নিয়তি অনতিক্রম্য
কথাটা একটু অদ্ভুত মনে হতে পারে। কিন্তু আমার তাই মনে হয়।
অস্ত্রের মুখে অন্যের টাকা যে কেড়ে নেয় তাকে সন্ত্রাসী বলা হয়। কাজটা সরল দৃষ্টিতে অন্যায়। কিন্তু সরলতা সব সময় সত্য নয়।
অতি সরলতা অনেক সময়ই বিভ্রান্ত করে।
যাদের টাকা পয়সা আছে, খেয়ে পড়ে ভাল থাকে তারা সাধারনত ঝামেলায় যেতে চায় না। নির্ঝঞ্ঝাট জীবন কাটাতে ভালবাসে। এরা অনেক সময়ই বুঝে উঠতে পারে না মানুষ কেন সন্ত্রাসী হয় । বুঝতে না পারারই কথা।
সমাজ এক ধরনের জেলখানার মত একটি ব্যাপার। উপরতলার কিছু মানুষ সেখানে প্রভু হয়ে বসে আছে। সমাজে থাকতে গেলে তাদের কথা মানতে হয়। মাঝে মাঝে তাদের পা চেটে দিতে হয়। তাহলে বেশ ভাল থাকা যায়।
এদের বিরুদ্ধে কিছু বলা যায় না। প্রতিবাদ করার ফলাফল ভয়াবহ।
আমরা বেশিরভাগ মানুষই এই জেলখানা মেনে নিয়েছি। আমরা হচ্ছি আমজনতা। উপরওয়ালাদের পা চেটে দিয়ে ভাল আছি।
কিন্তু সবাই ওটা মানতে পারে না। পদলেহনকারী কুকুরের জীবন সবার পছন্দের নয়। এদের কাছে অস্তিত্ব রক্ষার চেয়ে মর্যাদা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এরা হয় মাথা উচুঁ করে বাচঁবে আর নয়ত বাঁচবেই না। এরাই মাঝে মাঝে প্রতিবাদের চেষ্টা করে।
সমাজে প্রতিবাদীদের জন্য কোন জায়গা নেই। ভিন্নমতের পরিনতি নির্যাতন। উপরওয়ালাদের কথা না মানলে সন্ত্রাসী হতে হয়।
সমাজে বাঁচতে হলে কিছু হলেও টাকা পয়সা লাগে। কিন্তু সেই টাকা ঠিক কীভাবে উপার্জন করা হবে সমাজ তা স্পষ্ট করে বলে না।
টাকা উপার্জন না করতে পারলে তুমি খাবার পাবে না কিন্তু টাকা কিভাবে উপার্জন করবে তা আমি জানি না - সমাজের মতটা এরকমই । উপরওয়ালারা আছেন ; তাদের পা চাটলে টাকা পাওয়া যায়। পা চাটতে রাজী না থাকলে টাকা পাবে না। পা চাটতে রাজী হলেও সবাই সে সুযোগ পায় না। পা চাটার সুযোগ পাবার জন্যই প্রচন্ড ভীড়।
অসংখ্য মানুষ অপেক্ষায় আছে সেই সুযোগ পাবার জন্য।
এরকম অবস্থায় টাকা উপার্জনের আর একটাই পথ খোলা থাকে - তার নাম অস্ত্র। পা চাটতে না রাজী থাকলে অথবা পা চাটার সুযোগ না পেলে, না খেয়ে মরতে হবে। না খেয়ে মরতে কেউ রাজী নয়। মরার আগে অস্ত্র হাতে সে শেষ চেষ্টাটা করতে চায়।
মরবই যখন তখন আর ভয় পাব কাকে? আইন না সমাজ? সন্ত্রাসী হচ্ছে সেই দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষ যে পৃথিবীতে টিকে থাকার শেষ চেষ্টা করছে। জন্মের পর থেকে সে দেখছে পৃথিবীর সব সম্পদ দখল করে বসে আছে একদল মানুষ। সেই সম্পদ কেউ এমনি এমনি দিয়ে দেবে না। তাকে জোর করে কেড়ে নিতে হবে। আইনকে তার ভয় পাবার কিছু নেই।
কারন উপরওয়ালাদের লাথি খেয়ে, লজ্জায় অপমানে সে প্রতিদিন একটু একটু করে মরে। মৃত্যু তার জন্য নতুন কিছু নয় কারন তার জীবন মৃত্যুর চেয়েও দুর্বিষহ।
একজন উশৃঙ্খল তরুনী একজন বিপ্লবী। উশৃঙ্খল হচ্ছে সে যে সমাজের প্রচলিত প্রথাগুলো মানে না। সেই সমাজ কোন সমাজ ? সেই সমাজ কিছু দিতে পারে না, পারে শুধু নিয়ম জারি করতে।
সমাজের নিয়মে তাকে বিয়ে করতে হবে, সংসার করতে হবে। একটা মেয়ে নিজের মত করে বাঁচতে পারবে না। সে বাঁচবে পরিবারের কঠোর নিয়মের মধ্যে। যেন নিয়মই তার আজন্ম নিয়তি। তার পূর্বপুরুষদের তৈরী করা নিয়মই শেষ কথা।
নিজের মনকে বাঁচাতে হলে তাকে সমাজের নিয়ম ভাঙতেই হবে। তাতেও বিপত্তি অনেক। সমাজ নিন্দা করে। তবুও সেই নিন্দার দায় মাথায় নিয়েও কেউ কেউ প্রতিবাদ করে। সমাজ ছি ছি করে।
আমি বলি বিপ্লবী। আর কিছু না হোক, অন্তত বেঁচে থাকার একটা অর্থ সে খুঁজে পেয়েছে।
জানি অনেকেই আমার সাথে একমত হবেন না। সমাজের যারা সুবিধাভোগী তারা সমাজের নিয়মগুলো পছন্দ করে। এইসব সুবিধাভোগীদের ভাল থাকা নির্ভর করে সমাজের অস্তিত্বের উপর।
মানুষ যদি নিয়ম ভাঙতে শুরু করে তাহলে এইসব সুবিধাভোগীদের কী হবে? নিয়ম ভাঙতে দেখলে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
তাই নিয়ম ভাঙার সাহস যাদের আছে, তাদেরকে আমার ভালো লাগে। সমাজের এই সমস্ত নিয়ম ভাঙা বিপ্লবীদের জন্য শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।