আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দার্জিলিং (Land of the Celestial Thunderbolt) ফটো স্টোরি - ১



দার্জিলিং যারা প্রথমবার গেছেন তারা কখনই ভুলতে পারবেন না সে অনুভুতি। যতই উপরে উঠা হয় ততই ঠান্ডা বাড়া, এক সময় মেঘ পায়ের নিচে চলে যাওয়া সবই খুব থ্রিলিং। আমি গতবছর রোজার ঈদের পর গেছিলাম দার্জিলিং। মাত্র ৩ দিন ছিলাম। চেষ্টা করব দার্জিলিংকে ফুটিয়ে তুলতে ছবিতে।

৩ দিন খুবই কম সময় দার্জিলিংকে ঠিকমত উপভোগ করার জন্য। সময় ছিল না বলে আশেপাশে কোথাও যেতে পারি নাই। আপনারা যারা এখনো যান নাই কিন্তু যেতে আগ্রহি তাদের জন্য একটু হলেও এই ছবিগুলা হেল্প করবে এটা বুঝার জন্য যে দার্জিলিং কত সুন্দর। দার্জিলিং জাবেন কিন্তু বুরির হোটেলে খাবেন না তা কেমনে হয়? বাস বুরিমারিতে থামার পর আমাদের প্রায় ৬ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে( এর একটা কারন ছিল তখন বাংলাদেশ-ভারতের সময়ের difference ছিল ১.৫ ঘন্টা) অপেক্ষা করার জন্য ভাল কোন জায়গা নাই। একটা রুমে ছেলেদের আর একটা রুমে মেয়েদের গাদাগাদি করে আই কয়ঘন্টা রাখার ব্যবস্থা করা হয়ছিল স্যামলি পরিবহনের পক্ষ থেকে।

টয়লেটের গন্ধে রুমে থাকাই দায় ছিল। আমরা সবাই বাইরে চেয়ার পেতে বসেছিলাম প্রায় ৬ ঘন্টা! বাস পৌছেছিল ভোর ৫ টায় আর বর্ডার open হয়েছিল ১১ টায়। ৯ টার দিকে আমরা সবাই বুড়ির হোটেলে মজা করে নাস্তা খেলাম। খাওয়া খুবি মজা। এখানে বলে রাখা ভাল আমরা প্রাইম ট্যুরিজমের সাথে গিয়েছিলাম প্যাকেজ ট্যুরে প্রায় ৩০ জন।

তবে আপনাদের জন্য আমার একটা ভাল পরামর্শ হল দার্জিলিং কখনোই প্যাকাজ ট্যুরে জাবেন না। নিজে নিজে জাবেন, অনেক ভাল থাকবেন, ইচ্ছা মত ঘুরতে পারবেন। কাস্টমস আর বিডিয়ারের চেক পোষ্ট। মানুষর বসার কোন জায়গা নাই। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় সবাইকে।

এক এক করে নাম ডাকা হয়, পাসপোর্ট চেক করে ছড়ে দেওয়া হয়। যাওয়ার সময় এখানে কোন ঝামেলা নাই। কিন্তু আসার সময় একটু ঝামেলা করে কাস্টমস। সে ঘটনা পরে বলব। আমাদের কাস্টমস+বিডিয়ার+ইমিগ্রাশনের জন্য গ্যারেজ সাইজের ২টা রুম।

আর ভারতের কাস্টমস+ইমিগ্রাশনের জন্য গ্যারেজ সাইজের ১টা ছাপরা ঘর! আমাদের এই সাইডে কারেন্ট আছে, ওদের সাইডে কারেন্ট আছে কি নাই বুঝা জায় না কারন ফ্যান অনেক আস্তে আস্তে ঘুরে, তাও ছোট টেবল ফ্যান সাইজের একটা ফ্যান একজন পুলিশের মাথার উপর লাগানো ছিল। বাকি সব গরমের মধ্যেই কাজ করতেছিল। দাদাদের ধৈর্য অসিম বলতে হবে। এপারের কাজ শেষ হলে এবার হাটতে হবে বেশ কিছুদুর। সব কাজ শেষ হলে আমরা বাসে উঠি ১২ টায়।

ভোর ৫ টায় পৌছি ১২ টায় আবার যাত্রা শুরু শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে। শিলিগুড়ি পৌছাতে সময় লাগে ২ ঘন্টা। রাস্তা মোটামুটি ভাল। তিস্তা নদী। আমরা তিস্তা ব্রিজ পার হইতেছি।

বাস থেকে তোলা ছবি। তিস্তা নদী। শিলিগুড়িতে চরম গরম ছিল ঢাকার মতই। খেয়েদেয়ে আমরা ৪ টার সময় ৩ টা জিপে করে রওনা দিলাম দার্জিলিং এর উদ্দেশ্যে। প্রতিটা জিপে ১০ জন, বেশ গাদাগাদি করে ভিতরে বসতে হয়।

ছাদের উপর মালামাল উঠানো হয়। ( তখন শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং প্রতিজন ভাড়া ছিল ৮০ রুপি আর পুরা গাড়ি ভাড়া করলে ৮০০ রুপি)। আমরা যেহেতু গ্রুপে ছিলাম তাই কোন problem হলো না। তা না হলে Indian দের সাথে শেয়ার করতে হত, নিজের পছন্দসই জায়গা পাওয়া মুশকিল হত। তবে আপনারা যারা একা যাবেন তারা যদি পছন্দসই সিট না পান তাহলে দরকার হলে ২ টা সিট কিনবেন, কোনো প্রবলেম নাই. আমরা শিলিগুরি থেকে শুরু করার একটু পর থেকেই বৃষ্টি শুরু হইসিলো. গারি মাত্র যখন সমতল ভূমি থেকে পাহাড়ে উঠা শুরু করলো তখনি বৃষ্টি শুরু হলো. আমি প্রথম যাচ্ছি দার্জিলিং, তাই একটু ভয় পেয়ে গেলাম. যদি পাহাড়ে গাড়ির চাকা স্লিপ কাটে তাহলে একদম পগাড় পাড় হয়ে যাবো. যাই হোক, বৃষ্টি আস্তে আস্তে বাড়তে লাগলো. রাস্তার অবস্থা বেশ খারাপ না, খুব বেশি খারাপ. জায়গায় জায়গায় পাহাড় ধস, রাস্তার পিচ উঠে গেছে, পাথর বের হয়ে গেছে. এসব দেখে আরো ভয় পেয়ে গেলাম. এমনিতেই রাস্তা অনেক স্লিপারি হয়ে গেসে, তারপর যদি চাকা কোনো পাথরের উপর থেকে ফসকে যায় তাহলে একদম চিত্ পটাং. কিন্তু চালক দেখলাম খুবই সাহসী. তার কোনো বিকার নাই. সে গুন গুন করে গান গাইতেছে আর গারি চালাইতেছে. তাকে দেখে একটু সাহস পেলাম. এই ছবিটা দেখলেই আমার ৩ idiots এর কথা মনে পরে. সেখানে একটা দৃশ্য ছিলো শিমলা থেকে মানালি যাওয়ার রাস্তা কত সুন্দর হতে পারে. দার্জিলিং এর রাস্তাও কম সুন্দর না. এই ছবিটা গারি থেকে যখন তুলেছি তখনো বৃষ্টি চলতেছিলো. আবার সেই দার্জিলিং এর রাস্তা. ওই দুরে দেখা যাই তিস্তা নদী. দ্বিতীয় লেভেল এর রাস্তাতে যে গারিটা আছে কিছুক্ষণ আগে আমরাও সেখানে ছিলাম. পাহাড়ে নিস্সঙ্গ গাছ. চলবে......


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।