কোথায় জানবেন ১৯৪৮ সালে মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা গৃহীত হওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সকল ধরনের মানবাধিকারকে অবিভাজ্য হিসেবে গণ্য করছে।
প্রতিটি মানুষের প্রতিটি স্থানে সম্মানের সাথে বাস করার সম্পূর্ন অধিকার আছে। এর মানে হল এই যে কোন মানুষকেই তার শিক্ষার, পর্যাপ্ত বাসস্থানের, খাদ্যের, পানীয় জলের ও পয়ঃনিস্কাশনের, সর্বোচ্চ মানের স্বাস্থ্য পরিষেবার অধিকার, এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকার থেকে কোন ভাবেই বঞ্চিত করা যাবেনা।
এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ৪৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বের লাখ লাখ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে চলেছে এবং বিরাজমান মানবাধিকারের উদ্বেগগুলো সমাধানে কাজ করে যাচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে:
• বিশ্বব্যাপী জোরপূর্বক গণ উচ্ছেদের বিস্তার
• অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্যসেবাসমূহের সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক বাঁধা
• এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য
• শিক্ষায় প্রবেশাধিকারের ব্যাপারে মেয়ে শিশু ও সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য
• অন্যান্য অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং অধিকারগুলোর লংঘন
ক্ষুধা, গৃহহীনতা ও প্রতিরোধযোগ্য রোগ অপ্রতিরোধ্য সামাজিক সমস্যা নয় কিংবা এটি পুরোপুরি সম্পদের অভাব থেকে সৃষ্ট কোনো সমস্যাও নয়, এটি হলো আইনসমুহ, নীতিমালা ও সম্পাদিত কাজের ফলাফল যা মানুষের অধিকারগুলোকে খর্ব করে।
অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার কি?
• পর্যাপ্ত বসতবাড়ির অধিকার যার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে জোরপূর্বক উচ্ছেদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকার এবং সামর্থ্যের মধ্যে বসবাস উপযোগী ও সাংস্কৃতিকভাবে উপযুক্ত বসতবাড়ি;
• সাংস্কৃতিক অধিকারগুলোর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগণের নিজেদের সাংস্কৃতিক পরিচয় সংরক্ষণ ও সুরক্ষার অধিকার;
• শিক্ষা অধিকারের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বিনামূল্যে ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা পাওয়ার অধিকার এবং অগ্রগতিমূলক সহজলভ্য, প্রবেশগম্য, গ্রহণযোগ্য ও উপযোগী শিক্ষা;
• খাদ্য অধিকারের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ক্ষুধা থেকে মুক্তি এবং সবসময় পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্য জোগাড় করতে পারা কিংবা জোগাড় করার উপায় জানা থাকা
• স্বাস্থ্য অধিকারের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সর্বোচ্চ শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুবিধা পাওয়ার অধিকার, যার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যকর বসবাসের অবস্থা এবং সহজলভ্য, প্রবেশগম্য, গ্রহণযোগ্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্য সেবাসমূহ;
• পানি ও পয়ঃনিস্কাশনের অধিকার মানে পর্যাপ্ত পানি ও পয়ঃনিস্কাশনের অধিকার যার মধ্যে রয়েছে কাঠামোগত ও অর্থনেতিকভাবে প্রবেশগম্য এবং নিরাপদ;
• কাজ করার অধিকার এবং কর্মক্ষেত্রে অধিকারসমূহের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে স্বাধীনভাবে কাজ বাছাই করার অধিকার এবং চাকরির সঠিক ও সুষ্ঠু শর্ত, জোরপূর্বক শ্রমের বিরুদ্ধে সুরক্ষা এবং ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও যোগদানের অধিকার।
দায়ী কে?
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে দায়িত্বশীল হলো রাষ্ট্র, জাতীয় পর্যায়ের সরকারগুলোর মাধ্যমে যা বাস্তবায়ন করতে হবে। তারা অব্শ্যই ইএসসি অধিকারসমূহের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাবে, সেগুলো রক্ষা করবে এবং সম্পন্ন করবে।
রাষ্ট্র যখন অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সম্পদ পাবে না তখন রাষ্ট্র অবশ্যই আন্তর্জাতিক সহাযতা চাইবে ও গ্রহণ করবে। অর্থনেতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসমূহের লংঘন শুধুমাত্র সম্পদের অপর্যাপ্ততা নয়, এটি অনিচ্ছা, অবহেলা ও বৈষম্যও বটে।
রাষ্ট্রের চৌহদ্দির বাইরেও মানবাধিকার রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের রয়েছে।
রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তিসমূহে সহযোগিতা করছে, তারা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহায়তার মাধ্যমে অন্যান্য দেশসমূহের মানুষদের সহায়তা করছে, এবং আন্তর্জাতিক কম্পানিগুলোর প্রধান কার্যালয় এক দেশে অবস্থিত এবং কাজ পরিচালনা করে অন্য দেশে।
এই ধরনের এবং অন্যান্য কেসগুলোতে, সরকারসমূহকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, তারা মানবাধিকার লংঘন করছেন না। যে তারা যে দেশগুলোতে কাজ করে সেখানকার মানুষদের মানবাধিকার লংঘন তারা প্রতিহত করবে, এবং তারা সার্বজনীন মানবাধিকার বাস্তবায়নে, বৈষম্যহীনতা নিশ্চিতকরণে ও সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থাগুলো অগ্রাধিকীকরণে অবশ্যই সহায়তা করবে।
প্রান্তিক মানুষকে সহায়তা করা কোনো দয়া দাক্ষিণ্য নয়, এটি মানবাধিকার।
রাষ্ট্রসমূহ আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে কাজ করবে।
এর মাধ্যমে তারা অবশ্যই নিশ্চিত করবে যে তাদের মানবাধিকারগুলোর প্রভাব ইতিবাচক।
কোম্পানিগুলোর দায়িত্ব হলো এটি নিশ্চিত করা যে, তাদের কাজের অবস্থান নির্বিশেষে তারা মানবাধিকার লংঘনের ক্ষেত্রে কোনো অবদান রাখছে না।
এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যা করছে?
এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সদস্যরা বিশ্বব্যাপী স্থানীয় কমিউনিটিগুলোর সদস্যদের ও সক্রিয় কর্মীদের সঙ্গে মিলে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠার জন্যে প্রচারণা চালাচ্ছে। আমরা অব্যাহতভাবে এমন অধিকারসমূহের লংঘনের শিকার নারী, পুরুষ ও শিশুর বাস্তব অবস্থাগুলো তুলে ধরছি, যা বঞ্চনা ও অবহেলার নগ্ন চিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরে।
আমরা মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার বাস্তবায়ন এবং প্রান্তিক ও বঞ্চিত মানুষের উপর চালিত মারাত্মক নির্যাতনগুলোর অবসানে আইন প্রয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি।
আমরা আমাদের সকল কাজের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটাই যে, মানবাধিকার অপরিহার্য ও এটি একে অন্যের উপর নির্ভরশীল।
অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসমূহ সংক্রান্ত আমাদের কাজগুলো আমাদের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত কাজগুলো থেকে পৃথক কিছু নয়, বরং এই ধরনের কাজগুলো একটি অন্যটিকে শক্তিশালী করছে।
কেস স্টাডি
২০০৩ সালের ৩ নভেম্বর, শতাধিক গৃহহীন পরিবার সাও পাওলো শহরের পরিত্যক্ত ২২ তলা ফ্যাক্টরি ভবন প্রেসটেস মাইয়াতে আশ্রয় নেয়।
মধ্য সাও পাওলো শহরের গৃহহীনদের জন্য আন্দোলনে নিয়োজিত স্থানীয় এনজিও দি মুভিমেনটো ডস সেম টেটো ডো সেন্ট্রো (এমএসটিসি) এর সহায়তায় তারা অপরাধের স্বর্গ হয়ে উঠা একটি পরিত্যক্ত ও খালি ভবনকে গৃহহীন মানুষের বসতবাড়ি ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে রূপান্তর করে।
স্থানীয় সরকার কোনো ধরনের বিকল্প ব্যবস্থা না নিয়েই বেশ কয়েকবার পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করেছে।
বিশ্বব্যাপী এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সদস্যরা তাদের উদ্বেগ জানিয়ে লিখেছে এবং গৃহহীন আন্দোলনের আইনজীবিরা আদালতে উচ্ছেদ আদেশগুযলো রোধ করতে পেরেছে।
২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পৌরসভা বসবাসকারীদের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে, ফলশ্রুতিতে গৃহহীনদের কাউকে কাউকে ঘরবাড়ি দেয়া সম্ভব হয়েছে এবং বাকিদের বাসাবাড়ির জন্যে ভাড়া প্রদান করা সম্ভব হয়েছে।
প্রেসটেস মাইয়া পরিবারের পক্ষ থেকে কমিউনিটি নেতা জোমারিনা এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের এই বিজয় অপ্রত্যাশিত, কিন্তু এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সম্পৃক্ততা আমাদের প্রচারণাকে হঠাৎই সকলের কাছে তুলে ধরে। ’
এমএসটিসি-র সঙ্গে কাজ করেন এমন একজন আইনজীবি মানোয়েল ডেল রিও বলেন, ‘বসতবাড়ি হলো এক ধরনের ভিত্তি যেখান থেকে মানুষ তার অন্যান্য অধিকারের জন্য লড়াই করার কাজটি শুরু করে। গৃহহীন আন্দোলন মানবাধিকার গ্রুপগুলোর কাছে উপেক্ষিত।
এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গৃহায়নকে মানবাধিকারের একটি ইস্যু হিসেবে দেখছে। এই ধরনের সংগ্রাম অব্যাহতভাবে চলছে, যা এখন আরো শক্তিশালী হয়েছে। ’
২০০৮ সালে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দারিদ্র্যের কারণ মানবাধিকার লংঘন রোধ ও প্রতিরোধের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী ‘মানুষের মর্যাদার জন্যে প্রচারাভিয়ান’ শীর্ষক এক প্রচার কার্যক্রম চালু করেছে।
এই প্রচারণা দায়িত্বশীলদের জবাবদিহিতা তৈরির লক্ষ্যে ও দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসরত দরিদ্র মানুষদের জন্যে পরিচালনা করা হবে যাতে করে তারা তাদের নিজেদের জীবনের উপর কর্তৃত্ব নিতে পারে এবং সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত হয়। কোথায় জানবেন
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।