জাহাঙ্গীর আলম আকাশ: বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু। একই সত্তা। একে আলাদা করা যাবে না কখনও। একটি পুরো ইতিহাসের নাম শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি জাতির পিতা।
বঙ্গবন্ধু। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। মহান নেতা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি, ঘোষক। অবিসংবাদিত এক গণনায়ক।
জননায়ক ও অনলবর্ষী সুবক্তা। মহান দেশনায়ক, এক বিরল দেশপ্রেমিক। সমুদ্র সমান যাঁর উদারতা, মহানুভবতা। শত-হাজারো গুণে গুনান্বিত। বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ আর বাঙালি।
একটা আরেকটার পরিপূরক। বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু মানেই বাঙালি। স্বাধীনতার মূল কারণ বঙ্গবন্ধু, ৬ দফা (পরবর্তীতে ছাত্রদের ১১ দফাসহ), ৭ মার্চের ভাষণ। বিপুল জনপ্রিয় এক নেতা বঙ্গবন্ধু।
বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির ইতিহাসের সঙ্গেই মিশে আছেন বঙ্গবন্ধু।
এক সংগ্রামী বীর পুরুষের নাম শেখ মুজিবুর রহমান। জীবনভর যিনি সংগ্রাম করে গেছেন। তাঁর এই সংগ্রাম শোষণ, বঞ্চনা, নির্যাতন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতার জন্য। সংগ্রাম সফল হলো। কিন্তু স্বপ্ন পূরণ হতে দেয়নি দেশবিরোধী শত্র“র দল।
বাংলার মুক্তিসংগ্রাম ছিল দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী। এই সংগ্রামে ৩০ লাখ বাঙালি শহীদ হন। দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি ঘটে। বহু ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ জন্ম লাভ করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশটির বিজয় দিবস।
একটি অসাম্প্রদায়িক সুন্দর সোনার বাংলাদেশই ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতিকে সবল করার চিন্তা-ভাবনা শুরু হলো।
পাশাপাশি রাষ্ট্রের অবকাঠামো পূনর্নিমাণ ও প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর কাজ চলতে থাকে। কিছুটা দেরী করে হলেও এক সময়ে লক্ষ্য পূরণের জন্য গঠন করা হয় আওয়ামী বাকশাল। অনেকে বলেন, বঙ্গবন্ধু যদি বাকশাল গঠন করার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম দু এক বছরের মধ্যেই করতেন, তাহলে নিশ্চয়ই আমাদের দেশের ইতিহাস অন্যরকম হতো।
কিন্তু স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আগেই হত্যা করা হলো বঙ্গবন্ধুকে। নারী-শিশুসহ নির্বিচারে সপরিবারে নিহত হলেন জাতির জনক। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা (আজকের প্রধানমন্ত্রী) ও শেখ রেহানা বেঁচে গেলেন। কারণ ওই সময়ে তাঁরা ছিলেন জার্মানিতে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের সেই নৃশংসতা বাকরুদ্ধ করে দিয়েছিল দেশবাসিকে।
বিশ্ব বিবেক স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিলেন সেদিন। ইতিহাসের জঘন্য এই হত্যাকান্ড, বর্বরতা জাতিকে পিছিয়ে দিল অন্ত:ত এক’শ বছর। বাঙালি জাতি সেই ধাক্কা সামাল দিতে পারছে না আজও। দুই দশকেরও অধিক সময় অতিক্রান্ত। কিন্ত জাতির পিতার হত্যাকান্ডের সঠিক ও পূর্নাঙ্গ বিচার হয়নি।
এক সময়ে বিচারের পথকে বন্ধ করা হয়েছিল দায়মুক্তি অধ্যাদেশের মাধ্যমে। অবশেষে (আংশিক হলেও) জাতির পিতার হত্যার বিচার হয়েছে বাংলার মাটিতেই। কিন্তু খুনিচক্রের ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি।
গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ৯০তম জন্মদিবস পালিত হয়েছে। ইচ্ছে ছিল স্বাধীনতার মাস মার্চের শুরুতেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখার।
দেখতে দেখতে তাঁর জন্মদিন গত হলো। ব্যক্তিগত নানান ব্যস্ততার কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। ভাবছি, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে লেখাটা দাঁড় করানো যায় কিনা। জাতির জনককে নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। এখনও হচ্ছে।
বোধ করি যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিনই তাঁর উপর গবেষণা, তথ্য-বিশ্লেষণ করা হবে। সঠিক মুল্যায়ণে সময় লাগে অনেক।
আমি কোন ইতিহাসবিদ, শিক্ষাবিদ কিংবা পন্ডিত নই। বয়স আমার তেমন একটা বেশি নয়। বঙ্গবন্ধু যেদিন সপরিবারে নিহত হলেন তখন আমি নিতান্তই শিশু।
কাজেই আমার পক্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বা তাঁর রাজনৈতিক কর্মকান্ডের আলোচনা করা কিছুটা ধৃষ্টতা বৈ কিছু নয়। কিন্তু তবুও এবারের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কিছু কথা বলতে চাই। ইতিহাস, নানা বই-পুস্তক, ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক নেতা, বিশেষজ্ঞ প্রভৃতি সূত্র থেকে যা জেনেছি বা বুঝেছি, তা নিয়ে আমার নিজস্ব ভাবনা চিন্তার প্রেক্ষিতে একটি বক্তব্য দাঁড়া করাতে চাই।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে রাজনীতির মাঠ আজও গরম করার অপচেষ্টা হয়। দেশে বেকারত্ব, দারিদ্র্যতা, শিক্ষাসহ অতিব গুরুত্বপূর্ণ অনেক সমস্যা রয়েছে।
কিন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলি আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জরুরি ইস্যু মনে হয় না। ক্ষমতা বদলের সাথে সাথে নাম বদলের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য বঙ্গবন্ধু অবিসংবাদিতভাবে জাতির পিতা। তাঁর নামে আবার নতুন করে কোন প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করার প্রয়োজন আছে কি? । এটা তাঁকে সম্মান, শ্রদ্ধা জানানো নাকি কোন সুযোগ সন্ধানীর চাটুকারিতা?
স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে আসা যাক এবার।
অগ্নিগর্ভ মার্চের প্রথম সপ্তাহের শেষ দিন ৭ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে দশ লাখের অধিক মানুষের সমাবেশে তিনি এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। সেই ভাষণের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ এখানে তুলে ধরছি। তিনি বলেছিলেন, ”সাত কোটি মানুষকে (একাত্তরে দেশের বা পূর্ব বাংলায় মোট জনসংখ্যা) দাবায়ে রাখতে পারবা না। আজ বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়।
বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়। এদেশের মানুষ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে। তোমাদের যা কিছু তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।
জয় বাংলা...। ”
মূলত: এটাই ছিল স্বাধীনতার আদি ও একমাত্র ঘোষণা। এ ধরনের ঘোষণা বার বার করার প্রয়োজন নেই। বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চের ভাষণের আগে তাজউদ্দিন আহমদ (জাতীয় নেতা এবং জেলে বন্দি অবস্থায় ঘাতকের হাতে নিহত) একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন। একাত্তরের ৫ মার্চ তাজউদ্দিন বলেছিলেন, ’বাংলার মানুষ স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে বাঁচতে চায়।
’ যা একটি চিন্তা। কিন্ত কোন ঘোষণা নয়। বঙ্গবন্ধুর সেই জাদুকরি ভাষণ ছিল ১৮ মিনিটের। তাতক্ষণিক সেই ভাষণের কোন খসড়া কিংবা নোট ছিল না বঙ্গবন্ধুর কাছে। গোটা জাতিকে আন্দোলিত করেছিল সেই ভাষণ।
রাজনৈতিক মুক্তি আর বাঙালি সংস্কৃতিকে রক্ষার এই বক্তৃতা মানুষের কাছে ছিল এক মহা পবিত্র আহবান। দেশের মানুষ মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেছিলেন। তাইতো শত্র“র কবল থেকে দেশ স্বাধীন করতে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন সব শ্রেণী-পেশার মানুষ। বাঙালি জাতিকে আর দমিয়ে রাখা যাবে না। এমনটা আঁচ করতে পেরেছিল পাক শত্র“।
সেজন্যই তারা নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করে।
২৭ মার্চ চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ওই সময়ের মেজর মুক্তিযোদ্ধা পরবর্তীতে জেনারেল, বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এবং যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসনকারি জিয়াউর রহমান। এবং তিনি বলেছিলেন, ’বঙ্গবন্ধুর আদেশে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের উদ্দেশ্যে তিনি এই ঘোষণাটি করছেন। ’ আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হান্নানও স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠ করেছিলেন জিয়ার আগেই। বঙ্গবন্ধু নিজে ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাক বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হবার আগে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন আনুষ্ঠানিকভাবে।
ইতিহাসের পাতায় সত্য জ্বল জ্বল করে আছে। তারপরও ইতিহাস নিয়ে টানাটানি।
জার্মানিতে এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক ইউরোপীয়ান দেশগুলিতে দেখা যায়, সরকারি ও বেসরকারি দল সঠিক সিদ্ধান্তকে সামনে রেখে সঠিক সময়ে যথাযথ জায়গায় অবস্থান নেয়। বর্তমানে জার্মানিতে ক্যাথোলিক-খৃষ্টান পরিচালিত অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দূর ও নিকট অতীতে তরুণ শিক্ষার্থীদের ওপর ধর্মযাজক-শিক্ষকদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠছে। এখানে অভিযুক্তদের ব্যাপারে সমস্ত রাজনৈতিক দল একমত।
এই সমস্ত দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা শুধু শাসনতান্ত্রিকভাবে নয় সর্বসাধারণ্যে স্বীকৃত। ধর্মযাজকদের কুকীর্তিসমূহ তুলে ধরা হচ্ছে মিডিয়ায় ফলাও করে এবং যথার্থভাবে। প্রিয় পাঠক হয়ত ভাবছেন এখানে এই অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণা কেন? জাতীয় স্বার্থ যে রাজনৈতিক মতাদর্শের চাইতে অনেক বড়, এটি তার একটি বড় দৃষ্টান্ত। যা আমাদের দেশে এখনও রাজনীতিকরা স্বপ্নেও ভাবেন না।
রাজনীতি বিশারদদের মতে, রাজনীতির দুইটি দিক আছে।
জনপ্রিয়তা আর সঠিক বা যথাযথ সিদ্ধান্ত। বঙ্গবন্ধু জনপ্রিয়তাকে বেশি গুরুত্ব দিতেন। অথচ রাজনৈতিক সঠিক সিদ্ধান্তটা সঠিক সময়ে নিতে পারেননি বলে কেউ কেউ মনে করেন। বিশেষ করে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে তার এই প্রবণতা লক্ষ্যণীয়।
বিশেষজ্ঞ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের অনেকেই মনে করেন, ১৯৭২ এর ১০ জানুয়ারি থেকে ১৯৭৪ সালের ১৪ আগষ্ট পর্যন্ত শেখ মুজিবের কিছু কিছু সিদ্ধান্ত ছিল বিতর্কিত।
এসবের মধ্যে উল্লে¬খযোগ্য হলো-১) পরিবারের কোন কোন সদস্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, ২) জনাব তাজউদ্দিনকে জাতীয় রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়া, ৩) রাষ্ট্রীয় ভবনে বাস না করা, যা তার নিরাপত্তাকে ক্ষুন্ন করেছিল ৪) বিরোধীপক্ষকে সহ্য করতে না পারা, যা গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত ৫) জাসদ সৃষ্টির প্রেক্ষাপট তৈরী ও আওয়ামী লীগের বিভক্তি ৬) বাকশাল গঠনে বিলম্ব করা, ৭) আমেরিকার ইচ্ছাকৃত যথাসময়ে সাহায্য না করার ফলে উদ্ভুত কৃত্রিম খাদ্যসংকট মোকাবেলায় ব্যর্থতা, ৮) আইন শৃংখলার অবনতি এবং ৯) রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সিরাজ শিকদার হত্যাকান্ডে প্রকাশ্যে উস্কানি দান ইত্যাদি---।
কিছু রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের মতে, স্বদেশ প্রর্ত্যাবর্তনের পরপরই জাতির পিতার উচিত ছিল বাকশাল তথা একদলীয় শাসন কায়েম করা। আমাদের দেশে কখনও যে বহুদলীয় গণতন্ত্র কার্যকরী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ ১৯৯১ থেকে গত ২০০৮ সাল পর্যন্ত সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার বদলের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, না। কাজেই বাকশালের মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধু দেশ দ্রুত পুনর্গঠন করতে সক্ষম হতেন বলে মনে করা যায়।
কিন্তু বাকশাল সৃষ্টি করতে তাঁর সময় লেগেছিল তিন বছরের অধিক সময়। আর ততদিনে স্বাধীনতাবিরোধীরা একত্রিত হবার সুযোগ পায়। এবং তার জনপ্রিয়তাও হ্রাস পেয়েছিল।
জাতীয় নেতা তাজউদ্দিনের মত মেধাবি, প্রজ্ঞাবান ও সৎ রাজনীতিক, বঙ্গবন্ধুর অবহেলায় তার কাছ থেকে দূরে সরে গেলেন। জাসদ সৃষ্টি হয়ে আওয়ামী লীগ দুর্বল হয়ে পড়ল।
সিরাজ শিকদারের সমর্থকেরা ’সর্বহারা’র নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে খুন-খারাবি চালাতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কতিপয় সদস্যকে তিনি কখনই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন নি। হয়ত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এসব আলোচনা সর্বাংশে সঠিক নয়। ভুল বোঝাবুঝির সম্ভাবনাও আছে। ।
কিন্তু বিভিন্ন মহলে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে এসব প্রশ্ন কিন্তু আজও থেমে যায়নি, সব মিলে একটা রহস্যই হয়ে আছে।
পরিশেষে বলতে চাই, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা, বাঙালি জাতির জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি। এবং একটি বর্ণনাতীত লজ্জাও। কেউ কেউ এই বর্বর হত্যাকান্ডকে ইতিহাসের দায়ভুক্ত করে বাঙালি হিসেবে নিজের চরম অকৃতজ্ঞতার পরিচয় দেন। তবে ৭৫ সালে যারা ঘটনার পরম্পরায় নির্বাক হয়ে ছিলেন, তারাও আজ জাতির পিতার অভাব অনুভব করেন।
প্রকাশ্যে তার হত্যার পূর্ণ বিচার দাবি করেন। এটাই আশার কথা। মীরজাফররা সব সময়ই সংখ্যায় নগন্য। ব্যক্তিগতভাবে হয়ত বঙ্গবন্ধু অজান্তে তার হত্যার ক্ষেত্রটি প্রস্তুত করতে হত্যাকারীদের উত্তেজিত করেছিলেন। কিন্ত গান্ধী বা মার্টিন লুথার কিং এর হত্যাকারীদের মত, তারাও আজ বাংলাদেশের ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন।
সুখের কথা হলো, স্বাধীনতার প্রায় চার দশক পরে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার হয়েছে। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তদের অনেকেই বিদেশে পালিয়ে থাকলেও, বাংলাদেশের জনসাধারণের কাছে তারা খুনি হিসেবে আইনত: রায়প্রাপ্ত দোষী হিসেবে মৃত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র বলেই মনে হচ্ছে। কারণ সরকার ঘোষণা করেছে, স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে। এই কাজটি সম্পন্ন করতে সরকার সম্ভব সব রকমের নিরাপত্তা প্রস্তুতি গ্রহণ করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
আমাদের প্রত্যাশা দেশ শিগগিরই বাহাত্তরের মূল সংবিধানে ফিরে আসবে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। জয় হোক কৃষক-শ্রমিক আর মেহনতি জনতার; সর্বোপরি বাংলাদেশের। ২০ মার্চ, ২০১০
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।