২১ শে ফেব্রুয়ারি এলেই বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের দরদ-বালবাসা অনেক বেড়ে যায়। পরক্ষণেই আমরা ভুলে যায়। আমাদের দেশের দুটি গোষ্ঠী বাংলা ভাষাকে প্রতিনিয়ত নষ্ট করছে। একটি গোষ্ঠী হচ্ছে ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। তারা তাদের বিজ্ঙাপন চিত্রে বাংলা ভাষার যেভাবে খুশি সেভাবে ব্যবহার করছে।
আরেকটি গোষ্ঠী হচ্ছে এফএম রেডিও এবং নতুন প্রজন্মের একটি অংশ। তারা বাংলা, ইংরেজি এবং আঞ্চলিকতা মিশিয়ে এমন এক ভাষার প্রচলনের চেষ্টা চালাচ্ছে যাকে বাংলা বলা চলে না। বর্তমান বিশ্বায়ন এবং ডিজিটাল যুগে ইংরেজি শেখার কোন বিকল্প নেই। তার অর্থ এই নয় যে, শেখা ইংরেজি দিয়ে বাংলাকে ভেজাল করতে হবে। আমি নিজেও ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে পড়েছি।
তবে আমি বাংলা লেখা বা বলার সময় শুদ্ধভাবে করার চেষ্টা করি। পৃথিবীর যে কয়টি দেশের মানুষ তাদের ভাষাকে ভালবাসে এবং ভাষার শুদ্ধতা বজায় রাখতে ভালবাসে তারা হল জাপান, জার্মানি, রাশিয়া এবং ফ্রান্স। কিন্তু এসব দেশ কি প্রযুক্তিবিদ্যা বা তথ্য প্রযুক্তিতে পিছিয়ে আছে? পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের তামিল নাড়ুর জনগণ তাদের তাদের তামিল ভাষাকে খুব ভালবাসে। সারা ভারতের জনগণ প্রয়োজন হলে হিন্দি ব্যবহার করে। কিন্তু তামিলরা হিন্দিতে কথা বলতে মোটেও পছন্দ করে না।
শিক্ষিত তামিল জনগণ ইংরেজি ভাষাও ভাল জানে। তারা তথ্য প্রযুক্তিতেও অনেক এগিয়ে। কিন্তু তারা তাদের মায়ের ভাষার শুদ্ধতা বজায় রাখতে সচেষ্ট। কিন্তু আমি যতদূর জানি উপরে বর্ণিত কোন দেশের জনগণকে ভাষার জন্য রক্ত দেওয়ার ইতিহাস নেই। সে ইতিহাস আমাদের।
আমি ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে জানি বাংলা সাহিত্য ইংরেজি সাহিত্যের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়। আমাদের বাংলা গানের মত গান কোন ভাষায় আছে? বাংলা এমন একটি ভাষা যে ভাষাতে যে কোন শব্দ সঠিক উচ্চারণে লেখা যায়। যেমন বাংলায় দাদু বা ডাডু উভয়ই লেখা যায়। কিন্তু ইংরেজিদে ডাডু লেখা গেলেও দাদু লোখা যায় না। আমি বাংলা ছাড়া শুধু ইংরেজি ভাষাটিই জানি; তাই এই উদাহরণ দিলাম।
বাংলা ভাষা যে, কত উন্নত ও সমৃদ্ধ তার অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়। কিন্তু বাংলা ভাষাকে আমরা ভালবাসি উদাহরণ দেওয়া বেশ কষ্টকর। আসুন আমরা যারা আধুনিক প্রযুক্তি দ্বারা একে অপরের সাথে যুক্ত তারা বাংলাকে ভালবাসি। আমরা যারা ব্লগে লেখালেখি করছি তারা দেশের ভিভিন্ন প্রান্তে বাস করি। আমি থাকি যশোরে।
আমার জন্মও যশোরে। আমি যদি আমার লেখাটি যশোরের আঞ্চলিক ভাষায় লিখি তাহলে কি তা সারা দেশের পাঠকদের পড়ার উপযোগী হবে? মনে রাখতে হবে আপনার লেখাটি আপনার প্রতিবেশি যেমন পড়তে পারে তেমনি পড়তে পারে দেশের অপর প্রান্তের কোন পাঠক। সুতরাং লেখার সময় যতদূর সম্ভব বাংরা ভাষার শুদ্ধতা বজায় রাখা ভাল। এ কাজটি আমাদেরকেই করতে হবে। নিশ্চয় যারা লেখাপড়পড়ার সুযোগ পায়নি বা লেখাপড়া করেনি এ দায়িত্ব তাদের নয় বা এ দায়িত্ব আমরা তাদের ঘাড়ে চাপাতে চাই না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।