পাখি এক্সপ্রেস
ভূমিকা :
একজন ব্লগার একজন মানুষও বটে। ছোট ছোট অনুভূতির পাশাপাশি কয়েক বছরের লালিত আদর্শও একজন ব্লগারের থাকে। সে ব্লগারই আবার কোন একটি পরিবারের সদস্য, অনেকগুলো লোকের বন্ধু বা ক্ষেত্রবিশেষে কোন দল বা গোষ্ঠীর নেতা। এ বিষয়ে পরে আসি। তার আগে ব্লগকে একটি শক্তিশালী মিডিয়া ধরে সামনে এগুই।
ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া এবং প্রিন্ট মিডিয়ার পর যে মিডিয়া জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে তা হচ্ছে অনলাইন মিডিয়া। এখানে আবার বিভিন্ন গোত্রবদ্ধতা। তবে সবকিছুকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশে নিজস্ব ভাষার বেশ কয়েকটি ব্লগ সাইটই একচ্ছত্র দাপট উপভোগ করছে। আসলেই ব্লগ একটি শক্তিশালী মিডিয়া হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে চলছে।
ব্লগাররা খেতে কেমন (নেতিবাচক দিক দ্রষ্টব্য) :
সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা থেকে শুরু করে পীরের চামচা, সেনাপ্রধান থেকে শুরু করে চৌকিদার - সবাই নিজ নিজ পদের ষোলআনা দাপট উপভোগ করেন এবং অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী কিংবা বিদ্যাবুদ্ধিতে স্বল্পধারী ব্যক্তিদের উপর এক ধরনের প্রভাব বিস্তার করে যান।
আবার ছোটবেলায় মুরুব্বীদের মুরুব্বিয়ানার বলি হতে হতে প্রতিশাধ পরায়ন ব্যক্তিরা মুরুব্বীকালীন বয়সে ছোটদের উপর মুরুব্বীয়ানা ঝাঁড়তে একটুও ছাড় দেন না। একজন ব্লগারও এসমস্ত মানবীয় বৈশিষ্ট্যের বাইরে নয়। তার পুরোপুরি চর্চাই ব্লগে চলতে থাকে।
সামান্য বকবকানি :
সুযোগ পেলে সবাই নিজের মত প্রকাশ করে ঢালাওভাবে। আমিও এই সুযাগে শুরু করি।
আমি মনে করি ব্লগিং করতে আসার আগে নিজের বয়স, পদবী, কর্মযজ্ঞ, বংশ পরিচয় কিংবা আরো যা যা বুক চেতানোয় সাহায্য করে, সব কিছু একসাথে কোথাও রেখে তারপর আসা উচিত। অন্যের ঢালাও স্বীকৃতি নয় বরং নিজস্ব কর্মকান্ডের ভিত্তিতে প্রাপ্ত ফলাফল এবং নিজস্ব উপলব্দিই নিজ অবস্থান সৃষ্টি করে দেবে। এর বাইরে নয়। একজন ব্লগার কবি হিসেবে আরেকজন কবিব্লগারকে নজরুলের সাথে তুলনা করলেই সে নজরুল হবে না, আবার একেবারে কবি স্বীকার না করলেই সে অ-কবি বা বে-কবি হয়ে যাবে না।
কেউ আমাকে বাস্টার্ড বললেই আমার জন্ম পরিচয় মিথ্যা হয়ে যায় না, কোনভাবেই না।
যদি আমার নিজস্ব কোন দুর্বলতা না থাকে তবে কেউ আমাকে শালারপুত বললেও চটে যাবার কোন সুযোগ নেই। নিজস্ব দুর্বলতার মধ্যে সবার আগেই থাকে অহংকার। "মুই কি হনুরে"- ভাব থাকলেই যত সমস্যা। তার পরেই আছে এর বিপরীতটা- "তুই কোন চ্যাটের বাল"- এরকম ভাবনা থাকলেও সমস্যা।
ব্লগীয় সম্পর্ক এবং সম্পর্কের ব্যবহার (নেতিবাছক দিক দ্রষ্টব্য) :
খুব জটিল একটা বিষয়ের স্বল্প পরিসরে আলোচনা করি।
বিষয়টি হচ্ছে আদর্শ। যেমন ধরুন ইসলাম। একটি জীবনবাদ বা মতবাদ। আবার মার্কসবাদ। এটাও একটি মতবাদ।
এখন একজন মুসলমান যদি আশা করে আরেকজন মুসলমান তার সব বিষয়ে হুম হুম করে যাবে, তাহলে বিষয়টা কি হলো! নিজ বোধ বা বিবেকের উপর আস্থাহীন ব্যক্তিরা একটি নির্দিষ্ট গোত্রভুক্ত থেকে হয় নেতা হয়ে কিংবা নেতার পিছনে থেকে মাঠে মাঠে চরে যাবে আর বাদ বাকিরা হৈ হৈ করবে- এমন পদ্ধতিতে মনে হয় বেশিরভাগ ব্লগারই ব্লগিঙ করে না। মূলত যাদের কাছে ব্লগ কোন না কোন ভাবে ক্যারিয়ারের মর্যাদা পায় কিংবা পরিবারে নিজের প্রভাব প্রতিপত্তির চর্চা ব্লগেও করতে চান, তারাই গোত্রভুক্ত থাকতে চান। (এ বিষয়ে বিতর্কে না যাওয়াই উত্তম। কারণ ব্লগে গোত্রভুক্তিতার পেছনে এর চাইতে ভালো কারণ নেই)।
যতদোষ মন্তব্য গণনা এবং রেটিং পদ্ধতির।
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলি- ব্লগে আমার খুব ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু ছিলো। ব্লগেই বন্ধুত্ব। প্রতিদিনই আমাদের কোন না কোনভাবে যোগাযোগ হতো। কিন্তু যেদিন থেকে আমার বন্ধুটি ব্লগে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন, সেদিন থেকে আমাদের যোগাযোগও অকস্মাৎ বন্ধ হয়ে যায়। কেবলমাত্র মন্তব্য পাবার লোভে এই সম্পর্কের ব্লগেই জন্ম আবার ব্লগেই মৃত্যু হয়েছে।
ব্লগ ক্যারিয়ার (?) হুমকীমুক্ত রাখার ব্যবস্থা :
সম্প্রতি মনজুরুল হক নামে আমার একজন প্রিয় ব্লগার ব্লগ ছেড়ে চলে গেছেন। শিশুসুলভতার সর্বোচ্চ শিখরে আরোহন করে তিনি তাঁর সমস্ত লেখা মুছে দিয়েছেন। এসব দেখে নিজেকে নিয়ে একটু চিন্তা করলাম। আমার এরকম কোন ইচ্ছা যেন না হয়, সেজন্য কিছু প্রতিরোধক ব্যবস্থা নিলাম।
ব্যবস্থাগুলো হচ্ছে :
১. বয়সকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে সম্মান প্রাপ্তির আশা করবো না।
২. বন্ধুদের কাছে ব্যক্তিগত কোন প্রত্যাশা থাকবে না।
৩. নিজেকে জাহির করা বা প্রচার করা থেকে বিরত থাকবো।
৪. আইন ডিঙিয়ে মসজিদের ইমামকে প্রভাবিত করে শশুর মশাইকে বয়ান রাখার সুযোগ করে দিবো না।
৫. পরবর্তীতে খোঁটা দিতে হবে, এমন কোন উপকার কারো করবো না।
৬. কখনোই নিজেকে সেরা টেরা ভাবার পথে যাবো না এবং
৭. ব্যক্তিগত সফলতা ব্যবহার করে দার্শনিক কিংবা পন্ডিত হবার চেষ্টা করবো না।
আশাকরি এভাবেই অভিমান করে ব্লগ থেকে চলে যাওয়া, পোস্ট মুছে দেয়া, এবং কিছু সম্পর্ক অতীত করে দিয়ে তাদের ঘাড়ে দায়ভার ভাগ করে দেয়ার কাজ থেকে বিরত থাকতে পারবো।
বিশেষ দ্রষ্টব্য ১ :
সাংবাদিকরা ব্লগিং করতে আসার আগে যে বিষয়টি খুব ভালো করে জেনে আসা দরকার, তা হলো- পত্রিকায় একটা রিপোর্ট বা প্রবন্ধ লিখলে পাবলিক রিঅ্যাকশন সরাসরি খেতে হয় না। অর্থ্যাৎ সাংবাদিক থাকেন একস্থানে রিঅ্যাকশন হয় অন্যস্থানে। আর ব্লগে রিঅ্যাকশন হয় একেবারে সামনে, একেবারেই সাথে সাথে। হজমশক্তি না থাকলে ব্লগে না আসাই উত্তম।
বিশেষ দ্রষ্টব্য ২ :
আমার তাড়নায় আমি লিখি, আমার তাড়নায় মুছি আবার চলেও যাই। যাবার আগে যাদেরকে দায়ী করে যাই, তারা কি আদৌ আমার দায় বহন করতে বাধ্য?- এটা ভেবে দেখা দরকার।
কেউ ব্যাথা পেয়ে থাকলে আমাকেও ব্যাথা দিয়ে যাইয়েন। ব্যাথা দেয়ার জন্য কোন ভাবেই দু:খিত নই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।