.
৬/৭ মাস পর রশিদ ফকিরের সঙ্গে শেষ দেখা মাস দুয়েক আগে। এক রাতে বাসায় গিয়ে দেখি অপেক্ষা করছেন দেখা করার জন্য। কিছু টাকা ধার চান। খুব বিপদে পড়ে গেছেন তিনি। বিপদ সামলে ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিলেন বারবার।
অবস্থা দেখলাম খুবই জবুথবু। বুড়িয়ে গেছেন অনেক। স্বাস্থ্য একেবারেই ভেঙ্গে গেছে। লেংচে লেংচে হাঁটছিলেন। হাতে একমুঠ খুচরো টাকা।
জিঙ্গেস করলাম এই অবস্থা কেন! সবতো ভালই চলছিল। কাওরান বাজারে কুড়িয়ে পাওয়া তরকারীর ব্যবসা আর করেন না ? রশিদ ফকির জানালেন,গত কোরবানীর ঈদের আগে পঞ্চগড় থেকেও আরো তিন কিলোমিটার দুরে বইয়ানের বাড়ি গিয়েছিলেন বেড়াতে। তারা অনেক আদর যত্ন করেছেন। অনেক ধনি তার বইয়ান। পাকা বাড়ি।
এক রাতে বাইরে যাওয়ার সময় চাদর পেচিয়ে সিড়ে থেকে পড়ে হাত ও পা মচকে যায় তার। তার চিৎকারে সবাই জেগে
যায় । এরপর অনেক দিন বিছানা ছাড়তে পারেন নি। আত্মীয়রা অনেক যত্ন করলেও কতো দিন আর থাকা যায় , তিনি বাড়ি চলে এসে চিকিৎসা করিয়েছেন। এতেও অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে।
কাওরান বাজারে রাতে সব্জি কুড়িয়ে বেচার চেষ্টা কিছু দিন করেছেন,কিন্তু এবার টোকাইদের সাথে দৌড়া দৌড়ি করে আর পারছেন না। দুর্বল লাগে। এখন শুধুই ভিক্ষা করছেন। কিছু টাকা যোগাতে পারলে বাড়ি গিয়ে কিছু দিন থেকে আসবেন। বাড়িতেও টাকা পয়সা নেই ।
যাওয়া দরকার।
তিনি আমার বাসার লোকজনের নামেও অনেক অভিযোগ করলেন। ঢাকায় এসেই তিনি দেখা করতে চেয়েছিলেন,কিন্তু যে কয় দিন এসেছেন সবাই বলেছে আমি আসি নি। আসার সময় অড়হড় ডালের পিঠা এনেছিলেন কিছু। তাও রাখে নি,বুড়ো বুয়া বলেছে এগুলোর সাথে ঘুমের টেবলেট মেশানো আছে।
খাওয়ার পর সবাই অজ্ঞান হলে রশিদ ফকির ডাকাতি করবেন , এই কথা বলায় তিনি মনে খুব কষ্ট পেয়েছেন বলেও জানালেন।
বুয়ার দুর্ব্যবহারের জন্য স্যরি বললাম আর তাকে ডেকে ধমক দিয়ে দিলে রশিদ ফকির আবার টাকা ধার দিব কিনা জানতে চান।
লোকটার ধান্ধাবাজী দেখে প্রথমদিকে জাগা কোমল অনুভুতির কিছুই এখন আর অবশিষ্ট নেই। লোকটাকে যতটা অসহায় মনে হয়েছে, পরে আর তা মনে হয় নি। এক টাকা খরচ করবে না নিজের জন্য!ক্ষুধা লাগলে কারো কাছ থেকে চেয়ে খেয়ে নেন।
রাতে কাওরান বাজারে শুয়ে থাকেন। উঠে যে কোন একদিকে রওনা দিয়ে ভিক্ষা করতে শুরু করেন। তার আবার চিন্তা কি ! এর আগে প্রতি দিন সব্জি বিক্রি দুই আড়াইশো আর শ খানেক চেয়ে চিন্তে , সব মিলিয়ে মাসে ৮/৯ হাজার টাকা রোজগার করতে পারেন বলে জানিয়েছিলেন। ৮/৯ হাজার টাকায় তাদের ৪ জনের খরচ চলে চলে যাওয়ার কথা গ্রামে। নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম।
পেসক্রিপশন আছে কিনা জানতে চাইতে পাঞ্জাবীর পকেট থেকে বের করে এগিয়ে দিয়ে বললেন,সব ওষুধ খাওয়া হয়েছে। বুড়ো এবার বেশ ঠেকে গেছেন দেখে প্রথমে বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা করলাম। বললাম পুরো পুরি সুস্থ্য হয়ে তারপর ঢাকায় এসে দেখা করার জন্য। তখন একটা পথ বের করবো দুজন বুদ্ধি বিবেচনা করে। জানিয়েছিলেন সেই রাতেই রওনা দিবেন।
বিদায় নেয়ার আগে কিছু কড়া কথা শুনিয়েছি বুড়োকে। গরীবের এতো সাধ আহ্লাদ থাকার দরকার নেই। কয় টাকা জমলেই বাড়ি রওনা হওয়া, এখানে ওখানে বেড়াতে যাওয়া এসব বিলাসিতার দরকার নেই। রশিদ ফকির হাসে। যেন তিনিই বেশি বোঝেন !
রশিদ ফকিরকে নিয়ে আগের দুইটি আবোল তাবোল পর্বে রশিদ ফকিরের ঈদ সপিং
ভিখারি আব্দুর রশিদের স্বাস্থ্যটা ভাল যাচ্ছে না
কয়েক জন কৌতুহল প্রকাশ করেছেন।
রশিদ ফকিরের বর্তমান খবর জানতে চেয়েছেন ফেরারী পাখি । ফেরারীর কৌতুহল স্মরণ করে এই লেখা । দীর্ঘ আলস্য কাটিয়ে আজ লিখতে পেরে ভাল লাগছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।