আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোচিং সেন্টার বন্ধ কর! করতে হবে! প্রথম পর্ব!

ইমরোজ

সেলিম ভাই, আমাদের ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই। সে বেশ ভালো পড়াশোনায়। তার জীবনের দু'টি লক্ষ্য, একটা ভাল রেজাল্ট নিয়ে পাশ করা এবং দ্বিতীয়ত অনেক টাকা কামানো। তো ছেলে, একাউন্টিং নিয়ে অনার্স মাস্টার করে এখন একটা কোচিং সেন্টারের গর্বিত মালিক। যাত্রাবাড়ি এবং সায়েদাবাদে তার দুইটি ব্র্যাঞ্চ থেকে মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকা আয়।

বলাই বাহুল্য একাউন্টিং থেকে ভালো রেজাল্টে পাশ করা বড় ভাইটি কোন চাকরি করছেন না। তিনি কোচিং সেন্টার নিয়ে বেশ আছেন। এইখানে আমার অনেক কথা আছে। চিন্তা করে দেখুন, মানুষের পড়াশোনা করার লক্ষ্য কিন্তু দেশকে ভালো কিছু দেওয়া থেকে সরে গেছে টাকা কামানোতে। এবং টাকা কামানোর জন্য বাঙ্গালী এহেনও কিছু নাই যেটা করতে পারে।

সুতরাং ওনার মনে হলো কোচিং সেন্টার দিয়েই কামানো মক্ষম। এই সেলিম ভাইয়ের কোচিং সেন্টারটায় একবার যাওয়ার সুযোগ হলো। যাত্রাবাড়ির কোচিং সেন্টারটিতে মাত্র তিনটি রুম আছে। এই তিনটি রুমের আয়তন অনেক ছোট। একেকটা রুমে গাদাগাদি করে বসে ক্লাস থ্রী থেকে ফাইভ পর্যন্ত ক্লাসের প্রায় ত্রিশ জন ছেলে মেয়ে।

এবং এদের ক্লাসের সময়কাল মাত্র দেড় ঘন্টা, যার জন্য মাসে তাদের প্রত্যেককে পনেরশো টাকা করে দিতে হচ্ছে, এবং এই গাদাগাদির মধ্যে পড়াশোনা নামক জিনিসটা আর হচ্ছে। তাহলে হচ্ছে টা কি? খুবই সিম্পল, দেড় ঘন্টা টিচার নানা প্যাচাল পেড়ে ছাত্রদের হাতে ধরায় দিচ্ছেন আকর্ষণীয় নোট, যেটা পড়লে ছাত্রদের পরীক্ষায় পাশ করা প্রায় নিশ্চিত। সেলিম ভাই অত্যন্ত খুশি হন তাদের কোচিং সেন্টারের ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা দেখে। তিনি স্বপ্ন দেখেন, আরও ছাত্র হবে। দুপুর একটা থেকে রাত আট পর্যন্ত এই তিনটা ঘরে শিক্ষা বিক্রী করা হয় সের দরে।

ছাত্র-ছাত্রীদের মাথা নস্ট করার পাশাপাশি আরেকটি জিনিস ইঞ্জেক্ট করা হচ্ছে, "তোমাদের জীবনের লক্ষ্য টাকা কামানো, টাকা কামানো, টাকা কামানো..." এই ছেলে অথবা মেয়েদের যে সময়টা খেলার সময়, সেই সময়টাতে তারা বাঁধা পড়ছে ভীষণ নোংরা শিক্ষা বাণিজ্যে। এবং হারাচ্ছে তাদের স্বকীয় চিন্তা ভাবনা করার সহজাত প্রবৃত্তি। নতুন প্রজন্মের আশা দূরে কোথাও মিলিয়ে যাচ্ছে। এবং একেকটা প্রজন্ম নষ্ট করতে পেরে সেলিম ভাইয়ের মুখে একটা পাশবিক হাসি ফুটে উঠছে। সে হাসির কাছে পরাজিত বাংলাদেশ।

টাকা কামানো যাদের লক্ষ্য তারা কি বুঝেন না, দক্ষ হলে, টাকাই মানুষের পেছনে ছুটে...কেন মানুষ টাকার পেছনে ছুটবে? সেলিম ভাইয়ের মত রক্তচোষা টাকাখোরদের হাতে নষ্ট হচ্ছে নতুন প্রজন্মের চিন্তা ভাবনা। তাদেরকে মানুষ থেকে করে তোলা হচ্ছে রোবট! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা সেলিম ভাইয়ের আরেকটি বন্ধুর কথা বলছি। তার নাম সত্যজিত সাহা। তিনি বিসিএস ক্যাডার। এবং অতি টাকা লোভি, কারণ তিনিও কোন এক কোচিং সেন্টারে দীক্ষা নিয়ে এসেছিলেন, আমাদের জীবনের লক্ষ্য টাকা কামানো।

সুতরাং সত্যজিত সাহা নেমেছেন কাস্টমসে। সেখানে নাকি কেউ টাকা না খেয়ে থাকতেই পারে না। তিনিও খাচ্ছেন। তার সন্তানদের পাঠাচ্ছেন স্বনামধন্য ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়তে। যেখানে একেকজনের বেতন তিন হাজার টাকা করে।

এবং কোচিং-এর খরচ এড করলে একেকজনের পেছনে খরচ ছয় হাজার টাকা করে। কাস্টমস অফিসারের ছেলে বলে কথা। পাঠক, আর কতকাল এভাবে চলবে। আমরা কি একটুও স্বাতন্ত্র হতে পারি না? আমরা কি পারি না দুইহাত দিয়ে ঝেড়ে ফেলে দিতে সমাজ নষ্টকারী এই নোংরা শিক্ষা ব্যবসাকে?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।