আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বইমেলার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এবং আজ যে বইগুলো কেনা হলো

munirshamim@gmail.com

আজ বইমেলায় গিয়েছি একবার নয়, দু’বার। প্রথমবার মেলা শুরু হওয়ারও আধঘন্টা আগে। সকাল ১১টায় মেলার গেট খুলে দেয়া হবে। এটা জানা কথা। তাই মনে হয়েছিল মেলার গেটে আমিই হয়তো প্রথম ব্যক্তি হবো আজ।

গিয়ে দেখি আমার ধারণা ভুল। তখনও মেলার গেট বন্ধ। আরও আধ ঘন্টা পর সর্বসাধারণ মেলায় প্রবেশাধিকার পাবে। কিন্তু তার আগেই মেলার গেট লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছে। শিশুরা এসেছে।

বড়রা এসেছে। নারী এসেছে। পুরুষ এসেছে। কিশোর এবং তরুনরাও এসেছে। এসেছে এবং আসছে আর আসছে।

যেন বইপিপাসু মানুষের পদচারণায় চিরবর্ণীল হয়ে উঠা এক জনপদের বহমান ছবি। আজ বইমেলায় যাবো। এটি গতরাতেই ফেইসবুকের স্টাটাস-এ বলেছিলাম। তা দেখে সহ ব্লগার তনুজা বলেছিলেন, যেন মাস্ক নিয়ে যাই। না হয় বিনে পয়সায় বিপুল ধুলোবালি খাওয়া শতভাগ নিশ্চিত।

আমি বলেছিলাম, একটা বোরকা জোগাড় করতে পারলে সব চেয়ে ভাল হবে। কিন্তু বইমেলায় প্রবেশের পর দেখি মেলাকর্তৃপক্ষ পুরো মেলাজুড়ে পানি ছিটিয়ে ধুলোমুক্ত করার ব্যবস্থা নিয়েছে। দর্শক-পাঠকদের প্রতি কর্তৃপক্ষের এ সাড়াশীলতকে অভিনন্দন জানাই। বাংলা একাডেমি আন্তরিক হলে, আরও একটু সক্রিয় হলে এ মেলা আরও প্রাণ পেতে পারে। আরও জীবন্ত হতে পারে।

মেলায় ঢুকে এ স্টল থেকে ও স্টলে যাই। বই দেখি। বইয়ের সূচি দেখি। সহ-ব্লগারদের বইও খুঁজি। সাথে মানুষও দেখি।

দেখি বিচিত্র মানুষের নানা উচ্ছাস। সবই এ মেলাকে ঘিরে। এ ভাষাকে ঘিরে। আমাদের দিনযাপনে যেখানে দু:সংবাদ আর দু:সংবাদ, যেখানে ইতিবাচক কিছু খুঁজে পাওয়া একটি কষ্টসাধ্য বিষয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে প্রাত্যহিক আলাপচারিতায় আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু নেই বলে আমরা মাথার চুল ছিঁড়ি, হতাশ হই, সেই দেশেই কেবল একটি ভাষা আর সাহিত্যকে ঘিরে এত বড় আয়োজন, এত বড় জমায়েত, প্রায় প্রতিদিন, টানা একমাস ধরে, সত্যিই বিশ্ময়কর। আবার এটা তার চেয়েও বিশ্ময়কর যে, যেদেশে ভাষার জন্য মানুষ প্রাণ দিয়েছে, লড়াই করেছে, যে ভাষা আন্দলনকে ঘিরে একটি অসা¤প্রদায়িক চেতনা প্রবল হয়েছে, ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, সে দেশেই এখনও মৌলবাদ, সা¤প্রদায়িকতার চাষাবাস চলছে এখানে-ওখানে।

এমনকি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়। এই যে বাংলা একাডেমির এত বড় বইমেলা সে মেলাও কি সা¤প্রদায়িকতা ও মৌলবাদী চেতনার ধারক বই ও প্রকাশনা মুক্ত? সম্ভবত না। অবাক হলাম জাতীয় কবিতা পরিষদের স্টলে গিয়ে। প্রায় শিংহভাগই ধর্মীয় বই। এটি কীভাবে সম্ভব হলো সেটি আমার বোধগম্য হলো না।

আমার মনে হলো আমি বোধহয় স্টলের নাম ভুল দেখছি। কিন্তু বারবার তাকিয়েও আমি সে একই নাম দেখলাম। জাতীয় কবিতা পরিষদ। আজও কিছু বই কেনা হলো। সহ-ব্লগারদের সাথে শেয়ারের লোভটা সামলানো গেল না।

সে একই ভাবনায়। যদি কারও পছন্দের সাথে মিলে যায়। অথবা কেউ যদি এ বইগুলো কেনায় উৎসাহী হন। আজ কেনা বইগুলোর মধ্যে রয়েছে সৈয়দ শামসুল হকের আত্মজীবনী প্রণীত জীবন, ইত্যাদি প্রকাশন, সুলতানা কামালের নারী, মানবাধিকার ও রাজনীতি, ইত্যাদি প্রকাশন, পূরবী বসুর নারীবাদী গল্প, ইত্যাদি প্রকাশন, বোরহান উদ্দীন খান জাহাঙ্গীরের তত্ত্ববধায়ক সরকার ও ডেসপটিক রাষ্ট্র, সুবর্ণ প্রকাশন, জীবননন্দ দাশের রূপসী বাংলা, গ্রন্থ প্রকাশ এবং সামহয়্যার ইন ব্লগ ২০০৯ এর ব্লগ সংকলন অপরবাস্তব, ছাপাকল, পরিবেশক সংহতি প্রকাশন। শত্র“পক্ষের জন্য যে বইগুলো কিনেছি এ ছাড়া শত্র“পক্ষের জন্যও কিছু বই কেনা হয়েছে।

পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানে ভালবাসাবাসি অথবা না বাসির ফর্মে জীবনসঙ্গীর সাথে যে সম্পর্ক, প্রেম-ভালবাসা যাই বলিনা কেন, আসলে এটি একটি ক্ষমতার সম্পর্ক। আর সম্পর্কটি যদি ক্ষমতার হয়ে থাকে তাহলে সেখানে পক্ষ-বিপক্ষ থাকবেই। থাকবে শত্র“পক্ষও। তো আমার একমাত্র শত্র“পক্ষের ছোটভাই এর হুময়ূন আহমেদ খুব পছন্দ। কনফ্লিক ট্রান্সফরমেশন (দ্বন্ধ রূপান্তর) এর সম্ভাব্য কার্যকর প্রক্রিয়া হিসেবে নিজে তেমন একটা না পড়লেও চারটি হুমায়ূনের বইও কেনা হলো।

বইগুলো হচ্ছে কাঠ পেন্সিল, সে আসে ধীরে, মাতাল হাওয়া এবং রূপা। দুপুর দুইটায় আবার বইমেলায় যাই। তখন তিল ধারণের জায়গাও যেন নেই। আমি দ্রুত সংহতির স্টলের দিকে যাই। যথারীতি সামুর সংকলন অপরবাস্তব হাতে নিয়ে দ্রুত পা বাড়াই।

বাসার দিকে। শত্র“পক্ষের সাথে ভালবাসার নতুন সম্ভাবনার হাতছানিতে ........................................................

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।