যুগটাই মাইরের। হরতাল, মিছিলে, ঘরে-বাইরে সর্বত্র মাইরের জয়জয়কার। কবি সুকান্ত বেঁচে থাকলে হয়ত লিখতেন: ’মাইরের রাজ্যে পৃথিবী প্যারাসিটামল, পূর্ণিমার চাঁদ যেন হকিস্টিকের বাড়ি..। ’
কথায়-প্রবাদে মাইর
মাইরের উপর মেডিসিন নাই, ওস্তাদের মাইর শেষ রাইতে, মাইরের বদলি মাইর, হাত থাকতে মুখে কিসের কথা ? যেমন কুকুর তেমন মুগুর, ইটের বদলে পাটকেল, ধর তক্তা মার পেরেক, ঝিকে মেরে বৌকে শেখানো, পাগলের সাতখুন (সব মার) মাফ, জোর যার মুল্লুক তার, হাতে না পারলে ভাতে মারো।
মাইর দেখে চিনে নিন
দশ-বিশজন মানুষ মিলে যখন একজনের উপর চড়াও হয়ে সব রকম মাইরের প্র্যাকটিস শুরু করে তখন এই টাইপের মাইরকে গণধোলাই বলে।
লন্ড্রির কাপড়-চোপড় যন্তের সঙ্গে ধোলাই করা হয়। কিন্তু গণধোলাই যাকে দেয়া হয়, ধোলাইর পর তার কাপড়-চোপড় ছিঁড়ে এমন দশা হয় যে দশ-বারজন দর্জি মিলেও তার সেই কাপড় নতুন করে সেলাই করতে পারে না।
ঠুস-ঠাস, ভুস-ভাস, টব্বুস-টাব্বুস এই ধরনের আওয়াজ হলে আর একা একজন দশ-বিশজনকে মেরে তক্তা বানিয়ে ফেললে বুঝতে হবে আপনি বাংলা সিনেমা দেখছেন। আর এটা সিন্যাম্যাটিক মাইরের নমুনা ছাড়া আর কিছুই নয়। এ মাইরে যিনি নায়ক, আজীবন তিনিই বিজয়ী হবেন।
শাড়িতে সুন্দর নারী আর চুড়িতে পৌঁছায় কুড়িতে । কিন্তু সেই নারী যখন শাড়ি কোমরে গুঁজে চুড়ির বদলে ঝাটা-তরকারি নাড়ানি অথবা ডাল ঘুটনী হাতে তেড়ে আসেন তখন সেটাকে বলে সাংসারিক মাইর। নিরীহ মফিজ প্রজাতির স্বামীরাই সাধারণত এই মাইরের শিকার হন।
অপরাধের ’অ’টা পর্যন্ত আপনি জানেন না অথচ আপনি মাইর খেয়ে জানলেন ব্যাপারটা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ভিত্তিহীন, ষড়যন্ত্রমূলক, বানোয়াট, হটকারিতামূলক..। এ ধরনের কাহিনীর ফলে যে মাইরের জন্ম সেটা টেকনিক্যাল মাইর।
বাংলায় কিসিঞ্জারি বা কৌশলী মাইরও বলা যায়।
রকই ভক’ এই পুরনো কথা যদি কেউ নতুনভাবে প্রমাণের চেষ্টা করে অথবা আব্বা দাদার বয়সী কারও গায়ে হাত তোলে তাহলে বুঝতে হবে এটা মাইরের ডিসি আকবরীয় স্টাইল। এ জাতের মাইরের বিশেষত্ব হল নাক বরাবর ঘুষি মারা আর এই ঘুষিও রীতিমতো বিখ্যাত।
রাগের মাথায় আপনি হয়ত কারও গায়ে একটু হাত তুলেছেন অথবা ’ দেইখা নিমু’ ’খাইছি তোরে’ টাইপের হুমকি দিয়েছেন। এই ঘটনার পরপরই যদি আপনার উপর কিঞ্চিত উত্তম-মাধ্যম পড়ে তাহলে বুঝতে হবে এটা রির্টান অ্যাকশন বা প্রতিশোধী মাইর।
শাস্তির বদলে শাস্তি আর কি!
যে মাইরে কেউ হয় মানুষ আর কেউ হয় বেহুঁশ সেটা হল হেদায়েতের মাইর। শিক পুলিশ এ ধরনের বস লোকেরা আইনসিদ্ধ যে মাইর মারেন সেটাই হেদায়েতের মাইর। তবে এই মাইর রং নাম্বারে পড়রে মানে কেউ বেশি আঘাত পেলে বা মরে গেলে কাহিনী অনেক খারাপ হয়।
হরতাল-অবরোধ আর বিক্ষোভে আপনি সমর্থকই হন আর বিরোধীই হন মাইরের দ্বারস্থ আপনাকে হতেই হবে। সমর্থকরা পুলিশের উপর চড়াও হয়, আবার নির্দয়ভাবে গাড়িকে মারে মানে ভাঙে।
অন্যদিকে পুলিশও পিকেটারদের ভীষণ মাইরের উপর রাখে। দুই দলের মাঝখানে পড়ে মাইর খায় সাংবাদিকরাও। আবার আন্দোলনবিরোধীরা মাঝে মাঝে পুলিশের ব্যাকআপে আন্দোলনকারীদের মাইর দেয়। মাইরে মাইরে দুনিয়া সয়লাব।
খবর পেয়েছেন এই যে, আপনার আহলাদের ছোট ভাইটি নাকি ইদানীং ঘন ঘন বাংলা সিনেমা দেখে।
অন্যদিকে সিগারেটের পাকের সঙ্গেও নাকি প্রেম করতে শুরু করেছে সে । ছোট ভাইয়ের এত বদলে যাওয়ার কারণে আপনাকেও একটু বদলাতে হবে। ভাইটিকে একটু মেডিসিন দিতে হবে আর মেডিসিনটা আর কিছুই নয়, মাইর!
মাইরের হেলপার
লাঠি :
আদ্দিকাল থেকেই মাইরের ব্যাপারে লাঠি অদ্বিতীয়। এ কারণেই লোকে বলে ’দশের লাঠি একের বোঝা- একের লাঠি দশের সোজা। ’ বাঁশের হোক আর কাঠের হোক এতে যেমন সমস্যা নাই তেমনি বাংলা মাইর হোক আর চাইনিজ মাইরই হোক, এতেও প্রোব্লেম নাই।
আর সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক প্রোপটে মিছিল-মিটিং আর গাড়ি ভাঙচুর লাঠির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে কেবল লাঠি নিয়েই মিছিল হয়, নামও লাঠি মিছিল।
ইটপাটকেলঃ
সরাসরি না হলেও সাম্প্রতিক মাইরে ইটপাটকেল ফুটবলের ২-০ গোলের মতো পরিস্কারভাবে এগিয়ে। অবরোধ মিছিল মিটিংয়ে যেমন ইটপাটকেল নিক্ষেপের মাইর চলে তেমনি কাউকে ভূতের ভয় দেখাতে অথবা জানালার কাঁচ ভাঙার জন্যও ইটপাটকেল ব্যবহার করতে হয়।
হকিস্টিকঃ
শব্দটার মধ্যে প্রফেশনাল মাইরের হাওয়া থাকলেও সাধারণত মাইরবাজরাও এখন হকিস্টিক ব্যবহার করে।
মূলত হকির বল পেটানোর জন্য হকিস্টিক তৈরি হলেও মানুষ আর গাড়ি-ঘোড়া পেটানোতেই এটি বেশি ব্যবহৃত হয়। এতে হকি খেলার ভক্তরা মাইন্ড করলেও করার কিছুই নেই। ভ্যাজর ভ্যাজর করলে হয়তো হকিস্টিকের মাইর খেতে হবে।
ঝাটাঃ
মাইর অবদান যদি নাই থাকত তাহলে ’ঝাটা সম্পর্কে ঝেটির বিদায় করা' জাতীয় কথার উদ্ভব হতো না। মূলত লেডিস মাইরের উপকরণ হিসেবে ঝাটা সুবিখ্যাত ।
পান থেকে খয়ার খসলেই বিবিজানেরা নির্ভরযোগ্য ঝাটা হাতে তেড়ে আসেন সাংসারীক মাইরের ঝামেলায় ফেলতে!
বেতঃ
লাঠির মতো এটারও একটা লং ট্র্যাডিশন আছে। তবে ত্রেটা একটু ভিন্ন। বেত অথবা জালিবেত মূলত শিক মশায়রা ছাত্রদের মাইরের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন। মাঝে মাঝে গার্জেনরাও ব্যবহার করে থাকেন বটে।
সাবধান মাইরও খেতে পারেন।
পথের মোড়ে বসে ‘খায়রনলো তোর লম্বা মাথার কেশ অথবা জারা ঝুম ঝুম’ টাইপের গান গলা ছেড়ে গাইবার আগে আশপাশে দেখেনিন বড় ভাই টাইপের কেউ দেখছে কি না। অথবা কেন ডাঙর সুন্দরী যাচ্ছে কি না। যদি এরকম হয় তাহলে গলা ছেড়ে গাইবার কারণে কেউ আপনাকে গলা ধরে মাইরও দিতে পারে।
লোডশেডিংয়ের পর দেখলেন বাসায় ম্যাচ নেই। মোড়ের দোকন থেকে ম্যাচ কিনে ফিরছিলেন।
‘চোর চোর’ ধ্বনি শুনতে পেয়ে চককে গেলেন। সামনে এগিয়েই আবার চোরকে ধরতে দৌড় লাগাবেন না। আগে হিসাব করে দেখুন চোরে আবার আপনাকে উল্টো ফাঁদে ফেলে দেয় কি না। তাহলে কিন্ত গণধোলাইটা আপনার কপালেই জুটবে।
কষ্ট হলেও লোকাল বাসে আপনাকে চড়তেই হয়।
লোকাল বাসে ওঠে দেখলেন আপনার পাশেই যাত্রীবেশী এক লোক আরেক লোকের পকেটে হাত ঢোকানোর অধ্যাবসায় করতে। তখন তাকে দেখেই ‘পকেটমার’ বলে চিৎকার করতে যাবেন না। কারণ চমকে ওঠে পকেটমার যদি তখন আপনাকেই পকেটমার বলে জড়িয়ে ধরে তাহলে কিন্ত মাইরটা ট্রান্সফার হয়ে আপনার কপালেই জুটবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।