খুব জানতে ইচ্ছে করে...তুমি কি সেই আগের মতনই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো... বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবতর্নে আর্কটিকের গুরুত্ব!
হাসান কামরুল
আর্কটিকের বরফ গলা শুরু হয়েছে। ক্ষুদ্র পরিসরে এ বরফ গলার মধ্য দিয়েই জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে ইউ এস বিঙ্ঘানীদের ধারনা। গেল কিছুদিনে আর্কটিকের বরফ গলার বিস্তৃতি ২০০৭ সালের রেকর্ডের চেয়ে বেশি । ন্যাশনাল স্নো এন্ড আইস ডাটা সেন্টার নাসা স্পেস এজেন্সি ধারনার মতে সামনের গ্রীষ্মে হয়তো বরফ গলার পরিমান আকস্মিকভাবে বেড়ে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার আইস ডাটা সেন্টার উপর ভিত্তি করেই কলরাডো ইউনির্ভাসিটি বরফ গলার উপর জলবায়ুর প্রভাব সম্পর্কীত গবেষনায় দেখিয়েছে গ্রীষ্মে আর্কটিকের বরফ গলার পরিমান বেড়ে যাওয়ার পিছনে জলবায়ু পরিবর্তনের দীর্ঘতম ক্ষতিকর প্রভাব বিদ্যমান।
সমুদ্র বরফের ৪.১০ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার বা ১.৫৮ মিলিয়ন বর্গ মাইল বরফ খন্ডের ৭০,০০০ বর্গ কিলোমিটার বা ২৭ হাজার বর্গ মাইল এলাকার বরফ এর মধ্যেই গলে গেছে। যা ২০০৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বরের রেকর্ডের চেয়ে ভয়াবহ এবং বরফ গলার ধরন আগ্রাসি হওয়ায় গবেষকরা এ নিয়ে চিন্তিতও বটে ।
জলবায়ু গবেষকদের মতে সাম্প্রতিক সময়ে বরফ গলার পরিমান ২০০৭ সালের রেকর্ডের চেয়ে মারাতœক কারন এবারের বরফ গলার প্যার্টান ও আবহাওয়াজনিত পরিবর্তন অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় দ্রুত হচ্ছে। এমনকি গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারের আগস্টে বজ্রপাত ও ঘূর্নিঝড়ের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তা জলবায়ুর পরিবর্তনের বৈরিতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
প্যানন স্টেট ইউনিভার্সিটি গবেষক ও পরিচালক মাইকেল ম্যানন তার গবেষনায় আর্কটিকের বরফ গলা নিয়ে আশংকা প্রকাশ করে বলেছেন বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর পরিবর্তনে পুর্বে যেসব বিক্সঞানীরা সমালোচনা করেছেন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের আশংকাকে অমুলক বলে অভিহিত করেছেন তারা ২০১২ সালে আর্কটিকের বরফ গলা ও অধিক হারে ঘূর্নিঝড়ের প্রবল সম্ভাবনাকে কি বলে বিবেচনায় নিবেন? গ্লোবাল ওর্য়ামিংকে পাশকাটানোর কোন সুযোগ নেই।
যতোই সময় যাচ্ছে বিশ্ব ক্রমশই জলবায়ুর বৈরিতার মুখো মুখি হচ্ছে। যে যাই ই বলুক পৃথিবী জলবায়ু পরিবর্তনে উদ্বিগ্ন এবং পরিবেশ ও প্রতিবেশের প্রতিকুলতা কমিয়ে আনার উপায় উদ্ভাবনে পৃথিবীজুড়েই চলছে গবেষনা কার্যক্রম যা সাদা চোখে দৃশ্যমান। তবে পৃথিবীর সর্বত্র জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সমহারে লক্ষনীয় নয় । কোন কোন এলাকায় জলবায়ুর পরিবতর্নে ক্ষতিকর প্রভাব দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে।
আর্কটিক অঞ্চল পৃথিবীর জন্য খুবই গুরুত্বপুর্ণ।
সুর্যের আলোর বিকিরনে আর্কটিকের বরফ গলে গেলে পুরো পৃথিবীর বাহ্যিক তাপমাত্রা আশাতীতভাবে হ্রাস পাবে। যা জীববৈচিত্র্যের টিকে থাকার লড়াইকে তীব্র করে তুলবে। এমনকি নির্দিষ্ট মাত্রায় তাপমাত্রার হ্রাস হলে অনেক গুরুত্বপুর্ন জীব বৈচিত্র্য সমুলে ধংস হয়ে যাবে। যা পুরো বায়ো-ডাইর্ভাসিটিকে বিপন্ন করে তুলবে।
ন্যাশনাল স্নো এন্ড আইস ডাটা সেন্টার এর বিঙ্ঞানী ড: ওয়েট মিরারের গবেষনা দেখা যায় আর্কটিক রিজিওন প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার বা ৬০ হাজার বর্গ মাইল বরফ এলাকা হারাচ্ছে।
যা প্রতি দুই বছরে ইউএস স্টেট‘র সমতুল্য। আর্কিটিকের বরফ প্রস্তরের বিরাট খন্ডের পার্শ্ব বরাবর বরফ গলার আনুপাতিক হারকে গনিতের ভাষায় সামান্য মনে হলেও তা নিয়ে চিন্তিত না হয়ে পারা যাচ্ছেনা। কারন গবেষনালদ্ধ ফলাফল এটা প্রমাণ করে যে, বরফ গলার আনুপাতিক হার স্টেটিক বা স্বীয় অব¯হায় নেই। অর্থাৎ বরফ খন্ডের গলে যাওয়ার প্রবণতার প্রতিকুলতা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা সত্যিই উদ্বেগের ।
তবে বরফ খন্ডটির আকৃতি ও গাঠনিক সংযুক্তি অক্ষত রয়েছে বলে ড: ওয়েট মিরারের গবেষনা উল্লেখ করেছেন।
এ কথা অস্বিকার করার উপায় নেই যে, পৃথিবী নামক গ্রহে সাম্প্রতিক সময়ে তাপমাত্রার আকস্মিক বৃদ্ধি ঘটেছে। গত দেড় যুগে ১৩টি অতিতাপীয় বছরের মুখোমুখি হতে হয়েছে পৃথিবীকে। এ দেড় যুগে নর্থ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া আফ্রিকাকে বুশ ফায়ার অতিমাত্রায় মোকাবেলা করতে হয়েছে। এবং এশিয় অঞ্চলে অতিবন্যা এ জলবায়ুর আশংকাকে বহুমাত্রায় বাড়িয়ে দিয়েছে।
গবেষকদের মতে এই গ্রীষ্মে গ্রীনল্যান্ডের বরফ আকস্মিকভাবে গলে যাওয়ার কারনে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনে পৃথিবী যে তীক্ততার মুখোমুখি হচ্ছে তার জন্য মনুষ্য কর্মকান্ডই দায়ী। কারন নিসরিত কার্বনের কারনে গ্রীণ হাউজ গ্যাসের আধিক্য বেড়ে যাওয়ার ফলে এক অনাকাঙ্খিত র্দুযোগের মোকবেলায় করতে হবে পৃথিবীকে। জলবায়ু মোকবেলায় পৃথিবী একহাট্রা হলেও উদিয়মান দেশগুলো কার্বন নি:সরন কমিয়ে আনার ব্যাপারে আজ পর্যন্ত কোন পদক্ষেপই গ্রহন করেনি। কিউটো প্রটোকলও ব্যর্থতায় পর্যবসিত।
ভারত, চীন , যুক্তরাষ্ট্রসহ কার্বন ব্যবহারকারী দেশগুলো কার্বন নি:সরন কমিয়ে আনার ব্যাপারে বরাবরই অমনোযোগী । পৃথিবী শাসনের মোহ এদেশগুলোকে এমনভাবে আকড়ে ধরেছে যে এরা এ থেকে কখনো বের হয়ে আসবে বলে মনে হয়না । শিল্পোন্নত দেশগুলো কার্বন নিসরনকে আর্থিক মানদন্ডে বিবেচনা করছে। তারা মনে করছে কার্বন নিসরন সত্যিই কমিয়ে আনা হলে পৃথিবীজুড়েই জৈব জ্বালানীর সংকট ঘনিভুত হবে।
গ্রীণপিসের নির্বাহী পরিচালক কিয়োমি নাইডো আর্কটিক অঞ্চলের বরফ গলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন যদি বিশ্বতাপমাত্রার ক্রমবৃদ্ধি ঘটতেই থাকে তাহলে কয়েক বিলিয়ন মানুষের এ গ্রহ বিপন্ন হতে সময় লাগবেনা।
এবং বর্তমান আর্কটিকের যে চিত্র তাতে দেখা যাচ্ছে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ প্রকৃতিকে কিভাবে এবং কতো মারাতœক হারে ধংস করে দিচ্ছে । এবং এ দুর্যোগকে কখনোই প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে অভিহিতও করা যাচ্ছেনা। কারন মানবসৃষ্ট দুর্যোগ প্রকৃতিকে বিপন্ন করে তুলছে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর ক্রমাগত কার্বন নিসরনের ফলে পৃথিবীর বৃহদাংশকে বিপদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে । অতচ বিপন্ন দেশগুলোর এর জন্য কোন দায় নেই।
গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর সহিত জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার ওতোপ্রোতভাবে জড়িত । পৃথিবী যতোবেশি জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে ততই পৃথিবীর পরিবেশ ও প্রতিবেশ ধংস হয়ে যাবে।
দৃশ্যত পৃথিবীজুড়েই বন্যা অতিবন্যা খড়া অতিখড়া ও ঝড় ঝান্ডার পরিমান বেড়েই চলছে । এ বছরে জাতিসংঘ ক্লাইমেট গ্রুপ এক দীর্ঘ প্রতিবেদনে রিজিওনালি প্রাকৃতিক দুর্যোগের এক ভয়াবহ পরিসংখ্যান উখাপন করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর নিম্নাঞ্চলগুলো ক্রমশই আচমকা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে।
সাগরের তীরবর্তী দেশগুলোর মানুষ বিগত কয়েক বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের তীক্ত অভিঙ্ঘতায় বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অতচ এসব মানুষদের পুর্নবাসনে উন্নত জাতিগুলোর কোন ভূমিকাই চোখে পড়েনি । এর ফলে দেশে দেশে গরীব লোকের সংখ্যা বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষি জমির পরিমান হ্রাস, সমুদ্রের লবণাক্ততার পরিমান বৃদ্ধি, সুপেয় পানির আধারে লবণ পানির অনুপ্রবেশ, সমুদ্রের তলদেশের গাঠনিক বৈচিত্র্যের আমুল পরিবর্তন, কম সহনশীল প্রাণীর বেচে থাকার হুমকি, ঘনঘন সমুদ্র উত্তাল ও সমুদ্রজলের ঘূর্ননের ফলে ডিপ্রেশন ইত্যাদি বিষয়গুলোকে উপকুলীয় অঞ্চলের মানুষদের প্রতিনিয়ত মোকাবেলা করতে হচ্ছে। যা এসব অঞ্চলের মানুষদের টিকে থাকার লড়াইকে তীব্র করে তুলছে।
হাসান কামরুল: ভূতত্ত্ববিদ ও কলাম লেখক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।