আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নারী নির্যাতন: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ



নারী নির্যাতন বন্ধে যুগোপযোগী রাষ্ট্রীয় আইন চাই আজমাল হোসেন মামুন আমরা লক্ষ্য করছি যে, নারী নির্যাতন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন কিছু নয়। নারী নির্যাতন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বাংলাদেশে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর তারিখে গৃহীত এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৫ নভেম্বরকে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করে। সিদ্ধান্ত নং ৫৪/১৩৪। নারী নির্যাতন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এ দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করা হয়ে থাকে।

নারী আন্দোলনকারী সংগঠন সমূহ ১৯৮১ সাল থেকে এই দিনটিকে স্মরণ করে আসছে। কিন্তু নারী নির্যাতন কমছে না। বরং বাড়ছে। তবে সবচেয়ে বিবেক অপমানিত হয় তখন যখন আমরা দেখি নারী দ্বারা নারী নির্যাতিত হচ্ছে। সম্প্রতি ইডেন কলেজের কতিপয় ছাত্রলীগের ছাত্রী দ্বারা অন্য ছাত্রীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়েছে।

এটা লজ্জাজনক ছাড়া কিছুই নয়। কারণ, যারা ইডেন কলেজে ছাত্র রাজনীতি করে তারা ভবিষ্যতে অনেকে দেশের নেতৃত্ব দিবে। তাদের কাছে কি আমরা ভালো কিছু আশা করতে পারি। আসা যাক নারী নির্যাতন প্রসঙ্গে। নারী মহান আল্লাহর সৃষ্টি।

মানব জাতি মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হয়। বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে হযরত (সাঃ) নারীদের প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে স্বামীদের। আইয়্যামে জাহেলিয়াত যুগে কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করা ছিলো লজ্জার বিষয়। ফলে লজ্জা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য কন্যা সন্তানকে জীবিত কবর দিতে লজ্জাবোধ করতো না। হিন্দু ধর্মে যত তাড়াতাড়ি অর্থাৎ ১৬ বছরের পূর্বে বিয়ে দেওয়াকে বলা হতো ‘গৌরী দান’।

আধুনিক কালে নারীর ক্ষমতায়ন ঘটলেও নারী নির্যাতন বন্ধ হয় নি। অথচ দেশে যে আইন আছে তার সঠিক ব্যবহারও নেই বললেই চলে। আজকাল পত্রিকার পাতা উল্টালে চোখে পড়ে নারী নির্যাতনের লোম হর্ষক ঘটনা। স্বামী, শশুর-শাশুড়ি, ননদ, বন্ধু, সহকর্মীদের হাতে নানা কায়দায় নির্যাতিত হচ্ছে। যার অনেক খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয় না।

নারীদের ক্ষমতায়ন ঘটলেও রাজনীতিতে নারীরা এখনও পিছিয়ে রয়েছে। এটাও নারীদের প্রতি এক ধরণের বৈষম্য। ‘‘সর্ব ক্ষেত্রেই নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে, পিছিয়ে রাজনীতিতে (দৈনিক প্রথম আলো, ৪ নভেম্বর)। সেখানে বলা হয়েছে, ২০০২ সালে এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে ৩৬৬টি, ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে তা এসে দাড়ায় ১১০। ইউনিসেফের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি দুইজন নারীর মধ্যে একজন নিজ পরিবারে কোন না কোন ভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

এছাড়া আন্তর্জাতিক জরিপে নারীর প্রতি সহিংসতায় বাংলাদেশ পৃথিবীর চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। এদেশে শতকরা ৪৭ ভাগ নারী বিবাহিত জীবনে স্বামী অথবা স্বামীর নিকটাত্মীয় দ্বারা শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়। নারীরা এখন সমাজে অবহেলিত নয়। শিক্ষা-দীক্ষা, পেশিভিত্তিক অবস্থান, শ্রমবাজার সহ নানা ক্ষেত্রে বৈষম্য থাকলেও নারীরা গত ১৫-২০ বছরে অনেক এগিয়েছে। শুধু রাজনীতিতে পিছিয়ে।

নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলের সব কমিটিতে ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধি রাখার বিধান অন্তর্ভূক্ত করে কমিটি পুনগঠনের প্রস্তাব করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এর বিরোধিতা করেছে। নারীদের আজ ঘরে বসে থাকার সময় নেই। নারীরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সেনা সদস্য, শিক্ষক, আইনজীবী, জজ-ব্যারিষ্টার, লেখক এবং সাংবাদিকসহ যুগোপযোগী চ্যালেঞ্জিং পেশায় এগিয়ে আসছে। যার ফলে দিন দিন নারীর ক্ষমতায়ন বাড়ছে।

একসময় গ্রামীণ নারীরা ঘর থেকে বের হতে নানা বাধার সম্মূর্খীন হতো। এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় পূর্বের ধ্যান-ধারণা বদলে গেছে গ্রামীণ নারীদের। কিন্তু সমাজ থেকে আমূলে বন্ধ হয় নি নারী নির্যাতন। নারীরা পান নি মা ও বোনদের মর্যাদা। নতুন কায়দায় নারী পারিবারিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছে।

এসব নির্যাতনের সংবাদ মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারিত হয় না বলে সুশিল সমাজ বুঝতে পারে না। সম্প্রতি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নামে একটি বে-সরকারি সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- গত বছর প্রায় ৬ হাজার ৫৪ টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ধর্ষণ ৫৪৯, গণধর্ষণ ২৪৮, ধর্ষণের পর হত্যা ১৭০, নারী হত্যা ১ হাজার ৮৬, শ¬ীলতাহানি ১৪১, এসিড দগ্ধ ১৭৬, যৌতুকের কারণে হত্যা ২৭৪, আত্নহত্যা ৪৭৮ ও অপহরণের ৩২৭ টি ঘটনা ঘটে। এই সব নির্যাতন ছাড়াও পারিবারিকভাবে বেশি নির্যাতনের শিকার নারী। অথচ নারী নির্যাতনে আইন রয়েছে।

নির্যাতিতা নারীরা আদালতে মামলা করে অনেক সময় বিপদে পড়ে। আসামী পক্ষের হুমকি এবং ন্যয় বিচার না পাওয়ায় অনেক নারী আত্মহত্যা করে। দেশে রয়েছে অর্ধ শতাধিক নারী সংগঠন। নারীদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করার কথা মুখে উচ্চারণ করলেও তৃণমূল পর্যায়ের নারীদের দিকে নজর নেই। বর্তমানে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার নারী।

শারীরিক, মানসিক এবং যৌন নির্যাতনের শিকার নারী। পারিবারিক নির্যাতন বন্ধে দেশে অক্সফাম জিবির সহায়তায় ২০০৪ ইং সাল থেকেক শুরু হয়েছে ‘আমরা পারি’ প্রচারাভিযান। দেশের ৪৪ টি জেলায় ২৩৬টি স্থানীয়, জাতীয়-আন্তর্জাতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত এক পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট কাজ করছে। সবাই কে নারীর প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে যুগোপযোগী কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে।

গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কল্পে যুগোপযোগী রাষ্ট্রীয় আইন প্রণয়ন করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। আজমাল হোসেন মামুন উন্নয়কর্মী , বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতি (বিপিকেএস) বিপিকেএস কমপে¬ক্স, দক্ষিণখান, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০। মোবাইল: ০১১৯১০৮৯০৭৫।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.