১.
বিশাল ল্যাবরেটরীতে চুপচাপ চিন্তিত মুখে বসে আছেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী আকবর পোদ্দার। বিশিষ্ট মহলে উনি আক্কু পোদ্দার হিসেবেই বেশি সমাদৃত। আর ভক্তরা তাকে আক্কুস্টাইন বলে ডাকতেই বেশি পছন্দ করে। গত বছর নোবেল প্রাইজ পেয়েছিলেন। কিন্তু সময় মত ঘুম থেকে উঠতে না পারায় ফাইট মিস হয়ে যায়।
ফলে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেন নাই। নোবেল কমিটি বিরক্ত হয়ে পুরস্কার তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জাপানি বিজ্ঞানী দিশিহারা হাগুমুতুকে দিয়ে দিয়েছে। এতে অবশ্য তিনি বেশি অখুশি না, কারণ নোবেল প্রাইজকে তিনি বেল দেন না।
আক্কু পোদ্দারের চিন্তিত মুখ দেখে তার সহকারী মকবুল আরো বেশি চিন্তিত হয়ে পড়ল। কারণ আক্কু র চিন্তিত মুখ মানেই নতুন কিছু আবিষ্কার।
আর নতুন কিছু আবিষ্কার মানেই নতুন কোনো ঝামেলা।
এইতো কয়েকদিন আগেই আক্কু পোদ্দার আবিষ্কার করেছিলেন চুলকানির মলম। চুলকানির অব্যর্থ ওষুধ, কিন্তু সমস্যা হল, মাথা বাদে আর যেখানেই লাগানো হয় সেখানেই কয়েক মাস পর চুল গজায়। কয়েকজন মহিলা মলম লাগানোর পর ভুলক্রমে মুখে হাত মুছে ফেলায়, তাদের দাড়ি গজিয়ে যায়। তখন আবার টাক পড়ার ওষুধ আবিষ্কার করে তাদের ঠান্ডা করতে হয়।
কিংবা অটোমেটিক হাড়ি পাতিল। একটা হাড়ির হাত এবং পা সবই আছে। সে নিজেই হাত দিয়ে চাল নেয় ডাল নেয়, সেগুলো ধোয়, তারপর নিজেই হেটে গিয়ে চুলার উপর বসে পড়ে। সবই ঠিক ছিল এটাকে আরো উন্নত করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু হঠাৎ একদিন চুলার হিট বেশি হয়ে যাওয়ায়, হাড়িটা যখন ঘুষি দিয়ে আক্কুর চাপার দুটো দাঁত নড়িয়ে দিল, তখন সেই চিন্তা বাদ দিয়েছিল।
এছাড়াও আরো অনেক উদাহরণ আছে, যেগুলো দিতে গেলে আমার কলমের কালি শেষ হয়ে যেতে পারে। প্রতি বার সমস্ত সমস্যার ধকল বেশির ভাগই মকবুলের উপর দিয়ে যায়। এ জন্যই সে চাচ্ছে না যে, আক্কু নতুন কিছু আবিস্কার করুক।
-“মকু, এই মকু”- আক্কুর ডাক শোনা যায়, সে মববুলকে ছোট করে মকু ডাকে। পুরোটা ডাকতে নাকি তার কষ্ট হয়।
-“ইয়েস বস” মকবুল এগিয়ে যায়।
-“আচ্ছা, আমি এই যে সারাদিন এতো হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করি, যদি এদেশের সকল মানুষ এতো পরিশ্রম করতো, তাহলে দেশের কতই না উন্নতি হতো, ঠিক না?”
মকবুল একবার আক্কুর হাড়ভাঙ্গা রুটিনটা মনে করার চেষ্টা করে। ১০টার দিকে ঘুম থেকে উঠে ঘন্টাখানেক সময় ব্যয় করে খাওয়া দাওয়া করা, তারপর কম্পিউটারে “virtual cop” খেলা, যার প্রতিটি স্টেজেই মকবুলকে হেল্প করতে হয়। এরপর আবার দুপুরের খাওয়া। উপর্যপুরি গেমস এবং খাওয়ার ধকল সামলাতে আবার ঘুম।
ঘুম থেকে উঠে ঘুমজনিত পরিশ্রমের ধাক্কা সামলাতে নাস্তা। নাস্তার পর কিছুণ ল্যাবরেটরীতে খুটখাট করতেই তিনি হাপিয়ে যান। তারপর আবার রাতের খাওয়া। সারাদিনের কাজকর্মের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পেতে এরপর রাত জেগে কার্টুন দেখেন, আর কার্টুনে যেসব অদ্ভুত জিনিস দেখেন, তা আবিষ্কার করার চেষ্টা করেন। প্রচন্ড পরিশ্রমই বটে, তাই মকবুল সায় দেয়,
-“সিউর বস”।
-“তোমার কি মনে হয় না যে, এই জাতিকে উন্নতির চরম বন্দরে পৌছে দেবার একমাত্র উপায় হল একে পরিশ্রমি বানানো”?
-“অবশ্যই বস। ”
-“এইতো তোমাকেই দেখো, যা-ই জিজ্ঞাসা করি, মাত্র দুই শব্দেই তুমি সেরে ফেলছো। একটু বিস্তারিত পরামর্শও দিচ্ছ না। যে জাতির লোকজন কথা বলতেও আলসেমি করে, তারা কিভাবে এগুবে? উফ! ভাবতে ভাবতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আমার বিশ্রাম প্রয়োজন।
”
-“কিন্তু বস, আপনি না বললেন বেশি বেশি কাজ করা প্রয়োজন?”
-“ওহ! মকু, তুমি কি ভুলে গেছ,
বিশ্রাম কাজের অঙ্গ, একসাথে গাথা
পৌষ মাসে যেমন করে, গায়ে দিতে হয় কাথা। ”
বলে আক্কু হাততালি দিলেন। বিছানা নিজে হেটে চলে এল তার কাছে। তিনি কাথা গায়ে ঘুমিয়ে পড়লেন।
২.
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন বিজ্ঞানী আক্কু পোদ্দার।
তিনি স্বপ্নে দেখছেন। তার স্বপ্ন কিন্তু যেন তেন স্বপ্ন না। তার বেশিরভাগ আবিষ্কার তিনি স্বপ্নেই করেছেন। আজকে তিনি স্বপ্নে দেখছেন তিনি এক আজব শহরে উপস্থিত। সেই শহরে কেউ মানুষ নয়, সবাই নানান প্রাণী এবং ওখানকার বেশিরভাগ প্রাণীই অলস।
ঘুরতে ঘুরতে তিনি শহরের মাঝখানে চলে এলেন। সেখানে এক অদ্ভূত প্রতিযোগিতা হচ্ছে। তা হচ্ছে শহরের সবচেয়ে পরিশ্রমি প্রাণী নির্বাচন। খুবই সহজ প্রতিযোগিতা। কিছু বোঝাঁ দেয়া আছে।
সেগুলো বয়ে নিয়ে যেহে হবে। কিন্তু, তা-ই কেউ পারছে না। কেউ কেউ তো এতো অলস যে, এমনকি এগুলো তুলতেই পারছে না। এটাতো আক্কুর জন্য খুবই সহজ কাজ। তিনিও প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেন এবং অনায়াসে পুরো রাস্তা পেরিয়ে এলেন।
সাথে সাথে তুমুল ক্ষুরতালি শোনা গেল(কারণ বেশির প্রাণীরই ক্ষুর ছিল)।
সাথে মাইকে ঘোষিত হল, “আজকের প্রতিযোগিতার সবচেয়ে পরিশ্রমী প্রাণী নির্বাচিত হয়েছে গাধা, গাধা, গাধা। ”
অ্যা, গাধা। এতণে আক্কু নিজের দিকে নজর দিলেন। আরে, তিনি তো মানুষ নেই, তিনি আসলে একটা গাধা।
তিনি হতভম্ব হয়ে গেলেন। হতভম্ব অবস্থাতেই তাকে চ্যাম্পিয়ন’স ট্রফি ধরিয়ে দেয়া হল। আর গ্যালারিতো ফেটে পড়ছে, গাধা গাধা চিৎকারে। এর মধ্যে তার হঠাৎ চোখ পড়ল একটা শেয়ালের উপর। আক্কু প্রতিযোগিতায় না আসলে শেয়ালটাই চ্যাম্পিয়ন হতো।
শেয়ালটা ক্রুর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থেকে চলে গেল। চেহারাটা খুবই চেনা চেনা লাগল। মনে আসছে না, আসছে না , ........... হঠাৎ মনে পড়ল
ই-উ-রে-কা................
শুধু স্বপ্নেই না, বাস্তবে ও আক্কু এই চিৎকার দিয়ে জেগে উঠলেন।
মকবুল দৌড়ে এল। এটা তার জন্য নতুন কিছু না, বেশির ভাগ সময়ই এ রকম হয়।
-“মকু, মকু, আমি পেয়ে গেছি”।
-“কি পেয়েছেন বস্”
-“বাঙ্গালিদের পরিশ্রমী করে গড়ে তুলে ওই শিয়ালের বাচ্চা হাগুমুতু সহ সব জাপানিজগুলোকে একটা শিক্ষা দেওয়ার মন্ত্র”
-“তাই নাকি, কি মন্ত্র বস্”?
- “আরে গাধা, গাধা”
-“ গাধা! খামাখা গাধা বলতেছেন কেন বস্। কি করলাম আমি?”
- “আরে তুমি গাধা না, কিন্তু তুমারে গাধা আমি বানাবো। ”
-“ আয় হায় কি এমন অপরাধ করলাম আমি?”
-“ আরে ধূর, তুমারে বুঝানোর টাইম নাই, আমাকে এখন প্রচুর কাজ করতে হবে। দেরি করলেই late হবে।
যত তাড়াতাড়ি আমি জিনিসটা বানাবো, তত তাড়াতাড়ি দেশটা উন্নত হবে। ”
-“ইয়েস বস, বলেন আপনার কি কি লাগবে ?”
-“ প্রচুর পরিশ্রম করার জন্য, প্রথমেই দরকার প্রচুর শক্তি। আর শক্তি সঞ্চয়ের জন্য আমাকে প্রথমেই পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। আগামী ১২ ঘন্টা কেউ যেন আমাকে বিরক্ত না করে। "
বলেই তিনি আবার ঘুমিয়ে পড়লেন।
৩.
পর্যাপ্ত ঘুম এবং খাওয়ার পর আক্কু কাজে লেগে পড়লেন। তার মেইন আইডিয়া হল, গাধা হচ্ছে দুনিয়ার সবচেয়ে পরিশ্রমি প্রাণী, তাই বাঙ্গালিদেরকেও পরিশ্রমি হতে হলে, তাদেরকে গাধা বানাতে হবে। মানে মানুষের জিনের সাথে যদি গাধার জিন ট্রান্সপ্লান্ট করা যায়, তবেই কেল্লা ফতে। বাঙ্গালিরা তখন সারাদিন গাধার মত খাটবে। এই মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আক্কু কাজ করতে লাগলেন।
এজন্য প্রথমেই একটা গাধা ধরে নিয়ে আসা হল। মনে করা হয়েছিল গাধা পেতে সমস্যা হবে, কিন্তু বাসার কাছেই মাঠে একটা গাধা পাওয়া গেছে। তাকেই নিয়ে আসা হয়েছে। গাধাটার মাথার দারুণ বুদ্ধি, তাকে যা করতে বলা হয়, তা-ই করে।
প্রায় চার মাসের ক্লান্তিময় পরিশ্রম শেষে, আবারো ল্যাবরেটরি থেকে চিৎকার ভেসে এল-
ই-উ-রে-কা .........
মকবুল দৌড়ে গেল।
গিয়ে দেখে আক্কু বিছানার উপর বানরের দক্ষতায় লাফাচ্ছেন। মকবুলকে দেখে লাফ দিয়ে তার কোলে উঠে পড়লেন। ক্ষীণকায় মকবুল, বিশালদেহী আক্কুর ভার বহন করতে পারল না, তাকে নিয়ে প্রপাত ধরণীতল।
-“মকু ওহ! মকু আমার সাধনা সার্থক। আমি অবশেষে গাধার জিন ট্রান্সপ্লান্টের অষুধ আবিষ্কার করে ফেলেছি।
”
-“ কনগ্রাটস বস”
-“থ্যাংকস, এখন চটপট হা করোতো, তোমাকে দিয়ে শুরু করি”।
-“এ্যা, কিন্তু স্যার এই যুগান্তকারী আবিষ্কার আমার মতো নাদানকে দিয়ে পরীক্ষা করানো কি ঠিক? এর যোগ্য হতে পারে সমাজের বিশিষ্ট কোনো লোক। ”
-“ইয়েস, ঠিক কথা। এই সমাজে আমার চেয়ে বিশিষ্ট আর কে আছে, তাই আমিই টেস্ট করি-”
বলেই দৌড়ে গিয়ে, মকবুল বাধা দেবার আগেই বীকার থেকে ওষুধ নিয়ে খেয়ে ফেললেন এবং সাথে সাথেই মুখ বিকৃত করে ফেললেন।
-“উফ! জঘন্য স্বাদ”- মকবুলের জিজ্ঞাসু চোখের জবাব দেন।
-“প্রবলেম নাই, বস। রেস্ট নেন আপাতত, তারপর ঘুম থেকে উঠে দেখেন যে কি হয়। ”
-“তা-ই ভাল, দেখা যাক কি হয়” বলে তিনি বিশ্রাম নিতে চলে গেলেন।
আর মকবুল ছুটল পর্যাপ্ত ডায়রিয়া আর পেট খারাপের ওষুধ কিনে আনতে, আল্লাহই জানে কি হয়?
সারাদিন ঘুমিয়ে সন্ধ্যায় ঘুম ভাঙ্গল আক্কুর, ঘুম থেকে উঠেই চিৎকার-
-“মকু, মকু চা নিয়ে এসো”
মকবুল চা নিয়ে এল। কিন্তু এসে আক্কুর দিকে তাকাতেই কি যেন হয়ে গেল, প্রথমে হাত থেকে কাপ পড়ে ভেঙ্গে গেল।
এরপর নিজেই মাথা চেপে ধরে পড়ে গেল। বিস্মিত আক্কু স্বগোক্তি করেন,
-“উফ, এদের নিয়ে আর পারা যায় না। এই সামান্য কাজটুকু করতেই মাথা ঘুরে পড়ে যায়। আমার মত কাজ করতে হলে তো মাথার চুল একটাও থাকত না। ”
আক্ষেপ করতে করতে তিনি বাথরুমের দিকে যান।
টয়লেট সেরে হাতমুখ ধুতে আয়নার দিকে তাকাতেই আক্কু নিজেই এবার ফিট হয়ে পড়ে যান।
না, আক্কুর চেহারা গাধার মত হয়ে যায়নি, তবে খুব অল্প একটা পরিবর্তন এসেছে। তার কান দুটো গাধার কানের মতো লম্বা হয়ে গেছে।
কিংকর্তব্যবিমূঢ় আক্কু- একটা মাংকি ক্যাপ পরে বসে আছেন। কিন্তু এই গরমকালে মাংকি ক্যাপ পরা অবস্থায় তাকে খুবই কিম্ভূত দেখাচ্ছে।
মকবুল ও তার সামনে অধিক শোকে পাথর অবস্থায় বসে আছে। আক্কু পুরোপুরি বিভ্রান্ত । এরকমতো হবার কথা নয়। তিনি পুরোপুরি নিশ্চিত ভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেই ওষুধটা বানিয়েছিলেন। সমস্যাটা কি হল ধরতে পারছেন না।
হঠাৎ ফোন বাজে, দুজনেরই চমক ভাঙ্গে।
হতাশ আক্কু উদাস ভঙ্গিতে ফোন তুলে নেন।
-“হ্যালো”
-“হ্যালো ও ও ও ও ও”- কণ্ঠটা শুনেই রাগে শরীরে আগুন ধরে গেল আক্কুর। ফোন করেছে তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দিশিহারা হাগুমুতু।
-“কি চাই?” রেগে গেলেও কণ্ঠস্বর সামলে জবাব দেন আক্কু।
-“না, তেমন কিছু না, লম্বা কানে শুনতে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা, তা জানতেই ফোন করেছিলাম?”
ভয়ে মুখ শুকিয়ে যায় আক্কুর, তার এই অবস্থার কথা শয়তানটা জানালো কিভাবে?
-“কি আক্কু, কি ভাবে জানলাম, তা-ই ভাবছ তো? হা, হা, হা,”
শোনে আক্কু, তুমি খুবই ভাল মানুষ এবং অমিত প্রতিভাধর, এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই, কিন্তু খুবই বোকা কিসিমের। তুমি কাল যে ওষুধটা খেয়েছ, ওটা তোমার ওষুধ না, আমার আবিষ্কৃত ওষুধ। তোমার আগেই গবেষণাটা আমি শুরু করেছিলাম, কিন্তু আমার ওষুধটা মানুষকে কাজের দিক দিয়ে গাধা না বানিয়ে, চেহারার দিক দিয়ে গাধা বানিয়ে দেয়। তুমি গবেষণার জন্য যে গাধাটা ব্যবহার করেছিলে, সেটা আসলে গাধা না, আমারই সহকারী আগামাথা। আমার ওষুধ খেয়ে ওর এই অবস্থা।
তাই যখনই জানতে পারলাম যে, তুমিও একই গবেষণা করবে, তাই ভাবলাম, আমার আর কষ্ট করার দরকার কি? তাই কৌশলে আগামাথাকে তোমার ল্যাবে ঢুকিয়ে দিলাম। ও তোমার ওষুধ চুরি করে আমারটা রেখে চলে এল। ”
-“ তবে রে শয়তান, তোকে তোকে আমি .........”
কথা খুজে পান না আক্কু, এদিকে দুচোখ দিয়ে অঝোরে ঝরছে অশ্রু“।
-“এই দ্যাখো, এতই ভাল মানুষ তুমি, এত ক্ষতি করার পরও আমার ক্ষতি করার কথা ভাবতে পারছ না। এজন্যইতো ওষুধের ডোজ অনেক কমিয়ে পাঠিয়েছিলাম।
নাইলেতো তুমিও পুরোটাই আগামাথার মত হয়ে যেতে।
হা .....হা.....হা...........
তোমার আবিষ্কৃত ওষুধ এখন আমি খাব, আর কিছুদিনের মধ্যেই পরিণত হবো দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীতে, হা ......হা.......হা.........।
আর তোমার কান মাংকি ক্যাপ দিয়ে ঢেকে কয়দিন রাখবে?
হা .......হা.......হা.......।
তোমার এই সমস্যার অ্যান্টিডোট আমার কাছে আছে। আমি তা দেব, কিন্তু এক শর্তে, যদি তুমি এই গাধার কান নিয়ে বাইরে বের হও, আর সবার সামনে স্বীকার কর যে, তুমি গাধা।
"
আক্কুর আর সহ্য হয় না, মোবাইলটা আছড়ে ফেলে বাচ্চাদের মত হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন।
৪.
কাণ্ড দেখে মকবুল দৌড়ে যায়, যদিও সে বেশিরভাগ ঘটনাই আচ করতে পেরেছে। তবুও পুরোটা আবার আক্কুর কাছ থেকে শুনে নেয়। এ ধরণের সংকটজনক পরিস্থিতিতে সাধারণত আক্কুর ঘুম বেড়ে যায় এবং যথারীতি সমস্ত পরিস্থিতি মকবুলকেই সামলাতে হয়। তাই বেশি ঘাবড়ে গেল না।
সে আক্কুকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিল । তারপর ভাবতে বসল যে, কি করা যায়। হাগুমুতু বলেছে যে, ওর কাছে অ্যান্টিডোট আছে । অবশ্য আক্কুও তা বের করে ফেলতে পারবে, কিন্তু কয়দিন লাগে তা কে জানে? ততদিনতো এভাবে থাকা সম্ভব না তাছাড়া এই ওষুধ খেয়ে আক্কুর ব্রেন আগের মত শার্প আছে না গাধার মত ডাল হয়ে গেছে তা কে জানে! তই সহজ সমাধান হল হাগুমুতুরটাই কেড়ে নিতে হবে। কিন্তু সমস্যা হল, হাগুমুতু কোথায় আছে কিভাবে জানা যাবে?
একথা ভাবতেই ওর মাথায় চিন্তা আসল, আক্কু যে এই বিষয়ে গবেষণা করছে, তা হাগুমুতু জানল কিভাবে? এ কথাতো ওরা দুজন বাদে আর কেউ জানে না।
নিশ্চয়ই ঘরে কোনো বাগ (লুকানো মাইক্রো ক্যামেরা) আছে, কিন্তু সারা ঘর তন্ন তন্ন করে খুজে ও কোনো বাগ পেল না। গেল মেজাজ খারাপ হয়ে। হঠাৎ সে দ্যাখে এক মাকড়শা, সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ল ওটার উপর। দিলো এক ঘুষি। ঘুষি খেয়ে মাকড়শাটারতো কিছু হলই না, উল্টো মকবুলই বাবাগো, মাগো বলে পিছিয়ে গেল।
এত শক্ত মাকড়শা। ওটা ছুটে পালাতে চেষ্টা করতেই মকবুল ওটাকে আলতো করে ধরে ফেলল। ধরেই বুঝল, আসলে ওটাই বাগ। এইটাই যত নষ্টের গোড়া। দ্রুত বাগের স্ক্রু খুলে, ক্যামেরাটা বের করল, দেখল ভিতরে মেমোরি কার্ড।
ইনফিনিট মেমোরি। শালার জাপানিগুলোর মাথার বুদ্ধিও সেই রকম। কম্পিউটারে মেমোরি কার্ডটা লাগিয়ে দেখল গত ৪ মাসের সব ভিডিওই আছে।
সেদিন আবিষ্কারের পর আক্কু যখন মকবুলের কোলে উঠতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিল, তখনই গাধা আগামাথা অষুধ বদল করে চম্পট দিয়েছে।
সবইতো জানা গেল, কিন্তু হাগুমুতুকে পায় কোথায়?
আরে, গাধা আগামাথাইতো সমাধান।
সে নিশ্চয়ই ওটা নিয়ে সরাসরি হাগুমুতুর আস্তানায় গেছে। আর পথে ছড়িয়ে গেছে ওর গন্ধ। আক্কুর আর একটা যুগান্তকারী আবিষ্কার গন্ধ ডিটেক্টর। কুকুরের অলফ্যাক্টরি নার্ভ দিয়ে তৈরি কিন্তু ১০০ গুণ শক্তিশালী।
সে দ্রুত গিয়ে আক্কুর ঘুম ভাঙ্গাল।
-“বস ওঠেন, হাগুমুতুকে ধরতে হবে”
-“অ্যা, হাগুমুতু, কোথায় সে”
-“ কোথায় এখনও জানি না, তবে দ্রুত খুজে বের করব। তাড়াতাড়ি রেডি হন। ”
বলে সে যন্ত্রপাতি যোগাড় করতে বের হয়। জোগাড় করে এসে দ্যাখে আক্কু জুতো পরেছে উল্টো করে, ফিতে বাধতেই পারেনি। প্যান্টের এক পায়ে নিজের দু'পা ঢুকিয়ে টানাটানি করছে।
যা আশংকা করেছিল, তা-ই হয়েছে। ওষুধটা আক্কুর শুধু কান না, মাথাকেও গাধা করে দিচ্ছে। দ্রুত নিজেই আক্কুকে রেডি করে নিয়ে আক্কুর হাই স্পিড স্পেশাল মোটর সাইকেলে করে বেরিয়ে পড়ল। এর বৈশিষ্ট্য হল এর দুপাশে দুটো লম্বা দন্ড আছে। যেগুলো ইচ্ছামত লম্বা করা যায়।
ফলে জ্যামে পড়লেও সহজেই অন্যান্য গাড়ির উপর দিয়ে চলে যাওয়া যায়। ফলে গন্ধ ডিটেক্টরের ডাইরেকশনে খুব ভালমতই ছুটে যেতে লাগল। যেতে যেতে হঠাৎ সিগন্যাল গায়েব হয়ে গেল। আবার ঘুরপথে ফিরে এসে দেখল একটা ম্যানহোলের ভিতর সিগন্যাল পাওয়া যাচ্ছে। ম্যানহোলের ঢাকনা নেই ফলে সহজেই ঢুকে যাওয়া গেল।
কিছুদূর এগুতেই দেখা গেল, ম্যানহোলের ভিতরের দিকে একটা দরজা। অবাক করা ব্যাপার হল দরজার খোলা। দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করল ওরা। কয়েকটা রুম পেরুতেই দেখল ভিতর থেকে অট্টাহাসির শব্দ ভেসে আসছে। লাথি দিয়ে দরজা খুলেই মকবুল হাগুমুতুর দিকে আক্কুর বানানো স্পাইডার গান তাক করল।
এই বন্দুক দিয়ে গুলির বদলে দড়ি বেরোয় আর লক্ষ্যকে বেধে ফেলে । হাগুমুতুর হাতে একটা গ্লাস। মাত্র মুখে দিতে গিয়ে ছিল। মকবুলের চিৎকারে গ্লাসটা পড়তে পড়তে সামলালো।
-“তোমরা! ঢুকলে কিভাবে?”
-“হা হা হা, শয়তান, তোর এখানে ঢোকা তো বাম হাতের খোলা” বলে নিজেই একটা শয়তানি হাসি দিল।
হাগুমুতু কি একটা বলতে গিয়ে হঠাৎ আগামাথার দিকে তাকাল, আগামাথা ভয়ে কুকড়ে গেল।
-“গাধার বাচ্চা, আবার তুই দরজা খোলা রেখে চলে এসেছিস, আগের বার দরজা খোলা রাখায় ম্যানহোলের সব ময়লা ল্যাবে ঢুকে পড়েছিল।
দাড়া, তোর বিচার পরে করব, আগে এই নতুন গাদ্ধু দুটোকে শায়েস্তা করি”।
গাদ্ধু শুনে মকবুল আরো ক্ষেপে গেল।
-“গাদ্ধু আমি না, তুই, তোর বাপ, তোর চৌদ্দগুষ্ঠী।
এখন তুই দ্রুত অ্যান্টিডোটটা দিয়ে দে। ”
-“হেহ্ হে! এত সোজা! মামার বাড়ি বেড়াতে আসছিস নাকি! শর্ত কি দিছিলাম মনে নাই?"
একটা ছোটো শিশি হাতে নিয়ে আক্কুকে ইঙ্গিত করে বলে,
-“এই ভিডিও ক্যামেরার সামনে এসে নিজের কান দেখা আর স্বীকার কর যে, তুই একটা গাধা। আর আমি দুনিয়ার সেরা বৈজ্ঞানিক। তাহলেই এটা দিয়ে দেব । ”
এইবার আক্কু খেপে যায়, আর ক্ষ্যাপা গাধার মতই মাথাটা বাগিয়ে ছুটে যায়।
কিন্তু হাগুমুতু রেডি ছিল। আক্কু এগুতেই সে অ্যান্টিডোটটা ছুড়ে দ্যায় আগামাথার দিকে। এইবার একই সঙ্গে অনেকগুলো ঘটনা ঘটে।
আক্কু ছুটে গিয়ে আঘাত করে হাগুমুতুর বুকে।
হাগুমুতুর হাত থেকে অষুধের বীকার ছুটে উপরে উঠে যায়।
ওদিকে হাগুমুতুর ছুড়ে দেয়া অ্যান্টিডোটের বোতল ছুটে যাচ্ছে আগামাথার দিকে। আগামাথা ক্যাচ ধরার জন্য উইকেট কিপারের মত ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে।
এদিকে মকবুল ওই বোতলটাকে ল্ক্ষ্য করে বন্দুকের ট্রিগার টিপে দিয়েছে। মকবুলের ট্রিগার মাশাল্লাহ!! বোতলের ধারে কাছেও গেল না। সোজা গিয়ে আঘাত করল আগামাথার মুখে।
আগামাথা ধড়াম করে ঠ্যাং উল্টে পড়ে গেল ।
ঠ্যাং লাগল বোতলে, বোতল তীর বেগে উড়ে গিয়ে আঘাত করল উড়তে থাকা ওষুধের গ্লাসে ।
গ্লাস ফেটে ওষুধ পড়ে গেল। তা দেখে হাগুমুতু চিৎকার করার জন্য মুখ হা করল।
ভাঙ্গা গ্লাস থেকে পড়া ওষুধ, হা করা মুখে ঢুকে গেল।
আর হাগুমুতু তা গিলে নিল।
এদিকে মকবুল আবার বোতল তাক করে বন্দুক টিপল।
এবার লাগল আক্কুর পশ্চাৎদেশে।
ধাক্কার চোটে আক্কু সামনের দিকে উড়ে গেল আর বোতল শুদ্ধ অ্যান্টিডোট কোত করে গিলে ফেলল।
পরিশিষ্ট.
ওই ঘটনার পর ৩ মাস কেটে গেছে।
অ্যান্টিডোটের বোতলটা পরদিনই বেরিয়ে গেছিল। (কোনদিক দিয়ে তা পাঠকই অনুমান করুক)
ফলে আক্কুর কোনো সমস্যা হয় নাই! মকবুল তাকে অনেক বুঝিয়ে আবিষ্কারের ধান্দা থেকে সরাতে পেরেছে। এখন সে বাচ্চাদের একটা স্কুলে পড়ায়।
আর হাগুমুতু !
তার হওয়ার কথা ছিল বিশ্বসেরা বৈজ্ঞানিক কিন্তু অষুধটা খাওয়ার পর থেকে সে হয়ে গেছে বিশ্বসেরা অলস।
সারাদিন খায় আর ঘুমায়।
যা হওয়ার কথা ছিল, তার উল্টোটা ।
রহস্য বেশি ঘোলাটে না।
আক্কু যে গাধার জিন নিয়ে ওষুধটা বানিয়ে ছিল। সেটা ছিল আগামাথা। আর আগামাথা হল দুনিয়ার অলসতম লোকদের অন্যতম।
তাই পরিশ্রমী না করে, অষুধটা হাগুমুতুকে অলস করে দিয়েছে। হাগুমুতু নিজেও সেটা বুঝেছে। কিন্তু আলসেমির কারণে এর প্রতিষেধক বের করার উৎসাহ পাচ্ছে না।
করারই বা কি দরকার।
আরামেই তো আছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।