আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাউয়া পাখি জিন্দাবাদ

writerrazu.com

গ্রামের নাম হিজলা। এই গ্রামেরই মেয়ে যুথি। ক্লাস নাইনে পড়ে। বয়স ১৫/১৬। বলবার মত আর তেমন কোন পরিচয় নেই তার।

গ্রামের আর দশটা মেয়ের মতই নিম্মবিত্ত পরিবারের মেয়ে। সরকারী উপবৃত্তির সুবাদে এবং কারণে, বাবা মা তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেনি। তবে বিয়ের চেষ্টাও চলছে। বিয়ের কথা শোনার পর থেকেই যুথি তার হবু বরের কল্পনা শুরু করে দিয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত যে প্রস্তাবগুলো এসেছে, কল্পনার সাথে তার ব্যবধান আকাশ-পাতাল বললে খুব কমই বলা হবে।

বাড়ির পিছনে রান্না ঘরের উঠানে শীতের হালকা রোদে মাদুর বিছিয়ে বসে বসে রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ পড়ছে যুথি। এই মুহুর্তে যে গল্পটি পড়ছে তার নাম “সমাপ্তি”। গল্পের নায়িকা মৃন্ময়ী আর নায়ক অপু। মৃন্ময়ী গ্রামের অতি দরিদ্র পরিবারের চরম ডান পিটে মেয়ে। পড়া লেখা-ঘরের কাজ-শান্ত হয়ে একটু বসে থাকা এসব বিষয়ে তার মোটেও আগ্রহ নেই।

পাড়ার সবচেয়ে দুষ্টু ৫/৭ টা ছেলে নিয়ে তার একটা গ্র“প আছে। মৃন্ময়ী তাদের সভানেত্রী। এদের কাজ হল অন্যের অনিষ্ট করা এবং যাবতীয় ভালো কাজ থেকে দুরে থাকা। এ জন্যে অবশ্য মৃন্ময়ীর বাবা-মাকে বেশ কয়েক দফা বিভিন্ন মহলে অপমানিত হতে হয়েছে। কিন্তু তারা এবং প্রতিবেশীরা মৃন্ময়ীকে এবং তার দলকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যার্থ হয়ে এখন হাল ছেড়ে দিয়েছে।

পাশের তিন গ্রামের কোন গাছের কোন পাখির বাসায় কয়টি ডিম আছে তা মৃন্ময়ী এন্ড গং এর মুখস্থ। এই তথ্য জানলে অবশ্য ব্রিট্রিশ কাউন্সিল মৃন্ময়ীকে “ক্লাইমেট চ্যাম্পিয়ন” খেতাব দিয়ে লাখ টাকার চেক তুলে দিত এবং তা বিশ্ব মিডিয়ায় প্রচার করার জন্যে কোটি টাকা খরচ করত। যাই হোক ঐ এলাকায় খুব কমই ফড়িং আছে, মৃন্ময়ী যার লেজে সুতা বেধে উল্টা করে ঝুলিয় রাখেনি। গল্পের নায়ক অপু। সে কোলকাতায় পড়াশুনা করে।

বাবা বেঁচে নেই কিন্তু বেশ সম্রান্ত এবং ধনী পরিবারের এক মাত্র ছেলে সে। মা অসুখের কথা বলে তাকে কোলকাতা থেকে ডেকে এনেছে। উদ্দেশ্য বিয়ে দেওয়া। একটা মেয়েকেও ঠিক করে রাখা হয়েছে। সংস্কৃত তত্ত্ব জ্ঞান অনুযায়ী সেই মেয়ে পাত্রী হিসেবে নিঁখুত।

সুন্দরী-শান্ত-ভদ্র-সেলাই জানে-প্রথম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে-পরিবার বেশ স্বচ্ছল ইত্যাদি, ইত্যাদি। কিন্তু ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিত অপুর এই মেয়েকে পছন্দ হল না। হল মৃন্ময়ীকে। এই কথা শুনে অপুর মায়ের হার্ট ফেল করার মত অবস্থা। একেতো মৃন্ময়ী বজ্জাতের হাড্ডি তার উপর আবার ফকির-মিসকিন।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইংরেজী শিক্ষার কাছে পরাজিত হল সংস্কৃত তত্ত্ব জ্ঞান। অপু মৃন্ময়ীকে বিয়ে করল। এক নি:শ্বাসে এই পর্যন্ত পড়ল যুথি। বইটা বন্ধ করে ফেলল। নিজের ঠোটে চিমটি কাটল।

কিছুক্ষণ ভাবল। হু, সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। যুথিও আজ থেকে মৃন্ময়ীর মত হবে। চরম ডানপিটে-দুষ্টু-চটপটে। এবং একমাত্র এভাবেই সে তার কল্পনার বরকে বিয়ে করতে পারবে।

কোন এক অপু তার গলায় পড়িয়ে দেবে মুক্তার মালা, আঙ্গুলে নিউ জড়োয়া হাউজের ডায়মন্ড রিং। এর পরের এক দিনেই যুথি যা করল তাতে রীতিমত অবাক এবং বিরক্ত গ্রামবাসী। মোট ৬টি নালিস এল যুথির বাবা-মা এর কাছে। তারাও অবাক এবং বিরক্ত। ৬টি নালিশের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর হল, যুথি গ্রামের মসজিদের ইমাম সাহেবের গায়ে ঢিল ছুড়ে মেরেছে, পাশের বাড়ির নতুন বৌকে ধাক্কা দিয়ে খালে ফেলে দিয়েছে ইত্যাদি।

এর পরের দিন অর্থাৎ “সমাপ্তি” গল্প পড়ার ৩য় দিনের কথা। রমিজ মিয়ার ছাগলটাকে ধাওয়া দিল যুথি। ছাগল দৌড়ায় আর পিছ পিছ যুথিও দৌড়ায়। দৌড়াতে দৌড়াতে ছাগল আর যুথি চলে এল গ্রাম থেকে একটু দুরে ধান-তিল-পাট ক্ষেতের পাশে। হাপাতে হাপাতে ক্ষেতের আইলের উপর বসে পড়ল যুথি।

এর একটু দুরে তিল ক্ষেতে কাজ করছিল ৩/৪ জন যুবক কৃষক। তারা চারদিক তাকিয়ে দেখে আশেপাশে কেউ নেই। তারা এক সাথে উঠে এসে ক্লান্ত যুথির উপর অ্যাটাক করল। মুখ চেপে ধরল এক জন। অন্য দুজন যুথির হাত এবং পা ধরে চ্যাংদোলা করে টেনে হিচড়ে নিয়ে গেল পাটক্ষেতের মধ্যে।

তারপর পর্যায়ক্রমে কুকর্ম সম্পাদন করল। পরবর্তী ৩ ঘন্টার মধ্যে এই খবর ছড়িয়ে পড়ল গ্রামে। নিকটবর্তী থানা সদর থেকে নারীবাদী কোন এনজিও প্রতিনিধি আসার আগেই গ্রামের শালিশ বসল। তিন ধর্ষক ধরা পড়েছে, একজন পালিয়ে গেছে। বিচার করবেন গ্রামের মসজিদের ইমাম সাহেব, গত কাল যার গায়ে ঢিল ছুড়েছিল যুথি।

আধ ঘন্টা বিভিন্ন পক্ষের কথা শুনে চীফ জাস্টিস (ইমাম সাহেব) কোন প্রকার বিব্রত বোধ করা ছাড়াই রায় ঘোষনা করলেন। যুথির গায়ে ১০ ঘা দোররা মারা হবে। তিন ধর্ষক প্রত্যেকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা দেবে যুথির বাবাকে এবং ইমাম সাহেবের পা ধরে তওবা করবে। বিচার দেখতে জড়ো হয়েছে আশপাশের সাত গ্রামের লোকজন। তারা গোল হয়ে বিচার দেখছে।

রায় ঘোষনা শেষ তবু তারা কেউ নড়ছে না। তারা অপেক্ষা করছে কখন যুথির গায়ে দোররা মারা হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।