একদা ঈশ্বর ভাবিলেন দুনিয়ায় মহাপ্রলয়ের সময় নিকটবর্তী হইয়া আসিতেছে; তাই দুনিয়ার মানুষদের পাপ পুণ্যের বিচারকার্যের প্রস্তুতি এইবার নিতেই হয়। তাহার উপর ঈশ্বরের মনে এক বড়ই বিচিত্র চিন্তার উদ্ভব হইল। তিনি ভাবিলেন দুনিয়া থেকে কিছু মনুষ্যদিগকে আনিয়া তাহার নিজ হস্তে তৈয়ার করা বেহেশত আর দোযখে কয়েকদিন রাখিয়া পরীক্ষা করিয়া দেখা দরকার তাহাতে থাকিলে মানুষ এর কীরূপ প্রতিক্রয়া হয়। প্রয়োজন হইলে কিছু সংশোধন করা হইবে। ঈশ্বরের যেই ভাবা সেই কাজ।
তিনি তাহার দুত কে ডাকিলেন আর কহিলেন যাও দুনিয়া তে গমন কর, কিছু মনুষ্য ধরিয়া লইয়া আস; তাহাদের কে সম্ভাব্যতার নিয়ম অনুযায়ী বেহেশ্ত অথবা দোযখে প্রবেশ করাইবে। যাও এই দায়িত্ব আমি তোমাকে অর্পণ করিলাম। ঈশ্বরের দুত কাল বিলম্ব না করিয়া ধরায় নামিয়া আসিলেন। কিন্তু ধরায় আসিয়া তিনি মহা চিন্তায় পড়িয়া গেলেন; কাহাদিগকে তিনি লইবেন। তিনি চিন্তা করিতেছিলেন আর হাটিতেছিলেন।
এমন সময় তিনি কিছু শোরগোল এর আওয়াজ পাইলেন; দেখিলেন এক দল লোক রাস্তার মধ্যিখানে দাড়াইয়া অহেতুক আওয়াজ করিতেছে। তিনি আরেকটু সামনে অগ্রসর হইয়া দেখিলেন উহারা এক দল বাঙ্গালী যারা কারেন্ট, গ্যাস আর পানির দাবীতে রাস্তাঘাটে মানববন্ধন করিতেছে। ইহা দেখিয়া তাহার মনে দয়ার উদ্রেক হইল। তাই তিনি মনস্থির করিলেন এইসব মনুষ্য দিগকে কিছুদিন বেহেশতে রাখিয়া আসিলে মন্দ হয় না। অতপর তিনি ভাবিলেন যাই এই রাজ্য থেকে এইবার সামনে আগাই।
সামনে আগাইয়া তিনি দেখিলেন কিছু মানুষ একটি চায়ের দোকানের সামনে বসিয়া একটি চারকোণা বাক্স এর দিকে তাকাইয়া কথা বলিতেছে; তাহাদের মধ্যে আবার কেউ কেউ ভারত না পাকিস্তান টুয়েন্টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতিবে তাহা লইয়া অহেতুক ঝগড়া করিতেছে। ইশ্বর দুতের প্রিয় খেলা ক্রিকেট, তিনি স্বর্গে থাকিতে প্রায়ই তার দূরবীন দ্বারা সেই খেলা উপভোগ করিতেন। তিনি ভাবিলেন ধরায় যখন নামিয়া আসিয়াছি তাই যাই; পার্শ্ববর্তী দেশে যাই স্ব-শরীরে খেলা দেখিয়া আসি। খেলা দেখা হইবে আর কিছু মনুষ্য নির্বাচন করা যাইবে। যাই হোক তিনি ফাইনাল খেলা সরাসরি উপভোগ করিলেন; খেলায় তাহার পছন্দের দল জিতিল; তিনি তো মহা খুশী।
এই খুশী তে তিনি আবেগে আপ্লুত হইয়া ঠিক করিলেন এই দেশ থেকে কিছু মনুষ্য লইয়া যাই। এমন সময় তাহার কাছে ঈশ্বর এর তারবার্তা আসিল। ইশ্বর তাহাকে খেলা দেখিয়া অহেতুক সময় নষ্ট করার জন্য খানিক বকাঝকা করিলেন আর তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করিবার আদেশ দিলেন। ইতিমধ্যে ঈশ্বর দুত ভাবিলেন স্বর্গে রাখিবার জন্য অনেক মনুষ্য নির্বাচন করা হইয়াছে; এইবার নরকে নেয়ার জন্য কিছু মনুষ্য নির্বাচন করিতে হয়। তখন রাত্রির আহার এর সময় ছিল।
ক্ষুধার উদ্রেক হওয়ায় তিনি এক রেস্তরায় খাইতে গেলেন। সেথায় কিছু মনুষ্য ভোজন করিতেছিল আর কিছু মানুষ রাত্রির সংবাদ দেখিতেছিল। খাওয়ার ফাকে ফাকে তিনিও আর অন্য সবার মতই সংবাদ দেখিতেছিলেন। সংবাদে তখন আমেরিকা নামক দেশ এর মুসলমান দেশ গুলোর প্রতি সামরিক আগ্রাসন এর তথ্য পরিবেশন করা হইতেছিল। এই সংবাদে ঈশ্বর দুত খানিকটা বিরক্ত হইলেন আর ভাবিলেন নাহ আর দেরী নহে উহাদিগকে ধরিয়া লইয়া যাই, কিছুদিনের জন্য নরকের স্পর্শে উহাদের রাখিবই রাখিবই।
অতপর ঈশ্বর দুত তাহার নির্বাচিত মনুষ্য দিগকে লইয়া ধরাধম ত্যাগ করিলেন। আকাশলোকে আসিয়া উনি মনুষ্য দিগকে যথা যথা স্থানে রাখিয়া আসিলেনঃ স্বর্গে যথাক্রমে বাংলাদেশ এর ভারত এর লোকজনের ঠাই হইল আর আমেরিকার লোকদের হইল নরকে স্থান।
অতঃপর বহুদিন কাটিয়া গেল। ঈশ্বর দুত ভাবিলেন সব কিছু দেখিয়া আসিয়া ঈশ্বরকে সবকিছু সম্পর্কে অবগত করাইবেন। যাত্রা পথে সবার আগে নরক পড়ে বিধায় ঈশ্বর দুত সেইখানে আগে গেলেন।
কিন্তু সেইখানে যাইয়া তিনি ভাবিলেন তিনি কি ভূল জায়গায় আসিয়া পড়েন নাইতো? তাহার স্পষ্ট স্মরণে আছে যে ঈশ্বর নরককে যাবতীয় কষ্টদায়ক জিনিস দ্বারা পূর্ণ করিয়া দিয়াছিলেন; কিন্তু আজ তাহার নাম নিশান নাই বলিলেই চলে। যাহাদের কে তিনি নরকে রাখিয়া আসিয়াছিলেন তাহারা উহাকে সম্পূর্ণ নতুন রূপ দিয়াছে। ওই সকল মানুষ জন বিরাট আশ্চর্যজনক কাজ করিয়াছে; উহারা নরকে আসিয়াও স্বর্গের মতন পরিবেশ বানাইয়া লইয়াছে। কিছুটা হতাশা লইয়া তিনি নরক ত্যাগ করিলেন আর স্বর্গের দিকে অগ্রসর হইলেন। স্বর্গের মনুষ্য দিগকে ঈশ্বর দুত দুই জায়গায় আলাদা আলাদা রাখিয়াছিলেনঃ ভারতবাসী দের এক দিকে আর বাংলাদেশ এর মানুষ দের আরেক দিকে।
ভারত বাসীদের এলাকায় যাইয়া তিনি দেখিলেন ইহারা বেশ ভাল ভাবেই আছে। ঈশ্বর স্বর্গ বাসীদের জন্য অফুরন্ত উপকরণ রাখিয়াছিলেন; কিন্ত তাহারা সেইসব যথেষ্ট হিসাব করিয়া খরচ করিতেছে। দেখিতে পাইলেন উহাদের কেউ কেউ তাহাদের বাড়ির ছাদে সোলার প্যানেল লাগাইয়াছে,বৃষ্টির পানি জমা করিয়া রাখিয়াছে যাহাতে মিউনিসিপাল্টির পানি কম খরচ হয়। রাস্তার লাইট গুলায় ও সোলার প্যানেল লাগাইয়াছে, এমনকি ময়লা আবর্জনা থেকে গ্যাস তৈয়ার করিয়া তাহা দিয়া রান্না করিতেছে...... আরও ইত্যাদি ইত্যাদি। ঈশ্বর দুত খানিক খুশীই হইলেন।
তিনি সামনে আগাইতে থাকিলেন বাংলাদেশ থেকে যাহাদের কে আনিয়াছিলাম তাহাদের অবস্থা দেখিবারর= জন্য। মনে মনে ভাবিলেন ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তো উহারা একসাথেই ছিল তাই হয়ত উহারা একই প্রকার থাকিবে। কিন্তু সামনে আগাইয়া তিনি কিছুটা বড়ই আশ্চর্য হইলেন। দেখিলেন কিছু মানুষ স্বর্গের বাজারে দাড়াইয়া চেচামেচি করিতেছে। সামনে যাইয়া তিনি দেখিলেন উহাদের থাকিবার স্থানে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়া গিয়াছে- আর দ্রব্য মূল্য বাড়ার প্রতিবাদে একদল ওয়াজেদ-লীগ আর আরেক দল টি.এন.পি কে গালাগাল করিতেছে।
তিনি কাল বিলম্ব না করিয়া সেই জায়গা ত্যাগ করিলেন। ভাবিলেন যাই একটা রেস্টুরেন্ট এ যাইয়া কিছু খাইয়া লই। উহার পরে অবশিষ্ট অংশ পরিদর্শন করিয়া ঈশ্বর এর দরবারে হাজির হইব। কিন্তু সেইখানে যাইয়া তাহার বিরক্তির পরিমাণ বাড়িয়া গেল। দেখিলেন এক বিচিত্র উপায়ে বাঙ্গালী জাতি লোডশেডিং এর সমস্যা স্বর্গেও তৈয়ার করিয়াছে।
দিনের বেলাও এইখানে কারেন্ট নাই। যাহাই হোক ভোজন শেষ এ তিনি হাত ধুইবার নিমিত্তে কলপাড়ে গেলেন। কিন্তু দেখিলেন তাহাতে জল নাই। কাছে বসা এক লোক কে ডাকিয়া কহিলেন কিহে জল আসিতেছে না কেন? উত্তরে লোকটি কহিল কী আর করবেন জনাব, কারেন্ট নাই তাই পানিও নাই। এই শুনিয়া ঈশ্বর দুত কহিলেন তাহাতে কি হইয়াছে? চল তোমাদের বৃষ্টির পানি জমা করা নাই নাকি? ওইখান থেকে আমাকে কিছু জল দিবে।
এই শুনিয়া লোকটি হাসিয়া কহিল সে কি বলিতেছেন জনাব ওইসব কাজ করার সময় কোথায়। উহাতো ছোটলোক দাদাদের কাজ। আরে দেখেন না উনারা সামান্য কয়টা টাকা বাচানোর জন্য কি-সব বৃষ্টির পানি জমা করিয়া রাখে, ময়লা আবর্জনা থেকে গ্যাস বানাইয়া তাহা দিয়া রান্না করে... আরও কত কী? আমাদের কি আর সেইসব করার সময় আছে। যাই জনাব, আমার কাজ আছে। আজ বিকালে পানির দাবীতে একটি মানব-বন্ধন আছে ওইখানে যাইতে হবে।
সময় পেলে আপনি ও আসবেন কিন্তু।
শেষ কথাঃ
ঈশ্বর দুত কাল বিলম্ব না করিয়া ঈশ্বর এর দরবারে যাইতে মনস্থির করিলেন। যাওয়ার আগে তিনি কাগজে তাহার পরিদর্শন এর বিবরণ লিখিতে আরম্ভ করিলেন। সবার আগে তিনি যাহা যাহা লিপিবধ্ব করিলেন তাহার মধ্যে কিছু নমুনা নিম্নরূপঃ
নরকে আমেরিকার মানুষদের পাঠাইবার আগে তাহাদের মগজ ধোলাই করা একান্ত জরুরী। উহাদের সকল বিদ্যা কে একটি হার্ড-ডিস্ক এ ব্যাকআপ রাখিয়া ডিলিট করিয়া ফেলাইতে হইবে।
নইলে উহারা নরক কে স্বর্গ বানাইয়া লইবে।
বাংলাদেশ এর মানুষ দের স্বর্গে থাকিতে দিলে অনেক চিন্তা ভাবনা করিয়া থাকিতে দিতে হইবে। স্বর্গ কে নরক বানাইবার জন্য উহাদের জুড়ি নাই।
লেখা শেষ এ ঈশ্বর দুত যাত্রা করিলেন। যাইবার পথে দেখিলান কিছু বাংলাদেশী মানুষ স্বর্গের টাট্টিখানার নামফলক পরিবর্তন এর কাজে ব্যস্ত।
আর বাকীরা এহেন ফালতু কাজের কোন প্রতিবাদ না করিয়া ওই দূরে দাড়াইয়া ডিজিটাল পদ্ধতিতে কীসব বিশ্রী ভাষায় উহাদের গালাগাল করিতেছে।
নীতি বাক্যঃ
ঢেকি স্বর্গে গেলে যেমনি ধান ভাঙ্গে; বাঙ্গালী স্বর্গে গেলে তেমনি বাঙ্গালীপনা করিবে।
আমার কথাঃ
এই লেখার মূল ভাবনা আসে National Geography তে INDIA এর উপর একটি program দেখার পর। দেখলাম ওরা ওদের প্রয়োজন মিটানোর জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহার করছে। ওদের শহরে বাড়িগুলোতে solar panel ব্যবহার করে, বৃষ্টির পানি ওরা জমা করে ব্যবহার করার জন্য, ওদের শহর অঞ্চলেও মানুষ ময়লা আবর্জনা থেকে গ্যাস produce করে রান্নার কাজে ব্যবহার করে।
ওই program এ দেখান একটি হিসাব ছিল এরকমঃ
১। আপনি দশটি সনাতন বাল্ব কে সিএফল লাইট দ্বারা পরিবর্তন করলে বছরে ৫০০০ রুপী খরচ কমাতে পারবেন।
২। কেবল মাত্র ইলেক্ট্রিকাল সামগ্রী ব্যবহার এর পর আনপ্লাগিং করলে আপনি ১৫০০ রুপী খরচ কমাতে পারবেন।
৩।
বাসা বাড়ির পানির লাইন এর লীকেজ বন্ধ, হোস পাইপ এর পরিবর্তে বালতি তে করে পানি নিয়ে গাড়ী ধুলে বছরে ১৫০০ রুপী খরচ কম হয়।
৪। ওরা এসি এর তাপমাত্রা ২৪ সেলসিয়াস এ রাখে।
৫। IIT এর এক প্রফেসর তার বাড়ির পানির চাহিদা মিটানোর চেষ্টা করেন কেব্ল মাত্র বৃষ্টির পানি জমা করে রখার মাধ্যমে।
ওনার দেখাদেখি ওনার আশেপাশের সবাই একই রকম পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এরকম আরও অনেক কিছু ছিল। সময় হলে পরে অন্য এক লেখায় বলা যাবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।