নির্বাসনে সাংবাদিক আকাশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায় এড়াবেন কী করে?
বিভাগ : ফিচার | প্রকাশিত হয়েছে tuesday, এপ্রিল ২৭, ২০১০
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল (ইউ এন এন বি): “এই ফকিরনির বাচ্চা, তোর এতো প্রেসটিজ কিসের? শালা চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসী। তোর ‘পাছার ভেতর’ ঢুকিয়ে দেবো সাংবাদিকতা। এই শুয়োরের বাচ্চা তুই আর রিপোর্ট করবি না সিএসবি নিউজ-এ। লিচু বাগানের রিপোর্ট, বেনজিরের বউয়ের কথা প্রচার করবি না, খায়রুজ্জামান লিটনের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করবি আর কখনও”?
উপরোক্ত কথাগুলো আর্মির মেজর রাশীদুল হাসান রাশীদের। যিনি র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৫ এ কর্মরত ছিলেন।
এই সেনা কর্মকর্তা স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত সমর্থক বলে অভিযোগ রয়েছে। মেজর রাশীদ র্যাব-৫ এর সদর দফতরের নির্যাতন কক্ষে সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম আকাশকে চোখ বেঁধে সিলিংয়ের সঙ্গে উপরে ঝুলিয়ে নির্যাতনকালে এসব কথা বলেন। সাংবাদিক আকাশের লেখা ’শান্তির জন্য সংগ্রাম’ বই সূত্রে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। সাংবাদিক নির্যাতনকারি ও অসংখ্য বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের নায়ক এই মেজর রাশীদকে পরবর্তীতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনের একজন সদস্য করে পুরস্কৃত করা হয়।
প্রায় দুই দশক ধরে দেশের উত্তরাঞ্চলীয় বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে সাংবাদিক আকাশ দু:সাহসের সঙ্গে সাংবাদিকতা করেছেন।
জনগণের পক্ষে আর অন্যায়-অত্যাচার, হত্যা-নির্যাতন, ধর্মীয় সংখ্যালঘু-আদিবাসি হত্যা-নির্যাতন, দুর্নীতি, দু:শাসন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দলীয়করণের বিরুদ্ধে যার কলম ছিল অত্যন্ত শানিত। যেখানেই সাংবাদিক নির্যাতন সেখানেই ছুটে যেতেন আকাশ। উদ্দেশ্য নির্যাতিত সহকর্মীর পাশে গিয়ে সহমর্মিতা জানানো। শুধু সাংবাদিক নির্যাতনই নয় সাধারণ মানুষ নির্যাতিত-অত্যাচারিত হচ্ছেন খবর পেলেই আকাশ সেখানে পৌঁছে যেতেন মোটরসাইকেলে চেপে।
অনুসন্ধানী ও এডভোকেসি সাংবাদিকতা করতে গিয়ে আকাশ হত্যার হুমকি ও সরাসরি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
জনসাংবাদিকতা করার ফলে তাকে কারাবরণও করতে হয় মিথ্যা ও রাজনৈতিক হয়রাণিমূলক সাজানো মামলায়। বিএনপি-জামায়াত জোট, সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাধবায়ক সরকার এমনকি আওয়ামী লীগ আমলেও এই দেশপ্রেমিক সাংবাদিক হুমকি ও নির্যাতনের শিকার হন একাধিকবার। বাংলাদেশে মানবাধিকার সাংবাদিকতার এক নতুন দিকপাল এই তরুণ সাংবাদিক আকাশ। শোষণমুক্ত সমাজ চিন্তা-চেতনা আর মননধর্মী মানবতাবাদী এই সাংবাদিক বাস্তবিক অর্থেই এক অসাম্প্রদায়িক মানুষ।
জনসাংবাদিকতার নতুন নিশানা সাংবাদিক আকাশ বিএনপি ও আওয়ামী লীগ আমল, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এবং সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার সব আমলেই হুমকি ও নির্যাতন সয়েছেন।
বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে এসেও তিনি অব্যাহত হুমকির মুখে পড়েন। শেষ পর্যন্ত তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। বর্তমান সরকারের প্রভাবশালী নেতা ব্যক্তি ও রাজশাহীর মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, র্যাব ও র্যাবের কতিপয় স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকর্তার যৌথ য়ড়যন্ত্রের কারণে তিনি আজ নির্বাসিত জীবন বেছে নিয়েছেন।
এখানেই শেষ নয়, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড ও সেনা নির্যাতনের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করার কারণে আকাশ ব্যক্তিগত ও পারিবারিক উভয়ভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আকাশের শ্বশুর ও বিশিষ্ট আওয়ামী লীগার তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুককে দলীয় নমিনেশন দেননি বিগত হাতীয় নির্বাচনে।
মেয়র লিটন ও সেনাবাহিনীর কতিপয় প্রভাবশালী কর্মকর্তার কথায় নাকি তাজুল ফারুককে নমিনেশন দেয়া হয়নি। তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক বর্তমানে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, বিশিষ্ট আইনজীবী। যিনি ১৯৯১ সালের নির্বাচনে রাজশাহী-৪ (পুঠিয়া-দূর্গাপুর) বর্তমানে রাজশাহী-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগে নব্য কিংবা ভূঁইফোড় কোন নেতা নন। দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে আওয়ামী লীগ করে আসছেন।
এমনকি মাগুড়ার উপ-নির্বাচনের জালিয়াতির সরকারি ডকুমেন্ট সংগ্রহ করতে গিয়ে তাজুল ফারুকের নামে রাজনৈতিক মামলাও হয়েছিল বিএনপির আমলে। জামাতার পেশাগত কর্মকান্ড আর কালো টাকার কাছে পরাভূত হয়েছে তাজুল ফারুকের নমিনেশন ও রাজনীতি।
দেশের সবচেয়ে প্রাচীন বাংলা দৈনিক সংবাদ, বাংলার বাণী, দৈনিক বাংলা, আজকের কাগজ, নিউ নেশন, মণির্ং সান, নিউজ ডে, দৈনিক পত্রিকা, দৈনিক তিস্তা, দৈনিক উত্তর বাংলা, এসাসিয়েটেড প্রেস অব বাংলাদেশ, একুশে টেলিভিশন, সিএসসি নিউজ, দি এডিটর এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন সাংবাদিক আকাশ। এছাড়া রেডিও জার্মান ডয়েচেভেলের ফ্রি-ল্যান্স সংবাদদাতাও ছিলেন তিনি। জাহাঙ্গীর আলম আকাশ শুধু একজন সাংবাদিকই ছিলেন না।
মানবাধিকার, সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও যার অংশগ্রহণ ছিল বেশ সক্রিয়। উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী রাজশাহী জেলা শাখার প্রচার সম্পাদক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব ও রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাহী সদস্য ছিলেন আকাশ।
জীবনকে বাজি রেখে জঙ্গি, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রিপোর্ট করে গেছেন যিনি। সাংবাদিক আকাশের সৎ ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার ছাপ আজও রয়েছে গোটা উত্তরাঞ্চলজুড়ে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন বিষয়ে বিএ (সম্মান) ও পরে পোষ্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন সিভিক জার্নাল্রিম ডিগ্রি অর্জন করেন সাংবাদিক আকাশ।
২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনার পর দেশজুড়ে সংঘটিত সকল গ্রেনেড বোমা হামলা ও দৈনিক প্রথম আলোর বিরুদ্ধে মৌলবাদী অপতৎপরতার প্রতিবাদ করেন। রাজশাহীতে এই সাংবাদিক কাফনের কাপড় পওে এই প্রতিবাদ জানান। যার রিপোর্ট দি ডেইলি স্টার এ ২০০৪ সালের ২৪ আগস্ট ‘এ ইউনিক প্রোটেস্ট’ এবং দৈনিক প্রথম আলো’ পত্রিকায় একই দিনে ‘জাগাও বিবেক, বাঁচাও দেশ রাজশাহীতে এক সাংবাদিকের ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত হয়। সাংবাদিক হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতেও একক কর্মসূচি পালন করেন তিনি। ২০০৪ সালে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে যখন জঙ্গি হত্যা-নির্যাতন শুরু হয়।
তখন আকাশই প্রথম জঙ্গি নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ও শায়খ আবদুর রহমানদের হত্যা-নির্যাতনের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে ২০০৪ সালের ৩০ মে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় একটি জিডি (নং ১৫৮৭, তারিখ-৩০/০৫/২০০৪) এবং বাগমারা থানায় আরেকটি জিডি (নং ১৬৪৭, তারিখ-৩০/০৫/২০০৪) করেছিলেন।
১৯৯৭ সালের ২৬ এপ্রিল ছাত্রশিবিরের সন্ত্রাসী বাহিনী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ও বিশিষ্ট ফোকলোরবিদ অধ্যাপক আবদুল খালেকসহ তিনজন শিক্ষক এর বাসভবনে ব্যাপক তান্ডবলীলা চালিয়েছিল। আকাশ সেসময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং দৈনিক সংবাদ এর বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেন। ছাত্রশিবির ক্যাডাররা সেদিন তার কক্ষে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর করে এবং তাকে হত্যা প্রচেষ্টা চালায়। (সূত্র : ১৯৯৭ সালের ২৮ এপ্রিল বিটিভির রাত ৮টার খবরের পরে প্রচারিত বিশেষ অনুষ্ঠান, একই সালের ২৭ এপ্রিলের দৈনিক আজকের কাগজ, দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ অবজারভার, দৈনিক সংবাদসহ প্রায় সকল জাতীয় দৈনিক)।
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ তথা ইসলামী বিপ্ল¬ব সংক্রান্ত নিউইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত বহুল আলোচিত রিপোর্ট তৈরী করার জন্য আমেরিকান সাংবাদিক এলিজা গ্রিসওল্ড রাজশাহীতে আসেন। এসময় আকাশ তাকে জঙ্গি অধ্যুষিত বাগমারা এলাকায় সরেজমিনে যেতে সহায়তা করেন। (সূত্র : দৈনিক আমার দেশ, ২০০৫ সালের ৬ মার্চ)। র্যাবের ব্রাশফায়ারে রাজশাহীর দূর্গাপুরে ২০০৬ সালের ১ ডিসেম্বর ছাত্রলীগ নেতা আহসান হাবিব বাবু নিহত হন। এ ঘটনায় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হিউম্যান রাইটস-বিআইএইচআর এর পক্ষ থেকে তথ্যানুসন্ধান চালানো হয়।
সেই তথ্যানুসন্ধান দলের নেতৃত্বে ছিলেন আকাশ (সূত্র : দৈনিক জনকণ্ঠ, ও দৈনিক ভোরের কাগজ, ৯ ডিসেম্বর, ২০০৬)।
২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সশস্ত্র ক্যাডার-সন্ত্রাসী বাহিনীর হত্যা-নির্যাতন, লুটতরাজ ও নারী লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটতে থাকে। রাজশাহী অঞ্চলে সংঘটিত এসব ঘটনার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরী করেন আকাশ। যা দৈনিক সংবাদ’ এ প্রকাশিত হয়। এ কারণে ক্ষমতাসীন জোটের ক্যাডাররা তাকে হত্যা প্রচেষ্টা চালায় একাধিকবার।
২০০২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার সাধনপুরে বিএনপিদলীয় তৎকালীন সাংসদ নাদিম মোস্তফার নির্দেশে বিএনপি ক্যাডাররা আকাশের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। ২০০৩ সালেও দুর্বৃত্তরা তাকে অপহরণ করে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে গিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। জঙ্গি নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই আকাশকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন।
দেশের প্রথম ২৪ ঘন্টার নিউজ চ্যানেল সিএসবি নিউজ এর সম্প্রচার বন্ধ হবার পর ২০০৯ সালের ২ অক্টোবরে মাহফুজুল আলম লোটন আকাশের নামে রাজনৈতিক হয়রাণিমূলক মামলা করেন। এই লোটন একজন নব্য আওয়ামী লীগার।
যিনি ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের যোগ দেন। এর আগে তিনি জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মাহফ্রুুল আলম লোটন আওয়ামী লীগ নেতা ও রাজশাহীর মেয়র লিটনের আপন চাচা।
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পট পরিবর্তনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে মূলত: সেনাবাহিনী দেশের শাসনভার গ্রহণ করে। জরুরি অবস্থার মধ্যেই রাজশাহীতে র্যাব-৫ এর একাধিক অপারেশন জনমনে নানান প্রশ্ন সৃষ্টি করে।
২০০৭ সালের ২ মে রাজশাহীর এক সময়ের টপ সন্ত্রাসী বেনজিরকে তার নিজ বাড়ির শয়নকক্ষে স্ত্রী ও শিশু কন্যার সম্মুখে র্যাব সদস্যরা গুলি করে এবং তাকে অস্ত্র দিয়ে চালান দেয় আদালতে। একই সালের ১৬ মে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিচালকের (তৎকালীন) কক্ষে র্যাব সদস্যদের পিটুনিতে হা-পা ভেঙ্গে যায় কারারক্ষী সাহেবুল ইসলামের। এর দু’দিন পর ১৮ মে মহানগরীর ছোট বনগ্রামের লিচু বাগান পাহারা দেবার সময় কথিত অপহরণ নাটকের জের ধরে র্যাব সদস্যরা পিটিয়ে হত্যা করে ওয়ার্কাস পার্টির ওয়ার্ড সভাপতি কামরুল ইসলাম ওরফে মজনু শেখকে। এই মজনু হত্যাকান্ডের ঘটনায় র্যাবের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ আন্দোলনে নামে।
সাংবাদিক আকাশই প্রথম বাংলাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের ঘটনায় অনুসন্ধানী রিপোর্ট পরিবেশন করেন।
একারণে র্যাব তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়। একই সঙ্গে চাচা-ভাতিজার (লোটন-লিটন) সন্ত্রাস, দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট করেন তিনি। এই দুই প্রভাবশালীর পারিবারিক প্রতিষ্ঠান দেলোয়ার হোসেন ওয়াকফ এষ্টেট পরিচালনায় অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাট নিয়ে একাধিক রিপোর্ট করেন আকাশ। এছাড়া রাজনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী রিপোর্ট করায় মেয়র লিটন আকাশের বিরুদ্ধে চরমভাবে ক্ষুব্ধ হন। এর আগে ২০০০ সালের ৪ মার্চ রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ওপর রিপোর্ট করেন আকাশ।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে লিটনের চাচা লোটন সন্ত্রাসী পাঠিয়ে আকাশকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। এ ঘটনার পর আকাশ বোয়ালিয়া থানায় একটি জিডি করেছিলেন লোটনের নামে (জিডি নং-৩১০, তারিখ-৭-৩-২০০০)।
২০০৭ সালের ২০ জুন বোয়ালিয়া মডেল থানায় আকাশের নামে একটি কথিত চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে এজাহার দাখিল করেন নব্য আওয়ামী লীগার বর্তমানে মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার মাহফুজুল আলম লোটন। সেই অভিযোগটি পুলিশ জিডি আকারে রেকর্ড করে (জিডি নং-১১৬০, তারিখ-২০/৬/২০০৭)। এই জিডির বিষয়টি আকাশ জানতে পারেন একই বছরের আগষ্টের শেষ দিকে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা অভিযোগটি ডাহা মিথ্যা বলে মামলা হিসেবে রেকর্ড করেননি। সেই জিডি তদন্ত করে পুলিশ কি পেয়েছিল তার রিপোর্ট আজও রহস্যময়। কিন্তু পরবর্তীতে র্যাবের কতিপয় কর্মকর্তা ও কতিপয় ডিজিএফআই কর্মকর্তার সাথে যোগসাজশ করেন মেয়র লিটন ও তাঁর চাচা লোটন। তাদের পরিকল্পনামাফিক পুনরায় অভিযোগটি এজাহার হিসেবে বোয়ালিয়া মডেল থানায় জমা দেয়ার ব্যবস্থা করেন সিএসবি বন্ধ হয়ে যাবার দিনই অর্থাৎ ৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৭। এরপর র্যাবের রাজশাহী-৫ এর কমান্ডার লে.কর্ণেল শামসুজ্জামান খান, মেজর রাশীদুল হাসান রাশীদ ও মেজর হুমায়ুন কবিরের চাপ ও হুমকিতে পুলিশ এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করতে বাধ্য হয়।
রাজনৈতিক হয়রাণিমূলক এই মামলায় ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট থেকে অন্তবর্তীকালীন আগাম জামিন লাভ করেন আকাশ ১৬ অক্টোবর, ২০০৭। এই মামলার অভিযোগের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়ে সাংবাদিক আকাশ প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র সচিব এবং সেনা প্রধান বরাবর পৃথক আবেদন করেন ২২ অক্টোবর, ২০০৭। কিন্তু এর একদিন পর অর্থাৎ ২৩ অক্টোবর দিবাগত রাতে আকাশকে তার ভাড়া বাসা থেকে র্যাব সদস্যরা গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের মাত্র সাড়ে ৪ ঘন্টা আগে পুঠিয়া থানায় তার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে দ্বিতীয় চাঁদাবাজির মামলা করায় ষড়যন্ত্রকারির দল। যে মামলার বাদি নিজেই একটি চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ মামলার বাদিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার অভিযোগে দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি।
গ্রেফতারের সময় আকাশের স্ত্রী, ভাড়া বাড়ির মালিক ও তার শিশুপুত্রের সামনে তাকে নির্যাতন করা হয়।
দুর্নীতি, অবিচার ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করতে গিয়ে সাংবাদিক আকাশ রাজনৈতিক হয়রাণিমূলক মিথ্যা অভিযোগের মামলায় প্রথম জেলে যান ১৯৯২ সালে। ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর দৈনিক আজকের কাগজে পঞ্চগড়ের ওই সময়কালিন পুলিশ সুপার আবদুল মোত্তালিবের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেন। এরপর তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে আকাশের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা অভিযোগ এনে মামলা করান নির্যাতিতকে দিয়েই। সেসময় আকাশ দীর্ঘদিন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আত্মগোপন করেছিলেন।
পরবর্তীতে ঠাকুরগাঁও উপজেলা নির্বাগী অফিসার, জেলা রেজিষ্ট্রার ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের অনিয়ম ও দুর্নীতির অনুসন্ধানী রিপোর্ট করেন আকাশ। এ ঘটনায় আকাশের নামে আবারও একটি রাজনৈতিক হয়রাণিমূলক মানহানি মামলা করা হয়। জামিনযোগ্য সে মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন জানালে আদালত আকাশকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় ১৯৯২ সালের ২৭ জুন।
২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে র্যাবের হাতে গ্রেফতার ও নির্যাতনের পর ২৮ দিনের কারাবাস শেষে জামিনে মুক্ত হন সাংবাদিক আকাশ। নভেম্বরের ১৯ তারিখে কারাগার থেকে বেরুতে না বেরুতেই আকাশকে আবারও ক্রসফায়ারের নামে হত্যার টার্গেট করা হয়।
এরপর তিনি রাজশাহী থেকে পালিয়ে আসেন ঢাকায়। এরপর অব্যাহত হুমকি চলতে থাকে। আকাশ একইসঙ্গে তিনটি মামলায় রাজশাহী ও ঢাকার আদালতে যাতায়াত করতে থাকলেন অত্যন্ত সতর্কভাবে। প্রভাশালী মহলের ষড়যন্ত্রও চলতে থাকে সমানতালে। ২০০৯ সালের শুরুতে আকাশের পিছু নেয় জঙ্গিরা।
জানুয়ারি মাসে পর পর দু’দফায় তাকে হত্যার হুমকি দেয় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি। একের পর এক হুমকি এবং প্রশাসন ও রাজনৈতিক প্রভাশালীদের অব্যাহত ষড়যন্ত্রের মধ্যে আকাশ জার্মানিতে যাবার একটি সুযোগ পান। এরপরই তিনি একদিন প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে চলে যান।
ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও আদিবাসি নির্যাতনের বিরুদ্ধে সাংবাদিক আকাশের ক্ষুরধার লেখনির ছাপ রয়ে গেছে দৈনিক সংবাদের পাতায় পাতায়। রাজশাহী থেকে বরিশাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে নওগাঁ কিংবা নাটোর, গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ যেখানেই সংখ্যালঘু নির্যাতন সেখানেই আকাশ ছুটে গেছেন খবর সংগ্রহের জন্য।
এছাড়া বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের ঘটনাগুলোর অনুসন্ধানী খবর তিনিই তুলে আনতেন উত্তরাঞ্চল থেকে। সাংবাদিক আকাশের লেখা সদ্য প্রকাশিত ইংরেজী বই ’স্ট্রাগল ফর পিচ’ ও ’এওয়ে ফ্রম হোম’ এর পাতায় পাতায় ফুটে উঠেছে আকাশের দেশাত্ববোধ, দেশের জন্য মঙ্গল চিন্তা।
অথচ মানবাধিকার লংঘনকারি রাষ্ট্রীয় বাহিনী এই জনদরদী সৎ ও নির্ভিক সাংবাদিককে তথাকথিত ক্রসফায়ারে হত্যা করতে চেয়েছিল। তার চোখ-মুখ কালো কাপড়ে বেঁধে ও কালো কাপড়ের মৃত্যু টুপি পরিয়ে উপরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল ১৫ ঘন্টা ধরে। জনগণের পক্ষে কথা বলায় এই অকুতোভয় সাংবাদিককে নির্যাতন করা হয়েছে নানা কায়দায়।
এমনকি তাকে ইলেকট্রিক শকও দেয়া হয়। তার নামে করা মিথ্যা-কাল্পনিক অভিযোগের রাজনৈতিক হয়রাণিমূলক সব মামলা এখনও প্রত্যাহার হয়নি। অথচ অনেক দাগি-অপরাধীর মামলাও তোলা হচ্ছে রাজনৈতিক মামলার নাম দিয়ে।
প্রিয় স্বদেশভূমি ছেড়ে বিদেশের মাটিতে গিয়েও সাংবাদিক আকাশ কিন্তু বসে নেই। একাধারে লিখে যাচ্ছেন সকল অনাচার, অত্যাচার, দুর্নীতি, নির্যাতনের বিরুদ্ধে।
বর্তমানে তিনি প্রেস ফ্রিডম, সংখ্যালঘু অধিকার, গণতন্ত্র, শান্তি ও মানবাধিকার বিষয়ক অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিউম্যান রাইটস টুডে’র সম্পাদক।
সাংবাদিক আকাশ দেশে নেই। কিন্তু থেমে নেই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও হুমকি। পারিবারিক জরুরি প্রয়োজনে সাংবাদিক আকাশের স্ত্রী ফারহানা শারমিন শিশুপুত্রকে নিয়ে জার্মানি থেকে বাংলাদেশে ফেরেন গত মার্চ মাসে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফোকলোর বিষয়ে মাস্টার্স পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন।
সেই পরীক্ষার ফলাফল জানার জন্যে ফারহানা গত ৩১ মার্চ, ২০১০ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যান। ক্যাম্পাস থেকে ফেরার পথে তিনজন অপরিচিত ব্যক্তি ফারহানার সামনে এসে দাঁড়ায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র ভবনের পাশের এই ঘটনা। অপরিচিত ওই লোকেরা ফারহানার সামনে আকাশের নাম ধরে গালমন্দ করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা বলে, ”ওই শালা আকাশকে দেখা গেলে তাকে জীবনের মত শেষ করে দেবো।
” এই হুমকির ব্যাপারে রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। মতিহার থানার জিডি নম্বর-৪৩, তারিখ- ১/৪/২০১০।
এখনও খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষ থেকে আকাশকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, ”সম্প্রতি মেয়র লিটন আমাকে বলেন যে ক্ষমতা এখন আমাদের হাতে। সাংবাদিক আকাশ পালিয়ে গেলো।
নাহলে সে মজাটা বুঝতো। ”
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনি শুধু দেশের প্রধান নন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগেরও প্রধান। রাজশাহীর মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন আপনার দলের একজন প্রভাশালী নেতা। ইংরেজী দৈনিক স্টারের একটি খবরে আমরা জেনেছিলাম, এই মেয়র তার কন্যার ফলাফল কেন খারাপ হলো তার জন্য রাজশাহী বোর্ড চেয়ারম্যান দীপক দাসকে (যিনি আবার ধর্মীয় সংথ্যালঘু) হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন।
আপনি প্রধানমন্ত্রী এবং দলীয় প্রধান হিসেবে আপনি আপনার দলের নেতাদের অপকর্মের দায় এড়াতে পারেন কী?
আলোচিত সংবাদ
নির্বাসনে সাংবাদিক আকাশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায় এড়াবেন কী করে?
১৫ বিচারকের শপথ, আপিল বিভাগের বিচারপতিরা যাননি
সংখ্যালঘু হিন্দু পুলিশ কর্মকতা এস আই গৌতম হত্যার ২জন খুনি গ্রেফতার
রাবিতে গ্রীষ্মকালীন ছুটি শুরু শনিবার
পুরান ঢাকায় গুলিতে পুলিশ কর্মকর্তা নিহত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।