আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৈশ্বিক উষ্ণতার অবদান-মুছে গেছে দক্ষিণ তালপট্রি দ্বীপ (নিউমুর আইল্যান্ডস)



অবশেষে দক্ষিণ তালপট্রি দ্বীপটি'র অস্তিত্ব-ই মুছে গেছে বঙ্গোপসাগরের তলদেশ থেকে, আর এর জন্য বিজ্ঞানী'রা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধ্বি এবং বিশ্বজুড়ে জলবায়ুর অস্বাভাবিক পরিবর্তনকেই দায়ী করেছেন মূলত- আজ এইমাত্র দুই ঘন্টা আগে আসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)'র নয়াদিল্লীস্থ সংবাদদাতা নির্মলা জর্জ-এর বরাতে পরিবেশিত সংবাদে জানানো হয়েছে যে, বিজ্ঞানীদের ওসোনোগ্রাফিক পর্যবেক্ষণে স্যাটেলাইট ইমেজারী এবং সী পেট্রোল এর মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে যে বঙ্গোপসাগরের তলদেশে দক্ষিণ তালপট্রি দ্বীপ'টির (যা ভারতে নিউমুর আইল্যান্ডস নামে পরিচিত) কোন অস্তিত্ব বর্তমানে নেই। বর্তমানে ভারতের সুন্দরবন এলাকায় নিউমুর আইল্যান্ডস (যা বাংলাদেশে দক্ষিণ তালপট্রি দ্বীপ নামে পরিচিত) এর অস্তিত্ব সম্পূর্ণ মুছে গেছে। এ প্রসংগে কোলকাতা'র যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ওসোনোগ্রাফিক ডিপার্টমেন্ট এর প্রফেসর সুগাতা হাজরা বার্তা সংস্থা এপি'কে জানান যে, তাঁর ডিপার্টমেন্ট অনেকদিন যাবৎ বঙ্গোপসাগর এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠে পানির উচ্চতাবৃদ্ধির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে এবং বিগত কয়েক দশক যাবৎ যে হারে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে তা এ অঞ্চলের দেশগুলির জন্য বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য খুবই বিপদজনক। প্রফেসর সুগাতা আরো বলেন যে, "২০০০ সাল পর্যন্ত এ অঞ্চলে সমুদ্রপ্বষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হার ছিল প্রতিবছরে ৩ মিলিমিটার, কিন্তু এর পরের দশকে এই হার বেড়ে বর্তমানে প্রতিবছর ৫ মিলিমিটার করে উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে ১৯৯৬ সালে সুন্দরবনের সন্নিকটবর্তী 'লোহাছড়া' নামের একটি দ্বীপ সমুদ্রগর্ভে সম্পূর্ণ তলিয়ে যায় এবং বর্তমানে 'ঘোড়ামারা' নামের আরেকটি দ্বীপ অর্ধেক তলিয়ে আছে। বিজ্ঞানীরা ধারনা করছেন যে এভাবে সুন্দরবনের আশেপাশের এলাকার আরো অন্তত ১০টি দ্বীপ আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে,যার ফলে দিন দিন পরিবেশ উদ্বাস্তুদের সংখ্যা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাবে। এপি'র রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, যে ১৫০ মিলিয়ন মানুষের দেশ ঘনবসতিপূর্ণ, নীচু-বদ্বীপ-বাংলাদেশ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশ এবং বিশ্বজুড়ে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের পূর্বাভাষ মোতাবেক আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার (৩.৩ ফুট) বৃদ্ধি পেলেই বাংলাদেশের ১৮ শতাংশ উপকূলীয় এলাকা পানিতে ডুবে যাবে এবং প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, সাড়ে তিন কিলোমিটার লম্বা এবং তিন কিলোমিটার প্রস্থের দক্ষিণ তালপট্রি দ্বীপটি নিয়ে বিগত তিরিশ বছর যাবৎ ভারত-বাংলাদেশ বিরোধ চলছে এবং বিগত তিরিশ বছর বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। অন্যদিকে দ্বীপটির বাস্তবে কোন স্থায়ী কাঠামো না থাকলেও ১৯৮১ সালে ভারত সেখানে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করতে আধা সামরিক বাহিনী পাঠায় এবং যদিও বাংলাদেশের প্রবল আপত্তির মুখে পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়, কিন্তু বেশ কিছু দিনের জন্য বিষয়টি এ অঞ্চলের আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)'র রিপোর্টে এ বিষটিকে ইঙ্গিত করতেই অত্যন্ত করুণ সত্যের মতো বলা হয়েছে যে, "What these two countries could not achieve from years of talking, has been resolved by global warming". হ্যা, বিষয়টা হয়তো সত্য, কিন্তু এর চেয়েও ভয়ংকর সত্য ভবিষ্যতে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে, আমরা এখনো যা হয়তো কল্পনা করছি কিন্তু উপলব্ধি করতে পারছি না-আমরা কি সে সত্য মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত আছি ? আমাদের পরিকল্পনা গ্রহনে এবং বাস্তবায়নে?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.