কালের সাক্ষী
ফোর্বস ম্যাগাজিনের হিসাবে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রভাবশালী ক্রীড়াব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন। তাঁর হাতে ক্রিকেট দুনিয়ার সবচেয়ে টাকা ওড়াউড়ির টুর্নামেন্ট হয়ে উঠেছিল আইপিএল। কিন্তু সেই লোলিত মোদিই যে আর থাকলেন না।
মোদি না থাকায় আফসোস হচ্ছে? সে তো প্রীতি জিনতা, শিল্পা শেঠি, শাহরুখ খানরা তাঁদের আফসোসের কথা প্রকাশ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু মোদির বিদায়ে কিছু লোক যে আনন্দে রীতিমতো উত্সবও করছেন!
মোদির একসময়ের ঘনিষ্ঠতম বন্ধু থেকে ভয়াবহ শত্রুতে পরিণত হওয়া সঞ্জয় দীক্ষিত কাল টুইটারে লিখেছেন, ‘লোলিত মোদি এখন শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।
’ আইপিএল পরিচালনা পরিষদে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাবেক ক্রিকেটার বলছেন, ‘ও সত্যিই যদি এসব অন্যায় করে থাকে, অবশ্যই ওর বড় শাস্তি হওয়া উচিত। ’ আরেক সদস্য রবি শাস্ত্রী বলেছেন, ‘আমাদের না জানিয়ে লোলিতই জনসমক্ষে সব এনেছে। জনসমক্ষেই ওকে পাল্টা পাটকেল খেতে হবে। ’ ওদিকে পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক জাভেদ মিয়াঁদাদ দাবি করেছেন, এখন থেকে আইপিএলের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণের জন্য আইসিসিরই একটা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
সবই তো বোঝা গেল।
কিন্তু এখন আইপিএলের কী হবে? আইপিএলের স্বপ্নদ্রষ্টাকে ছাড়া টুর্নামেন্টটা চলবে কী করে? মোদিবিহীন আইপিএলের ভবিষ্যত্ নিয়ে ক্রিকেট দুনিয়াজুড়েই জল্পনা ও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আইপিএল তার রং হারিয়ে ফেলতে পারে, এমনকি বন্ধও হয়ে যেতে পারে—এমন শঙ্কাও আছে। এসব শঙ্কাকে বাস্তব মেনে নিয়েই বিশিষ্ট ক্রীড়া বিশ্লেষক আয়াজ মেনন বলছেন, ‘আইপিএলের বন্ধ হয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আইপিএল অনেক দামি জিনিস, এটা কেউ নষ্ট করবে না। এখন দেখার বিষয় বিসিসিআই কীভাবে বিষয়টা নিয়ন্ত্রণ করে।
’
বিসিসিআই অবশ্য আইপিএলের যাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য ইতিমধ্যেই কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ৪০০ কোটি ডলার দামের এই টুর্নামেন্ট তো তাদের জন্য সোনার ডিম পাড়া হাঁস। আগামী আইপিএলে দেশি-বিদেশি খেলোয়াড়দের অনুপাত কী হবে, নিলাম কীভাবে পরিচালনা হবে—এসব বিষয়ে ভাবার জন্য বিসিসিআই আইপিএলের পরিচালনা পরিষদে থাকা তিন সাবেক ক্রিকেটারকে অনুরোধ করেছে। মেননও মনে করছেন, নিলামটা ঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারলেই আইপিএলের ভবিষ্যত্ পথচলা সুগম হবে।
যদিও আইপিএলের সদ্য দায়িত্ব পাওয়া অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান চিরায়ু আমিন বলছেন, আপাতত তাঁরা পরবর্তী আইপিএল নিয়ে পরিকল্পনা করছেন না।
এখন আইপিএলকে ‘পরিষ্কার’ করাই তাঁদের প্রধান কাজ, ‘এখন আমাদের প্রধান কাজ আইপিএলকে পরিষ্কার করা। এটাই এখন প্রাধান্য পাচ্ছে। তারপর আমরা আগামী বছরের পরিকল্পনা করব। ’
আমিনের সঙ্গে একমতই পোষণ করেছেন, আরেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক ইয়ান চ্যাপেল। তিনিও বলছেন, আইপিএলকে লোকজনের সামনে পরিচ্ছন্ন বলে প্রমাণ করা না গেলে, লোকজন টুর্নামেন্টটার প্রতি আগ্রহ হারাবে।
আইপিএলের ভবিষ্যত্ কী হবে, সেটা পরের কথা। কিন্তু মোদির ভবিষ্যত্টা ‘অন্ধকার’ বানিয়ে দেওয়ার ষোলোআনা প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে বিসিসিআই ও সরকারি দপ্তরগুলো। বিসিসিআই একটার পর একটা চুক্তিপত্র ও মূল দলিল লোপাটের অভিযোগ আনছে তাঁর বিরুদ্ধে। মোদির ও আইপিএলের সব কাগজপত্র খতিয়ে দেখার দায়িত্ব পাওয়া বিসিসিআইয়ের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা রত্নাকর শেঠি কাল অভিযোগ করেছেন, মোদি দল বিক্রির কিছু কাগজ লোপাট করে ফেলেছেন। প্রথম বছর দল বিক্রির সময় ১১টি সংস্থা দরপত্র জমা দিয়েছিল।
এর মধ্যে যে তিনটি সংস্থা দল পায়নি তাদের দরপত্রের মূল কপি ‘হারিয়ে’ গেছে।
এ ছাড়া ভারতীয় আয়কর বিভাগ যথারীতি একটার পর একটা বোমা ছুড়ছে মোদির দিকে। এবার মোদির জামাতা গৌরব বর্মণকে নোটিশ পাঠিয়েছে আয়কর বিভাগ। অভিযোগ, মরিশাসের একটি কোম্পানির মাধ্যমে কিংস ইলেভেনে বিনিয়োগ করেছেন গৌরব। সেই টাকার উত্স জানতে চেয়েছে আয়কর বিভাগ।
মোদি, যতই ‘খেলা শুরু’র হুমকি দিন না কেন, খেলাটা একপেশে হয়ে যাবে বলেই মনে হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।