আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডুবে আছি আবুল হাসানে

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই । কাদঁতে আসিনি ফাসিঁ দাবী নিয়ে এসেছি ।
ঝিনুক নীরবে সহো, ঝিনুক নীরবে সহো, ঝিনুক নীরবে সহে যাও । ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুঁজে মুক্তা ফলাও। এ লাইন গুলো বুঝতে শিখতে শিখতে পরিচয় আবুল হাসানের সাথে ।

একজন আবুল হাসানের সাথে ভাব । কবি ও সাংবাদিক আবুল হাসান ১৯৪৭ সালের ৪ আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়ার বর্নি গ্রামে মাতুলালয়ে তাঁর জন্ম। ষাটের দশকের মধ্যবর্তী সময়ের কবি আবুল হাসান। খুব অল্পসময়ের মধ্যেই তিনি কার স্বকীয়তায় বাংলা কাব্য-ভুবন জায়গা করে নেন । আবুল হাসান অল্প বয়সেই একজন সৃজনশীল কবি হিসাবে খ্যাতিলাভ করেন।

১৯৭৫ সালের ২৬ নভেম্বর মাত্র আটাশ বছর বয়সে আবুল হাসান মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে: রাজা যায় রাজা আসে (১৯৭২), যে তুমি হরণ করো (১৯৭৪) ও পৃথক পালঙ্ক (১৯৭৫)৷ মৃত্যুর পর কাব্যনাট্য ওরা কয়েকজন (১৯৮৮) ও আবুল হাসান গল্প- সংগ্রহ (১৯৯০) প্রকাশিত হয়। তিনি কবিতার জন্য মরণোত্তর 'বাংলা একাডেমী পুরস্কার' (১৯৭৫) এবং বাংলাদেশ সরকারের 'একুশে পদক' (১৯৮২) লাভ করেন। সেই ক্ষণজন্মা কবির আমার ভালো লাগা কয়েকটি কবিতা অপরিচিতি (প্রথম প্রকাশ: বিচিত্রা--ডিসেম্বর ১৯৭৫) যেখানেই যাই আমি সেখানেই রাত! স্টেডিয়ামে খোলা আকাশের নিচে রেস্তোরাঁয় অসীমা যেখানে তার অত নীল চোখের ভিতর ধরেছে নিটোল দিন নিটোল দুপুর সেখানে গেলেও তবু আমার কেবলই রাত আমার কেবলই শুধু রাত হয়ে যায়! একলা বাতাস নোখের ভিতর নষ্ট ময়লা, চোখের ভিতর প্রেম, চুলের কাছে ফেরার বাতাস দেখেই শুধালেম, এখন তুমি কোথায় যাবে? কোন আঘাটার জল ঘোলাবে? কোন আগুনের স্পর্শ নেবে রক্তে কি প্রব্লেম? হঠাৎ তাহার ছায়ায় আমি যেদিকে তাকালেম তাহার শরীর মাড়িয়ে দিয়ে দিগন্তে দুইচক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আমি আমাকে শুধালেম এখন তুমি কোথায় যাবে? কোন আঘাটার জল ঘোলাবে? কোন আগুনের স্পর্শ নেবে রক্তে কি প্রব্লেম? কালো কৃষকের গান---------- দুঃখের এক ইঞ্চি জমিও আমি অনাবাদী রাখবো না আর আমার ভেতর সেখানে বুনবো আমি তিন সারি শুভ্র হাসি, ধৃতপঞ্চইন্দ্রিয়ের সাক্ষাৎ আনন্দময়ী একগুচ্ছ নারী তারা কুয়াশার মতো ফের একপলক তাকাবে এবং বোলবে,‘তুমি না হোমার? অন্ধ কবি ছিলে? তবে কেন হলে চক্ষুষ্মান এমন কৃষক আজ? বলি কী সংবাদ হে মর্মাহত রাজা? এখানে আঁধার পাওয়া যায়? এখানে কি শিশু নারী কোলাহল আছে? রূপশালী ধানের ধারণা আছে? এখানে কি মানুষেরা সমিতিতে মালা পেয়ে খুশী? গ্রীসের নারীরা খুব সুন্দরের সর্বনাশ ছিলো। তারা কত যে উল্লুক! ঊরুভুরুশরীর দেখিয়ে এক অস্থির কুমারী কত সুপুরুষ যোদ্ধাকে তো খেলো! আমার বুকের কাছে তাদেরও দুঃখ আছে, পূর্বজন্ম পরাজয় আছে কিন্তু কবি তোমার কিসের দুঃখ? কিসের এ হিরন্ময় কৃষকতা আছে? মাটির ভিতরে তুমি সুগোপন একটি স্বদেশ রেখে কেন কাঁদো বৃক্ষ রেখে কেন কাঁদো? বীজ রেখে কেন কাঁদো? কেন তুমি কাঁদো? নাকি এক অদেখা শিকড় যার শিকড়ত্ব নেই তাকে দেখে তুমি ভীত আজ? ভীত আজ তোমার মানুষ বৃক্ষশিশু প্রেম নারী আর নগরের নাগরিক ভূমা? বুঝি তাই দুঃখের এক ইঞ্চি জমিও তুমি অনাবাদী রাখবে না আর এম্ফিথিয়েটার থেকে ফিরে এসে উষ্ণ চাষে হারাবে নিজেকে, বলবে ও জল, ও বৃক্ষ, ও রক্তপাত, রাজনীতি ও নিভৃতি, হরিৎ নিভৃতি পুনর্বার আমাকে হোমার করো, সুনীতিমূলক এক থরোথরো দুঃখের জমিন আমি চাষ করি এদেশের অকর্ষিত অমা! একসময় ইচ্ছে জাগে, এভাবেই একসময় ইচ্ছে জাগে, মেষপালকের বেশে ঘুরিফিরি; অরণ্যের অন্ধকার আদিম সর্দার সেজে মহুয়ার মাটির বোতল ভেঙ্গে উপজাতি রমণীর বল্কল বসন খুলে জ্যোৎস্নায় হাঁটু গেড়ে বসি- আর তারস্বরে বলে উঠি নারী, আমি মহুয়া বনের এই সুন্দর সন্ধ্যায় পাপী, তোমার নিকটে নত, আজ কোথাও লুকানো কোনো কোমলতা নেই, তাই তোমার চোখের নীচে তোমার ভ্রুর নীচে তোমার তৃষ্ণার নীচে এই ভাবে লুকিয়েছি পিপাসায় আকণ্ঠ উন্মাদ আমি ক্ষোভে ও ঈর্ষায় সেই নগরীর গুপ্তঘাতক আজ পলাতক, খুনী আমি প্রেমিককে পরাজিত করে হীন দস্যুর মতোন খুনীকে খুনীর পাশে রেখে এখানে এসেছি, তুমি আমাকে বলো না আর ফিরে যেতে, যেখানে কেবলি পাপ, পরাজয় পণ্যের চাহিদা, লোভ, তিরীক্ষু-মানুষ- যারা কোজাগরী ছুরি বৃষ্টির হল্লায় ধুয়ে প্রতি শনিবারে যায় মদ্যশালায়, যারা তমসায় একফোঁটা আলোও এখন আর উত্তোলন করতে জানে না।

আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে ঝরে পড়ে কেবলি যাদের রক্ত, রাত্রিবেলা আমি আজ তোমার তৃষ্ণার নীচে নিভৃতের জ্যোৎস্নায় হাঁটু গেড়ে বসেছি আদিম আজ এখন আমার কোন পাপ নেই, পরাজয় নেই। একসময় ইচ্ছে জাগে, এভাবেই অরণ্যে অরণ্যে ঘুরে যদি দিন যেতো। অপরূপ বাগান চলে গেলে- তবু কিছু থাকবে আমার : আমি রেখে যাবো আমার একলা ছায়া, হারানো চিবুক, চোখ, আমার নিয়তি। জল নেমে গেলে ডাঙ্গা ধরে রাখে খড়কুটো, শালুকের ফুল : নদীর প্রবাহপলি, হয়তো জন্মের বীজ, অলঙ্কার- অনড় শামুক ! তুমি নেমে গেলে এই বক্ষতলে সমস্ত কি সত্যিই ফুরোবে ? মুখের ভিতরে এই মলিন দাঁতের পংক্তি- তা হলে এ চোখ মাথার খুলির নীচে নরোম নির্জন এক অবিনাশী ফুল : আমার আঙ্গুলগুলি, আমার আকাঙ্ক্ষাগুলি, অভিলাষগুলি ? জানি কিছু চিরকাল ভাস্বর উজ্জ্বল থাকে, চির অমলিন ! তুমি চলে গেলে তবু থাকবে আমার তুমি, চিরায়ত তুমি ! অনুপস্থিতি হবে আমার একলা ঘর, আমার বসতি ! ফিরে যাবো সংগোপনে, জানবে না, চিনবে না কেউ; উঠানে জন্মাবো কিছু হাহাকার, অনিদ্রার গান- আর লোকে দেখে ভাববে- বিরহবাগান ঐ উঠানে তো বেশ মানিয়েছে ! বন্ধুকে মনে রাখার কিছু ১ একদিন ঝরা পাতার মতো নামহীন নিঃশব্দে তোমাদের কাছ থেকে ঝরে যাবো যখোন পিছনে ফেলে রেখে আমার নিদ্রাহীনতার কয়েক গুচ্ছ ফুল। সম্ভব হবে না আর তোমাদের সাথে রেস্তোরাঁর স্বগত সন্ধান।

সন্ধ্যেবেলা ইসলামপুর থেকে একতোড়া ফুল কিনে নিয়ে গ্রীন রোড়ের নিষ্ফলতায় ফেলে আসা। তোমরা তখন ভেবো একদিন কথাচ্ছলে কোনো আমি এক জোড়া চোখের অবিনশ্বর সান্নিধ্যে কী এক অমোঘ আলোয় তার ব্লাউজের গন্ধময় চিত্র গেঁথে গেঁথে আঁকতে চেয়েছি রক্তময় লাল নাশপাতি! তোমার চিবুক ছোঁবো, কালিমা ছোঁবো না এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া তোমার ওখানে যাবো, তোমার ভিতরে এক অসম্পূর্ণ যাতনা আছেন, তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই শুদ্ধ হ’ শুদ্ধ হবো কালিমা রাখবো না! এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া তোমার ওখানে যাবো; তোমার পায়ের নীচে পাহাড় আছেন তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই স্নান কর পাথর সরিয়ে আমি ঝর্ণার প্রথম জলে স্নান করবো কালিমা রাখবো না! এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া এখন তোমার কাছে যাবো তোমার ভিতরে এক সাবলীল শুশ্রূষা আছেন তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই ক্ষত মোছ আকাশে তাকা– আমি ক্ষত মুছে ফেলবো আকাশে তাকাবো আমি আঁধার রাখবো না! এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া যে সকল মৌমাছি, নেবুফুল গাভীর দুধের সাদা হেলেঞ্চা শাকের ক্ষেত যে রাখাল আমি আজ কোথাও দেখি না– তোমার চিবুকে তারা নিশ্চয়ই আছেন! তোমার চিবুকে সেই গাভীর দুধের শাদা, সুবর্ণ রাখাল তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই কাছে আয় তৃণভূমি কাছে আয় পুরনো রাখাল! আমি কাছে যাবো আমি তোমার চিবুক ছোঁবো, কালিমা ছোঁবো না! প্রতিক্ষার শোকগাথা তোমার চোখের মতো কয়েকটি চামচ পড়ে আছে দ্যাখো প্রশান্ত টেবিলে আর আমার হাত ঘড়ি নীল ডায়ালের তারা জ্বলছে মৃদু আমারই কব্জিতে ! টুরিস্টের মতো লাগছে দেখতে আমাকে সাংবাদিকের মতো ভীষণ উৎসাহী এ মুহূর্তে সিগ্রেটের ছাই থেকে শিশিরের মতো নম্র অপেক্ষার কষ্টগুলি ঝেড়ে ফেলেছি কালো এ্যাসট্রেতে ! রেস্তোরাঁয় তুমি কি আসবেনা আজ স্বাতী ? তোমার কথার মতো নরম সবুজ কেকগুলি পড়ে আছে একটি পিরিচে তোমার চোখের মতো কয়েকটি চামচ ! তোমার হাসির মতো উড়ছে চাইনিজ পর্দা রেস্তোরাঁয় আর একটি অস্থির নীল প্রজাপতি পর্দার বুনট থেকে উড়ে এসে ঢুকে গেছে আমার মাথায় ! রেস্তোরাঁয় তুমি কি আসছোনা আজ স্বাতী ? রেস্তোরাঁয় তুমি কি আসবেনা আর স্বাতী ? আবুল হাসান সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে, উজ্জ্বলতা ধরে আর্দ্র, মায়াবী করুণ এটা সেই পাথরের নাম নাকি ? এটা তাই ? এটা কি পাথর নাকি কোনো নদী ? উপগ্রহ ? কোনো রাজা ? পৃথিবীর তিনভাগ জলের সমান কারো কান্না ভেজা চোখ ? মহাকাশে ছড়ানো ছয়টি তারা ? তীব্র তীক্ষ্ণ তমোহর কী অর্থ বহন করে এই সব মিলিত অক্ষর ? আমি বহুদিন একা একা প্রশ্ন করে দেখেছি নিজেকে, যারা খুব হৃদয়ের কাছাকাছি থাকে, যারা এঘরে ওঘরে যায় সময়ের সাহসী সন্তান যারা সভ্যতার সুন্দর প্রহরী তারা কেউ কেউ বলেছে আমাকে- এটা তোর জন্মদাতা জনকের জীবনের রুগ্ন রূপান্তর, একটি নামের মধ্যে নিজেরি বিস্তার ধরে রাখা, তুই যার অনিচ্ছুক দাস ! হয়তো যুদ্ধের নাম, জ্যোৎস্নায় দুরন্ত চাঁদে ছুঁয়ে যাওয়া, নীল দীর্ঘশ্বাস কোনো মানুষের ! সত্যিই কি মানুষের ? তবে কি সে মানুষের সাথে সম্পর্কিত ছিল, কোনোদিন ভালোবেসেছিল সেও যুবতীর বামহাতে পাঁচটি আঙ্গুল ? ভালোবেসেছিল ফুল, মোমবাতি, শিরস্ত্রাণ, আলোর ইশকুল ? নিঃসঙ্গতা অতটুকু চায়নি বালিকা! অত শোভা, অত স্বাধীনতা! চেয়েছিল আরো কিছু কম, আয়নার দাঁড়ে দেহ মেলে দিয়ে বসে থাকা সবটা দুপুর, চেয়েছিল মা বকুক, বাবা তার বেদনা দেখুক! অতটা চায়নি বালিকা! অত হৈ রৈ লোক, অত ভিড়, অত সমাগম! চেয়েছিল আরো কিছু কম! একটি জলের খনি তাকে দিক তৃষ্ণা এখনি, চেয়েছিল একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী! আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ ! আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না ! ক্ষমা করবেন বৃক্ষ, আপনার শাখায় আমি সত্য পাখি বসাতে পারবো না ! বানান ভীষণ ভুল হবে আর প্রুফ সংশোধন করা যেহেতু শিখিনি ভাষায় গলদঃ আমি কি সাহসে লিখবো তবে সত্য পাখি, সচ্চরিত্র ফুল ? আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ ! সচ্চরিত্র ফুল আমি যত বাগানের মোড়ে লিখতে যাই, দেখি আমার কলম খুলে পড়ে যায় বিষ পিঁপড়ে, বিষের পুতুল ! উচ্চারণগুলি শোকের লক্ষি বউটিকে আমি আজ আর কোথাও দেখিনা, হাটি হাটি শিশুটিকে কোথাও দেখিনা, কতগুলি রাজহাঁস দেখি নরম শরীর ভরা রাজহাঁস দেখি, কতগুলি মুখস্থ মানুষ দেখি, বউটিকে কোথাও দেখিনা শিশুটিকে কোথাও দেখিনা ! তবে কি বউটি রাজহাঁস ? তবে কি শিশুটি আজ সবুজ মাঠের সূর্য, সবুজ আকাশ ? অনেক রক্ত যুদ্ধ গেলো, অনেক রক্ত গেলো, শিমুল তুলোর মতো সোনারূপো ছড়ালো বাতাস । ছোটো ভাইটিকে আমি কোথাও দেখিনা, নরোম নোলক পরা বোনটিকে আজ আর কোথাও দেখিনা ! কেবল পতাকা দেখি, কেল উৎসব দেখি , স্বাধীনতা দেখি, তবে কি আমার ভাই আজ ঐ স্বাধীন পাতাকা ? তবে কি আমার বোন, তিমিরের বেদীতে উৎসব ? স্মৃতিকথা (হেলাল, কাঞ্চন, ওয়ালী, বাচ্চু ও রাব্বীকে) যে বন্ধুরা কৈশোরে নারকেল বনের পাশে বসে আত্মহত্যার মতো বিষণ্ন উপায়ে উষ্ণ মেয়েদের গল্প কোরতো শীতকালে চাঁদের মতোন গোল বোতামের কোট পড়ে ঘুরতো পাড়ায়, যে বন্ধুরা থিয়েটারে পার্ট কোরতো, কেউ সাজতো মীরজাফর, কেউবা সিরাজ তারা আজ, এখন কোথায় ? রোমেনা যে পড়াতো ইশকুলে ছোট মনিদের বিদ্যালয়ে রোমেনা যে বুদ্ধদেব বসুর উপন্যাস পড়ে তার নায়িকার মতো জ্বরে ভুগতো, আর মিহি শরীরের সাথে মিল রেখে কপালে পরতো টিপ, শাদা কোমরের কাছে দীর্ঘচুল ঝুলিয়ে রাখতো ব্লু কালারের ব্যাগ, দু’বৎসর আগে শুনেছি বিবাহ হ’য়ে গেছে তার, এখন কোথায় ? রুনী তার মাতাল স্বামীর কাছে না গিয়ে নিজেই একরাতে একে একে শূন্যতায় সলজ্জ কাপড়গুলি খুলে ফেলে কুয়াশায় উন্মাদিনী কোথায় পালালো ! নিজস্ব ভ্রুণের হত্যা গেঁথে দিয়েছিল তাকে মানসিক হাসপাতালের এক কোণে ! কোথায় সে ? এখন কোথায় ? অনেকেই চলে গেছে, অনেক নারকেল গাছ হয়ে গেছে বুড়ো অনেক প্রাঙ্গণ থেকে উঠে গেছে গোলাপ চারার মতো সুন্দর বয়সমাখা প্রসিদ্ধা তরুণী, মধ্যরাতে নারকেল বনের কাছে ভেঙে যায় আমারও গল্পগুলি স্মৃতিকথা সেখানে নিশ্চুপ ! বৃষ্টি চিহ্নিত ভালোবাসা মনে আছে একবার বৃষ্টি নেমেছিল ? একবার ডাউন ট্রেনের মতো বৃষ্টি এসে থেমেছিল আমাদের ইস্টিশনে সারাদিন জল ডাকাতের মতো উৎপাত শুরু করে দিয়েছিল তারা; ছোট-খাটো রাজনীতিকের মতো পাড়ায়-পাড়ায় জুড়ে দিয়েছিল অথই শ্লোগান। তবু কেউ আমাদের কাদা ভেঙে যাইনি মিটিং-এ থিয়েটার পণ্ড হলো, এ বৃষ্টিতে সভা আর তাসের আড্ডার লোক ফিরে এলো ঘরে; ব্যবসার হলো ক্ষতি দারুণ দুর্দশা, সারাদিন অমুক নিপাত যাক, অমুক জিন্দাবাদ অমুকের ধ্বংস চাই বলে আর হাবিজাবি হলোনা পাড়াটা। ভদ্রশান্ত কেবল কয়েকটি গাছ বেফাঁস নারীর মতো চুল ঝাড়ানো আঙ্গিনায় হঠাৎ বাতাসে আর পাশের বাড়ীতে কোনো হারমোনিয়ামে শুধু উঠতি এক আগ্রহী গায়িকা স্বরচিত মেঘমালা গাইলো তিনবার ! আর ক’টি চা’খোর মানুষ এলো রেনকোট গায়ে চেপে চায়ের দোকানে; তাদের স্বভাবসিদ্ধ গলা থেকে শোনা গেল : কী করি বলুন দেখি, দাঁত পড়ে যাচ্ছে তবু মাইনেটা বাড়ছেনা, ডাক্তারের কাছে যাই তবু শুধু বাড়ছেই ক্রমাগত বাড়ছেই হৃদরোগ, চোখের অসুখ ! একজন বেরসিক রোগী গলা কাশলো : ওহে ছোকরা, নুন চায়ে এক টুকরো বেশী লেবু দিও।

তাদের বিভিন্ন সব জীবনের খুঁটিনাটি দুঃখবোধ সমস্যায় তবু সেদিন বৃষ্টিতে কিছু আসে যায়নি আমাদের কেননা সেদিন সারাদিন বৃষ্টি পড়েছিল, সারাদিন আকাশের অন্ধকার বর্ষণের সানুনয় অনুরোধে আমাদের পাশাপাশি শুয়ে থাকতে হয়েছিল সারাদিন আমাদের হৃদয়ে অক্ষরভরা উপন্যাস পড়তে হয়েছিল ! জন্ম মৃত্যু জীবনযাপন মৃত্যু আমাকে নেবে, জাতিসংঘ আমাকে নেবেনা, আমি তাই নিরপেক্ষ মানুষের কাছে, কবিদের সুধী সমাবেশে আমার মৃত্যুর আগে বোলে যেতে চাই, সুধীবৃন্দ ক্ষান্ত হোন, গোলাপ ফুলের মতো শান্ত হোন কী লাভ যুদ্ধ কোরে ? শত্রুতায় কী লাভ বলুন ? আধিপত্যে এত লোভ ? পত্রিকা তো কেবলি আপনাদের ক্ষয়ক্ষতি, ধ্বংস আর বিনাশের সংবাদে ভরপুর… মানুষ চাঁদে গেল, আমি ভালোবাসা পেলুম পৃথিবীতে তবু হানাহানি থামলোনা ! পৃথিবীতে তবু আমার মতোন কেউ রাত জেগে নুলো ভিখিরীর গান, দারিদ্রের এত অভিমান দেখলোনা ! আমাদের জীবনের অর্ধেক সময় তো আমরা সঙ্গমে আর সন্তান উৎপাদনে শেষ কোরে দিলাম, সুধীবৃন্দ, তবু জীবনে কয়বার বলুন তো আমরা আমাদের কাছে বোলতে পেরেছি, ভালো আছি, খুব ভালো আছি ? মাতৃভাষা আমি জানিনা দুঃখের কী মাতৃভাষা ভালোবাসার কী মাতৃভাষা বেদনার কী মাতৃভাষা যুদ্ধের কী মাতৃভাষা। আমি জানিনা নদীর কী মাতৃভাষা নগ্নতার কী মাতৃভাষা একটা নিবিড় বৃক্ষ কোন ভাষায় কথা বলে এখনো জানিনা। শুধু আমি কোথাও ঘরের দরোজায় দাঁড়ালেই আজো সভ্যতার শেষ মানুষের পদশব্দ শুনি আর কোথাও করুণ জল গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ে, আর সেই জলপতনের শব্দে সিক্ত হতে থাকে সর্বাঙ্গে সবুজ হতে থাকে আমার শরীর। সর্বাঙ্গে সবুজ আমি কোথাও ঘরের দরোজায় দাঁড়ালেই আজো পোষা পাখিদের কিচিরমিচির শুনি শিশুদের কলরব শুনি সুবর্ণ কঙ্কন পরা কামনার হাস্যধ্বনি শুনি ! ঐযে নষ্ট গলি, নিশ্চুপ দরোজা ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ওরা, গণিকারা- মধ্যরাতে উলঙ্গ শয্যায় ওরা কীসের ভাষায় কথা বলে ? ঐযে কমলা রং কিশোরীরা যাচ্ছে ইশকুলে আজো ঐ কিশোরীর প্রথম কম্পনে দুটি হাত রাখলে রক্তে স্রোত গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ে, শব্দ হয়, শুনি কিন্তু আমি রক্তের কী মাতৃভাষা এখনও জানিনা ! বেদনার কী মাতৃভাষা এখনো জানিনা ! শুধু আমি জানি আমি একটি মানুষ, আর পৃথিবীতে এখনও আমার মাতৃভাষা, ক্ষুধা ! বন্ধুকে মনে রাখার কিছু ২ দল বেঁধে সিনেমায় ঢুকে মনে পড়ে যায় যদি আমাকে সবার কোনোদিন দীর্ঘায়িত পর্দার অলৌকিক স্পর্শে সেদিন পরিপূর্ণ শিহরনময় একটি দুঃখের দৃশ্যে আমাকে খুঁজবে তুমি? ঘরে ফিরে যাবার বেলায় মনে হবে? নাকি, সে-রাতের কথা আকস্মাৎ দগ্ধ কোরে দেবে? যে রাত্রে অর্থহীন পাগলের মতো কী সে এক দুর্মর আকাঙ্খায় শহরের শব্দহীন রাস্তায় সারারাত ঘুরে শৈশবের পুরনো ইতিহাস ইন্দ্রধনুর মতো পরেছি যখন চোখে মুখে! এবং সমস্ত নারীর প্রেম-পাপে ঘুমহীন নিয়নের মতো এই দেহ টাঙ্গিয়ে দিয়েছি শেষ রাত্রির বিনিদ্র বাতাসে। এক মূ্র্ছিত ঠোঁটে পরম দুঃখে গেয়ে গেছিঃ সহজ উপায় নেই কোনো স্বপ্নহীনতার? বন্ধুকে মনে রাখার কিছু ৩ নরক-শয্যায় বৃথা আমাদের শূণ্য হুতাশন, আজ মনে হয়ঃ নিরন্তর শোকের হাতের আঙ্গুল আমরা সব! কিছু-নেই-দুঃখের ভেতর ধ্বংসময় ক্ষণিক পাগল! যেখানে প্রশান্তি নেই মানুষের লোকক্ষত গাঁথা, সেখানে মৃত্যু, শুধু মৃতের ঘুমের অন্ধকার; গ্রীনরোডের পুষ্পিত শাড়ীর মতো মনে হয়না পৃথিবীকে তাই আর, ইসলামপুরের পুষ্পস্তবকের মতো পৃথিবীর নারীর হৃদয়! তাই বলি তোমাদের একমাত্র মৃত্যুই সুন্দর চাঁদের মতোন আত্মা আমার মেলে দিতে পারি আজ অনন্ত মৃত্যু সম্ভাষণে।

বনভূমিকে বলো বনভূমিকে বলো, বনভূমি, অইখানে একটি মানুষ লম্বালম্বি শুয়ে আছে, অসুস্থ মানুষ হেমন্তে হলুদ পাতা যেরকম ঝরে যায়, ও এখন সে রকম ঝরে যাবে, ওর চুল, ওর চোখ ওর নখ, অমল আঙুল সব ঝরে যাবে, বনভূমিকে বলো, বনভূমি অইখানে একটি মানুষ লম্বালম্বি শুয়ে আছে, অসুস্থ মানুষ ও এখন নদীর জলের স্রোতে ভেসে যেতে চায় ও এখন মাটি হতে চায়, শুধু মাটি চকের গুঁড়োর মতো ঘরে ফিরে যেতে চায়, বনভূমিকে বলো, বনভূমি ওকে আর শুইয়ে রেখো না ! ওকে ঘরে ফিরে যেতে দাও। যে যাবার সে চলে যাক, তাকে আর বসিয়ে রেখো না। বদলে যাও, কিছুটা বদলাও কিছুটা বদলাতে হবে বাঁশী কিছুটা বদলাতে হবে সুর সাতটি ছিদ্রের সূর্য; সময়ের গাঢ় অন্তঃপুর কিছুটা বদলাতে হবে মাটির কনুই , ভাঁজ রক্তমাখা দুঃখের সমাজ কিছুটা বদলাতে হবে… বদলে দাও, তুমি বদলাও নইলে এক্ষুনি ঢুকে পড়বে পাঁচজন বদমাশ খুনী , যখোন যেখানে পাবে মেরে রেখে যাবে, তোমার সংসার, বাঁশী, আঘাটার নাও । বদলে যাও, বদলে যাও, কিছুটা বদলাও ! আগুনে পুড়বে ভস্ম এবং শৃঙ্ক্ষল আকাশকে বিক্ষত করো আকাশ তবুও আকাশ, ফুলকে পোড়াও, ফুল তবু ফুল কাগজের মতো ছেঁড়ো শাড়ী ও শাড়ী ছিঁড়বোই কিন্তু নারী রয়ে যাবে, নারী চিনবেই তার ভীষণ নারীকে । ফুলতো কাগজ নয় ছিঁড়ে ফেলবে, আকাশ তো মানুষ নয় ক্ষত কোরবে ।

স্বাধীনতাকে যতবার তুমি পরাধীনতা করো আর মানুষকে যতবার তুমি মারো যতবার পরাও শৃঙ্ক্ষল মানুষ তবুও তার বজ্র মুষ্টি থেকে আগুনের রত্ন ছুঁড়ে দেবে । আগুনে পুড়বে ভস্ম এবং শৃঙ্ক্ষল । পাখি হয়ে যায় প্রাণ অবশেষে জেনেছি মানুষ একা ! জেনেছি মানুষ তার চিবুকের কাছেও ভীষণ অচেনা ও একা ! দৃশ্যের বিপরীত সে পারে না একাত্ম হতে এই পৃথিবীর সাথে কোনোদিন। ফাতিমা ফুফুর প্রভাতকালীন কোরানের মর্মায়িত গানের স্মরণে তাই কেন যেনো আমি চলে যাই আজো সেই বর্নির বাওড়ের বৈকালিক ভ্রমণের পথে, যেখানে নদীর ভরা কান্না শোনা যেত মাঝে মাঝে জনপদবালাদের স্ফুরিত সিনানের অন্তর্লীন শব্দে মেদুর ! মনে পড়ে সরজু দিদির কপালের লক্ষ্মী চাঁদ তারা নরম যুঁইয়ের গন্ধ মেলার মতো চোখের মাথুর ভাষা আর হরিকীর্তনের নদীভূত বোল ! বড় ভাই আসতেন মাঝরাতে মহকুমা শহরের যাত্রা গান শুনে, সাইকেল বেজে উঠতো ফেলে আসা শব্দে যখোন, নিদ্রার নেশায় উবু হয়ে শুনতাম, যেনো শব্দে কান পেতে রেখে : কেউ বলে যাচ্ছে যেনো, বাবলু তোমার নীল চোখের ভিতর এক সামুদ্রিক ঝড় কেন ? পিঠে অই সারসের মতো কী বেঁধে রেখেছো ? আসতেন পাখি শিকারের সূক্ষ্ম চোখ নিয়ে দুলাভাই ! ছোটবোন ঘরে বসে কেন যেনো তখন কেমন পানের পাতার মতো নমনীয় হতো ক্রমে ক্রমে ! আর অন্ধ লোকটাও সন্ধ্যায়, পাখিহীন দৃশ্য চোখে ভরে ! দীঘিতে ভাসতো ঘনমেঘ, জল নিতে এসে মেঘ হয়ে যেতো লীলা বৌদি সেই গোধূলি বেলায়, পাতা ঝরবার মতো শব্দ হতো জলে, ভাবতুম এমন দিনে কি ওরে বলা যায়- ? স্মরণপ্রদেশ থেকে এক একটি নিবাস উঠে গেছে সরজু দিদিরা ঐ বাংলায়, বড়ভাই নিরুদ্দিষ্ট, সাইকেলের ঘণ্টাধ্বনি সাথে কোরে নিয়ে গেছে গাঁয়ের হালট ! একে একে নদীর ধারার মতো তার বহুদূরে গত ! বদলপ্রয়াসী এই জীবনের জোয়ারে কেবল অন্তঃশীল একটি দ্বীপের মতো সবার গোচরহীন আছি আজো সুদূর সন্ধানী ! দূরে বসে প্রবাহের অন্তর্গত আমি, তাই নিজেরই অচেনা নিজে কেবল দিব্যতাদুষ্ট শোনিতের ভারা ভারা স্বপ্ন বোঝাই মাঠে দেখি, সেখানেও বসে আছে বৃক্ষের মতোন একা একজন লোক, যাকে ঘিরে বিশজন দেবদূত গাইছে কেবলি শতজীবনের শত কুহেলী ও কুয়াশার গান ! পাখি হয়ে যায় এ প্রাণ ঐ কুহেলী মাঠের প্রান্তরে হে দেবদূত ! বনভূমির ছায়া কথা ছিল তিনদিন বাদেই আমরা পিকনিকে যাবো, বনভূমির ভিতরে আরো গভীর নির্জন বনে আগুন ধরাবো, আমাদের সব শীত ঢেকে দেবে সূর্যাস্তের বড় শাল গজারী পাতায়। আমাদের দলের ভিতরে যে দুইজন কবি তারা ফিরে এসে অরণ্য স্তুতি লিখবে পত্রিকায় কথা ছিল গল্পলেখক অরণ্য যুবতী নিয়ে গল্প লিখবে নতুন আঙ্গিকে ! আর যিনি সিনেমা বানাবেন, কথা ছিল তার প্রথম থীমটি হবে আমাদের পিকনিকপ্রসূত।

তাই সবাই আগে থেকেই ঠিকঠাক, সবাই প্রস্তুত, যাবার দিনে কারো ঘাড়ে ঝুললো ফ্লাস্কের বোতল ডেটল ও শাদা তুলো, কারো ঘাড়ে টারপুলিনের টেণ্ট, খাদ্যদ্রব্য, একজনের শখ জাগলো পাখির সঙ্গীত তিনি টেপরেকর্ডারে তুলে আনবেন বনে বনে ঘুরে ঠিক সন্ধ্যেবেলাটিতে তিনি তুলবেন পাতার মর্মর জোড়া পাখির সঙ্গীত ! তাই টেপরেকর্ডার নিলেন তিনি। একজন মহিলাও চললেন আমাদের সঙ্গে তিনি নিলেন তাঁর সাথে টাটকা চিবুক, তার চোখের সুষমা আর উষ্ণ শরীর ! আমাদের বাস চলতে লাগলো ক্রমাগত হঠাৎ এক জায়গায় এসে কী ভেবে যেনো আমি ড্রাইভারকে বোললুম : রোক্কো- শহরের কাছের শহর নতুন নির্মিত একটি সাঁকোর সামনে দেখলুম তীরতীর কোরছে জল, আমাদের সবার মুখ সেখানে প্রতিফলিত হলো; হঠাৎ জলের নীচে পরস্পর আমরা দেখলুম আমাদের পরস্পরের প্রতি পরস্পরের অপরিসীম ঘৃণা ও বিদ্বেষ ! আমরা হঠাৎ কী রকম অসহায় আর একা হয়ে গেলাম ! আমাদের আর পিকনিকে যাওয়া হলো না, লোকালয়ের কয়েকটি মানুষ আমরা কেউই আর আমাদের এই ভয়াবহ নিঃসঙ্গতা একাকীত্ব, অসহায়বোধ আর মৃত্যুবোধ নিয়ে বনভূমির কাছে যেতে সাহস পেলাম না ! সেই সুখ (সুফিয়া চৌধুরীকে) সেই সুখ মাছের ভিতরে ছিল, সেই সুখ মাংসের ভিতরে ছিল, রাতের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যেতো ছেলেবেলা সেই সুখ চাঁদের ভিতরে ছিল, সেই সুখ নারীর ভিতরে ছিল ! নারী কোন রমণীকে বলে ? যার চোখ মুখ স্তন ফুটেছে সেই রমণী কি নারী ? সেই সুখ নারীর ভিতরে ছিল, যখন আমরা খুব গলাগলি শুয়ে অনু অপলাদের স্তন শরীর মুখ উরু থেকে অকস্মাৎ ঝিনুকের মতো যোনি, অর্থাৎ নারীকে আমরা যখোন খুঁজেছি হরিণের মতো হুররে দাঁত দিয়ে ছিঁড়েছি তাদের নখ, অন্ধকারে সেই সুখ নারীর ভিতরে ছিল। যখন আমরা শীতে গলাবন্ধে পশমী চাদর জড়িয়েছি কিশোরীর কামরাঙা কেড়ে নিয়ে দাঁত বসিয়েছি সেই সুখ পশমী চাদরে ছিল, কামরাঙা কিশোরীতে ছিল ! রঙীন বুদ্বুদ মাছ, তাজা মাংস, সুপেয় মশলার ঘ্রাণ; চিংড়ি মাছের ঝোল যখোন খেতাম শীতল পাটিতে বসে সেই সুখ শীতল পাটিতে ছিল। প্রথম যে কার ঠোঁটে চুমু খাই মনে নেই প্রথম কোনদিন আমি স্নান করি মনে নেই কবে কাঁচা আম নুন লঙ্কা দিয়ে খেতে খেতে দাঁত টক হয়েছিল মনে নেই মনে নেই কবে যৌবনের প্রথম মিথুন আমি ঘটিয়েছিলাম মনে নেই… যা কিছু আমার মনে নেই তাই হলো সুখ ! আহ ! সে সুখ…
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.