আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিকড়ের সন্ধানে দত্তক কন্যা মীরা

সব বিষয়ে জানতে ও শিখতে আগ্রহী একজন উদার মনের মানুষ।
অনেকবছর আগে বিদেশি একটি পত্রিকায় মীরা নামে এক দত্তক কন্যার সাক্ষাৎকার পড়েছিলাম। সে সতের বছর ধরে লালন করেছিল সুন্দর একটি স্বপ্ন ও বুক বেধেঁছিল একটি আশায়। সেই স্বপ্নের বাস্তবতা এবং আশা-নিরাশার সত্য কাহিনী নিয়ে আজকের এই লেখা। সুইডিশ দম্পতি ক্রিষ্টিনা ও রোনাল্ডের তিন সন্তান, এরিক, জেনি এবং কারিনা।

ভালোই কাটছিল এই উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারটির সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবন। পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে যারা শুধু নিজের জন্য বাঁচে না, অনেককে সাথে নিয়ে বাঁচতে চাই। যাদের ধর্ম মানবতা ও কর্ম আত্ন-মানবতার সেবা। ক্রিষ্টিনা ছিলেন তেমনি একজন মহিলা। Save the Children Fund সহ অনেক সংস্থার সাথে তিনি জড়িত।

অবসর সময়ে বিশ্বের দরিদ্র, অহেলিত, নির্যাতীত শিশুদের জন্য বিভিন্নভাবে কাজ করেন। এমনকি নিজেও অনেকবার ভেবেছেন তৃতীয় বিশ্বের পরিত্যক্ত একটা শিশুকে দত্তক নিয়ে প্রতিপালন করবেন। এব্যাপারে এমনকি তাঁর স্বামী রোনাল্ডের সাথেও আলাপ করেছেন। তবে উদ্যোগটি সিরিয়াসলি কখনো নেওয়া হয়নি। একদিন সন্ধ্যায় ক্রিষ্টিনা ও রোনাল্ড টিভিতে বিবিসি-র একটি ডকুমেন্টারি "Selective Abortion - Baby girl killing" দেখে খুবই দুঃখ পেলেন।

সেখানে দেখলেন, ভারতের পাঞ্জাবের অজ পাড়াগাঁয়ে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট ক্লিনিক। এদের প্রধান কাজ ও আয় হচ্ছে - সন্তানসম্ভবা মহিলাদের আলট্রাসনোগ্রাপী করে ভ্রুণের লিঙ্গ সনাক্ত করা, যদি মেয়ে হয় তাৎক্ষণিক এবরশন করা। আর একটি দৃশ্য ছিল - রাজস্থানের দরিদ্র মহিলারা যাদের আলট্রাসনোগ্রাপী করার সামর্থ্য নেই, তাদের সদ্যপ্রসূত কন্যা সন্তানকে মা-বাবা মরুভূমিতে নিয়ে যাচ্ছে। সেখানে এই নবজাতককে নাকের মধ্যে উত্তপ্ত বালি দিয়ে হত্যা করে ফেলে রেখে আসছে। কী ভয়ঙ্কর হৃদয় বিদারক দৃশ্য! সন্তান হত্যাকারী এক পিতাকে বিবিসি-র সাংবাদিক জিঞ্জাসা করলেন, 'পিতা হয়ে এভাবে সন্তানকে হত্যা করতে আপনার কি একটুও কষ্ট হয়নি?' উত্তরে তিনি বললেন, 'কষ্টতো হয়েছে, এ কষ্ট একদিনের, সাময়িক।

আর সে যদি বেঁচে থাকে কষ্ট পাবে সারাজীবন, এমন কি আমরাও। ' এ অমানবিক দৃশ্য দেখে মানবতাবাদী ক্রিষ্টিনার হৃদয় কেঁদে উঠল। না, আর অপেক্ষা নয়, এবার দত্তক নিতে হবে। সেইসাথে সিদ্ধান্ত নিলেন, ভারত থেকে পরিত্যক্ত কোন কন্যা সন্তানকে দত্তক নেবেন। ভারতের বিভিন্ন অনাথাশ্রম ও মাতৃসদনগুলোর সাথে যোগাযোগ করে কলিকাতার একমাস বয়সের পরিত্যক্ত একটি শিশু কন্যাকে দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।

দত্তক সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলেন। সুইডেন ও ভারতের বিভিন্ন প্রশাসনিক জটিলতা ও কাগজপত্রের ঝামেলা শেষ করে প্রায় দুই মাস পর তিনি কলিকাতায় আসলেন। অনাথাশ্রম থেকে গ্রহণ করলেন তিন মাস বয়সের ডেইজীকে। 'Daisy' নামটি অনাথাশ্রমের লোকেরা দিয়েছেন যাতে নামটি ইউরোপ-আমেরিকায় খাপ খাওয়াতে পারে। এবার জন্মভূমি থেকে ডেইজীর বিদায়ের পালা।

এই বিদায় দুঃখের নয়, আনন্দের। যে দেশে শিশুকন্যা সমাজের কাছে এমনকি আপন মা-বাবার কাছেই অবাঞ্চিত, সেদেশ থেকে ডেইজীর বিদায় সবার জন্যই আশীর্বাদ ও সুখবর। সুইডেনে 'Daisy' নামটির প্রচলন নেই, তাই ক্রীষ্টিনা ও পরিবারের সবাই মিলে নতুন করে নাম রাখলেন 'মীরা'। ভারতবর্ষের অজ্ঞাত পিতামাতার পরিত্যক্ত নবজাতক হাত বদলের পর 'ডেইজি' থেকে 'মীরা' হয়ে পালক পিতামাতার আদর-স্নেহে সুইডেনের অন্যান্য শিশুদের মত বড় হতে লাগল। ভাষা, সংস্কৃতি, আচার-আচরণ সবকিছু সুইডিশদের মত হলেও ভারতীয়দের মত গায়ের রং ও চুলের কারণে ওদের সাথে মীরার অমিল।

এই মিল-অমিলের ব্যাপারটি অনেকসময় মীরাকে ভাবিয়ে তোলে। যখন অপরিচিত লোক তাকে কোন দেশ থেকে এসেছে জিজ্ঞাসা করে, তখন 'ইন্ডিয়া' বলা কতটুকু সঠিক হবে সে বুঝতে পারে না। যে দেশের সাথে তার কোন পরিচয়-সম্পর্ক নেই, যেখানে সে জন্মের পর থেকেই অবাঞ্চিত, সে দেশের নাম বলতে খুবই কষ্ট হয়। আসল মা-বাবা সম্পর্কে মীরা শিশুকাল থেকেই জানতে চেয়েছে, ক্রিষ্টিনা যতটুকু সম্ভব উত্তর দিয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই মীরার স্বপ্ন ও আশা - বড় হয়ে সে একদিন তার মা-বাবাকে খুঁজে বের করবে।

দেখতে দেখতে অনেকগুলো বছর কেটে গেল। মীরা উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেছে, কলেজ শুরু করবে কয়েক মাস পর। ক্রিষ্টিনা সিদ্ধান্ত নিলেন সবাইকে নিয়ে এই ছুটিতে ভারত ভ্রমনে যাবেন। বেড়ানোও হবে, মীরার ইচ্ছা অনুযায়ী তার মা-বাবাকেও খুঁজে দেখা হবে। ভারতের রুঢ় বাস্তবতা সম্পর্কে ইউরোপে বড় হওয়া তরুণী মীরার কোন ধারণা নেই।

সে ভাবছে সিনেমার কাহিনীর মত মা-বাবাকে খুঁজে বের করে সারপ্রাইজ দেবে, জিজ্ঞাসা করবে ওরা কেন তাকে পরিত্যাগ করেছিল ইত্যাদি। ভারত যাওয়ার প্রাক্কালে সে নিজের জমানো টাকা দিয়ে একটা সোয়েটার কিনল মায়ের জন্য, দেখা হলে উপহার দেবে। কলিকাতায় ১ম দিন: দিল্লীতে কয়েকদিন কাটানোর পর সবাই কলিকাতা চলে আসলেন। মা-বাবার সাথে দেখা হবে - ভাবতেই মীরা আনন্দ-আবেগে আপ্লুত হল। শহর হিসেবে কলিকাতা তার কাছে আকর্ষণীয় নয়।

তার দৃষ্টি শুধু এ শহরের প্রতিটি মানুষের মুখের দিকে। এ মানুষগুলোর মধ্যেই আছে তার মা-বাবা। মীরা লক্ষ্য করল রাস্তার প্রায় সবলোক তার মা ক্রিস্টিনা ও বোনদের দিকে তাকাচ্ছে অথচ তার দিকে কেউ থাকায় না। যেহেতু সবার দৃষ্টিতে সে নিজেও একজন ভারতীয়! তাদের শাড়ীর প্রতি খুব আগ্রহ, একটি অভিজাত দোকানে শাড়ি দেখতে লাগলেন ক্রিষ্টিনা। বিদেশি পর্যটক দেখে মালিক নিজেই এগিয়ে আসলেন।

মীরা পেছন থেকে ঠেলে ক্রিষ্টিনার সামনে আসল শাড়ি পছন্দ করতে। দোকানদার রেগে মীরাকে বললেন, ' দোকানে এত জায়গা থাকতে তুমি ওদেরকে ঠেলে সামনে আসলে কেন?' বাংলা না বুঝলেও ক্রিষ্টিনা অনুমান করতে পারলেন এবং হেসে দোকানদারকে বললেন, 'It's OK, She is my daughter.' দোকানদার যেন আকাশ থেকে পড়লেন। কলিকাতায় ২য় দিন: ক্রিষ্টিনা প্রথমে গেলেন সেই দত্তক সংস্থার অফিসে, ওরা পুরানো ফাইলপত্র দেখে একটা অনাথাশ্রমের ঠিকানা দিলেন যেখানে মীরা তিনমাস বয়স পর্যন্ত ছিল। এবার ট্যাক্সি নিয়ে খুঁজে বের করলেন সেই আশ্রমটি। সেখানে শুধু খাতায় লেখা আছে আজকের মীরা তথা সেদিনের পরিত্যক্ত শিশুকন্যাটিকে যিনি এই আশ্রমে পাঠিয়েছেন তার নাম ডা: আমেনা খাথুন, ঠিকানা: পার্ক ভিউ নার্সিং হোম, কলিকাতা।

মীরা আশা-নিরাশার দ্বন্ধে দোদুল্যমান। অনেক অলিগলি রাজপথ ঘুরে শেষ পর্যন্ত খুঁজে পেলেন পার্ক ভিউ নার্সিং হোম। মীরার মধ্যে বেশ উত্তেজনা, সে ভাবছে মা-বাবকে খুঁজে বের করতে আর হয়তো বেশি সময় লাগবে না। সতের বছর অপেক্ষার পালা শীঘ্রই শেষ হতে যাচ্ছে। ডা: আমেনা খাতুন একজন বয়স্ক মহিলা।

তিনি নিজেই এই নার্সিং হোমের মালিক। তিনি এসব ঘটনার যতটুকু মনে আছে তা ক্রিষ্টিনাকে বর্ণনা করলেন। এখানে দু'বার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। প্রথমবার একটি শিশুকন্যাকে গেটের পাশে কে বা কারা রেখে গিয়েছিল। পরে অবশ্য পুলিশ বাচ্চাটির মাকে খুঁজে বের করেছিল।

দ্বিতীয়বার, এক দরিদ্র বৃদ্ধলোক একটি নবজাত শিশুকন্যাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এলেন এখানে। রিসিপশনে বললেন, তাঁর অসুস্থ নাতনীকে একটু চেক করে দেখার জন্য। ডাক্তার ও নার্স বাচ্চাটিকে ভিতরে নিয়ে গেলেন। সবকিছু চেক করে বাইরে এসে দেখে বৃদ্ধলোকটি উধাও! অনেক খুঁজেও তাকে আর পাওয়া গেল না। এমনকি পুলিশও বাচ্চাটির কোন ওয়ারিশ খুঁজে বের করতে পারল না।

তখন বাচ্চাটিকে তিনি কয়েকদিন রেখে পরে অনাথাশ্রমে পাঠিয়ে দিলেন। সতের বছর আগের ইতিহাস, প্রত্যক্ষদর্শী এবং নথিপত্র থেকে উদ্ধারকৃত মীরার শিকড়ের সন্ধান এতটুকুই। সব আশা-উদ্দীপনা যেন নিষ্প্রাণ হয়ে গেল, হতাশ হয়ে গেল সবাই। মীরার দীর্ঘদিনের আশাও স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। সে সবাইকে বারবার একই প্রশ্ন করছে, 'মা-বাবাকে খুঁজে বের করার কী কোন উপায় নেই?' ওকে বুঝানো হল, শতকোটি মানুষের এই ভারতবর্ষে ইউরোপ-আমেরিকার মত প্রতিটি মানুষের নিবন্ধন বা সিকিউরিটি নাম্বার নেই।

আর দরিদ্র, গৃহহীন, বস্তির অধিবাসী হলে তো খুঁজে পাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। মীরা কিছুতেই মানতে রাজী নয়, তার ধারণা ওর মা এই নার্সিং হোমের আশেপাশের কোন এলাকায় আছে। তাই মীরার অনুরোধে সবাই মিলে এইসব এলাকায় হেঁটে হেঁটে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। সবাই জানে এভাবে ঘুরে বেড়ানোর কোন যুক্তি নেই, তারপরেও মানসিক সান্তনা। এভাবে এলোমেলো ঘুরতে ঘুরতে ওরা একসময় ক্যাথেলিক নান মাদার তেরেসার মিশনারীজে চলে আসলেন।

আত্মমানবতার সেবায় নিয়োজিত নোবেল বিজয়ী এই মহিয়সী মহিলা সমাজকর্মী ক্রিস্টিনার প্রিয় মানুষদের একজন। তাঁকে কাছে থেকে এক নজর দেখার জন্য সবাই দশর্নার্থীর লাইনে দাঁড়িয়ে গেলেন। (উল্লেখ্য, মাদার তেরেসা তখন জীবিত ছিলেন। ) সাক্ষাৎকালে ক্রিষ্টিনা মাদার তেরেসাকে মীরার ঘটনা বর্ণনা করলেন। তিনি মীরাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, 'তোর মাকে খুঁজে পাস নাই তাতে কী, তোর দাদুকে তো খুঁজে পেয়েছিস, আমিই তোর দাদু।

' তিনি বিভিন্নভাবে মীরাকে সান্তনা দিলেন। ওরা কলিকাতায় থাকবে আর একদিন, এরপর দিল্লী, তারপর সুইডেন। মীরা সিদ্ধান্ত নিল আগামীকাল সে মা ও বোনদের সাথে বেড়াতে যাবে না। একা একা কলিকাতার অলিগলিতে ওর মা-বাবাকে শেষবারের মত খুঁজবে। টিনএজারদের মন-মানসিকতা যা হয় - এডভেঞ্চার, আকাশ কুসুম কল্পনা, ইমোশনাল ...।

মীরা সকাল থেকে কলিকাতার অলি-গলি রাজপথে ঘুরতে লাগল, আর বিশেষ করে রাস্তার ভিখারী, গৃহহীন, দরিদ্র মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের চেহারার মিল খুঁজতে লাগল। অনভ্যস্ত মীরা কলিকাতার মত জনাকীর্ণ শহরের যানজট, রিকশা ঠেলাগাড়ির ধাক্কা, ধুলাবালি, ড্রেন-ডাস্টবিনের পচা গন্ধ, মানুষের ভীড় সামলিয়ে চলতে হিমশিম খাচ্ছে। তার জিদ ও এডভ্যাঞ্চারের প্রবল উদ্দাম কঠিন ও নির্মম বাস্তবতার প্রতিকুলে বেশিক্ষণ ঠিকতে পারলো না। এভাবে লক্ষ্যবিহীন হাঁটতে হাঁটতে সে এসে পড়েছে এক বস্তি এলাকায়। মাকে খুঁজে বের করতে না পারলেও সে দেখতে পেয়েছে বস্তির নোংরা পরিবেশ, তার মত হাজার হাজার মীরা ও তাদের মা-বাবাদের মানবেতর জীবন যাপন।

শুধুমাত্র কোন রকমে বেঁচে থাকার জন্য মানুষের কী আপ্রাণ চেষ্টা ও কঠোর পরিশ্রম। এইসব মানুষের সাথেই তো আজ তার থাকার কথা ছিল। ক্রিষ্টিনার কাছ থেকে যে আদর-স্নেহ সে পেয়েছে তাতে কখনো মনে হয়নি তিনি তার পালক মাতা। আজকে তার মনে হল ক্রিষ্টিনা শুধু তার মা নয়, দেবতা। এসব কথা ভাবতে ভাবতে সে একসময় ক্লান্ত ও অসুস্থ হয়ে রাস্তার পাশে বসে পড়ল।

সে জানে না এখান থেকে হোটেল কতদূর, কিভাবে যেতে হবে। মাকে খুঁজতে গিয়ে মহানগর কলিকাতার জনসমুদ্রে মীরা নিজেই হারিয়ে গেল। যাই হোক বেলাশেষে নিরাশ হয়ে মীরা ট্যাক্সি নিয়ে হোটেলে ফিরে আসল। সতের বছরের লালিত আশা ও স্বপ্ন ভেঙ্গেচুরে অশ্রু হয়ে জড়ে পড়ল। বিকালে মা ক্রিষ্টিনা ও বোনেরা কলিকাতার শেষ কেনাকাটা করে ফিরে আসলে সবকিছু ভুলে ওদের সাথে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করল।

আজ কলিকাতায় ওদের শেষ রাত ও ক্রিষ্টিনার জন্মদিন। বাইরে ভালো একটি রেষ্টুরেন্টে ডিনার সেরে সবাই হোটেলে ফিরে আসল। সে তার ভারতীয় মায়ের জন্য কেনা সোয়েটারের প্যাকেটটি ক্রিষ্টিনার হাতে দিয়ে বললো, 'Happy Birthday to you, Mum!' ক্রিষ্টিনা ধন্যবাদ দিয়ে প্যাকেটটি খুলে হেসে বললেন, 'এটাতো তুমি তোমার মায়ের জন্য কিনেছিলে, আমি কি তোমার আসল মা?' ভালোবাসা ও স্নেহের কৃতজ্ঞতায় উচ্ছ্বসিত মীরা আবেগ আপ্লুত হয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলেন। মা ও মেয়ে দু'জনের চোখেই তখন জল। আনন্দ, বেদনা, বাস্তবতা এবং আশা ভঙ্গের অভিজ্ঞতা নিয়ে ওরা ফিরে আসল সুইডেনে।

মীরাকে সবাই সান্তনা দিয়ে বলল, 'অন্ধকার অতীতকে ভেবে মন খারাপ কর না, অনাগত উজ্জল ভবিষ্যতের কথা ভেবে এগিয়ে চল। ' মীরা আর পিছন দিকে ফিরে দেখার চেষ্টা করেনি। এখন শুধু বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে বেঁচে থাকা। সবশেষে পত্রিকার সাংবাদিক সাক্ষাৎকারের জন্য মীরাকে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন, 'তোমার আসল মা-বাবাকে তুমি কখনো দেখ নাই, সুতরাং তাদেরকে তোমার মিস করার কথা নয়। ক্রিষ্টিনা ও রোনাল্ডের আদর-স্নেহে আশা করি ভালো থাকবে।

' উত্তরে ধন্যবাদ দিয়ে মীরা বললো, 'ইন্ডিয়া শব্দটি শুনলে আমার কান সজাগ হয়ে যায়, টিভি-পত্রিকায় যখন ভারতীয় মানুষের ছবি দেখি আমার অবচেতন মন সেইসব মানুষের মধ্যে আমার মা-বাবাকে খুঁজে বেড়ায়। ডকুমেন্টারি বা টিভি নিউজে ভারতের কাস্টলেস দরিদ্র মানুষের মানবেতর জীবন যাপন দেখে আমার হৃদয়-আত্মা কেঁপে উঠে, না জানি আমার মা-বাবা কেমন আছে!' কথাগুলো বলার সময় সদা হাস্যময়ী দত্তক কন্যা মীরা চোখের জল ধরে রাখতে পারে নি। -------------------------------------------------------------------- ছবি ও তথ্যসূত্র: সাপ্তাহিক পত্রিকা Home Journal, সুইডেন
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।