সৃজনশীল সাহিত্যের শৈল্পিক প্রয়াসে নিমগ্ন একজন প্রকাশক
গত পাঁচ দিন সারাক্ষণই কেবল একটা কাজ খুব মনোযোগ দিয়ে করছি। মাপছি। একটা সময় অন্যটা শরীরের তাপমাত্রা। বিরক্তি এখন চরমে আমার। কতক্ষণ শুয়ে থাকতে পারে মানুষ! আমার তো মনে হয় অসুস্থতার যে কষ্ট তার চেয়ে বেশী সুস্থতার অপেক্ষার কষ্ট।
যেমন আমার জ্বর বেড়ে গেলে, ব্যাথা বেড়ে গেলে মনে মনে ভাবছি আয় বাবা, যা হবার একবারে হয়ে আমায় মুক্তি দে। তারপর উঠে দাড়াই, মেলা কাজ পড়ে আছে, এভাবে কতদি শুয়ে থাকব!
অসুস্থতা একধরনের অবসরও। এই যেমন সারাদিন শুয়ে বসে আছি, খাবার জন্য এটা আসছে ওটা আসছে [ যদিও বিষের মতো লাগে সবকিছু। টিভি দেখছি। সেদিন পা ছবিটা দেখলাম।
এবং তারপর থেকেই মাথার ভেতর এই ভাবনাটা জেঁকে বসেছে আমার। একি আমি ঠান্ডা মাথায় ভাবছি না জ্বরের ঘোরে তা ঠিক ঠাওর করে বলতে পারছিনা। পা ছবিতে অরু নামের প্রতিবন্ধী শিশুটির স্কুলে দেশকে সে কেমন চোখে দেখে, সেই প্রতিযোগিতা হলো। সবাই সবার ইচ্ছামাফিক মডেল তৈরি করল। অরু বানালো একটা পৃথিবীর গ্লোব তবে তা একেবারে সাদা।
যাতে কোন দেশের সীমানা নেই। তার মতে এক পৃথিবী এক দেশ। আর ঐ সাদা গ্লোবটাই আমাকে ভাবিয়ে তুললো এই ভাবনায়। আজকাল তেমন শুনিনা, ছোটবেলায় গ্রামে থাকতে খুব শুনতাম একটা কথা- ভিসামুক্ত পৃথিবী। সেই ভিসামুক্ত পৃথিবীর কথাটাই মনে করিয়ে দিল এই সাদা গ্লোবটা।
তারপরই ভাবলাম যদি এমনই হয় তবে কেমন হবে।
....... তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল ভিসামুক্ত আন্দোলনে। যা এতদিন ছিল অনুন্নত দেশগুলোর অলীক কল্পনা, আজ তা জোরালো দাবি। আর এই দাবি তোলার সাহস যোগাচ্ছে স্বয়ং আমেরিকা। পাঠক কি ভড়কে গেলেন? ভড়কে যাবেন না।
সবে তো শুরু। এই যুগান্তকারী, উদার মানবিকতার সিদ্ধান্তটি কিন্তু ওবামা আমলের নয় স্বয়ং বুশ মহোদয়ের! তবে সব রাষ্ট্র যে এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে তা কিন্তু নয়। চোখ বন্ধ করে মেনে নিয়েছে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো। যে দেশের অধিকাংশ মানুষ ভাবে আমেরিকা মানেই শুয়ে বসে খাওয়া, আরাম আর আরাম! চীন, রাশিয়া, র্জামানী, ভারত, জাপানের মতো দেশ তখনও এই পদ্ধতির ঘোর বিরোধী। মিটিং বসে গেল হোয়াইট হাউজে।
তারা সোজা বুশ কে জানিয়ে দিলেন অবৈধ ভবে তারা তাদের দেশে অন্য কোন দেশের নাগরিককে প্রবেশাধিকার দেবন না। এমনকি সে আমেরিকান হলেও না। বুশ তখনও নিশ্চুপ। অনেক আলোচনা সমালোচনা হলো কিন্তু সমাধান হলো না কিছুই। বিরোধী রাষ্ট্রর প্রতিনিধিরা হোয়াইট হাউজ ত্যাগ করার সাথে সাথে শুরু হলো আরেক বৈঠক।
বুশ ও তার উপদেষ্টা মন্ডলির। উপদেষ্টাদের একটাই প্রশ্ন, আমারিকানদেরও ঢুকতে দেবেনা এ কথা শোনার পরেও প্রেসিডেন্ট চুপ করে আছেন! কথা শুনে একটু হাসলেন বুশ, তারপর বললেন- আমি তো এটাই চেয়ছিলাম। জানেন তো নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশী। আজ থেকে আমেরিকা উন্মুক্ত করে দিন। দেখবেন জনস্রোত উল্টোদিকে।
আমেরিকানরাও যেতে পারে যেখানে খুশী কেবল সামরিক বাহিনীকে বলুন সবোর্চ্চ সর্তক অবস্থায় থাকতে। এক পৃথিবী এক দেশের সুফল বইতে শুরু করলেই শুরু হবে তাদের কাজ।
উপদেষ্টাদের আর কিছুই বুঝতে বাকি রইলো না। তারা কেবল ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো তাদের মহান প্রেসিডেন্টের দিকে।
শুরু হয়ে গেল ভিসা মুক্ত পৃথিবী সুবিধা।
এখন যার যেখানে ইচ্ছা সে যেতে পারে। কেউ তাকে বাঁধা দেবে না। মানুষ মানুষের কাছে যাবে তার জন্য এতো পরীক্ষা লাগবে কেন। মানুষে মানুষে এই জাত,কাল,পাত্র,দেশের ভেদাভেদ ভুলে একসাথে থাকার চেয়ে আনন্দের আছে আর কি! তাই মানুষ ছুটল ইচ্ছা মতো। লোকশূন্য হবার জোগাড় হলো বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে।
এসব দেশের নাগরিকরা ভালো জীবনের প্রত্যাশায় ছুটলো তাদের মন মতো। বিমান বন্দরে গিয়ে দেখা গেল রাস্তার মতো বিমানেও জ্যাম লাগার অবস্থা। কোন কাস্টমস নেই, বোডিং পাসের ঝামেলা নেই, টিকেট থাকলে সোজা প্লেনে। কোনটা কোন দেশের প্লেন বুঝবে কি করে? তারও ব্যবস্থা আছে। প্লেনের দরজায় দাড়িয়ে, প্লেনের গায়ে থাপ্পড় মারতে মারতে একজন হেঁকেই চলেছেন- ডাইরেক আমেরিকা, ডাইরেক আমেরিকা!
৫০০কোটি বছরের পৃথিবী আর লক্ষ বছরের মানব সভ্যতা।
ভিসামুক্ত পৃথিবীর নামে কেয়ামতের আলামত দেখা দিল পৃথিবী জুড়ে। এক দেশের নাগরিক ইচ্ছা মতো ঢুকে পড়ছে অন্য দেশে। কেউ তাকে বাঁধা দিতে পারছেনা। এমন করে করে কে যে কোন দেশে যাচ্ছে তার আর থাকছেনা কোন হিসাব। শুধু কি এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাচ্ছে, সে দেশে নিজের ইচ্ছে মতো সব করছে।
কিন্তু যে দেশে করছে সে দেশের মানুষ পারছেনা তা মানতে। ফলে শুরু হচ্ছে কথা কাটাকাটি, কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি, হাতাহাতি থেকে হুড়োহুড়ি,হুড়োহুড়ি থেকে সোজা খুনোখুনি। ব্যস আর যায় কোথা কোন দেশের মানুষ মেরেছ? আমেরিকান! ইউরোপীয়ান! আর যায় কোথায়, শুরু হয়ে গেল শক্তি পরীক্ষা। সে বলে আমার দেশের মানুষ মেরেছো, তো ও বলে আমার দেশেরে মানুষ মেরেছে। যারা বিরোধিতা করেছিল এই পদ্ধতির তারাও এগিয়ে আসতে বাধ্য হলো কেননা বিভিন্ন দেশে তাদের লোক হত্যা করা হচ্ছে এই অপরাধে যে তাদের দেশ পৃথিবীর নিযম মেনে চলছেনা।
এরপরেও কি বসে থাকা সম্ভব? ব্যস ডোজ কম্পিট। এখন কেবল বুশ সাহেবের বসে বসে দেখা। ভিসা মুক্ত একটি পৃথিবীর স্বপ্ন কতদিনে বাস্তবায়িত হয়। না না বুশ অত বোকা নন যে হোয়াইট হাউজে বসে বসে এসব দেখবেন। কারণ এখন যুদ্ধ চলছে পরমানবিক অস্ত্রে।
সমানে মানুষ মরছে, ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে একের পর এক দেশে, একের পর এক সভ্যতা। যুদ্ধরত কারো আর পেছন ফেরার সুযোগ নেই। এখন একটাই লক্ষ, কেবল নিজে না মরে অন্যকে মারো। কেননা শেষ পর্যন্ত যে বাঁচবে সেই হবে আগামী পৃথিবীর পুরো মালিক।
কোটি কোটি বছরের পৃথিবী কেবল ধোঁয়া আর ধ্বংসাবশেষ হয়ে গেল মাত্র ৯০দিনে।
কারণ মানুষ মানুষের চাইতে মানুষ মারার হাতিয়ার বানিয়েছিল বেশী। এই ধোঁয়া আর ধ্বংস হয়ে যাওয়া পৃথিবী এখন সত্যিই এক পৃথিবী এক দেশই হয়ে গেছে। এর আর কোন দেশ সীমা নেই। থাকলেই বা কি। মানুষ কোথায়? কোথাও তো নেই জীবিত কেই।
যে দুচারজন মানুষের আর্তনাদ এখনও শোনা যায় তারাও মারা পরবে কিছুক্ষনের ভেতর, কেননা তাদের সাহয্য করবার জন্য তো বেঁচে নেই আর একজনও।
আছে আছে, ঐ যে দেখা যাচ্ছে। ভালো করে দেখুন, চোখটা জুম করুন পৃথিবীর দিকে। ঐ কে যেন হেটে যায় মনে হয়। জুম জুম হ্যাঁ স্পষ্ট হচ্ছে, আরেকটু জুম করুন, হ্যাঁ দেখতে পাচ্ছি রক্তাক্ত, পঙ্গু একজন।
এখনও বেঁচে আছে! এখন চলতে পারে! তবে কি এই বীর বা সৈভাগ্যাবানই হবেন আগামী পৃথিবী একমাত্র শাষাক। অনেক ধীর পায়ে হাটছেন তিনি, বনের দিকে যাচ্ছেন মনে হয়। ভালো কর দেখুন তো চেনা যায় কিনা কোন বন এটা? হ্যাঁ চেনা চেনা তো লাগে, সুন্দরবন মনে হচ্ছে। সুন্দরবন! বাংলাদেশের কেউ কি আর বেঁচে আছে। অবশ্য অন্য দেশেরও হতে পারে।
কিন্তু বনে যাচ্ছেন কেন? ও খাবারের আশায়। অনেক কষ্টে হাটছেন তিনি বোঝাই যায়। কষ্ট করে একটা নদীর মোহনায় গাছের নিচে ধপাস করে পড়ে গেলেন লোকটি। তখনও তার মাথায় কাউবয় হ্যাট, তাই বোঝার উপায় নেই কে তিনি। যন্ত্রণাগ্রস্থ মানুষের গোঙরানীর শব্দ বেরুচ্ছে কেবল মুখ থেকে।
শব্দ আরো একটা কানে আসছে না? ঘো ঘো শব্দ। তাইতো এতো আমাদের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের শব্দ। কিন্তু কই ওটা? এখনও যদি একটি বাঘও বেঁচে থাকে আমাদের সেও অনেক। পাওয়া গেছে পাওয়া গেছে। ঐ তো ঐ লোকটি যে গাছের তলায় পড়ে আছে তার উল্টো দিকের গাছের নিচেই তো।
হয়তো মানুষের গন্ধ পেয়েছে বেচারা। কিন্তু তারও নড়বার ক্ষমতা নেই। সেও ভীষণ আহত। তবু রয়েল বেঙ্গল টাইগার যে, অনেক কষ্টে হয়েও শরীর টেনে সে ঠিকই পৈচ্ছাল ঐ মানুষের সামনে। বাঘের পায়ের শব্দ শুনে লোকটি ভাবল হয়তো তার মতো এখনও কেউ বেঁচে আছে।
অনেক কষ্ট হলেও ধীরে ধীরে মাথা তুলল লোকটি। কিন্তু যে দেখলো তার সামনে একটি বাঘ, তাতে আর আগ্রহ পেলনা সে। বাঘ দেখে লোকটির মুখে কোন পরিবর্তন না হলেও আমুল বদলে গেল বাঘের মুখ। এক নিমেষে চিনতে তার ভুল হলোনা এই সেই বুশ যার জন্য আজ সারা পৃথিবী ধ্বংস। সারা জীবনে একটা মানুষ না খেলে এই মানুষ নামের অমানুষটাকে আমিই খাবো।
ঝাঁপিয়ে পড়ল রয়েল বেঙ্গল টাইগার। মুহুর্তে শরীর থেকে মন্ডু আলাদা হয়ে গেল জর্জ বুশের আর রয়েল বেঙ্গল টাইগার ভাবলো আগে ওর মাথাটাই শেষে করবো। কারণ এই মাথা থেকেই তো বেরিয়েছে পৃথিবী ধ্বংসের এই কুমন্ত্র। পুরো মাথা তখনও শেষ করেনি বাঘটি তার আগেই তার সমস্ত শরীরে শুরু হয়ে গেলো জ্বালা। অসম্ভব ছটফটানি।
ওয়াক ফু করে পেট থেকে বের করে দিতে চাইলো বাঘটি কিন্তু শক্তিতে কুলালোনা। তার আগেই সে লুটিয়ে পড়লো মাটিতে। চোখ বন্ধ করতে করতে বাঘটি ভাবল শালা বুশের রক্তেও বিষ.....
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।