প্যাকেট বন্দি ভালবাসা গাছের ছায়ায় বসে আছে ।
নয়ন প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ভাবে আজ কিছু একটা লিখবে । ভালবাসা নিয়ে এমন কিছু লিখবে যা পড়ে সাজনা তাকে ফিরিয়ে দিতে না পারে । খাতা কলম হাতে নিয়ে খুব আয়োজন করে লিখতে বসে । কিন্তু তেমন কিছু লিখতে পারে না ।
এক লাইন বা দুই লাইন লেখার পর আটকে যায় । তারপর অনেক্ষণ বসে থাকে,দাঁত দিয়ে চিমটি কেটে নক কাটে,মাঝেমাঝে কলম কামড়ায় । এক সময় সেই এক লাইন/দুই লাইন লেখা কাগজটা খুব যতন করে সে তার ড্রায়ারে রেখে দেয় ।
কলেজে প্রতিদিন সাজনা'র সাথে তার দেখা হয় । অনেক কথা হয় তাদের দুজনের মাঝে।
সব কথাই অন্যদের নিয়ে,গান নিয়ে,নাটক সিনেমা নিয়ে ইত্যাদি হাবিজাবি বিষয় নিয়ে । বারবার নয়ন চেষ্টা করে সে তার নিজের ব্যাপার নিয়ে সাজনা'র সাথে কিছু আলাপ করবে । নিজের ব্যাপার বলতে একান্ত ব্যাক্তিগত কিছু একটা শেয়ার করবে । কিন্তু কোনদিন ও সে এমন কিছু বলতে পারে না যেটা দিয়ে একান্ত ব্যাক্তিগত কিছু বোঝায় ।
অন্য সবার মত নয়ন আর সাজনাও জানে তারা একে অপরের অনেক ভাল বন্ধু ।
সে শুরু থেকেই তাদের মধ্যে তুই তুকারি সম্পর্ক । জন্মদিন,ঈদ কিংবা নতুন বছরে যে কার্ড আদান প্রদান করে তারা একে অপরকে শুভেচ্ছা জানায়,সেই অধিকাংশ কার্ডের উপরে মাই বেষ্ট ফ্রেন্ড ই লিখা থাকে । তবে মাঝেমাঝে কার্ডের ভিতরে নয়ন শুভেচ্ছা বার্তা লেখার শেষে কার্ডের নিচের দিকে হাবিজাবি অর্থহীন কিছু শব্দ লিখে থাকে । যে শব্দগুলোর অর্থ সাজনা নয়নের কাছে অনেকবার জানতে চেয়েছে । নয়ন প্রত্যেকবারই একটু রহস্য করে তাকে বলেছে - এই শব্দগুলোর অর্থ আমি নিজেই জানি না তবে জানার চেষ্টায় আছি ।
যদি কোনদিন জানতে পারি তবে তোকে অবশ্যই জানাব ।
নয়ন প্রতিদিন কলেজ থেকে আসার পর তার কাজ হল সাজনাকে উদ্দেশ্য করে মোবাইলে মেসেজ লেখা । মেসেজ লিখতে গিয়েও একি সমস্যা সে এক লাইনের বেশি কিছু লিখতে পারে না । তারপর সে মোবাইলের মেসেজের দিকে অনেক্ষণ চেয়ে থাকে,মাঝেমাঝে দাঁত দিয়ে চিমটি কেটে নক কাটে । এক সময় সেই এক লাইনের মেসেজটি যতনে সেইভ করে রাখে ।
কোনদিন ও সে সাজনাকে কোন মেসেজ সেন্ড করেনি ।
এভাবে একদিন নয়নের ড্রায়ার ভরে যায় কাগজে কাগজে । মোবাইলের ড্রাফট এ মেসেজ সেইভ করতে গেলে ওয়ার্নিং মেসেজ আসে,আর মেসেজ সেইভ করা যাবে না কারন মেসেজ বক্সে আর মেসেজ সেইভ করার মত জায়গা নাই । নয়ন ঠিক করে সাজনা'র আগামী জন্মদিনে সে তার ড্রায়ারের সব কাগজ আর মোবাইলের সব সেইভ করা মেসেজ গিফট দিবে । আর সাথে একটা ডায়রি দিবে ।
যে ডায়েরিটি সাজনার'র জন্মদিনের সাত দিন আগে কিনবে । এবং সেই ডায়রিতে সে সাত দিনে সাতটা বাক্য লিখবে ।
সাজনা'র জন্মদিনের আর সাতদিন বাকি আছে । আগের পরিকল্পনা মত নয়ন একটা ডায়রি কিনে আনে ।
নয়ন প্রথমদিনে ডায়রিতে লিখল -
তোর যৌবনের প্রথম আঁচলে আঁকতে চাই আমার কাঁচা হাতের সুনিপুণ কারুকাজ ।
দ্বিতীয় দিন লিখল -
তোর জন্যে আমার মাঝে স্বর্গীয় আবেগের এক অপূর্ব মিলনমেলা ।
তৃতীয় দিন লিখল -
তুই তোর অবহেলায় চিরন্তর বিবর্ণ করিস না আমার ভালবাসা ।
চতুর্থ দিন লিখল -
তুর জন্যে আমার বারবার জন্ম হবে ।
পঞ্চম দিন লিখল -
আমি বিষময় হতে চাই হিরোশিমার মত তোর বিষে ,দগ্ধ হতে চাই তোর আগুনে।
ষষ্ট দিন লিখল -
তোর স্পর্শই আমাকে ভালবাসা শিখিয়েছে ।
সপ্তম দিন লিখল -
বিশ্বাস কর আমি সত্যিই তোকে ভালবাসি ।
তার ড্রায়ারে সব কাগজ পরিপাটি করে সাথে তার মোবাইলটিও একটা বক্সে ঢুকিয়ে নীল রেপিং পেপার দিয়ে খুব সুন্দর করে প্যাকেট করে । প্যাকেটের উপরে গুটিগুটি করে লিখে- "প্রিয় সাজনা"মোবাইলের মেসেজগুলো চেক করে দেখিস আর কাগজের লেখাগুলো পড়িস । তাহলে হয়ত আমার সেই হাবিজাবি অর্থহীন শব্দগুলোর অর্থ পেয়ে যেতে পারিস ।
আজ সাজনা'র জন্মদিন ।
সাজনা একবার নয়নকে বলেছিল নীল আমার সবচেয়ে প্রিয় রঙ । সবাই তাদের বিয়েতে লাল শাড়ি পরে । কিন্তু আমি আমার বিয়েতে পরব নীল শাড়ি । এরপর থেকে নয়ন যখনি কিছু কিনতে যায় সবার আগে নীল রঙ খোঁজে । নয়ন আজ হালকা নীল জিন্সের সাথে যে ফতুয়াটা পরেছে তার রংটা ও অনেকটা নীল ।
নয়ন এখন এক হাতে নীল রংয়ের একটা প্যাকেট আর অন্য হাতে একটা নীল রঙের ডায়রি নিয়ে বসে আছে,কলেজের পুকুর পাড়ের সেই গাছ তলায় যেখানে সাজনা আর নয়ন দিনের পর দিন অন্যদের নিয়ে,গান নিয়ে,নাটক সিনেমা নিয়ে ইত্যাদি হাবিজাবি বিষয় নিয়ে গল্প করত ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।