আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যে ডুবে ভেসে উঠি বারবার - ০৪

আদর্শটাকে আপাতত তালাবন্ধ করে রেখেছি

১. গানের শ্রোতা হিসেবে আমি একটু সেকেলে। পুরনো দিনের অনেক গান পছন্দ, বর্তমান সময়ের অধিকাংশ গানই উঁচু নাকের বেড়াজাল পার হয়ে মগজে পৌঁছতে পারে না। মাঝে মাঝে ভাবি— কেন এমনটা হলো? গানের কথা একটা বড় ব্যাপার, কিন্তু আধুনিক অনেক গানের কথা বেশ সুন্দর! সুর? চটুল সুরের অনেক গানই তো প্রিয়। গায়কও তেমন কোন ফ্যাক্টর কি? গানের পাশাপাশি কবিতা আবৃত্তিও বেশ লাগে। মোবাইলের মেমোরি কার্ডে একসময় গান আর কবিতার সংখ্যা ছিল প্রায় সমান।

এই পুরনো দিনের গান বা কবিতা আবৃত্তি ভালো লাগার একটা জাস্টিফিকেশন খুঁজছিলাম বেশ কিছুদিন যাবত। আজকে একটু আগে হঠাৎ করেই মনে হলো— এর কারণ অন্য জায়গায়। পুরনো দিনের গানে বা কবিতা আবৃত্তিতে গায়ক বা আবৃত্তিকার যেভাবে প্রতিটা শব্দ আলাদাকরে গুরুত্ব বা ওজন অনুসারে স্ট্রেস বা ইনটোনেশন দিয়ে উচ্চারণ করেন, ওভারল্যাপিং না করে যেভাবে প্রতিটা শব্দকেই মগজে হিট করাতে পারেন, আধুনিক গানে সেটা অনুপস্থিত। এমনকি আমাদের দৈনন্দিন কথাবার্তায়ও আমরা প্রায়ই ওভারল্যাপিং করি— যদিও অন্যেরা সেটা অভ্যাস ও কল্পনার সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা বিবেচনাবোধ থেকেই বুঝে নেয়। এই কারণটা বের করার পর থেকে একটু স্বস্তি লাগছে।

অধিকাংশ আধুনিক গান পছন্দ না করার দোষটা শুধু আমার একার না, গায়কেরও! ২৩.০১.১০ ২. বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় একটা ছাত্রসংগঠনে কাজ করতাম। মোটামুটি ছাত্রসংগঠনের নেতা হিসেবে যতটুকু সাংগঠনিক ক্ষমতার স্বাদ নেয়া যায়, তার পুরোটা না হলেও ক্ষমতার কেন্দ্রের কাছাকাছিই ছিলাম। স্বপ্ন তো তখন অনেক ছিল— সেগুলো বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে কারা সবচেয়ে বেশি যোগ্য, সেটা তখনকার মতো বুঝেটুঝে সেই দলে যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে চেষ্টা করার সাথে স্বপ্ন দেখার দূরত্ব আসলে অনেক! সেই দলের অনেকের সাথেই যোগাযোগ নেই এখন। দলের খোঁজখবরও খুব একটা পাই না।

অথচ মনে হত, এই দলটিই বা এদের মতো দলগুলোই প্রগতিশীল আন্দোলনের নেতৃত্ব দিবে। ঘটনা তো এখন দেখি সেরকম না! দলগুলো তাহলে কী করছে? ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সূত্র ধরে হতাশ মুহূর্তের কোন কোন সময়ে উপসংহারে পৌঁছে যাই— এদের দ্বারা অনেককিছুই সম্ভব নয়। ষাটের দশকের ওই সংগঠনের রাজনীতি তখনকার সময়ের তুলনায় এগিয়ে ছিল— ফলে সহজেই প্রগতিশীল আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকতে পেরেছে। সে সময়ের প্রগতিশীল সব মানুষেরা ওই দলটিতে যুক্ত হয়েছিলেন, যে ধরনের প্রগতিশীলতা এখনকর সময়ের বিচারে তুলনামূলকভাবে কম দেখা যায়। আশির দশকে এসেও ষাটের দশকের রাজনীতি চালানোও গেল, কারণ ষাটের দশকের আলোকিত এলাকার একটা বিম্ব আশির দশক থেকে দেখা যেত।

তাছাড়া আশির দশকের সময়টা ষাটের দশক থেকে একেবারে ভিন্ন কিছুও ছিল না। কিন্তু এই সময়ে এসেও যখন ষাটের দশকের রাজনীতি চলতে থাকে, তখন সেটাকে নিশ্চয়ই প্রগতিশীল বলা যায় না! সে কারণেই বোধহয় আমার দলটি প্রগতিশীল আন্দোলনের মূল ভূমিকায় যতটুকু দায়িত্ব পালন করতে পারছে, তার চেয়ে কম পালন করতে পারছে ছাত্ররাজনীতিটাকে প্রগতিশীলতার ধারায় নিয়ে আসতে। অথচ এটুকু না করতে পারলে দল হিসেবে যত প্রগতিশীলই হোক না কেন, প্রগতিশীলতার ছোঁয়াটা মানুষের জন্য ফ্রুটফুল হয় না। ফলে সবক্ষেত্রে আমাদেরকে এখনও মন্দের ভালোটাই বেছে নিতে হয়, ভালোগুলোর মধ্যকার মন্দটাকে বাদ দিতে পারি না। সেদিনের এক তিক্ত অভিজ্ঞতার পর এই অনুভূতিগুলো আরও প্রকট হচ্ছে।

০৭.০২.১০ ৩. সুনামগঞ্জে এই নিয়ে তিনবার আসা হলো। দেশের যে তিনটি জেলা তুলনামূলকভাবে বঞ্চিতের কাতারে— নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ বোধহয় তার অন্যতম। মানুষগুলো দেখি অভাবের তাড়নায় নির্বাক হয়ে গেছে! কল্পনা কিংবা স্বপ্ন দেখতেও ভুলে যাচ্ছে কি? দিরাইয়ের হাওর-পাড়ের এক গ্রামের কয়েকজন মাকে জিজ্ঞাসা করলাম তাদের সন্তানদের কোন পর্যন্ত পড়ালেখা করাতে চান? কেউই উত্তর দিতে পারলেন না। কোন পর্যন্ত সন্তানকে পড়ান যায়, সেই ধারণাই নেই তাদের অনেকের— সেটা জানি। কিন্তু বড় হয়ে কী হলে খুশি হবেন— তাতেও তাদের কোন কল্পনা নেই, স্বপ্ন নেই! যা হয় একটা কিছু হলেই হল! অভাবটা না থাকলেই হয়! হা! দারিদ্র্য নাকি মানুষকে মহান করে? ১৬.০৩.১০ ৪. ডে-লাইট সেভিং নিয়ে কালকে আবার মেজাজ খারাপ হল।

এক অগার সাথে কথা শুরু করেছিলাম, পরে দেখি সে এটা সম্পর্কে কিছু জানেই না। তবে সাফল্যের সাথে ঘণ্টাখানেক বগরবগর করল! ...াল! ক্যান যে এগুলার সাথে তর্ক করতে যাই! বিশেষ করে ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবালের প্রতি মেজাজটা আরও খারাপ। কদিন আগে তাঁর একটা লেখা পড়লাম প্রথম আলোতে। বড়লোক দেশেরা নাকি ফুর্তিফার্তা করার জন্য এটা করে! আজকাল চট করে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়! বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ডে-লাইট সেভিং পদ্ধতি কার্যকর থাকতেই পারে—এতে দোষের বা ক্ষতির কী সেটাই ঠিক বুঝি না! আমরা জনগণই কি চেটের ...াল! সামান্য একটা জিনিসকে নিয়ে হাউকাউ শুরু করে দিতে পারি! ঘড়ির কাটা একটা ঘণ্টা এগিয়ে বা পিছিয়ে বাদবাকি সব কাজকর্ম ঠিক রাখলে কী অসুবিধা, সেটাই তো বুঝতে পারি না! এখানে বিভ্রান্তির অবকাশ কোথায়? বরং সূর্য উঠার উপর নির্ভর করে ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে বা পিছিয়ে দেয়াটাকেই আমার কাছে বৈজ্ঞানিক বলে মনে হয়। দেহঘড়ি বলে একটা ব্যাপার আছে না? আমাদের পূর্বপুরুষেরা সূর্য উঠার সাথে সাথেই কি ঘুম থেকে উঠতেন না, সে সময় তারা এক ঘণ্টা আগে ঘুমাতে যেতেন না? লেনিন একটা কথা বলেছিলেন—'বিজ্ঞান কখনও গণভোটে নির্ধারিত হয় না।

' এই কথার গুরুত্ব হাড়ে হাড়ে টের পাই মাঝেমাঝেই। জনগণকে সবসময় মহান বা কেন্দ্র বলে ভাবা ঠিক না। ০১.০৪.১০

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.