চেয়ে থাকি অপলক......
সবাই বলে আমার ধৈর্য্য নাকি অনেক বেশি। আমি নাকি কোনো কিছুতেই সহজে বিরক্ত হই না। আমার ও মাঝে মাঝে তাই মনে হয়। ঢাকা শহরের কাছ থেকে যে চমৎ কার একটি শিক্ষা আমি পেয়েছি তা হচ্ছে-ধৈর্য্যধারন করা। অবশ্য বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ধৈর্য্যবান না হলে অন্ততঃ ঢাকায় টিকে থাকা কঠিন।
সেজন্য আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি-আমি আর ও অনেক বেশী ধৈর্য্যবান হব। সমগ্র ঢাকাবাসীকে দেখিয়ে দেব-কত সুন্দর এই ঢাকা, টিকে থাকা কত সহজ এখানে, কত সহজ ঢাকার বর্তমান অবস্থার সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়া।
আমি কি পরিমান ধৈর্য্যবান তা পরিস্কার করার জন্য মনে হয় একটি উদাহারনই দিই। ঈদ ঊল আজহার ঠিক আগের দিন বাড়িতে যচ্ছিলাম। ঈদ এর ব্যাপার।
কিছুই বলা যায় না। হয়ত রাস্তায় গিয়ে দেখব-অনেক জ্যাম। তাই বাসস্ট্যান্ডে ১ ঘন্টা আগেই গিয়ে উপস্থিত। কিন্ত বাসস্ট্যান্ডে পৌছে মনে হলো-৫ ঘন্টা পরে আসলে ও কোনো প্রব্লেম ছিল না। কারন বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখি- দুপুর ১টার বাস সবে এসেছে।
আর আমার বাস তো সন্ধ্যা ৬ টায়। একবার ভাবলাম- পুনরায় হলে চলে যাই, একটা লম্বা ঘুম দিয়ে আসি। কিন্ত মন কেনো জানি সায় দিলো না। তাই
অগত্যা বাসস্ট্যান্ডেই সময়টা কাটানোর চেষ্টা করলাম। কিন্ত বাসস্ট্যান্ড তো লোকে লোকারন্য।
বসার জায়গা ও নেই। হেটে,দাড়িয়ে,চা খেয়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষা। প্রতীক্ষা যেনো আর শেষ হতে চায় না। তারপর ও আমি বিরক্ত হই নি। কারন আগেই বলেছি-আমি এখন ধৈর্য্যধারন করতে শিখেছি।
দীর্ঘ প্রতীক্ষায় সময়টা কাটিয়ে যখন বাস আসলো তখন রাত ১টা। বাসে উঠে কী পরিমান আনন্দ যে পেলাম! অপেক্ষার ফললাভের অনুভুতি যে এতো মধুর হতে পারে তা কেবল অপেক্ষা করলেই বুঝা সম্ভব। ভাগ্যিস অপেক্ষা করেছিলাম।
বাসে উঠার পর বাস যেনো আর এগোতেই চায় না। মনে হলো সে চারপাশের অবস্থা দেখে বাপক মজা পাচ্ছে।
ভাবলাম উদ্ভুত পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিই। মানিয়ে নেয়ার একটাই উপায়-সেটা হচ্ছে ঘুম। ঘুমাতে আমার কোনো প্রব্লেম নেই। টানা ঘুমের সর্বোচ্চ রেকর্ড যার ২১ ঘন্টা তার কাছে বাসে ঘুমানো কোনো ব্যাপারই না।
ঘুমাই-জেগে দেখি বাস ঠায় দাড়িয়ে আছে আগের জায়গায়-আবার ঘুমাই-আবার জাগি।
এভাবে সারারাত্রি শেষ করে যখন সকাল ৮টার মতো-তখন বাস সাভারেই। ভেবে পুলকিত হলাম এই ভেবে যে ঈদটা মনে হয় রাস্তায় করতে হবে। কিন্ত সেটা আর সম্ভব হয় নি। দীর্ঘ ভ্রমনের পর যখন রংপুরে পৌছাই তখন রাত ১২টার মতো। তারপর ও আমার একটু ও খারাপ লাগে নি।
বরং খারাপ লেগেছে এই কথা ভেবে যে ঈদটা আমার রাস্তায় করা হয় নি। একটা অন্যরকম এ্যাডভেঞ্চার থেকে আমি বঞ্চিত হয়েছি।
কিন্ত গতকালের সামান্য ঘটনা আমার নিজের সম্পর্কে আমার যে ধারনা সেটাকে সম্পুর্নভাবে উলটে দিয়েছে। ঢাকার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে গিয়ে আমি বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। বের হলে ও তা হয় শুক্র অথবা শনিবারে।
আর বের হলেই কোনো একটা বই থাকে আমার সঙ্গি। যত জ্যামই হোক-আমার কোনো সমস্যা নেই। বই পড়ে সুন্দর সময়টা পার করে দেই। লোকে হয়তো ভাবে আমি আঁতেল অথবা অন্যকিছু-কিন্ত তাতে আমার কিছুই যায় আসে না।
যাই হোক, খিলখেত থেকে শাহবাগ ১৫ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে মনে হয়েছে-ভাড়া একটু বেশিই নিয়েছে।
তারপর ও বিরক্ত হই নি। বাসে উঠার পর যখন দেখি সিট নাই,একটু ও মনক্ষুন্ন হই নি। একের পর এক লোক উঠে ভ্যাপ্সা গরমে যখন অবস্থা চরম-তখন ও আমরা কেউই গরম হই নি। কারন আমাদের বলার কিছুই নেই। আমরা এই ঢাকার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি।
একের পর এক জ্যাম এ আমরা ধৈর্য্যধারন করতে শিখেছি। কিন্ত মহাখালি ফ্লাইওভার এর উপর আধাঘন্টা থেকে ও যখন জ্যাম কাটার কোনো সম্ভাবনা দেখলাম না, তখন আমার ধৈর্য্যের দেয়াল আর টিকে থাকে নি। বাস থেকে নেমে হেটে মাথার উপর খাড়া সুর্য্যের তীব্র দাবদাহে শাহবাগের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছি। চারপাশে দেখেছি- হাজারও লোক বাসে অসহায় ভঙ্গিতে ঘুমিয়ে,হাতল ধরে দাঁড়িয়ে নির্বাক থেকেছে। কিন্ত আমি নির্বাক থাকতে পারি নি।
মনের অজান্তেই বেড়িয়ে এসেছে কিছু খেদোক্তি। মনে হয়েছে –এই মানুষগুলো আমার থেকে অনেক বেশি ধৈর্য্যবান। জীবন থেকে এরাই শিক্ষা নিতে পেরেছে।
তাই আপাতত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঢাকা ত্যাগ করার অপেক্ষায় আছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।