১৪১৭ বঙ্গাব্দ। ১৪১৬ বঙ্গাব্দ কে বিদায়া জানিয়ে চাওয়া না পাওয়ার দীর্ঘ শ্বাসকে পদ দলিত করে জীবনের হালখাতা খুলেছে বাঙালী। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির পারদ স্কেলে নতুন করে উত্তাপ লাগিয়ে স্বাড়ম্বরে ১৪১৭ বঙ্গাব্দ কে বরণ করে নিল সাতচল্লিশ হাজার বর্গ মাইলের বাংলাদেশ। নিজের বুকে জমা বিষ বাষ্প গুলো ধরিত্রীর বুকের রক্তের মতই বৈশাখের অগ্নি তাপে বাষ্পায়িত করে দিল অজানা মহাশূন্যের দিকে। উৎসব আর পার্বণের আবহ খুজা বাঙ্গালী খুশির জোয়ারে আত্নহারা হয়ে বৈশাখের অগ্নি স্নানে সুচি হয়ে শুরু করল নতুন ভাবে পথ চলা।
যেন জীবণের বর্ণীল বাকে বিবর্ণ আর ছেঁড়া অতীত ফেলে সাড়া দিল অপার সম্ভাবনার ভবিষ্যতের আহবানে। আর সেই চলার পথে বাঙালী নিজের বাঙালীয়ানা আবহ কে একটু যেন ঝাঁলিয়ে নিল। যার ছাঁপ মঙ্গল শোভাযাত্রায়,রমনার বটমূলে,ছায়ানটে সর্বোপরি সারা বাংলায়। সে দিন লুঙ্গী,ধুতি,পাজামা,পন্জবী,শাড়ী পরে ঢল নেমে ছিল বাঙালীর। আকাশ সংস্কৃতির বিকাশের যুগে সংস্কৃতির আগ্রাসনে নিজের সংস্কৃতির অস্তিত্ব বিলীন হতে বসা বাঙালী খেয়েছে পান্তা-ইলিশ,পিঠা-পুলি সহ বিভিন্ন বাঙালীয়ানা খাবার,গেয়েছে বাউল ,ভাটিয়ালী।
কিন্তু প্রশ্ন হল এই বাঙালীয়ানার চর্চা কত দিন চলবে?তা কী শুধু বৈশাখেই সীমাবদ্ধ থাকবে,নাকী যুগ যুগান্তরের বাঙালী আবহ-ঐতিহ্যকে বহন করব অনন্ত কাল? আজকে দেখা যায় অনেক তরুনীই শাড়ী পরতে জানে না। হিন্দি আর ইংরেজি গানের মোহে অন্ধ তরুন-তরুনী ভাটিয়ালী,ভাওয়াইয়া,বাউল গান কে আলাদা করতে পারেনা। শহরের কোন ছেলে জসীম উদদীন'র পল্লীবর্ষা পড়লে হয়তো বলবে এটা কী বাংলাদেশের আবহে লিখা কীনা?কাক যেমন ময়ূরের পেখম পরলেই ময়ূর হতে পারে না তেমনই আমাদের মনে রাখতে হবে নিজের সংস্কৃতির শিকড় ছিন্ন করে বিজাতিয় সংস্কৃতির পূজারী হলে তা কারও জন্যই শুভ হবে না। এতে করে আমরা পরিণত হব শিকড় বিহীন এক ভাসমান উদ্বাস্তুতে। বংস পরম্পরায় চলে আসা সংস্কৃতির গোড়ায় একটু একটু জল ঢেলে তাকে লালন করতে হবে আমাদেরকেই।
ভিন দেশী বিজাতিয় সংস্কৃতির সাথে আমরা পরিচিত অবশ্যই হব তবে তা নিজের অস্তিত্ব বিলীন করে নয়। ভুলে যেন না যাই আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি,আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মর হাতে আমাদের সংস্কৃতির পতাকা তুলে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদেরই। সেই দায়িত্ব পালনে বাংলা ও বাঙালী সাথে বাংলা সংস্কৃতির গড়ে উঠুক ঘাটছাড়া বাঁধন। এই বৈশাখে এটাই হোক আমাদের কাম্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।