ভাতের মজা কিছুতেই পাই না।
চতুর্দিক জঙ্গলে বেষ্টিত নানাবাড়ী। বিদ্যুতের বালাই নেই। চারদিকে থৈ থৈ পানি। নৌকা ছাড়া বেরুবার কোন পথ নেই।
উঠানে নামলেই হাঁটু অবধি কাদার মোজা লেগে যায়। বৃষ্টি কমার কোন লক্ষন নেই। আর আছে জোঁকের ভয়। মনে একটুও শান্তি নেই। তাই পারতপক্ষে নানাবাড়ী যাওয়ার নাম ই মুখে আনতাম না।
কিন্তু প্রতি বছর আমাদের স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষে বাপের বাড়ি নাইওর যাওয়া আম্মার চাই ই চাই। আম্মা চলে গেলে আমরা তো আর বসে থাকতে পারি না। আমরাও তখন হেমবাবুটি হয়ে আম্মার সাথে যেতাম। নানাবাড়ির ঘাটে পৌছার পর অবশ্য আর বেশিক্ষন হেমবাবুটি হয়ে থাকা যেত না। হারিকেন হাতে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঘাটের পাড়ে জটলা লেগে যেত।
আমার ছোট বোন দেখতে আদুরি ছিল তাই ওকে নিয়ে সবার টানাটানি লেগে যেত। দিনের আলোতেই আমাকে ভাল করে দেখা যায় না আর রাতের বেলায় তাদের নজরে পড়ার তো প্রশ্নই উঠে না! পেছন পেছন যেতাম বাড়ির ভেতরে।
খাওয়া দাওয়ার মধ্যখানে হঠাত আমার খোঁজ পড়ত। ততক্ষনে পেটের ক্ষিধায় আমি হয়ত ঘুমিয়ে পড়েছি। এক খালা আমাকে ঘুম থেকে টেনে তুলে খাওয়াতেন।
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে খেতাম। অসহ্য লাগত আবার মজাও লাগত। খালা আমাকে খুব আদর করতেন। ওই খালাকে দেখিনা আজ প্রায় দশ বার বছর হয়ে গেল!
সবচেয়ে বিপত্তিটা ঘটত রাতের বেলা টয়লেটে যাবার দরকার হলে। নানাদের বাড়ির পেছনে পুরোটাই বাঁশের ঝাড়।
তার মধ্যখানে পাকা ছাদখোলা টয়লেট। নিকষ কালো অন্ধকার দেখে আমার টয়লেট বন্ধ হয়ে যাবার যোগাড় হয়ে যেত। তার উপর আবার মশাদের সেকি খান্দানি কামড়! যতদিন নানাবাড়িতে থাকতাম ততদিন রাতের বেলা প্রায় না খাওয়ার ই চেষ্টা করতাম। বাড়িতে বিদ্যুত নেই, ঘরের ভেতর টয়লেট নেই বলে নানিকে সে কি তিরস্কার!
আজ কয়েকদিন ধরে নানি আমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছেন। দিন রাতের অধিকাংশ সময়ই বিদ্যুত থাকেনা।
গাছপালাও নেই যে একটু বাতাস লাগবে! ঠিক মত পানি আসে না! টয়লেটের অবস্থাও ততটা ভাল না। কথা বার্তা ছাড়াই ফুলে ফেঁপে উঠে! ভাগ্যিস, নানিজান যে এখনো আমাকে তিরস্কার করছেন না!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।