এডিট করুন
মাইর খাওয়া-১
মাইর খাওয়ার ব্যাপারে আমি ছিলাম নির্লজ্জ্বের মত। আমার কিন্ডারগার্ডেনে সাধারণত ধর্ম ক্লাস থাকত সব শেষে। আমরা সব পুলাপান ব্যাগে ধর্ম বইটা বাকি সব বইয়ের উপরে রাখতাম। এখনকার পুলাপানেও এই কাজ করে কিনা জানিনা। ধর্ম বইটা বাকী সব বইয়ের উপরে রাইখা আমরা ধর্ম জিনিসটারে আলাদা শ্রদ্ধা দিতাম।
কেউ আমাদের এইটা শিখায় নাই, অথবা কারও দেখাদেখি আমরা এইটা করতাম না। স্বতঃস্ফূর্তভাবেই জিনিসটা আইসা পড়ত। পরে একদিন এক আপায় বলল, ধর্ম বই বাকী সব অইয়ের নীচে রাখা উচিত। আমরা শুনলাম। কেন রাখা উচিত তা আর জিগাইলাম না।
কারণ বাংলাদেশী স্কুলের পুলাপানের স্বভাব হইল শিক্ষকরা যা বলে সব মাইনা নেয়া, প্রশ্ন করা এইখানে বারণ। যেমন ধরেন, ক্লাসে অংক করানির সময় স্যারে অংক কিছুটা কইরা জিজ্ঞাসা করত, "এই সবাই বুঝেছ?" তামাম ক্লাস কইত, "হ্যা হ্যা হ্যা, আমরা সব বুঝেছি"। আসলে তো বুঝতাম ঘোড়ার আন্ডা। উল্টা না বুঝার কারণে মাইর লাগায় কিনা সেই ভয়ে সবাই কইতাম, " হ হ বুঝছি"। জিনিসটা ভাইবা আমার কাছে এখন মজাই লাগে।
যাই হোক আপার কথামত আমরা কেন জানি ধর্ম বইটা বাকী সব বইয়ের নীচে রাখতে পারলাম না। আমাদের কেন জানি মনে হইল, নাহ ধর্ম বই বাকী সব বইয়ের উপরেই থাকা উচিত। যাই হোক ধর্ম বইয়ের কথা আইসা পড়ল অন্য কারণে। আমাদের ধর্ম আপা আমাদের বেত্রাঘাত না কইরা কানে ধরাইয়া ক্লাসের সামনের মাঠে দাড়া করাইয়া রাখতেন, যাতে সারা স্কুলের পুলাপান দেখে, বিশেষ কইরা ছোট ক্লাসের পুলাপান। আমার যেহেতু ছোট ক্লাসের পুলাপান নিয়া কোন এলার্জী নাই তাই আমি মহানন্দে ধর্ম ক্লাসের পড়া পইড়া যাইতাম না।
ক্লাস শুরুর আগে পারলে একটু পড়তাম, প্রশ্ন করলে বানাইয়া বানাইয়া যতটুকু পারি উত্তর দিতাম। আল্লাহর গুণগান করার জন্য ধর্ম বই পড়া লাগে না, নিজেই বহুত গুণগান করা যায়। হাই স্কুলের পুলাপান তো মনে হয় এহনও ধর্ম পরীক্ষায় নিজের হাদীস চালাইয়া দিয়া আসে, খালি মিথ্যা কথা না লেখলেই হইল। সমস্যা বাধল অন্য জায়গায়। সেইদিন আছিল আরবী হরফের একটা পড়া।
যবর যের পেশ দিয়া বিভিন্ন ক্যারিকেচার। আল্লাহর গুণগান করার সুযোগ সেইদিন ছিল না। ফলাফল আমি ধরা খাইয়া গেলাম। তবে আমার এই নিয়া বেশী চিন্তিত দেখা গেল না। আমি মহানন্দে একটু তাজা বাতাস খাওয়ার জন্য কানে ধইরা বাকী পোলাপানের সাথে ক্লাসের বাইরে গিয়া দাড়াইলাম।
মরলে সবই মাটির নীচে, কে রাখে কার খবর। অতএব লজ্জার কিছু নাই। আমি সুন্দর দাড়াইয়া দাড়াইয়া বিশ্রাম নিতে ছিলাম আর কান মালিশ কইরা রক্ত সঞ্চালন করতে ছিলাম। সমস্যা বাধল অন্য জায়গায়। আমার পিতৃদেব আমাকে স্কুল থিকা নেওয়ার জন্য কেন জানি বাইছা বাইছা ঐ দিনই আসিলেন।
অন্যদিন উনার কোন খবর থাকে না, আমি একা একা বাসায় যাই আর উনি কিনা এইরকম একটা দিনে আসলেন, যেইদিন আমি কানে ধইরা মাঠে ক্লাসের বাইরে দাড়াইয়া আছি। উনি আরো একটু বেশী বুইঝা ছুটির সময়ও আসেন নাই , বরং ছুটির একটু আগেই আইসা পড়ছেন। ছুটির সময় আসলেও কোন সমস্যা ছিল না, সুন্দর ব্যাগ গুছাইয়া আমি উনার সাথে প্রফুল্ল চিত্তে বাড়ী যাইতাম। কিন্তু কপালের নাম গোপাল।
আমার এই অবস্থা দেইখা উনি কোনমতেই খুশী হইতে পারলেন না, বরং একটু লজ্জিতই হইলেন বলা যায়।
উনি আমার ক্লাসের ধর্ম আপারে জিজ্ঞাসা করলেন, কি ধরনের শাস্তি দিচ্ছেন এদের। ধর্ম আপা আমাকে আরো বেশী বেইজ্জতি করার জন্যই বললেন এদের কানে ধরাইয়া দাড়া করাইয়া রাখা হইতাছে, এরপর যারা পড়া পারবে তাদের দিয়া এদের কানমলা দেওয়া হইবে। আমি তো শ্যাষ। মান ইজ্জতের কথা বাদ, মান ইজ্জতের টাইম নাই, বাড়ী যাইয়া যে আমার কি অবস্থা হইব সেইটা চিন্তা কইরাই আমার ঘাম ছুইটা যাইতাছে তখন। আমার পিতৃদেব বললেন, পুলাপান তো নচ্ছার, এরা তো আবার স্কুল ছুটির পর যাদের দিয়া কানমলা দেওয়াইছেন তাদের কান মলব রাস্তায়।
ধর্ম আপা বললেন, সমস্যা নাই, এই কাজ করলে তাদের নামে নিগৃহীতরা আগামী কাল ক্লাসে বিচার দিবে এবং এদের আবার শাস্তি দেওয়া হইবে। অর্থাৎ স্কুলের শাস্তির কাল হাত স্কুলের বাইরেও বর্ধিত। শালার এক জেলখানার জীবন কাটাইছিরে ভাই। কোন দিন বিকালে শান্তিমত এলাকার রাস্তা দিয়া অথবা বাজার দিয়া ঘুরতাছি, এমন সময় কোন ম্যাডাম যদি দেইখা ফালায় তাইলে পরেরদিন কৈফিয়ত দিতে হয় কেন ঘুরলাম রাস্তায় রাস্তায়। আরে বাল আমার মন চাইছে আমি ঘুরছি, তাতে কার কি? আমি তো আর স্কুলের কোন নিয়ম ভাঙ্গি নাই।
এত সুশীল শান্ত শিষ্ট লেজ বিশিষ্ট পুলাপান হওনের কোন খায়েস আমার নাই, আমার এর থিকা রাস্তার ছেলে হইতেই বেশী আগ্রহী।
আব্বাজান আমারে বাড়ীতে নিয়া স্কুল ড্রেস খুলনেরও সময় দিলেন না। আম্মাজানরে ডাকিয়ে আনিলেন এবং আমার কান্ডকীর্তির কথা বর্ণনা করিলেন। আমারে তখনই ধর্ম বই খুইলা বইতে হইল আর বলতে হইল কি পড়া পারি নাই। আমারে বলা হইল তোরে আজকে খাবার দেয়া হবে না যতক্ষণ না তুই এই পড়া শেষ না করতে পারিস।
মোর জ্বালা কি যে করি!!! তবে ততক্ষণে বুঝছি আমারে আরেক দফা উত্তম মধ্যম দেওয়া হইবে না, অতএব আমার আর চিন্তা নাই। আমি সুবোধের মত পড়া ব্যাখ্যা করতে লাগলাম। হায়রে ধর্ম বই, হায়রে আলিফ বা তা সা জ্বীম হা ............লাম মীম...... ওয়াও হা হামজা ইয়া.........
বাংলাদেশের শুরুর স্তরের শিক্ষাব্যাবস্থা জঘণ্য। এইখানে একটা বাচ্চা দম আটকাইয়া মরে, যদি তারে নিয়মিত পড়াশুনা করতে হয়। মুখস্ত মুখস্ত আর খালি মুখস্ত আর নাম্বার পাওয়া।
সাধারণ সুন্দর সুন্দর জিনিসগুলিও এখানে খুব কঠিন করে তোলা হয়।
চলবে............
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।