছিনতাইকালে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে সে গুরুতর আহত হয়।
পরদিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিপ্লব মারা যায়।
টঙ্গীতে চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের সংঘর্ষে ২ জন নিহত এবং ১ জন আহত হয়। গত ২০ এপ্রিল বিকাল ৩টার দিকে টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুরের বালুর মাঠ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হচ্ছে কাওসার (২৭) ও জালাল (২৮)। এরা উভয়ই ছিনতাইকারী ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে পুলিশ জানায়।
২৫ এপ্রিল সাভার পৌর এলাকার সবুজবাগ মহল্লায় দিন দুপুরে মাসুদ (৩০) নামের এক যুবককে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসীরা তাকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে শতশত লোকের সামনে এই হত্যাকান্ড ঘটায় বলে খবরে প্রকাশ।
২৮ এপ্রিল বেনাপোলে আয়োজিত বৈশাখী মেলায় বোমা হামলায় জিয়া নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়। আহত হয় আরো ১০ জন। এই ঘটনায় পুলিশ পরে চার জনকে আটক করে।
২৯ এপ্রিল চট্টগ্রামের সদ্বীপে যুবলীগ ক্যাডারদের হাতে খুন হয় শেখ ফরিদ (২৫) নামের এক যুবক। বাউরিয়া ইউনিয়নে তার চাচা সেরাজুল হক ভেন্ডারের সম্পত্তি লুটপাটের প্রতিবাদ করায় তাকে প্রাণ দিতে হয়। সন্ত্রাসীদের হাতে মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার পর দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে পরদিন চমেক হাসপাতালে মৃত্যু হয় ফরিদের।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।